মিশরে উগ্রপন্থীর বিস্তার ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে
মিশরে উগ্রপন্থীর বিস্তার ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে
গত দুই বছর ধরে উত্তর আফ্রিকায় বিশেষ করে লিবিয়া, তিউনিশিয়া ও মরক্কোতে প্রকাশ্যে উগ্রপন্থার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। তবে মিশরে উগ্রপন্থা বিস্তারের ধরন একটু ভিন্ন। বলা যায়, অনেকটা গোপনে সেদেশে উগ্রবাদের বিস্তার ঘটেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, মিশরে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামাজিক অসন্তোষ সেদেশে উগ্র গোষ্ঠীগুলোর ততপরতা বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করেছে। ‘কাতায়েবুল ফোরকান’ নামের একটি গোষ্ঠী সম্প্রতি কায়রোয় উপগ্রহ কেন্দ্রের প্রধান দফতরে হামলা চালানোর দায়িত্ব স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, তাদের ছোঁড়া দুটি রকেট ওই কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে। উল্লেখ করা যায়, আল কায়দার সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে এ গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষক,‘কাতায়েবুল ফোরকান’কে আল-কায়দারই একটি শাখা বলে মনে করেন এবং তাদের প্রধান ঘাঁটি মিশরের সিনাই উপত্যকায়। ‘কাতায়েবুল ফোরকান’ সম্প্রতি গত কয়েক মাসে মিশরের আল আরিশ এলাকায় দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে এবং সেদেশে সহিংসতা বিস্তারে তারা ভূমিকা রাখছে। প্রায় এক মাস আগে আল-কায়দার একজন নেতা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছিল। ‘ইরাক ও শামে ইসলামী সরকার’ নামে আরেকটি উগ্র গোষ্ঠীর মুখপাত্র আবু মোহাম্মদ আল আদনানি মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করেছেন। উগ্র গোষ্ঠীগুলোর এ ধরনের ততপরতা ও সমালোচনা থেকে বোঝা যায়, মিশরে উগ্র সালাফি গোষ্ঠী ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠছে।
মিশরে সালাফি গোষ্ঠীর ততপরতা শুরু হয়েছে ১৯৬০ থেকে ৭০এর দশকের দিকে। সে সময় থেকে মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়া ও আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে উগ্র-দৃষ্টিভঙ্গির ধারণা দেয়ার কাজ শুরু হয়। মিশরে উগ্র সালাফি গোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের বিরাট ভূমিকা ছিল। সে সময় থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে সালাফিদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও উগ্র মনোভাব থেকে তারা কখনই সরে আসেনি।
গত দুই বছর ধরে মিশরে বিপ্লব শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় এবং তাদের দুর্বলতার সুযোগে ধীরে ধীরে উগ্র গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় হয়ে উঠছে। আল-কায়দার অনুসারী ইরাক ও সিরিয়ায় ততপর ‘ইরাক ও শামের ইসলামী সরকার’ নামক উগ্র গোষ্ঠী ছাড়াও তিউনিশিয়ায় ততপর ‘শরীয়াতুল ইসলামিয়া’র মত গোষ্ঠীগুলো ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকে কাফের আখ্যায়িত করে তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ বলে মনে করে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে এই শ্রেণীর উগ্র গোষ্ঠীগুলো গণতন্ত্র ও আধুনিকতারও তীব্র বিরোধী। তারা ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকে কাফের আখ্যায়িত করে যে কোনো অপরাধ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। বর্তমানে মিশরে এই শ্রেণীর উগ্র গোষ্ঠীর ততপরতা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে এবং এটা মিশরের জন্য অত্যন্ত বিপদ সংকেত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মিশরে উগ্র গোষ্ঠীগুলোর ততপরতাকে সেদেশের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে,এখনই যদি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না যায় তাহলে মিশরে গোত্রীয় ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখা দেবে এবং এর ফলে সেদেশে সহিংসতার বিস্তার ঘটবে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন