জামালপুরের দর্শনীয় স্থান সমূহ
জামালপুরের দর্শনীয় স্থান সমূহ
হযরত শাহ জামাল (র)-এর সমাধি
জামালপুর শহরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত এ অঞ্চলের সাধক পুরুষ হযরত শাহ জামাল-এর (র) সমাধি। একটি সমাধিক্ষেত্র ছাড়াও পুরনো একটি মসজিদ আছে এখানে।
হযরত শাহ কামাল (র)-এর সমাধি
জেলার মোলান্দহ উপজেলার দুরমুট ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত হযরত শাহ কামাল-এর (র) সমাধি। এ অঞ্চলের বির্স্তীর্ণ এলাকা ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হলেও এ সমাধিক্ষেত্রটি আজও টিকে আছে। বৈশাখ মাসের শুরু থেকে এখানে মাসব্যাপি ওরস অনুষ্ঠিত হয়। ওরস উপলক্ষে পুরো মাসজুড়ে এখানে গ্রামীণ মেলা বসে। জামালপুর সদর থেকে বাস ও ট্রেনে সহজেই অঅসা যায় এখানে।
দয়াময়ী মন্দির
জামালপুর শহরের জিরো পয়েন্টের কাছে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির। প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্য রীতির সংমিশ্রণে এ মন্দিরটি নির্মিত। প্রতিবছর অষ্টমী পূজা উপলক্ষ্যে এখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়।
চন্দ্রা দিঘি
জামালপুর শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে কয়েক কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত চন্দ্রা দিঘি। জামালপুর শহর থেকে রিক্সা অথবা অটো রিক্সা যোগে অল্প সময়েই যাওয়া যায় এখানে। দিঘির মনোরম পরিবেশ আর বৃক্ষরাজির শোভায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ।
হস্তশিল্পের দোকান
জামালপুর হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এ শহরে তাই হস্তশিল্পের বিপণিবিতানও অনেক। শহরের আশিক মাহমুদ কলেজ সড়কে ও মাদ্রাসা সড়কে এরকম অনেক বিক্রয় কেন্দ্র আছে, যেখানে অনেক কম দামে পাওয়া যাবে জামালপুরের বিখ্যাত নকশি কাঁথা ও সূচিকর্মের বিভিন্ন সামগ্রী।
দেওয়ানগঞ্জের সুগার মিলস
জামালপুর জেলা আখচাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় পাকিসত্মান আমলে এখানে একটি সুগার মিল গড়ে উঠে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যমত্ম ক্রাশিং কার্যক্রম চলে।
যমুনা সার কারখানা
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীতে এশিয়ার বৃহত্তম সারকারখানা রয়েছে। জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাংগাইল, শেরপুর জেলাসহ উত্তাঞ্চলের সারের চাহিদা এখান থেকেই মেটানো হয়। সারকারখানাটি এক শিল্প কারখানা হলেও এখানকার পরিবেশ অত্যমত্ম চমৎকার যা দেখতে খুবই মনোমুদ্ধকর। কারখানা থেকে প্রতিদিন সারবাহী হাজার হাজার ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। সারকারখানা স্থাপনের সুবাদে এখানে বর্তমানে জনবহুল বসতি স্থাপিত হয়েছে। বহু ব্যবসা ও ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় কর্মসংস্থানের পথ সৃস্টি হয়েছে।
গান্ধী আশ্রম
মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাস হাটিয়া গ্রামে গান্ধী আশ্রম কেন্দ্র রয়েছে। এখানে গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এ আশ্রমপ্রতিষ্ঠা করা হয়। আশ্রমে সেবামূলক বেশকিছু কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। সম্প্রতি ভারতীয় হাইকমিশনার জনাব পিনাক রঞ্জণ চক্রবর্তী আশ্রমটি পরিদর্শনে আসেন। এখানে প্রতিদিন বহুদর্শনাথী আশ্রমটি দেখার জন্য আসেন।
কামালপুর
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার উত্তর সীমান্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্যসংলগ্ন কামালপুর রণাঙ্গনে ১১ নম্বর সেক্টরের ১৯৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এই রণাঙ্গনে ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম শত্রুপক্ষের মর্টার শেলের আঘাতে পা হারিয়েছিলেন। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ১৩ নভেম্বর শত্রুর ঘাঁটির ওপর আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে শত্রুপক্ষের এক মেজরসহ দুই কম্পানি পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ১৪ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের মর্টার শেলের আঘাতে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের বাঁ পায়ে আঘাত পান। সেক্টর কমান্ডার গুরুতর আহত হওয়ার পরও পেছনে হটেননি মুক্তিযোদ্ধারা। পরদিন ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে। এর পরই হানাদারমুক্ত কামালপুরে বিজয়ের পতাকা ওড়ে। কামালপুর রণাঙ্গনে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। স্তম্ভের ফলকে শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজসহ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অঙ্কিত রয়েছে।
লাউচাপড়া
জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জের লাউচাপড়ায় অবস্থিত পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র। এখানে চারিদিকে গারো পাহাড়ের সবুজ বন। পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকা একটি সিঁড়ি উঠে গেছে একেবারে চূড়ায়। সেখানে আবার রয়েছে মস্ত বড় এক ওয়াচ টাওয়ার। দশ-বারোটি সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলে চারিদিকে সবুজ ছাড়া কিছুই আর চোখে পড়ে না। দূরে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশছোঁয়া সব পাহাড়। চারিদিকটা যেন ছবির মতো। এই পাহাড়ি জঙ্গলে আছে নানা জাতের পশু-পাখি। ধান পাকার মৌসুমে আবার মেঘালয় থেকে চলে আসে বুনো হাতির দল। কাঠঠোকরা, হলদে পাখি, কালিম পাখি আরো কত ধরনের পাখি চোখে পড়বে এখানে। পুরো জায়গাটি অবসর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
দিকলাকোনা নামে এখানে আছে গারো আদিবাসীদের ছোট্ট একটি গ্রাম। এ গ্রামে বাইশ পরিবারে রয়েছে একশ জন গারো। তারা সবাই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। এ গ্রামের মাতব্বর প্রীতি সন সারমা। ভীষণ সদালাপি এ লোকটির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ। প্রতিবছর বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ, ইস্টার সানডে উপলক্ষে এ গ্রামে হয় নানা উৎসব।দিকলাকোনা গ্রামের শুরুতেই রয়েছে ‘দিকলাকোনা সালগিত্তাল হোস্টেল।
লাউচাপড়ায় রাত কাটানো হতে পারে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এখানকার শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ রাতে যেন আরো শান্ত, আরো স্নিগ্ধ। রাতে এখানে থাকার জন্য দুটি রেস্ট হাউস অছে। একটি জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো এবং অন্যটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বনফুল রিসর্ট। জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসে থাকতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। যোগাযোগ করতে হবে প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, জামালপুর। ফোন- ০৯৮১-৬২৭১৬, ০৯৮১-৬৩৫১৪, ০৯৮১-৬৩২৪০।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন