শিয়া মাযহাব বলতে আহলে বাইত (আ.) অনুসারীদেরকেই বোঝানো হয়।

শিয়া মাযহাব বলতে আহলে বাইত (আ.) অনুসারীদেরকেই বোঝানো হয়।
শিয়া মাযহাব তথা ইমামিয়া শিয়া মাযহাবের ফিকাহ্‌‘জাফরী ফিকাহ্‌’ হিসাবেও ব্যাপকভাবে পরিচিত। হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর নামানুসারেই এ ফিকাহর নামকরণ করা হয়েছে । এ নামকরণের কারণ হচ্ছে এই যে, শিয়া মাজহাবের ফিকাহর বেশীর ভাগ ফতোয়াই হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শিক্ষার উপর ভিত্তিশীল ।
আহলে বাইতের মা’সুম ইমামগণের নিকট থেকে যে সব রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অন্য ইমামগণের তুলনায় হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)- এর নিকট থেকে অনেক বেশী রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। হাদীস শাস্ত্রবিশারদগণ (মুহাদ্দিসীন) উলেখ করেছেন যে, হাদীস বর্ণনাকারী প্রায় চার হাজার ব্যক্তি (রাবী) হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর ভিত্তিতে হাদীস বর্ণনা করেছেন ।
এখানে উলেখ্য যে, হিজরী দ্বিতীয় শতকের প্রথমার্ধে ইসলামের ইতিহাসের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ফকিহ্‌র আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে ছিলেন হানাফী ফিকাহ্‌র প্রবর্তক ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও মালেকী ফিকাহ্‌র প্রবর্তক ইমাম মালেক ইবনে আনাস (রহ.)। এ ছাড়াও ছিলেন ছিলেন সুফিয়ান সওরী ও শীবা ইবনে হাজ্জাজীর মত খ্যাতনামা ফকিহগণ। আজকের যুগে মুসলমানরা যে সুবিন্যস্ত ও বিস্তৃত ফিকাহশাস্ত্রের সাথে পরিচিত এ যুগেই তা প্রণীত হয় এবং পরবর্তীকালে তার সম্পূরণ হয় মাত্র। এযুগে বর্তমান ইরাকভুক্ত কুফা ও বসরা শহর ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার বিরাট কেন্দ্রে পরিণত হয়। উভয় শহরেই ফকিহ্‌ও আলেমদের জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র ও একটি সার্কেল ( ঈরৎপষব ) গড়ে ওঠে । এসব কেন্দ্র ও সার্কেল হাদীস শিক্ষা দান ও ফিক্‌হী বিতর্ক সভা অনুষ্ঠিত হতো। হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-ও এ যুগেই আবির্ভূত হন। তিনি ছিলেন উপরোক্ত ফকিহগণের সমসাময়িক। তবে তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় জন্ম গ্রহণ করেন এবং সেখানেই বড় হন। এ সময় মদীনায় বহু হাদীস শিক্ষা দানকারী (মুহাদ্দিস) ও হাদীস বর্ণনাকারী (রাবী) ছিলেন। কিন্তু হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তাঁর ফিকাহ্‌ শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে এসব মুহাদ্দিস ও রাবীগণের বর্ণিত হাদীসকে ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করেন নি। কারণ তিনি অধিকতর উত্তম, উন্নত ও নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাসূত্রের অধিকারী ছিলেন। এ সকল সূত্র ছিল তাঁর মহান পিতা আহলে বাইতের ধারাবাহিকতায় পঞ্চম ইমাম হযরত বাকের (আ.)। এসব হাদীসের প্রথম রাবী ছিলেন স্বয়ং ইমাম বাকের (আ.) এবং তিনি তাঁর পিতা হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) থেকে, তিনি তাঁর পিতা হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) থেকে, তিনি তাঁর পিতা আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) থেকে এবং তিনি রাসুলে আকরাম হযরত মুহাম্মদ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) ছিলেন মা’সুম ইমাম। তাঁর জ্ঞানের উৎস ছিল নির্ভূল , কুরআন মজীদ, আহলে বাইতের সূত্র, স্বয়ং নবী (সা.) থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং আলাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সঠিক বিচার ক্ষমতা ও প্রেরণা। তিনি সমকালীন সমাজে কেবল ধর্ম ও শরীয়তের জ্ঞানেই অতুলনীয় ছিলেন না বরং আধ্যাত্মিকচ্চর্চার ক্ষেত্রেও সকলের শীর্ষে ছিলেন। আহলে সুন্নাতের শ্রেষ্ঠ মনীষিগণও ইলম্‌ ও ইরফানে হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছেন। হানাফী ফিকাহর প্রবর্তক ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) কে স্বীয় যুগের শ্রেষ্ঠ ফকিহ্‌ হিসাবে উলেখ করেছেন। তিনি বলেন, ুজাফর ইবনে মুহাম্মদ [হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)] তাঁর যুগের সর্বাধিক জ্ঞানী ফকিহ্‌।” আর মালেকী ফিকাহর প্রবর্তক ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ুমর্যাদা, পাণ্ডিত্য, তাকওয়া- পরহেজগারী ও আত্মিক পবিত্রতার ক্ষেত্রে জাফর ইবনে মুহাম্মদের চেয়ে উত্তম কাউকে না কোন চোখ দেখেছে, না কোন খানে কেউ এমন কারো কথা শুনেছে, না কোন অনুভূতি এমন কারো অস্-িত্ব অনুভব করেছে ।”
বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালিকান তাঁর গ্রন্থ “ওয়াফিয়াতুল আইয়ান”-এ লিখেছেন, ‘জাফর ইবনে মুহাম্মদের পাণ্ডিত্যের মর্যাদা এতই সমুন্নত যে, তার সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা প্রদানের কোন প্রয়োজন হয় না ।’
বিখ্যাত ইসলামী মনীষী ইবনে হাজার আসকালানী ‘আস্‌সাওয়ায়েকুল মুহইরকা’য় লিখেছেন, “জাফর ইবনে মুহাম্মদ তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার জন্য সমগ্র মুসলিম জগতে সুপরিচিতি ছিলেন এবং মুসলমানরা তাঁর নিকট থেকে জ্ঞান শিক্ষা করতো এবং অন্যদেরকে শিক্ষা দিতো ।”
বর্ণিত আছে, হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) ইমামের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হবার বহু পূর্বে যখন কৈশোর কাল অতি ম করছিলেন তখন থেকে পণ্ডিত ব্যক্তিগণ, মুহাদ্দিস ও হাদীসের রাবিগণ ও কুরআনের তাফসীরকারকগণ তাঁর বক্তব্য শুনতে জমায়েত হতেন ।
আহলে বাইতের অন্যান্য ইমামের তুলনায় হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) অপেক্ষাকৃত দীর্ঘজীবী ছিলেন। এ কারণে তাঁর পক্ষে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকাল উম্মতের হেদায়াতের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব ছিল, বিশেষ করে শীয়া মাজহাবের অনুসারীগণ ও আহলে বাইতের ভক্ত- অনুরক্ত অন্যান্য মুসলমান সব সময়ই তাঁর নিকট এসে সমবেত হতেন এবং তাঁর জ্ঞান সমুদ্র থেকে আহরণ করে নিজেদেরকে ধন্য করতেন। অবশ্য তাঁর যুগে আহলে বাইতের বিরোধিতাকারীও ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারের সমর্থক আলেম ও ফকীহ্‌হবাব দাবীদার কতক লোকের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলে । কিন্তু এতদ্‌সত্ত্বেও হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তাঁর ভক্ত, অনুসারী, সমর্থক ও আহলে বাইতের প্রেমিকদের জন্য আহলে বাইতের পূতপবিত্র ধারাবাহিকতায় সমৃদ্ধ বিশাল, বরং সীমাহীন জ্ঞান ভাণ্ডারের দরজা উম্মুক্ত রাখতে এবং তা থেকে সকলকে নির্ভূল জ্ঞান ও ফিকাহ্‌র দানে ধন্য করতে সক্ষম হন । আর এর প্রভাবে তিনি সমগ্র উম্মতের মধ্যে প্রোজ্জ্বল সূর্যের ন্যায় ভাস্বর ছিলেন ।
আলামা জাহাবী (রহ.) তাঁর “সিয়ারু আ‘লামিন্‌নুবালা” গ্রন্থে বলেন, ‘আমর বিন আবিল মিকদাদ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, তুমি যখনি জাফর ইবনে মুহাম্মদের চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করবে তখনি তুমি অনুভব করবে যে, তিনি রাসুলুলাহ্‌(সা.)-এর উত্তরসুরি। আমি তাঁকে (হজ্জের সময়ে) রামিয়ে জামারায় (পাথর নিক্ষেপের জায়গায়) দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি, তিনি বলতেন, আমাকে জিজ্ঞেস কর, আমাকে জিজ্ঞেস কর।” আর সালেহ্‌ ইবনে আবিল আসওয়াদ বলেছেন, “আমি শুনেছি যে, জাফর ইবনে মুহাম্মদ বলতেন, তোমরা আমাকে হারাবার পূর্বেই আমাকে প্রশ্ন কর , কারণ আমি চলে গেলে আমি যেভাবে হাদীস বর্ণনা করছি তদ্রুপ আর কেউ করবে না ।”
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর ইমামত কাল ছিল ইসলামের ইতিহাসের একটি ঘটনাবহুল অধ্যায় । হিজরী ১১৪ সালে হযরত ইমাম বাকের (আ.)-এর ওফাত ও হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর ইমামতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হবার সময় থেকে এ যুগের সূচনা এবং হিজরী ১৪৮ সালে তাঁর শাহাদাতের মধ্য দিয়ে এ যুগের সমাপ্তি ঘটে। এ সময়ের মধ্যে তাঁর চাচা হযরত জায়েদ বিন আলী বিন্‌আল হুসাইন (আ.)-এর বৈপবিক উত্থান ও শাহাদাত (হিজরী ১২২ সাল), উমাইয়া বংশের হাত থেকে আববাসী বংশের হাতে ইসলামী খেলাফত হতান্তর ( হিজরী ১৩২ সাল ), আবু মুসলিম খোরাসানীর অভ্যুত্থান ও হত্যা (হিজরী ১৩৭ সাল) তৎকালীন আববাসী বংশের খলিফা মানসুর দাওয়ানিকী কর্তৃক আব্দুলাহ্‌ইবনে ইবনে হাসান বিন (রহ.)-কে কারাগারে হত্যা এবং তাঁর দুই পুত্র ( হিজরী মুহাম্মদ বিন আব্দুলাহ্‌(রহ.) ও ইব্রাহীম বিন আব্দুলাহ্‌(রহ.)-কে হত্যা ( হিজরী ১৪৫ সাল ) এবং বাগদাদ নগরীর প্রতিষ্ঠা (হিজরী ১৪৫ সাল ) তাঁর চোখের সামনেই সংঘটিত হয়। এসব ঘটনার সময় মুসলিম জনগণের দৃষ্টি ছিল হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর প্রতি । তাঁদের মধ্যে অনেকেই তাঁকে সমকালীন আববাসী খলিফাদের তুলনায় খেলাফতের জন্য অধিকতর যোগ্য ও হকদার মনে করতেন এবং তাঁরা চাইতেন যে, তিনি যেন খেলাফতের দাবীতে অভ্যুত্থান করেন। এজন্য অনেকে তাঁকে অনুরোধ জানান এবং সর্বাত্মক ভাবে সাহায্য-সহায়তার অঙ্গীকার করেন।
কিন্তু হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) অত্যন্ত গভীর রাজনৈতিক অর্ন্-দৃষ্টি ও দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন এবং তাঁর অনুসৃত কর্মনীতি থেকে এরই প্রমাণ পাওয়া যায়। সমকালীন অন্য অনেকের মধ্যেই তা ছিল না। তাঁর এ অর্ন্-দৃষ্টি ও দূরদর্শিতা সমকালীন বিশৃঙখল পরিস্থিতিতে ও ফিৎনায় জড়িয়ে পড়া থেকে তাঁকে রক্ষা করে ছিল। তৎকালীন পরিস্থিতিতে মুসলিম উম্মাহর জন্য ইমামতরূপ হেদায়াতের আলোকবর্তিকা ও দীনের সর্বতোমুখী জ্ঞানের খুবই প্রয়োজন ছিল। হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তাঁর অনুসৃত কর্ম পদ্ধতির বদৌলতে উম্মতের হেদায়াতের আলোকবর্তিকার হেফাজত ও তাদের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হন।
ঊমাইয়া যুগের শেষের দিকে বনি আবআসের লোকেরা অত্যন্ত কর্মতঃপর হয়ে ওঠে। তারা খোরাসানের সেনা অধিনায়কদেরকে বনি আববাসের নেতৃত্ব মেনে নেয়ার জন্য আহবান জানান। বনি আববাসের শাসন প্রতিষ্ঠার আহবান জানাতে গিয়ে তাতে ধর্মীয় রং দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যুক্তি দেখানো হয় যে, যেহেতু বনি আববাস হচ্ছে রাসুলে আকরাম (সা.)-এর চাচা হযরত আববাস (রা.)-এর বংশধর এবং আহলে বাইতের ঘনিষ্ঠাজন, সেহেতু উমাইয়া স্বৈরশাসনের উৎখাতের স্বার্থে তাঁদেরকেই ক্ষমতায় বসানো উচিত। হযরত আলী (আ.)-এর বংশধর আলাভী সাইয়্যেদদের একাংশ ধারণা করেন যে, বনি উমাইয়াকে উৎখাতের স্বার্থে সাময়িক ভাবে বনি আববাসীয়দের নেতৃত্ব মেনে নেওয়া যেতে পারে; বনি উমাইয়ার পতনের পর জনগণ আলাভীদেরকে খেলাফতে অধিষ্ঠিত করবে এই আলাভী নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন আব্দুলাহ্‌ ইবনে হাসান বিন হাসান বিন্‌ আলী বিন আবি তালিব (রহ.) এবং তাঁর দুই পুত্র মুহাম্মদ ও ইব্রাহীম (রহ.)। বেশ কয়েকটি হাদীসের বর্ণনার ভিত্তিতে তৎকালীন মুসলমানদের অনেকে বিশ্বাস করতেন যে, হযরত ইমাম মাহদীর (আলাহ্‌তাঁর আত্মপ্রকাশ ত্বরান্বিত করুন!), যিনি অনিবার্য ভাবেই হযরত রাসুলে আকরাম (সা.)-এর বংশধর, আগমন খুবই সন্নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা আরো বিশ্বাস করতেন যে, ইমাম মাহদী (আ.)-এর নাম হবে রাসুলে আকরাম হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নামের অনুরূপ অর্থাৎ ‘মুহাম্মদ’ এবং তাঁর পিতার নাম হবে রাসুলে আকরাম (সা.)-এর পিতার নামের অনুরূপ অর্থাৎ ‘আব্দুলাহ’। এসব হাদীসের ভিত্তিতে আলাভীদের একাংশের মধ্যে এ বিশ্বাস সৃষ্টি হয় যে, মুহাম্মদ বিন আব্দুলাহ বিন হাসানবিন হাসান আলী ইবনে আবি তালিবই হবেন সেই ইমাম মাহদী (আ.) এবং তিনি অচিরেই রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হবেন । কিন্তু তাঁরা যা আশা করে ছিলেন বাস্তব ঘটনাবলী সে পথে অগ্রসর হয়নি ।
আব্দুলাহ্‌ইবনে হাসান (রহ.)-এর নেতৃত্বে আলাবী সাইয়্যেদদের একাংশের অভ্যুত্থানের ফলে তাঁদের উপর ক্ষমতাসীন আববাসীয় শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে যে রাজনৈকিত ও সামরিক চাপের সৃষ্টি হয় তাতে হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায় শিকার হন। কারণ একদিকে তাঁরা ছিলেন তাঁরই স্বজন হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)-এর বংশধর। তাছাড়া স্বয়ং হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-ও ক্ষমতাসীন আববাসীয় স্বৈরাশাসনের বিরোধী ছিলেন এবং এ কারণে তাঁর পক্ষ থেকে স্বৈরাশাসক মানসুর দাওয়ানিকীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মুজাহিদদেরকে নৈতিক ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হযরত ইমামের পক্ষে আববাসী খেলাফতের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করা সম্ভব ছিলো না। কেননা তাঁর অন্-র্ দৃষ্টি ও দূরদৃষ্টির বিচারে তিনি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে এ রুপ যুদ্ধ ঘোষণা না করাকেই ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণকর বলে বিবেচনা করেন। তবে ইমাম গোপন ও পরোক্ষ ভাবে আলাভীদের বিদ্রোহকে অনুমোদন প্রদান করেন। কারণ এর মাধ্যমে মানসুর দাওয়ানিকীর স্বৈরাশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছিল। তা ইমাম (আ.) মানসুরকে বোঝাতে চাচ্ছিলেন যে, সে যেন তার খেলাফতের বৈধতার দাবীর গ্রহণযোগ্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়। হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর দৃষ্টি ভঙ্গি ছিল এই যে, স্বৈরাশাসকদের বিরুদ্ধে সব সময়ই এমন কিছু না কিছু চাপ থাকা দরকার যাতে তারা বুঝতে পারে যে, তারা আসলে দুর্বল, তাহলে তারা তাদের জুলুম- অত্যাচারের ক্ষেত্রে চরম সীমায় উপনীত হবে না।
মুহাম্মদ বিন আব্দুলাহ (রহ.) ও ইব্রাহীম ইবনে আব্দুলাহ (রহ.)-কে হত্যা করার পর খলিফা মানসুর হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে পবিত্র মদীনা নগরী থেকে ডেকে মানসুরের রাজধানী বাগদাদে ডেকে পাঠান। হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে বাগদাদে ডেকে পাঠানো সম্পর্কে বিপুল সংখ্যক বর্ণনা রয়েছে। এসব তথ্য অধ্যায়ন করলে সুস্পষ্ট ধারণায় উপণীত হতে হয় যে, মানসুরের উদ্দেশ্য ছিল হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে প্রথমে লাঞ্ছিত করা ও পরে হত্যা করা। কিন্তু হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) মাসসুরের দরবারে উপস্থিত হলে মানসুর তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হন।
মানসুর আলাভীদের অনেকেই নির্মম ভাবে হত্যা করেন এবং বাকীদেরকে কঠোর ভাবে দমন করেন। ফলে কার্যত তাঁর বিরোধী শক্তি নিশ্চিহ্ণ হয়ে যায়। অতঃপর সে হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর আধ্যাত্মিক প্রভাব খর্ব করার চিন্তায় লিপ্ত হন। কারণ তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.)-এর বংশধরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং তিনি ছিলেন সমকালীন মুসলিম উম্মাহর ওলামা, কুফা ও মনীষীদের নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি। তাই তাঁর বর্তমানে মানসুর নিজেকে নিরাপদ ও স্বীয় ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক মনে করতে পারছিলো না। কিন্তু যেহেতু তিনি প্রকাশ্যে আববাসীয় শাসনের বিরোধীতা করেন নি, তাই মানসুরের পক্ষে কোন অজুহাতের আশ্রয় নিয়ে তাঁকে গ্রেফতার ও কারাগারে নিক্ষেপ করা সম্ভব ছিল না ।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) -এর জ্ঞানগত ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব এমন আলোকময় যে, সমকালীন কোন ব্যক্তিত্বই তাঁর কাছাকাছিও উপনীত হতে পারেন নি ।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় জ্ঞানী-গুণী মনীষীর সংখ্যা অনেক। এঁদের মধ্যে মুফাজ্জাল বিন্‌জু’ফী কুফী (রহ.) ছিলেন বিশেষ খ্যাতির অধিকারী। তিনি হযরত ইমাম কর্তর্ৃক মহান আলাহর তাওহীদ (একত্ব) সম্পর্কে উপস্থাপিত ব্যাপক ভিত্তিক প্রমাণসমূহ সম্বলিত রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া বিখ্যাত ুআল্‌ কিমিয়াহ্‌” গ্রন্থের প্রণেতা খ্যাতনামা রসায়নবিদ আবু আব্দুলাহ জাবের বিন হাইয়্যান (কুফাবাসী) সূফী (রহ.)-ও ছিলেন হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শিষ্যগণের অন্যতম। অবশ্য শিয়া মাজহাবের গ্রন্থাবলীতে হযরত ইমামের শিষ্য হিসাবে জাবের বিন হাইয়্যানের নামোলেখ দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু ইবনে নাদিমের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল্‌ ফিহ্‌রিস্ত’-এ উলেখ করা হয়েছে যে, শিয়াগণ তাঁকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিয়া ব্যক্তিত্ব হিসাবে গণ্য করে থাকে এবং তিনি ছিলেন হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শিষ্য।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর নৈতিক মর্যাদা ও সমুন্নত আধ্যাত্মিক মর্যাদা সম্পর্কে বহু বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁর সম্পর্কে অসংখ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও মনীষী ভূয়সী প্রশংসাসূচক মতামত ব্যক্ত করেছেন । হাফেজ আবু নাঈম ইসপাহানী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ুহিল্লিয়াতুল আউলিয়ায়” বলেন যে, হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) ছিলেন “পূর্ণতার পথের পথিকৃৎ”, যিনি আলাহর ইবাদতকে পছন্দ করতেন, নির্জনে আলাহর কাছে দোয়া-মুনাজাত করা অগ্রাধিকার দিতেন এবং মানুষের ওপর শাসন কর্তৃত্বের পরিবর্তে বিনয়-নম্রতাকে ভালোবাসতেন ।
ইসপাহানী আরো লিখেছেন, “তিনি রাতের বেলা সর্বশেষ নামাজ আদায়ের পর এক বস্তা রুটি, কিছু গোশত ও কিছু অর্থকড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন এবং গোপনে তা মদীনার গরীব লোকদের ঘরে ঘরে গিয়ে বন্টন করে দিতেন। যেদিন তিনি শাহাদত বরণ করেন কেবল সেদিনই মদীনার গরীব লোকেরা আবিস্কার করতে সক্ষম হল যে, গোপনে তাদেরকে সাহায্যকারী এ ব্যক্তিটি কে ছিলেন ।”
ইবনে শার্হ‌আশুব তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “মানাকিব”-এ লিখেছেন যে, হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে সব সময়ই তিনটি অবস্থার যে কোন একটি অবস্থায় দেখা যেত। তিনি হয় নফল রোজা রাখতেন, নয় আলাহর জিকির করতেন, অথবা শিক্ষাদানে। তিনি আরো উলেখ করেন যে, যদিও হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) অধিকাংশ সময়ই আধ্যাত্মিক ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন, তথাপি বিপুল সংখ্যক লোক তাঁর সাথে থাকতেন এবং তাঁর সাহচর্য থেকে সুমিষ্ট মুহুর্ত গুলোর স্বাদ গ্রহণ করতেন।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর জীবনকাল ছিল ইসলামের ফিকাহ্‌, হাদীস, আকায়েদ ও ইরফানের ইতিহাসের এক গতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ সময় সংস্কৃতিবান ও এ মাত্র ন্যায়পরায়ণ উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজের পৃষ্ঠপোষকতায় হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এটা ছিল হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরুর দিককার অবস্থা। কিন্তু আহলে সুন্নাতের এ সময়কার অনেক খ্যাতনামা মুহাদ্দিসই (হাদিস বর্ণনাকারী বা বিশেষজ্ঞ) ছিলেন সরাসরি হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর ছাত্র অথবা তাঁর নিকট থেকে হাদীস বর্ণনাকারী ।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর জীবনকালে ফিকাহ্‌শাস্ত্রের ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি সাধিত হয়। একই সময় হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) ফিকাহ্‌শাস্ত্রের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার সাথে সংশিষ্ট প্রশ্নাবলীর জবাব ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা পেশ করছিলেন যার ওপর ভিত্তি করে জাফরী ফিকাহ্‌গড়ে ওঠে। অন্যদিকে এ সময়ই সুন্নী জগতের কয়েকটি বিখ্যাত মাজহাবের আবির্ভব ঘটে। হানাফী মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ছিলেন হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর বিখ্যাত ছাত্রদের অন্যতম। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হতে নিম্নলিখিত বিখ্যাত উক্তিটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি কখনো জাফর ইবনে মুহাম্মদের চেয়ে বড় কোন জ্ঞানীকে দেখিনি।” তিনি আরো বলেন, “(হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শিষ্যত্বের ) ঐ দু‘টি বছর না পেলে আমি হারিয়ে যেতাম।উল্লেখ্য, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) পবিত্র মদীনা ও কুফায় মোট দুই বছর হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর নিকট দীনি শিক্ষা অর্জন করে ছিলেন।
মালেকী মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা হাদীসগ্রন্থ মুয়াত্তা-এর সংকলক ইমাম মালেক বিন্‌ আনাস (রহ.) ছিলেন হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শিষ্য ও ভক্তদের অন্যতম। ইমাম মালেক (রহ.) থেকে নিম্নোক্ত বিখ্যাত উক্তিটি বর্ণিত হয়েছে: কেউই কখনও জাফর ইবনে মুহাম্মদের চেয়ে বড় কোন আলেমের সাক্ষাত পায়নি।
অপর দুই বিখ্যাত সুন্নী মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম শাফেঈ (রহ.) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রহ.), হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শিষ্য ছিলেন না। কারণ তাঁরা তাঁর সমসাময়িক ছিলেন না। কিন্তু তাঁরাও হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) -এর প্রতি অতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং তাঁর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ফিকা শাস্ত্রের উপর গভির দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, এ যুগে ইসলামের অনেক ফিকহী মাজহাবের উদ্ভব ঘটে । হাসান বাসরী ও ওয়াসেল বিন্‌ আতার শিক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এ যুগে মোতাযিলা মাযহাব প্রতিষ্ঠিত হয়। হাসান বাসরী ও ওয়াসেল বিন্‌ আতা হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর কোন কোন শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় লিপ্ত হন। এ সময় জাহশিয়া মাযহাবসহ আরো বেশ কটি মাযহাবেরও উদ্ভব হয়।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) অন্যান্য মাযহাব ও ফিকাহ্‌র অনুসারীদের সাথে যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির ভিত্তিতে বেশ কটি বিতর্কে অংশ গ্রহণ করেন। তাঁর সাথে দাহ্‌রিয়া মতবাদের অনুসারীদের সাথে তাঁর বিতর্ক বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী ।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) ও আব্দুল কারীম ইবনে আবিল আওজাহ্‌র মধ্যে যে বিখ্যাত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় শিয়া মাজহাবের বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ উসুলে কাফী-তে তার বিবরণ উলিখিত রয়েছে।
হিশাম বিন হাকাম ছিলেন ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও ইসলামের তৎকালীন সকল মাজহাবের জ্ঞানে সুপণ্ডিত। তিনি বিভিন্ন মাজহাবের ওপর ব্যাপক গবেষণা করেন। তিনি হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর বিচারবুদ্ধি ও যুক্তিভিত্তিক আলোচনা পদ্ধতিতে মুগ্ধ হন। হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর বিখ্যাত সুফী সাধক ইব্রাহীম বিন আদহাম (রহ.), মালেক বিন দিনার (রহ.), ও সুফিয়ান সওরী (রহ.) ছিলেন হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর চিন্তাধারা দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত শেইখ মুফিদ তাঁর ‘কিতাবুল ইরশাদ’ গ্রন্থে ও ইবনে শাহ্‌র আশুব তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মানাকিব’-এ জোর দিয়ে বলেছেন যে, হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর বক্তব্য (ক্লাস) সমূহে অংশগ্রহণকারী তাঁর ছাত্রগণ ও তাঁর নিকট থেকে হাদীস বর্ণনাকারীদের মোট সংখ্যা ছিল চার হাজার। বর্ণিত আছে, শুধু কুফায় এমন ৯০০ মনীষী ছিলেন যাঁরা হাদীস বর্ণনা করলে হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকেই বর্ণনা করতেন।
তৎকালীন রীতি অনুযায়ী হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তাঁর প্রদত্ত শিক্ষার বেশীর ভাগই তিনি নিজে লিখতেন না, বরং এর বেশীর ভাগই তাঁর ছাত্রদের নোটে সংরক্ষিত হয়। তবে এতদাসত্তেও কিছু কিছু রচনা তাঁর বলে উলেখিত হয়েছে অবশ্য তা প্রকৃতই তাঁর রচনা কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে ।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে তৎপরতা চালান তাঁর মধ্যে প্রধান ছিল এই যে, তিনি এমন বিপুল সংখ্যক লোককে শিক্ষা দান করেগেছেন যাঁরা সাহসী ও আবেদ হয়ে গড়ে ওঠেন । এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবু বাছির মুহাম্মদ বিন মুসলিম, বারী ও হিশাম । হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এঁদের সম্পর্কে বলেছেন, ুএরা হচ্ছে মীনের অভিভাবক ।”
এখানে বিশেষ ভাবে উলেখযোগ্য যে, হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে কেন্দ্র করে এক বিশাল দীনি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে ওঠে। এ শিক্ষাকেন্দ্রে বহু খ্যাতনামা জ্ঞানী-গুণী ও পণ্ডিত- মনীষী গড়ে ওঠেন। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, তাফসির, হাদীস, ফিকাহ্‌, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও চিকিৎসা শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ব্যক্তিগণ ছিলেন। এঁরা ছিলেন সমকালীন বিশ্বের জ্ঞান- বিজ্ঞানের জগতে দেদীপ্যমান প্রোজ্জ্বল নক্ষত্র ।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে মিলন ও সমন্বয়ের সৃষ্টি করেন। তিনি কার্যত প্রমাণ করেছেন যে, ধর্ম ও নৈতিকতার মধ্যে কোন বিরোধ নেই। ইবাদত ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মধ্যেও কোন বিরোধ নেই।
মহান ধর্মীয় নেতা হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর কিছু বাণী আমরা এখানে তুলে ধরলাম। আশা করি সত্যেন্বেষী মানুষদের ঐশী পথে চলার পথনির্দেশনা দিবে ।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন