ইসরাইল অবৈধ ও জারজ রাষ্ট্র: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

 ইসরাইল অবৈধ ও জারজ রাষ্ট্র: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা


ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ১৯৭৯ সালের চৌঠা নভেম্বর তার দেশের ঈমানদার ও সাহসী যুবকরা তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখলের মাধ্যমে এটা আবিষ্কার করে যে সেটা আসলে ছিল গুপ্তচরবৃত্তির আখড়া এবং তারা তা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে।
তিনি আজ (রোববার) ওই দূতাবাস দখলের বার্ষিকী উদযাপনের প্রাক্কালে হাজার হাজার ছাত্রের এক সমাবেশে বলেছেন, সেদিন ইরানের যুব সমাজ তেহরানস্থ মার্কিন দূতাবাসের নাম দিয়েছিল গুপ্তচরবৃত্তির আখড়া এবং আজ প্রায় ৩৪ বছর পরে ইউরোপের মার্কিন দূতাবাসগুলোও গুপ্তচরবৃত্তির আখড়া হিসেবে অভিহিত হয়েছে মিত্র সরকারগুলোর ওপর গোয়েন্দাবৃত্তির কারণে; আর এ থেকে বোঝা যায় ইরানের যুব সমাজ দুনিয়ার ইতিহাসের ক্রমপঞ্জী থেকে ৩৪ বছর এগিয়ে রয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, মার্কিন সরকার সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের হওয়ায় সব দেশের ঘরোয়া বিষয়ে হস্তক্ষেপে বিশ্বাসী, কিন্তু ইরানি জাতি ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে আমেরিকার বলদর্পিতা ও কর্তৃত্বকামীতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং বিপ্লবের বিজয়ের পরও তাদের দেশে সাম্রাজ্যবাদের শেকড় কেটে দেয়; আর এভাবে তারা অন্য অনেকে দেশের বিপরীতে বিপ্লবের কাজকে অর্ধ-সমাপ্ত রাখেনি বলে ওইসব দেশের বিপ্লবীদের মত ক্ষতির শিকারও হয়নি।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে আলোচনা করে যে কোনো লাভ হয় না তা উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদী ও দাম্ভিক প্রকৃতির কারণে জাতিগুলো আমেরিকার সরকারকে অবিশ্বাস ও ঘৃণা করে এবং অভিজ্ঞতায়ও এটা দেখা গেছে, যে জাতি বা সরকারই মার্কিন সরকারকে বিশ্বাস করবে তারা আঘাত পাবে, এমনকি তারা যদি মার্কিন সরকারের বন্ধু রাষ্ট্রও হয়।
তিনি ইরানের বর্তমান সরকারের চলমান পরমাণু আলোচনার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন,আমেরিকার অতীত ততপরতা থেকে এটা স্পষ্ট যে কেবল ইরানের সঙ্গে শত্রুতা বজায় রাখার জন্যই পরমাণু ইস্যুটিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ৬ জাতি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ইরানি টিমকে ইসলামী বিপ্লবের প্রতি অনুগত বলে উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, তাদের দুর্বল করা, অপমান করা ও আপোষকামী মনে করা কারোই উচিত হবে না। ইরানের আলোচকরা ব্যাপক প্রচেষ্টার মাধ্যমে কঠিন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ৬ জাতি গ্রুপের অন্যতম সদস্য হিসেবেই আমেরিকা ইরানের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং অন্য কোনো বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধির সঙ্গে তেহরানের আলোচনা হচ্ছে না। তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এই আলোচনার ফলে আমাদের অর্থাত ইরানের কোনো ক্ষতি হবে না, বরং এর ফলে ইরানি জাতি তার চিন্তা ও বিচার-বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরো একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করবে যেমনটি তারা ২০০৩ ও ২০০৪ সালে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থগিত রাখার সময় অর্জন করেছিল।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী মার্কিন সরকার ও সংসদ তথা কংগ্রেসের ওপর ব্যাপক ক্ষমতাধর ইহুদিবাদী পুঁজিপতি ও কোম্পানিগুলোর কর্তৃত্বের কথা তুলে ধরে বলেছেন, মার্কিন সরকার ও সংসদ পতনোন্মুখ ইহুদিবাদী সরকার ও ইহুদিবাদী লবিগুলোর প্রতিই সবচেয়ে বেশি চক্ষু-লজ্জা অনুভব করে এবং অসহায় মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের কথা বিবেচনা করতে বাধ্য, কিন্তু ইরানের বিপ্লবী জাতি এ ধরনের বিবেচনায় বাধ্য নয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন, আমি সেই প্রথম দিন থেকেই বলেছি, এখনও বলছি এবং ভবিষ্যতেও বলব যে ইহুদিবাদী ইসরাইল এক অবৈধ সরকার ও জারজ সন্তান।
উল্লেখ্য, ইরানের বিপ্লবী ছাত্ররা ইসলামী বিপ্লব বিরোধী নানা ষড়যন্ত্র ও গোয়েন্দা ততপরতায় মার্কিন কূটনীতিকদের ইন্ধনের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ১৯৭৯ সালের চৌঠা নভেম্বর তেহরানস্থ মার্কিন দূতাবাস দখল করে। তারা তেহরানে কূটনীতিকদের ছদ্মবেশধারী ৫২ জন মার্কিন কূটনীতিককে ৪৪৪ দিন আটকে রেখেছিল। মার্কিন সরকার পরে নানা ক্ষতিপূরণ দেয়া ও তেহরানের বিপ্লবী সরকারের দেয়া শর্তগুলো মেনে চলার অঙ্গীকারের বিনিময়ে ওই কূটনীতিকদের মুক্ত করে।
সমসাময়িক বিশ্বের ইতিহাসে তেহরানের ওই ধরনের ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন সরকারের ইউরোপীয় মিত্ররা এমনকি ইহুদিবাদী ইসরাইলের কর্মকর্তারাও এটা ঘোষণা করেছেন যে,মার্কিন দূতাবাসগুলো দেশে দেশে গুপ্তচরবৃত্তির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সূত্রঃ বার্তা সংস্থা আবনা

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন