ইমাম সাদিক্ব (আ.) এর শাহাদত
ইমাম সাদিক্ব (আ.) এর শাহাদত
উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসনামলে ইমাম সাদিক (আ.) ও তাঁর পূর্বপুরুষগণ সর্বদাই জনগণের আস্থা ও সম্মানের পাত্র ছিলেন এবং দিনের পর দিন তাদের জনপ্রিয়তা জনগণের মাঝে বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্বভাবতই অত্যাচারী আব্বাসী সরকার তাদের জবরদখল করা ক্ষমতা হাত ছাড়া হওয়ার ভয়ে এ ধরণের ব্যক্তিত্ব হতে কখনই নিশ্চিন্তে ছিল না এবং তাদেরকে সহ্য করতে পারত না। বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি ও বিভিন্ন ভাবে ইমাম (আ.) গণের অত্যাচারের পর অবশেষ মানসুর দাওয়ানেকী হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) কে বিষপ্রয়োগ করে (মানাকেবে ইবনে শাহরে আশুব, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৮০)। ইমাম সাদিক (আ.) ঐ বিষের প্রভাবেই শাহাদত বরণ করেন।
শেইখ কুলাইনী ও অন্যান্যরা আবু আইয়ুব জোযী হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন : আবু জাফর মানসুর (ওরফে মানসুর দাওয়ানেকী) রাতের আঁধারে আমার নিকট একজনকে পাঠিয়ে আমাকে তলব করলো। অতঃপর আমি তার নিকট গেলাম। মানসুর চেয়ারে বসেছিল, এমতাবস্থায় একটি মোমবাতি তার সামনে জ্বলছিল এবং তারহাতে একটি চিঠি ছিল। তাকে সালাম করা মাত্রই সে ঐ চিঠিটি আমার সম্মুখে ছুড়ে দিল। ক্রন্দনরত অবস্থায় সে বললো : মদিনার গভর্নর মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান এ পত্র পাঠিয়েছে। সে এতে লিখেছে যে, জাফর বিন মুহাম্মাদ (ইমাম সাদিক (আ.) আর দুনিয়াতে নেই। অতঃপর সে তিনবার বললো : ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’।জাফরের মত ব্যক্তি আর কোথায় আছে?
অতঃপর আমার উদ্দেশ্যে বললো : লেখো, আমি লিখছি। মানসুর বললো : লিখো, জাফর (সাদিক আ.) কাকে নিজের পর (ইমাম হিসেবে) ওসিয়ত করে গেছে, তাকে তলব করে শিরোচ্ছেদ করো।
তার উত্তরে সে (মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান) লিখলো : জাফর বিন মুহাম্মাদ ৫ জনকে ওসিয়ত করে গেছেন : আবু জাফর মানসুর (মানসুর দাওয়ানেকী), মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান (মদিনার গভর্নর), তাঁর দুই পুত্র মুসা (ইমাম কাযিম আ.) ও আব্দুল্লাহ (আফতাহ) এবং হামিদাহ। মানসুর নামগুলোকে দেখার পর বললো : তাদেরকে হত্যা করার কোন রাস্তা নেই।
ইবনে শাহরে আশুব তার মানাকেব গ্রন্থে দাউদ ইবনে কাসীর রাক্কী হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: এক বেদুঈন আরব আবু হামযা সুমালী’র নিকট আসলো। আবু হামযা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : কি সংবাদ এনেছো? বেদুঈন বললো : জাফর সাদিক (আ.) ইন্তেকাল করেছেন। আবু হামযা চিত্কার করে উঠে বেহুশ হয়ে গেলেন। হুশ ফেরার পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : তিনি কারো সম্পর্কে ওসিয়ত করে গেছেন (তিনি কি কাউকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করে গেছেন)? বেদুঈন বললো : জ্বী, (তারা হলেন) -তার দুই পুত্র- আব্দুল্লাহ ও মুসা এবং আবু জাফর মানসুর (তত্কালীন আব্বাসীয় শাসক)। অতঃপর আবু হামযা হেসে বললেন : প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি আমাদেরকে হেদায়েত ও পথনির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমাদেরকে বড়’র (ত্রুটি) স্পষ্ট করে ছোট’র প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বৃহৎ একটি বিষয়কে গোপন করেছেন। যখন তাঁর এহেন মন্তব্য সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তখন তিনি বললেন : বড়’র ত্রুটি স্পষ্ট করেছেন এবং ছোটকে প্রমাণিত (সমর্থন) করেছেন... তাকে আওসিয়াদের অন্তর্ভুক্ত বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। মানসুরের নামে ওসিয়ত করে ইমামতের বিষয়টিকে তিনি গোপন করেছেন। কেননা যদি মানসুর ইমামের স্থলাভিষিক্ত সম্পর্কে জানতে চায় তখন তাকে বলা হবে তুমিই ইমামের স্থলাভিষিক্ত। আব্দুল্লাহ যদিও ইমাম সাদিক (আ.) এর বড় সন্তান ছিল, কিন্তু তার শারীরীক সমস্যা ছিল, তিনি ছিলেন আফতাহ (যার মাথা বা নাক ছিল অতিরিক্ত চওড়া) এবং ইমামের অন্যতম শর্ত হচ্ছে তিনি সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত হবেন। আর তাছাড়া ধর্মীয় আহকাম সম্পর্কে তার (আব্দুল্লাহ’র) খুব একটা জ্ঞানও ছিল না।
মাসউদী তার মুরুজুয যাহাব গ্রন্থে লিখেছেন : আব্বাসীয় খলিফা মানসুরের খেলাফতকালের ১০ম বছরে ১৪৮ হিজরীতে আবু আব্দুল্লাহ জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব ইন্তেকাল করেন। তাকে বাক্বী কবরস্থানে তাঁর পিতা ও পিতামহের পাশে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। বলা হয়েছে যে, তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল। জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানের ঐ স্থানে তাদের কবরে একটি মরমর পাথর রয়েছে যাতে লেখা রয়েছে :
«بسم الله الرحمن الرحیم مبید الامم و محیی الرمم هذا قبر فاطمة بنت رسول الله (ص) و سیدة نساء العالمین و قبر الحسن بن علی بن ابی طالب و علی ابن الحسین بن علی بن ابی طالب و محمد بن علی و جعفر بن محمد علیهم السلام».
তাযকেরাতুল খাওয়াস গ্রন্থেও মরমর পাথরের উপর উপরোক্ত লেখা সম্পর্কে ওয়াকেদী হতে বর্ণিত হয়েছে।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন