সূরা আম্বিয়া; আয়াত ১০০-১০৪
সূরা আম্বিয়া; আয়াত ১০০-১০৪
সূরা আম্বিয়ার ১০০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَهُمْ فِيهَا لَا يَسْمَعُونَ (100)
“মুশরিকরা জাহান্নামে আর্তচিতকার করবে এবং সেখানে তারা কিছুই শুনতে পাবে না।” (২১:১০০)
আগের আসরে কেয়ামতে কাফের-মুশরিকদের কি অবস্থা হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন: কাফের ও মুশরিকরা জাহান্নামের মধ্যে সারাক্ষণ চিতকার ও ফরিয়াদ করতে থাকবে আর বলতে থাকবে আমাদেরকে বাঁচাও। কিন্তু সেখানে তাদেরকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না ও চিতকার করে কোনো লাভ হবে না। জাহান্নামিরা সবাই চিতকার করতে থাকলেও কেউ অন্যের চিতকারের শব্দ শুনতে পাবে না। ফলে তারা বুঝতেই পারবে না অন্যরাও একই ধরনের কষ্ট পাচ্ছে। প্রত্যেকে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে বলে তাদের কেউ চিতকার বন্ধ করবে না এবং এ আজাব সহ্য করা তাদের জন্য হবে অত্যন্ত কঠিন।
এ আয়াতের একটি শিক্ষণীয় দিক হলো:
১. জাহান্নাম এমন জায়গা যেখানে কেউ কারো চিতকারের শব্দ শুনতে পাবে না। আগুনে দগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়টিও জাহান্নামবাসীকে প্রচণ্ড কষ্ট দেবে।
সূরা আম্বিয়ার ১০১ ও ১০২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ কী বলেছেন:
إِنَّ الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُمْ مِنَّا الْحُسْنَى أُولَئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ (101) لَا يَسْمَعُونَ حَسِيسَهَا وَهُمْ فِي مَا اشْتَهَتْ أَنْفُسُهُمْ خَالِدُونَ (102)
“যাদের জন্য প্রথম থেকেই আমার পক্ষ থেকে (তাদের ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে) কল্যাণ নির্ধারিত হয়েছে তারা দোযখ থেকে দূরে থাকবে।” (২১:১০১)
“তারা জাহান্নামের আগুনের ক্ষীণতম শব্দও শুনবে না এবং তারা তাদের মনের বাসনা অনুযায়ী চিরকাল (জান্নাতে) বসবাস করবে।” (২১:১০২)
জাহান্নামিদের অবস্থা তুলে ধরার পর জান্নাতবাসীর অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন: পৃথিবীতে মুমিনদেরকে যত ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার সবই পালন করা হবে এবং তাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করা হবে। তারা যে শুধু জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে তা নয় জাহান্নামের আগুনের শব্দও তাদের কানে আসবে না। ফলে তারা কোন রকম ভয় অনুভব করবে না। তারা নিশ্চিন্তে জান্নাতের নেয়ামত উপভোগ করবে। চাওয়া মাত্রই সেখানে সবকিছু তাদেরকে দেয়া হবে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে, ফলে ভবিষ্যত নিয়ে তাদের কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. যারা জান্নাতি হবে তারা জাহান্নামে ফিরে যাবে না। কিন্তু যারা জাহান্নামি হবে তারা আজাব ভোগ করে নিজেদের অপরাধ থেকে মুক্ত হওয়ার পর জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ পাবে।
২. যারা দুনিয়াতে নিজেদের কুপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে হারাম কাজ থেকে বিরত থেকেছে, তাদেরকে আল্লাহ জান্নাতে পুরস্কৃত করবেন এবং সেখানে তাদের চাওয়া মাত্রই সবকিছু দিবেন।
সূরা আম্বিয়ার ১০৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
لَا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ وَتَتَلَقَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ هَذَا يَوْمُكُمُ الَّذِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ (103)
“সেদিন মহাত্রাস তাদেরকে চিন্তিত করবে না এবং ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জনিয়ে বলবে, আজ হচ্ছে সেদিন- যেদিনের প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হয়েছিল।” (২১:১০৩)
কেয়ামতের দিন মানুষ এত বেশি আতঙ্কিত হবে যে রকম আতঙ্কে তারা কোনোদিন ভোগেনি। কিন্তু এমন কঠিন ভয়ঙ্কর দিনেও মুমিনরা ভয় পাবে না। তারা পরিপূর্ণ নিরাপত্তার মধ্যে জান্নাতে চলে যাবেন। সেখানে ফেরেশতারা তাদেরকে স্বাগত জানাবে।
ইমাম আলী (আ.) এ সম্পর্কে অত্যন্ত সুন্দর ও মাধুর্যপূর্ণ একটি বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: হে ইমানদারগণ! আপনারা সত কাজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন, তাহলে আখিরাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবেন, নবীরা আপনাদের বন্ধু হবেন এবং ফেরেশতারা আপনাদের স্বাগত জানাতে আসবেন।
এ আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক হলো:
১. দুনিয়ায় ভয়-ভীতি যত বড় হোক না কেন আখিরাতের ভয়-ভীতির তুলনায় তা কিছুই নয়।
২. কেয়ামতের দিন মুমিনদের আনন্দের ও মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। কিন্তু সেদিন কাফেরদের মাথা থাকবে অবনত ও তারা হবে লজ্জিত।
সূরা আম্বিয়ার ১০৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন:
يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ (104)
“সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব,যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম,সেভাবে আবার সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত,আমি তা পূর্ণ করবই।” (২১:১০৪)
এ আয়াতে বিশাল পৃথিবীকে বই ও কাগজের সঙ্গে তুলনা করে আল্লাহ বলেন: এক সময় দীর্ঘ চিঠি লেখার জন্য এ কাগজ খোলা হয়েছিল এবং যুগ যুগ ধরে লেখার পর কেয়ামতের দিন তা গুটিয়ে নেয়া হবে।
যেভাবে দীর্ঘ চিঠি গুটিয়ে নেয়ার অর্থ চিঠির কাগজ শেষ হওয়া নয়, তেমনি পৃথিবী গুটিয়ে নেয়ার অর্থ পৃথিবীর শেষ বা ধ্বংস নয়। বরং এর অর্থ হল নতুন পৃথিবী তার নতুন নিয়ম-কানুন নিয়ে আবার আবির্ভূত হবে। তাই আল্লাহ বলেন: যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম,সেভাবে গুটিয়ে নেব এবং কেয়ামতের দিন আবার সৃষ্টি করব। এ কাজ আমার জন্য মোটেই কঠিন নয়।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. এ পৃথিবী স্থায়ী নয়, বরং কেয়ামতের দিন এটি পুরোপুরিভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
২. মানুষের জন্য একটি চিঠি মুচড়ে ফেলা যতটা সহজ আল্লাহর জন্য কেয়ামত সম্পন্ন করা তার চেয়েও সহজ ব্যাপার।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন