ইরানের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের ইতিবাচক মনোভাবে চিন্তিত ইসরাইল

ইরানের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের ইতিবাচক মনোভাবে চিন্তিত ইসরাইল


জেনেভায় ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু আলোচনার পর ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরান বিরোধী ব্যাপক ততপরতা শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি গতকাল রোমে ইতালির প্রধানমন্ত্রী এনরিকো লেত্তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, আমরা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চাই এবং সামগ্রিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের প্রত্যাশিত। তিনি বলেছেন, ২০০৬ সাল থেকে ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের বিষয়টি লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই গত বছর পর্যন্ত ইরানের পরমাণু প্রকল্পে সেন্ট্রি ফিউজের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭০টি কিন্তু চলতি বছর সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজারে। তাই বলা যায় ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির লক্ষ্য একটাই আর তা হচ্ছে পরমাণু বোমা তৈরি করা। তিনি আরো বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করাই যথেষ্ট এবং ১৯ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কোনো প্রয়োজনই পড়ে না। তিনি জাতিসংঘে দেখা ভাষণে ইরানের ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরুর বিষয়টিকে রেডলাইন হিসেবে অভিহিত করে দাবি করেছিলেন, ইরান আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ৯০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার যোগ্যতা অর্জন করবে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এমন সময় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন এবং ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ক্ষেত্রে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি করেছেন যখন মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইসরাইল অবৈধভাবে পরমাণু অস্ত্রের বিশাল মজুদ গড়ে তুলেছে। ইসরাইলের হাতে ২০০টির বেশি পরমাণু বোমা রয়েছে এবং দেশটির পরমাণু কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক কোনো নজরদারি নেই।

দখলদার ইসরাইল এ পর্যন্ত মজলুম ফিলিস্তিনিদের ওপর সীমাহীন জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। ৫০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী জীবন যাপন করছে এবং তাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসার কিংবা ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এ থেকে বোঝা যায়, ইসরাইলি কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার যে চেষ্টা করছেন তাকেই শান্তি প্রতিষ্ঠা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।

শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি ইরানের ন্যায্য অধিকার এবং সম্প্রতি জেনেভা বৈঠকের পর তেহরান এ ব্যাপারে আরো আশাবাদী হয়ে উঠেছে। কিন্তু ইসরাইল এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি এবং এ অসন্তুষ্টির পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইসরাইল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে সংকট তৈরি করে নিজের অবৈধ লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে। এ কারণে পরমাণু সমস্যার সমাধান হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইসরাইল। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান হারানোর কারণে ইরানের অজুহাতে আমেরিকা ও ইউরোপের কাছ থেকে যতটা সম্ভব ছাড় আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে ইরানের পরমাণু বিষয়ে প্রতিটি বৈঠকের পরপরই ইসরাইলি কর্মকর্তারা ইরান বিরোধী প্রচারণায় মেতে ওঠেন।

ইরানের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের মনোভাবে ইতিবাচক পরিবর্তনও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উদ্বেগের আরেকটি কারণ। সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘটনাবলীতে ইরানের প্রভাবশালী ভূমিকা থেকেই পাশ্চাত্যের মনোভাবে পরিবর্তনের কারণ উপলব্ধি করা যায়। এ ছাড়া, পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক সংকটও ইরানের ব্যাপারে তাদের মনোভাবে পরিবর্তনের আরেকটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমনকি এ সংকট ইসরাইল-মার্কিন সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে আমেরিকার ঋণের পরিমাণ ১৭ ট্রিলিয়ান ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টিকে ইসরাইল তার জন্য অত্যন্ত বিপদ হিসেবে দেখছে। নেতানিয়াহু এমন সময় ইরানের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে যখন তাদের নিজেদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। কারণ ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হুমকি কিংবা প্রচারণা এখন আর কেউ বিশ্বাস করছে না।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন