সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৩৮-৪১
সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৩৮-৪১
সূরা আম্বিয়ার ৩৮ ও ৩৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (38) لَوْ يَعْلَمُ الَّذِينَ كَفَرُوا حِينَ لَا يَكُفُّونَ عَنْ وُجُوهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَنْ ظُهُورِهِمْ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ (39)
“কাফেররা বলে, যদি তোমরা সত্যি বলে থাকো তাহলে প্রতিশ্রুত সেই কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? (২১:৩৮)
“কাফেররা যদি জানত,কিয়ামতে তারা তাদের সামনে, পিছে থেকে আগুনকে কিছুতেই রোধ করতে পারবে না এবং এমনকি তারা কোনো সাহায্যও পাবে না, (তাহলে এভাবে তড়িঘড়ি করে শাস্তি ডেকে আনতো না।)” (২১:৩৯)
আগের পর্বে বলা হয়েছে, মুমিনদের দাওয়াতের জবাবে কাফেররা বলেছিল: আমরা ঈমান আনব না, তোমার খোদা যদি আমাদেরকে শাস্তি দিতে চান, তাহলে কেন তাড়াতাড়ি করে আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছেন না?
এ আয়াতগুলোতেও একই বিষয়ের উল্লেখ করে বলা হয়েছে: কেয়ামত অস্বীকারকারীরা কিয়ামত সংঘটিত হবার সময় সম্পর্কে জানতে চায় এবং তারা তাকে মুমিনদের দাবির সত্যতার প্রমাণ বলে মনে করে।”
যদিও একটি ঘটনা সংঘটিত হবার সময় সম্পর্কে না জানার অর্থ এ নয় যে ঐ ঘটনা ঘটবে না। কেয়ামত সংঘটিত হওয়া যে জরুরি এবং অবশ্যম্ভাবী তা বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তিপ্রমাণেও ফুটে ওঠে। কেয়ামত যে সংঘটিত হবে সে সম্পর্কে সকল যুগের সকল নবী-রাসূলই বলে গেছেন। আর কে না জানে নবী-রাসূলগণ হলেন সমকালীন শ্রেষ্ঠ সত্যবাদী এবং মানুষের জন্যে অনুসরণীয় শ্রেষ্ঠ আদর্শ।
আল্লাহ কাফেরদের এসব বক্তব্যের জবাবে বলেন: তারাতো যুক্তি তর্ক কিংবা বিবেক বুদ্ধির ধার ধারে না। যেদিন আগুন তাদেরকে ঘিরে ফেলবে এবং তারা তাদের চেহারায় যখন আগুনের তাপ অনুভব করবে তখন তারা কিয়ামতের অস্তিত্ব মেনে নেবে। কিন্তু তখন তা তো কোন কাজে আসবে না। তারা আগুনে পুড়বে,কেউ তাদেরকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. কাফেররা নিজদেরকে সত্যবাদী আর মুমিনদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করে, তারা মনে করে যারাই কেয়ামত সম্পর্কে কথা বলে তারা ডাহা মিথ্যা বলে।
২. সত্য ও বাস্তবতার জ্ঞান না থাকার কারণেই মানুষ কেয়ামতকে অস্বীকার করে। ঐশীগ্রন্থ এবং নবী রাসূলগণ দুনিয়া আখিরাতের সকল সত্য ও বাস্তবতা তুলে ধরেন ঠিকই, কিন্তু তারপরও বহু মানুষ তা মানতে রাজি নয়।
সূরা আম্বিয়ার ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
بَلْ تَأْتِيهِمْ بَغْتَةً فَتَبْهَتُهُمْ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ رَدَّهَا وَلَا هُمْ يُنْظَرُونَ (40)
“হ্যাঁ! হঠাৎ করেই (তাদের ওপর শাস্তি অবতীর্ণ হবার) সেই দিনটি আসবে, সেদিন তারা হতবুদ্ধি হয়ে যাবে,কারণ তখন তারা তা রোধ করতেও পারবে না, এমনকি কোনো সুযোগই তারা পাবে না।” (২১:৪০)
আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এ আয়াতেও কেয়ামতে জাহান্নামিদের আগুনে পোড়া সম্পর্কে বলা হয়েছে: মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আখিরাতের যে জীবন শুরু হয়, তার সবকিছুই অতর্কিত অর্থাৎ অবহিত করে হবে না। কার মৃত্যু কখন হবে কেউ জানে না, অতর্কিতভাবেই তা চলে আসে। মৃত্যুর পর থেকে বারযাখের যে শাস্তি শুরু হয়, আর কেয়ামতের বিচারের পর থেকে দোজখের যে শাস্তি দেয়া শুরু হয় কাফের ও জালেমদেরকে উভয় শাস্তিই ঘিরে ধরবে। যার সঠিক সময় সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল এ থেকে ফিরে আসা বা সময় নেয়া সম্ভব হবে না। তারপরও কাফেররা এ শাস্তি সম্পর্কে গাফিল রয়েছে।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. আল্লাহ কাফেরদেরকে দুনিয়াতেই সুযোগ দিয়ে থাকেন, আখিরাতে কোনপ্রকার সুযোগ দেবেন না।
২. যারা আজ নিজেদেরকে জ্ঞানী বলে মনে করে তারপরও দ্বীন গ্রহণ করতে সম্মত হয় না, কেয়ামতের ফল দেখে তারা স্তব্ধ এবং অচেতন হয়ে যাবে তখন তাদের মাথা কোন কাজ করবে না।
সূরা আম্বিয়ার ৪১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِنْ قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ سَخِرُوا مِنْهُمْ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ (41)
“(হে নবী!) আপনার পূর্বেও অনেক নবী-রাসূল ঠাট্টা-বিদ্রূপের সম্মুখীন হয়েছেন। তবে (আল্লাহর প্রতিশ্রুত) যে বিষয়ে তারা ঠাট্টা করত তা উল্টো ঠাট্টা কারীদের উপরই আপতিত হয়েছে।” (২১:৪১)
এ আয়াতে রাসূল (সা.)কে সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহ বলেন: যদি মক্কার কাফের মুশরিকরা তোমার কথা ও ওয়াদাকে ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেয়, তাহলে তুমি রাগ কর না। কেননা তোমার পূর্বেও অনেক নবী-রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে। অতঃপর যে বিষয়ে তারা ঠাট্টা করত তা উল্টো ঠাট্টাকারীদের উপরই আপতিত হয়েছে। তাদের এই মূর্খতাপূর্ণ আচরণ তাদের কোন লাভ হয়নি। বরং তারা এ দুনিয়া এবং আখিরাতেও কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাসূলগণ কাফেরদের ঠাট্টা-বিদ্রূপের কারণে নিজেদের সত্য ও সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যাননি, বরং সত্য পথে অটল ছিলেন, সত্য বলা থেকে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি। এ গুণ অবশ্যই নবীগণের অনুসারীদের মধ্যেও থাকা উচিত।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. যারা যুক্তি-তর্ক বোঝে না, তারা রাসূলগণের দাওয়াতের মোকাবেলায় ঠাট্টা-বিদ্রূপের পথ বেছে নেয়। আজও লেখালেখি এবং বাক-স্বাধীনতার ধুয়া তুলে বই বা আর্টিকেলসহ শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে এমনকি ক্যারিক্যাচারের মাধ্যমে পবিত্র দ্বীনের অবমাননা করা হচ্ছে।
২. মুসলমানরা যদি রাসূলগণের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে জানে তাহলে তাদের দুঃখ কষ্ট লাঘব হয়ে যাবে।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন