যিয়ারতে আশুরা সংক্রান্ত কিছু কথা
যিয়ারতে আশুরা সংক্রান্ত কিছু কথা
(১) আশুরার যিয়ারত হজরত ইমাম বাকের এবং সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে; কেননা সাফওয়ান হচ্ছেন ইমাম বাকের এবং সাদিক্ব (আ.) এর সাহাবী তিনি বলেছেনঃ আমি একদা ইমাম বাকের (আ.) এর কাছে ছিলাম তখন তিনি উক্ত যিয়ারতটি পাঠ করেন।
তিনি আরো বলেছেনঃ ইমাম সাদিক্ব (আ.) আমরিুল মুমিনিন (আ.) এর যিয়ারতের পরে কারবালার দিকে ইশারা করে উক্ত যিয়ারতটি পাঠ করেন। উক্ত যিয়ারতটি হাদীসে কুদসীর মধ্যে অন্যতম।
শেইখ আব্বাস কুম্মী তার মাফাতিহুল জেনান নামক গ্রন্থে ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে এবং তাঁর বাবা তাঁর বাবার কাছ থেকে এবং এভাবে হজরত আলী (আ.) রাসুল (সা.) থেকে, তিনি জিব্রাইল থেকে এবং তিনি আল্লাহ তায়ালা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই পবিত্র সত্তার শপথ করে বলছেনঃ যদি কেউ দূর অথবা কাছ থেকে ইমাম হুসাইন (আ.) কে উক্ত যিয়ারতের মাধ্যমে স্মরণ করে আমি তার যিয়ারতকে কবুল করবো এবং তার আশাকে পূরণ করবো এবং তাকে বেহেস্তের সুসংবাদ এবং এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রানের নিশ্চয়তা দান করবো এবং সে যদি কাউকে শেফায়াত করে তাহলে তার শাফায়াতকে কবুল করবো।
অতঃপর ইমাম সাদিক্ব (আ.) সাফওয়ানকে বলেনঃ যদি কখনও কোন কিছুর প্রয়োজন মনে কর তখন উক্ত যিয়ারতটি পাঠ করবে। আর কেনইবা এমনটি হবে না কেননা খোদা কোরআনে হজরত ইব্রাহিম এবং নূহ (আ.) কে বলেছেনঃ
وَ سَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَ يَوْمَ يَمُوتُ وَ يَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
তাঁর প্রতি শান্তি যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন জিবীত অবস্থায় পূণরুত্থিত হবে। (সূরা মরিয়ম ১৫)
قُلِ الحَْمْدُ لِلَّهِ وَ سَلَامٌ عَلىَ عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَى ءَاللَّهُ خَيرٌْ أَمَّا يُشْرِكُون
বল সকল প্রসংসাই আল্লাহর এবং শান্তি তার মনোনিত বান্দাগণের প্রতি! শ্রেষ্ঠ কে? আল্লাহ না ওরা –তারা যাদেরকে শরীক সাবস্ত্য করে। (সূরা নামল ৫৯)
سَلَامٌ عَلىَ نُوحٍ فىِ الْعَالَمِين
বিশ্ববাসীর মধ্যে নূহের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। (সাফফাত ৭৯)
سَلَامٌ عَلىَ إِبْرَاهِيم
ইব্রাহিমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।(সাফফাত ১০৯)
سَلَامٌ عَلىَ مُوسىَ وَ هَرُون
মূসা ও হারুনের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।(সাফফাত ১২০)
سَلَامٌ عَلىَ إِلْيَاسِين
ইল ইয়াসিনের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।(সাফফাত ১৩০)
وَ سَلَامٌ عَلىَ الْمُرْسَلِين
পয়গম্বরগণের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।(সাফফাত ১৮১)
سَلَامٌ هِىَ حَتىَ مَطْلَعِ الْفَجْر
এটা নিরাপত্তা যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।(সূরা ক্বদর ৫)
يَأَيَّتهَُا النَّفْسُ الْمُطْمَئنَّة
হে প্রশান্ত নাফস।(সূরা ফজর ২৭)
ارْجِعِى إِلىَ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّة
তুমি তোমার পালনকর্তার প্রতি ফিরে যাও সন্তুষ্ট এবং সন্তোষভাজন হয়ে।(সূরা ফজর ২৮)
فَادْخُلىِ فىِ عِبَادِى
অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও। (সূরা ফজর ২৯)
وَ ادْخُلىِ جَنَّتى
এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরা ফজর ৩০)
অনুরূপভাবে বিহারুল আনওয়ারে আলক্বামা বিন মোহাম্মাদ হাযরামী ইমাম বাকের (আ.) থেকে বর্ননা করেছেন তিনি বলেছেনঃ যদি কেউ ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারত করবে এবং যিয়ারতে আশুরা পাঠ করবে তাহলে খোদা তাকে হাজার পদ মর্যাদা দান করবেন যার ফলে তার সম্মান এমন হবে যে সে, ইমাম হুসাইনের সাথে কারবালায় শহীদ হয়েছে যেদিন ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালায় শহীদ হয়েছিলেন।
(২) শেইখ আব্বাস কুম্মী তার মাফাতিহুল জেনান নামক গ্রন্তে উল্লেখ করেছেন।
(৩) যিয়ারতে আশুরার বিষয় বস্তু হচ্ছে আদ্ধ্যাতিকতার উচ্চ মান সম্পন্ন।
(৪) বিজ্ঞ আলেমগণ যিয়ারতে আশুরার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।
- আয়াতুল্লাহ হাক্ব সেনাস বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ৪০ দিন যিয়ারতে আশুরা পাঠ করার তাকিদ করেছেন।
- আয়াতুল্লাহ বাহজাত বলেছেনঃ শেইখ আনসারী যিয়ারতে আশূরাতে ১০০ সালাম এবং লানত পাঠ করেছেন।
- যিয়ারতে আশূরা হচ্ছে রাসুল (সা.) এবং তাঁর আহলে বাইতের শিয়াদের মানদন্ড।
- ওহাবীরা মক্কা, মদীনা, নাজাফ, কারবালা সহ অন্যান্য যিয়ারতের স্থান সমূহে যিয়ারতে আশুরা পাঠ করাতে বাধা দান করে।
- যিয়ারতে আশূরা পাঠ করার পরে দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য তাকিদ করা হচ্ছে যা মাফাতিহুল জেনানে বর্নিত হয়েছে।
- আদ্ধ্যতিক আলেম আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী কাজী তাবরিযি এর মৃত্যুর পরে একজন তাকে স্বপ্নে দেখে এবং জিজ্ঞাসা করে যে আপনার কোন আমল আপনাকে সবচেয়ে বেশী সাহয়্যে করে তিনি বলেন যিয়ারতে অশুরা, আর আফসোস করেন যে কেন আমি প্রতিদিন যিয়ারতে আশুরা একবার পাঠ করতাম!।
(৫) আহলে বাইত (আ.) দের বর্ণিত বাণী সমূহ হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ সম্বলিত।
(৬) আবা আব্দিল্লাহ এর অর্থ
সাফা সুদুর পৃষ্ঠা ১০৭ বর্ণিত হয়েছে: (বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে যে রাসুল (সা.) কে আবুল কাসিম বলা হয় কারণ তাঁর অধিনে বেহেস্ত ও জাহান্নাম রয়েছে। অনুরূপভাবে রাসুল (সা.)হচ্ছেন হজরত আলী (আ.)ও এই উম্মতের আধ্যাত্মিক পিতা। যেহেতু হজরত আলী (আ.) হচ্ছেন জান্নাত ও জাহান্নাম বন্টনকারী সেহেতু রাসুল (সা.) হচ্ছেন আবুল কাসীম। অনুরূপভাবে ইমাম হুসাইন (আ.) যেহেতু খোদার নিকটে তাঁর এক বিশেষ মর্যাদা বা সম্মান আছে এবং তিনি সমস্ত ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব ইবাদতকে এমনভাবে সম্পাদন করেছিলেন যে, তা দুনিয়ার বুকে এক নজীর বিহিন ঘটনার রূপ লাভ করেছে। ইমাম হুসাইন (আ.) নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দ্বীনে ইসলামকে বাচিয়েছেন। আমরা যদি ইমাম হুসাইনের আত্মোউৎসর্গতার প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব যে, তিনি কারবালার ময়দানে কিভাবে বন্দেগী করেছেন এবং ইবাদতকে জিবীত রেখেছেন।
-আমরা দেখতে পাই যে, তিনি কিভাবে নসিহত করেছিলেন!
-তিনি কিভাবে নির্দেশিকা দিয়েছিলেন!
-তিনি কিভাবে হজ্ব করেছিলেন!
-তিনি কিভাবে জিহাদ করেছিলেন!
-তিনি কিভাবে রোযা রাখতেন!
-তিনি কিভাবে ইফতারী করতেন!
-তিনি কিভাবে রোগিদের সাক্ষাতের জন্য যেতেন!
-তিনি কিভাবে সাজসজ্জা করতেন!
-তিনি কিভাবে পিপাষার্তদেরকে পানি পান করাতেন!
-তিনি কিভাবে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা উৎযাপন করতেন!
-তাঁর মধ্যে হজরত আদম (আ.) এর গুণাবলি আমরা পরিলক্ষিত করতে পারি।
-তিনি কিভাবে নূহ (আ.) এর ন্যায় রাসুল (সা.) এর উম্মতদেরকে নাজাত দান করেন!
-তিনি কিভাবে হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর ন্যায় ভুমিকা পালন করেন!
-তিনি কিভাবে কাবা ঘরকে সম্মানিত করেন!
-কিভাবে তিনি নিজের সন্তানদেরকে খোদার পথে উৎসর্গ করেন!
-আমরা তার মধ্যে হজরত ঈসা (আ.) এর গুণাবলি দেখতে পাই!
-তিনি কিভাবে হজরত ইয়াকুব (আ.) এর ভুমিকা পালন করেন!
-তার মধ্যে হজরত জাকারিয়া (আ.) এর গুণাবলি পরিলক্ষিত হয়!
-তিনি ছিলেন হজরত ইয়াহিয়া (আ.) এর মাজলুমিয়াতের নির্দশন স্বরূপ!
আল্লামা মাজলিসী আমিরুল মুমিনিন (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন খোদা ছিলেন তখন কিছুই ছিল না। তিনি সর্বপ্রথম যে জিনীষটি সৃষ্টি করেন তা হচ্ছে রাসুল (সা.) এর নূর এবং তা পানি মাটি, আরশ, কুরসী, আসমান, জমিন, লওহ, কলম, বেহেস্ত, জাহান্নাম, মালায়েকা এবং হজরত আদম (আ.) এর জন্মের পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
চলবে
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন