সূরা মারিয়াম; আয়াত ৮৭-৯২

সূরা মারিয়াম; আয়াত ৮৭-৯২


সূরা মারিয়ামের ৮৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَى جَهَنَّمَ وِرْدًا (86) لَا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا (87)
“পরম করুণাময় (আল্লাহর) অনুমতি (বা প্রতিশ্রুতি) ব্যতীত, কারও সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না।” (১৯:৮৭)

আগের পর্বে বলা হয়েছে, মুশরিকরা একদিকে তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে গর্ব করে, অন্যদিকে কাল্পনিক উপাস্যদের পূজা করে এবং ভাবে যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করবে। এ আয়াতে বলা হচ্ছে, কিয়ামতের দিন মিথ্যা উপাস্যদের সুপারিশ করার কোনো ক্ষমতা থাকবে না। তারা কাউকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারবে না। বরং নবী-রাসূল ও ইমামরা সুপারিশ করতে পারবেন। কারণ তারা আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত। কিয়ামতের দিন সুপারিশের কিছু নিয়ম-কানুন ও শর্ত রয়েছে। সবাইকে সুপারিশ করা হবে না। আবার যে কেউ সুপারিশকারী হতে পারবে না। কোনো মুমিন ব্যক্তি,যার বিশ্বাস ও কাজ সঠিক হওয়ার পরও ভুল ও পাপ করে ফেললে সে হয়তো নবী-রাসূল ও ইমামদের সুপারিশে ক্ষমা পেতে পারে। অবশ্য সুপারিশের ক্ষমতাপ্রাপ্তরা কতটুকু ক্ষমতা পাবেন, তার ওপরই নির্ভর করছে অন্যদেরকে তারা কী পরিমাণ গুনাহ থেকে মুক্ত করতে পারবেন।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. কেবল আল্লাহই কাউকে সুপারিশের ক্ষমতা দিতে পারেন। তিনি যাকে যোগ্য মনে করেন,তাকে এ ক্ষমতা দেন।
২. নবী-রাসূল ও ইমামগণকে আল্লাহ সুপারিশের ক্ষমতা দেবেন। বান্দাদের প্রতি দয়া ও ভালোবাসার কারণেই সুপারিশের ব্যবস্থা রেখেছেন মহান আল্লাহ।

সূরা মারিয়ামের ৮৮ ও ৮৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا (88) لَقَدْ جِئْتُمْ شَيْئًا إِدًّا (89)
“তারা (মুশরিকরা) বলে, পরম করুণাময় (আল্লাহ্) সন্তান গ্রহণ করেছেন!” (১৯:৮৮)
“অবশ্যই তোমরা এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করেছ।” (১৯:৮৯)

মুশরিকরা বিশ্বাস করত, আল্লাহর সন্তান আছে। তারা মনে করত, ফেরেশতারা হচ্ছেন আল্লাহর কন্যা-সন্তান। এমনকি ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের আগেও সমাজে এ ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। কুরআর অন্য আয়াতে এসেছে, ইহুদিরা নবী হযরত উজাইর (আ.)-কে আল্লাহর সন্তান বলে মনে করত। খ্রিস্টানরা হযরত ঈসা (আ.)কে আল্লাহর পুত্র বলে মনে করে। ওই সব ধর্ম যে বিকৃত হয়ে গেছে, এসব আয়াত থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
পবিত্র কুরআন এ ধরনের ভ্রান্ত চিন্তা ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা ঘোষণা করেছে। এ আয়াতেও এ সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য অত্যন্ত ঘৃণ্য ও বীভৎস।

এ দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. কাউকে আল্লাহর সন্তান হিসেবে সাব্যস্ত করা, আল্লাহর প্রতি মারাত্মক অপবাদ। কারণ সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তার মধ্যে সম্পর্ক কখনোই পিতা-সন্তানের সম্পর্ক নয়।
২.কাউকে আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করার অর্থ হল আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা এবং একত্ববাদের বিশ্বাস থেকে সরে যাওয়া।

সূরা মারিয়ামের ৯০ থেকে ৯২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنْشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا (90) أَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا (91) وَمَا يَنْبَغِي لِلرَّحْمَنِ أَنْ يَتَّخِذَ وَلَدًا (92)
“আকাশ ফেটে পড়ার, পৃথিবী বিদীর্ণ হবার এবং পাহাড় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।” (১৯:৯০)
“কারণ তারা পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র] নামে সন্তানের [অপবাদ] দেয়।” (১৯:৯১)
“অথচ এটা পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যে তিনি সন্তান গ্রহণ করবেন।” (১৯:৯২)

বিশ্ব সৃষ্টি ও পরিচালনার মূলে রয়েছে একত্ববাদ। কাউকে আল্লাহর সন্তান হিসেবে সাব্যস্ত করা, একত্ববাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শির্কের মাধ্যমে আকাশ ও পৃথিবী কলুষিত হওয়ার কারণে তা ধ্বংসের বিপদের মুখে রয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, শির্ক এতটাই ভয়াবহ যে, আকাশ ও পৃথিবীর পর্যন্ত তা সহ্য করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষ শির্ক করছে এবং এ ধরনের বক্তব্য মুখে উচ্চারণ করছে। আল্লাহর সন্তান আছে, এমন বক্তব্যের মাধ্যমে আল্লাহর অবমাননা করা হয়। এর মাধ্যমে কার্যত আল্লাহকে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। মানুষের মতো আল্লাহর সন্তান থাকাটা তার জন্য অপমানকর এবং তার গুণাবলীর সঙ্গে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ।

এ তিন আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. পাপের প্রভাব এতোটাই ভয়ানক যে, এর ফলে গোটা বিশ্ব ব্যবস্থা ধসে পড়তে পারে। কিন্তু আল্লাহ তা হতে দেন না। যেমনিভাবে কুরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, কুরআন যদি পাহাড়গুলোর ওপর নাজিল হতো,তাহলে আল্লাহর ভয়ে সেগুলো খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেতো।
২. বিশ্বে সবচেয়ে বিপজ্জনক অন্যায় হচ্ছে শির্ক। প্রাণহীন প্রকৃতিও এর মোকাবেলায় প্রতিক্রিয়া দেখায়।
২. সন্তান লাভের জন্য স্ত্রী থাকা জরুরি। কিন্তু বিশ্বের কেউই আল্লাহর মতো বা তার সমকক্ষ নয়। কাজেই কেউ তার স্ত্রী হবে এবং তার মাধ্যমে সন্তান হবে,তা কল্পনা করাও ঠিক নয়।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন