ড্রোন হামলায় নিহত তালেবান নেতা: পাকিস্তানের তীব্র প্রতিক্রিয়া

ড্রোন হামলায় নিহত তালেবান নেতা: পাকিস্তানের তীব্র প্রতিক্রিয়া


পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত উত্তর ওয়াজিরিস্তানে শুক্রবারের মার্কিন ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তালেবানের সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনা বানচাল করার জন্যই ড্রোন হামলা চালিয়ে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি’র প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে হত্যা করা হয়েছে।

পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় এমন সময় ড্রোন হামলা চালানো হলো যখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সম্প্রতি লন্ডন সফরকালে তেহরিকে তালেবানের সঙ্গে সরকারের আলোচনা শুরুর খবর দিয়ে বলেছিলেন, সহিংসতা ও হানাহানি বন্ধ করাই হবে এ আলোচনার প্রধান উদ্দেশ্য। তবে পাক প্রধানমন্ত্রী তার বিবৃতিতে সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে তেহরিকে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করলেও তালেবান মুখপাত্র তা মানতে অস্বীকৃতি জানান।

এ অবস্থায় মার্কিন ড্রোন হামলায় টিটিপি’র প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে হত্যার ঘটনা কয়েকটি দিক থেকে তাত্‌পর্যপূর্ণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। প্রথমত, তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা বানচাল করার জন্যই হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে হত্যা করা হয়েছে বলে পাকিস্তান সরকার যে দাবি করেছে তার সত্যতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ সরকার সবসময়ই বলে এসেছে, মার্কিন ড্রোন হামলায় সন্ত্রাস নির্মূল তো হয়নি বরং তা আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

এর আগে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্বীন জোট সরকারও তালেবানের সঙ্গে আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তাদের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে সই করেছিল। কিন্তু অব্যাহত মার্কিন ড্রোন হামলা এবং উপজাতীয় নেতাদের তীব্র ক্ষোভ, অসন্তোষ ও প্রতিবাদের কারণে ওই শান্তি চুক্তি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। পাকিস্তান সরকারের অভিযোগ, আমেরিকা আলোচনার মাধ্যমে সেদেশে চলমান সমস্যার সাধান চায় না এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের উদ্যোগকেও তারা সবসময় বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে। এ কারণে টিটিপি’র সঙ্গে আলোচনায় বসতে পাকিস্তান সরকার প্রস্তুতির কথা জানানোর পরপরই আমেরিকা ড্রোন হামলা চালিয়ে টিটিপি’র প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে হত্যা করায় ইসলামাবাদ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

এদিকে, হাকিমুল্লাহ মেহসুদ নিহত হওয়ার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়াকে ভালো চোখে দেখছেন অনেকে। ওই আলোচনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছিল। গত কয়েক মাস ধরে তেহরিকে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্র সৃষ্টির যে চেষ্টা চালানো হয়েছিল সরকারের এ পদক্ষেপে তা ভেস্তে যেতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে হত্যার ঘটনার সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সংলাপ বাতিলের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে তালেবানের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চায় না। এ কারণে যে পক্ষটি সংলাপ চায় সরকার শুধুমাত্র তাদের সঙ্গে অর্থাত হাকিমুল্লাহ মেহসুদের অনুগত তালেবানের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছিল। এ অবস্থায় হাকিমুল্লাহ মেহসুদ নিহত হওয়ায় সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিরোধী পক্ষঅনেকটা খুশী। আর ঠিক এ কারণেই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবারের ড্রোন হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন