আঙ্কারা-বেইজিং সামরিক সম্পর্কে ক্ষুব্ধ ন্যাটো: তুরস্কের প্রতিক্রিয়া

আঙ্কারা-বেইজিং সামরিক সম্পর্কে ক্ষুব্ধ ন্যাটো: তুরস্কের প্রতিক্রিয়া

আঙ্কারা-বেইজিং সামরিক সম্পর্কে ক্ষুব্ধ ন্যাটো: তুরস্কের প্রতিক্রিয়া

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, আঙ্কারা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সঙ্গে ন্যাটো জোটের কোনো সম্পর্ক নেই।
তুরস্কের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এরদোগান কসোভোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর আগে সাংবাদিকদের বলেছেন, ন্যাটো জোট ও পাশ্চাত্যের দেশগুলো চীনের কাছ থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ব্যাপারে তুরস্কের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। পাশ্চাত্যের সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় স্বাধীনভাবে তুরস্কের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার কারো নেই বলে মন্তব্য করে এরদোগান বলেছেন, ন্যাটো ও পাশ্চাত্যের কর্মকর্তারা তুরস্কের এ সিদ্ধান্তে নাক গলাতে পারে না।
চীন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র কেনার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে এরদোগান সাংবাদিকদের জানান, এ মুহূর্তে চীন সবচেয়ে সহজ শর্তে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া, তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির দাবিও তারা পূরণ করতে রাজি হয়েছে। তিনি ন্যাটোভুক্ত কোনো কোনো দেশের পরমাণু অস্ত্র প্রকল্পে রাশিয়ার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, চীনের কাছ থেকে তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ব্যাপারে ন্যাটো যদি স্পর্শকাতরতা দেখায় তাহলে ন্যাটোভুক্ত কোনো কোনো দেশের পরমাণু অস্ত্র প্রকল্পে রাশিয়ার ভূমিকার ব্যাপারেও স্পর্শকাতরতা দেখানো উচিত।
তুরস্ক সরকার গতমাসে জানিয়েছিল, বেইজিংয়ের কাছ থেকে ৪০০ কোটি ডলারের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে আঙ্কারা এবং এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে চীনের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ব্যাপারে তুরস্কের সিদ্ধান্তে ন্যাটো বিশেষ করে আমেরিকা খুবই অসন্তুষ্ট। তবে তুরস্ক সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় আঙ্কারায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিস রিকার্ডোনা গতকাল বলেছেন, আঙ্কারার এ পদক্ষেপে ওয়াশিংটন খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, চীনা এ কোম্পানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তুরস্কের সঙ্গে তাদের অস্ত্র চুক্তিতে আমেরিকা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। তবে তিনি এও বলেন, প্রতিরক্ষা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তুরস্ক সরকারের রয়েছে। ন্যাটোর কোনো কোনো কর্মকর্তা বলেছেন, তুরস্কের কাছে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রির উদ্যোগ নিরাপত্তা ক্ষেত্রে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তুরস্ক সরকার জনগণের তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আমেরিকাসহ ন্যাটো জোটকে নানা রকম সেবা দিয়ে আসছে এবং তুরস্কের মাটিতে ন্যাটো ও মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের অনুমতি দিয়েছে। অর্থাত তুরস্ক সরকারের কাছে নিজ দেশের জনগণের চেয়ে পাশ্চাত্যের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন ছাড়াও তুরস্ক সরকার সিরিয়ার সরকার উতখাতের জন্য আল-কায়দাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। এ ছাড়া, এরদোগান সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য ও কয়েকটি আরব দেশের সরকারের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিরিয়াকে নৈরাজ্য ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তুরস্কের মুসলিম জনগণ সিরিয়ার ব্যাপারে সরকারের এ নীতির তীব্র সমালোচনা করে বহুবার প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু তারপরও তুরস্কের কর্মকর্তারা পাশ্চাত্যের ইচ্ছা বাস্তবায়নের বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, তুরস্কের বর্তমান সরকারের প্রতি জনসমর্থন অনেক কমে গেছে এবং প্রধানমন্ত্রী এরদোগানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। এ কারণে এরদোগান সরকার তাদের প্রতি পাশ্চাত্যের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করলেও এ আশা কতখানি বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে তুরস্ক সরকার চীনের কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ায় সন্দেহ আরো জোরদার হয়েছে। এ অবস্থায় তুরস্কের কর্মকর্তারা চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে পারবেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন