আমেরিকার পাল্টা আক্রমণ: 'আড়িপেতেছে ইউরোপ নিজেই'

আমেরিকার পাল্টা আক্রমণ: 'আড়িপেতেছে ইউরোপ নিজেই'


হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটিকে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন জেনারেল আলেক্সান্ডার
ইউরোপীয় দেশগুলোতে আড়িপাতা নিয়ে প্রচণ্ড চাপের মুখে থাকা আমেরিকা এবার পাল্টা অভিযোগের তীর ছুঁড়েছে সেই ইউরোপীয় দেশগুলোর দিকেই। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা- ন্যশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি বা এনএসএ'র প্রধান জেনারেল কেইথ আলেক্সান্ডার বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই ফোনে আড়িপেতে সংগৃহিত তথ্য আমেরিকাকে সরবরাহ করেছে।

মঙ্গলবার মার্কিন হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির এক শুনানিতে জেনারেল আলেক্সান্ডারসহ অন্যান্য গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আড়িপাতার পক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলসহ ইউরোপের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফোনের পাশাপাশি কোটি কোটি সাধারণ মানুষের ফোনে এনএসএ আড়িপেতেছে বলে যে কেলেঙ্কারি তৈরি হয়েছে তার সূত্র ধরে ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন আমেরিকার এ অপকর্ম ফাঁস করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপের লাখ লাখ মানুষের টেলিফোনে বহু বছর ধরে আড়িপেতে এসেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটি এ ব্যাপারে এনএসএ পরিচালকের কাছে জানতে চান, আসলে আড়িপাতা নিয়ে কী ঘটেছিল। এর উত্তরে জেনারেল আলেক্সান্ডার দাবি করেন, উত্থাপিত অভিযোগ 'সম্পূর্ণ মিথ্যা'। তিনি বলেন, ইউরোপের টেলিফোনগুলোতে বেশিরভাগ আড়ি ওইসব দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই পেতেছে এবং তারা সংগৃহিত তথ্য এনএসএ'কে সরবরাহ করেছে।

ইউরোপীয় গণমাধ্যম সম্প্রতি খবর দেয়, ২০১২ সালের শেষভাগ এবং ২০১৩ সালের গোড়ার দিকে এনএসএ ফ্রান্সের অন্তত সাত কোটি এবং স্পেনের অন্তত ছয় কোটি টেলিফোন কলে আড়িপেতেছে।

এ সম্পর্কে আলেক্সান্ডার বলেন, "আমরা ঠিক ইউরোপীয় নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আড়ি পাতিনি। বরং ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সুরক্ষা এবং এসব দেশের সামরিক অভিযানকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি।"

শুনানিতে সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির প্রধান- সিনেটর ডায়ান ফেইনস্টেইনও দাবি করেন, ইউরোপীয় পত্রিকাগুলো সম্পূর্ণ ভুল তথ্য প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, "ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে আমেরিকা কোনো তথ্য সংগ্রহ করেনি। ফ্রান্স ও জার্মানি নিজেরাই এসব তথ্য জমা করেছে। এবং তারা তাদের নাগরিকদের ফোনে আড়ি পাতেনি, (বরং) আফগানিস্তানের মতো ন্যাটোর যুদ্ধ এলাকাগুলোর তথ্য সংগ্রহ করেছে।"

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কথিত মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী পশ্চিমা দেশগুলো তাদের আত্মরক্ষা ও সামরিক কৌশলের ছত্রছায়ায় কি জঘন্য ও ন্যক্কারজনক কাজ করেছে তা তারা নিজেরাই প্রকাশ করে দিচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকা একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের অপকর্মগুলো অকপটে স্বীকার করছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানসম্মত কাজের জন্য পাশ্চাত্যের দিকে তাকিয়ে থাকলেও আড়িপাতার ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে, পশ্চিমাদের মতো জঘন্য ও কুতসিত মানসিকতার মানুষ পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। তারা তাদের অশুভ লক্ষ্য চরিতার্থ করার জন্য নিজের জনগণের ওপর আড়িপাততেও দ্বিধা করে না।

সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন