সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৫৭-৬১

সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৫৭-৬১


সূরা আম্বিয়ার ৫৭ ও ৫৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَتَاللَّهِ لَأَكِيدَنَّ أَصْنَامَكُمْ بَعْدَ أَنْ تُوَلُّوا مُدْبِرِينَ (57) فَجَعَلَهُمْ جُذَاذًا إِلَّا كَبِيرًا لَهُمْ لَعَلَّهُمْ إِلَيْهِ يَرْجِعُونَ (58)
“আল্লাহর কসম,যখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাবে,তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করব।” (২১:৫৭)
“অতঃপর তিনি সেগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলেন ওদের প্রধানটি ব্যতীত- যাতে তারা তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করে।” (২১:৫৮)

আমরা আগের আয়াতে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও মূর্তি পূজারীদের মধ্যে কথোপকথন শুনেছি। ইব্রাহীম (আ.) তাদেরকে বললেন: তোমরা যে মূর্তিপূজা করছো, এর পেছনে যুক্তি কী? মুশরিকরা এ প্রশ্নের জবাবে বললো: এটা তাদের পূর্বপুরুষদের রীতি। তারা মূর্তিপুজার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ তুলে ধরতে পারেনি। হযরত ইব্রাহীম (আ.) মুশরিকদের সামনে নানা যুক্তি তুলে ধরার পর যখন বুঝলেন, আলোচনায় কাজ হবে না এবং তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে না, তখন তিনি বললেন- খুব শিগগিরই মূর্তিগুলোর দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরা হবে। কিন্তু মূর্তিপূজারীরা ইব্রাহিম (আ.)-র কথাকে গুরুত্ব দিল না বরং এটাকে অনর্থক হুঁশিয়ারি মনে করল। হযরত ইব্রাহীম (আ.) তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটা উপযুক্ত সুযোগের সন্ধানে ছিলেন। এ অবস্থায় উতসবের দিন আসলো এবং সবাই শহর ত্যাগ করলো।

হযরত ইব্রাহীম (আ.) শহরেই রয়ে গেলেন এবং সুযোগমত পূজামণ্ডপে চলে গেলেন। এরপর এক এক করে ছোট-বড় মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেললেন। শুধুমাত্র সবচেয়ে বড় মূর্তিকে অক্ষত রাখলেন। মুশরিকরা সর্ববৃহত মূর্তিটিকে বিশেষ মর্যাদা দিতো এবং তাদের কাছে এ মূর্তিটি ছিলো-সবচেয়ে পবিত্র। হযরত ইব্রাহীম (আ.) তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই সবচেয়ে বড় মূর্তিটিকে অক্ষত রাখলেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই যখন মুশরিকরা দেখবে বড় মূর্তিটি অক্ষত রয়েছে আর বাকি সব মূর্তি ধ্বংস হয়ে গেছে, তখন তারা বড় মূর্তিকে এ জন্য দোষারোপ করবে। তারা ধরে নেবে- বড়মূর্তিটি এ কাজের সঙ্গে জড়িত, তা না হলে সেও ধ্বংস হয়ে যেতো।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. নবী-রাসূলদের প্রাথমিক কর্তব্য হলো-যুক্তি ও সংলাপের মাধ্যমে মূর্তিপুজারিদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করা। তাতে লাভ না হলে হাতে-কলমে কাজের মাধ্যমে ভুল ধরিয়ে দেয়া এবং শির্কের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
২. বড় ও মহান কাজের সাফল্য নিশ্চিত করতে পূর্ব পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। নবী-রাসূলগণও আল্লাহর উপর নির্ভরতার ভিত্তিতে যৌক্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্পন্ন করতেন।

সূরা আম্বিয়ার ৫৯ ও ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
قَالُوا مَنْ فَعَلَ هَذَا بِآَلِهَتِنَا إِنَّهُ لَمِنَ الظَّالِمِينَ (59) قَالُوا سَمِعْنَا فَتًى يَذْكُرُهُمْ يُقَالُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ (60)
“তারা বলল: আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার কে করল? সে তো নিশ্চয়ই কোন জালিম।” (২১:৫৯)
“কিছু লোক বলল: আমরা এক যুবককে মূর্তিগুলো সম্পর্কে বিরূপ আলোচনা করতে শুনেছি; তাকে ইব্রাহীম বলা হয়।” (২১:৬০)

উতসব শেষে মূর্তিপূজারীরা নিজেদের শহরে ফিরে আসলো এবং পূজামণ্ডপে গেল। তারা দেখতে পেলো- মূর্তিগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে এবং ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তারা চিতকার করে বলতে লাগলো- কে আমাদের উপাস্যগুলোর এ অবস্থা করেছে? সে যেই হোক না কেন, সে আমাদের নিজেদের ওপর এবং আমাদের উপাস্যগুলোর উপর জুলুম করেছে। আমরা অবশ্যই এর প্রতিশোধ নেব। যারা মূর্তির বিরুদ্ধে ইব্রাহিম (আ.)-র সমালোচনামূলক বক্তব্য শুনেছিলেন, তারা হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করলেন। সবাইকে বিষয়টি জানিয়েও দিলেন।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হলো:
১. ভুল বিশ্বাসের কারণে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে তারা শির্ককে সঠিক এবং একত্ববাদকে জুলুম বলে মনে করে।
২. তরুণরা সমাজ সংশোধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজের অন্যদের ভুল ধরিয়ে দিতে পারে।

সূরা আম্বিয়ার ৬১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
قَالُوا فَأْتُوا بِهِ عَلَى أَعْيُنِ النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَشْهَدُونَ (61)
“তারা বলল: তাকে জনসমক্ষে উপস্থিত কর,যাতে তারা দেখে।”(২১:৬১)

অপরাধী হিসেবে যখন হযরত ইব্রাহীম (আ.)-র নাম উত্থাপিত হলো, তখন গোত্রের নেতারা বলল: তাহলে ইব্রাহীমকে হাজির করো, যাতে এসব লোক সাক্ষী দিতে পারে। এরপর আমরা তাকে তার অপরাধের শাস্তি দেব। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কে গ্রেফতারের পর তৎকালীন রাজা নমরুদের উপস্থিতিতে আদালত গঠন করা হয়। হযরত ইব্রাহীম (আ.) আদালতে সাহসিকতার সঙ্গে বিচারকের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তার পাল্টা প্রশ্নে জর্জরিত হন মূর্তিপুজারীরা। তিনি মূর্তিপুজারীদের বিশ্বাস নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তোলেন। ইব্রাহিম (আ.) তার নিজের অবস্থানের বিষয়ে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন