মানুষের জীবনে বে’সাতের প্রভাব

মানুষের জীবনে বে’সাতের প্রভাব
সমস্ত প্রশংসা মহীয়ান গরীয়ান সৃষ্টিকর্তার। আর অযুত দরূদ ও সালাম সকল নবীর ওপর, বিশেষ করে নবীকুল শিরোমণি হযরত খাতমি মারতাবাত মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ (সা.)-এর ওপর, যিনি জ্ঞান ও সৌভাগ্যের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সকলের চেতনায় ও কর্ণকুহরে।
পবিত্র বে’সাত ও শাবে মে’রাজ উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এ আলোচনা সভায় আমি ‘মানব জীবন ও জগতে বে’সাতের প্রভাব’ শিরোনামে আমার প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে চাই। তবে ত্রিভুজের তিন বাহুর ন্যায় এ আলোচনার তিনটি প্রধান দিক হচ্ছে :
১. বে’সাত তথা ওহী ও নবুওয়াত কী নিয়ে এসেছে?
২. বে’সাত থেকে মানুষ কী লাভ করেছে?
৩. ইহজাগতিক পরিবেশ-পরিমণ্ডলে বে’সাত কিরূপে ও কী পরিমাণে প্রভাব বিস্তার করেছে?
এ তিনটি দিক সমন্বিত করে মানব জীবন ও জগতে বে’সাতের প্রধানতম প্রভাবসমূহ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১. ওহী ও নবুওয়াতের উদ্ভাসে মানব জীবন উজালা হয়ে ওঠা
সৃষ্টিচরাচর মহান আল্লাহর তাজাল্লিময় প্রকাশ। ইরশাদ হচ্ছে : الله نور السماوات و الارض : ‘আল্লাহই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি’।১ সৃষ্টির মাধ্যমেই তাঁর এ জ্যোতির তাজাল্লি প্রকাশ পেয়েছে। الحمد لله المتجلي لخلقه بخلقه : ‘প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সৃষ্টিচরাচরকে সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছেন।’২ فتجلي لهم سبحانه في كتابه من غير ان يكونوا رأوه : মহাপবিত্র আল্লাহ কেউ তাঁকে দেখা ব্যতিরেকেই স্বীয় কুরআনে তিনি তাদের জন্য নিজের তাজাল্লি প্রকাশ করেছেন।’৩ পবিত্র কুরআন হচ্ছে বিশেষ ঐশী তাজাল্লি। ওহী ও নবুওয়াতের নির্যাস হচ্ছে পবিত্র কুরআন। আর এ কুরআনে মহান আল্লাহর তাজাল্লিময় প্রকাশ ঘটেছে তাঁর পবিত্র নাম ‘নূর’ এর মারফতে। এ জন্য সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থটি ‘নূর’ নামকরণ লাভ করেছে। ইরশাদ হচ্ছে : قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين : ‘তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর ও স্পষ্ট কিতাব।’৪ فأمنوا بالله و رسوله و النور اللذي انزلنا و الله بما تعملون خبير : – ‘অতএব, তোমরা ঈমান আন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এবং ঐ নূরের প্রতি যা আমরা অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।’৫
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসমানি কিতাবে ‘নূর’ তথা জ্যোতি নামে মহান আল্লাহ্র তাজাল্লিময় প্রকাশের পবিত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জীবন নূরানি ও জ্যোতির্ময় হয়ে ওঠা। আর এ কথাই স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত হয়েছে খোদ কুরআন মজিদে। ইরশাদ হচ্ছে : كتاب انزلنا اليك لتخرج الناس من الظلمات الي النور : এ গ্রন্থ আমরা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষদের অন্ধকার হতে নূরের দিকে বের করে আন।৬
২. জগৎ ও মানুষ এবং এতদুভয়ের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাখ্যা স্পষ্ট হওয়া
বে’সাতের অন্যতম প্রভাব হচ্ছে জগৎ ও মানুষ সম্পর্কে ব্যাখ্যা স্পষ্ট হওয়া এবং এতদুভয়ের মধ্যকার নিবিড় বন্ধনের কথা প্রকাশ পাওয়া। বে’সাতের আলোর আভায় ফুটে উঠল যে জগৎ তা স্রষ্টাহীন ‘প্রকৃতি’ নয়, বরং স্রষ্টার সৃষ্টি। আর স্রষ্টা হলেন স্বয়ং আল্লাহ। ইরশাদ হচ্ছে : اقرأ بسم ربك الذي خلق : ‘পড়, তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।’৭ আর ইল্ম বা জ্ঞান-বিজ্ঞান, তা জড়, জীব, প্রাণিকুল, মানুষ, এমনকি ফেরেশতা সম্পর্কেই হোক আর সৃষ্টিচরাচরের রহস্যভেদই হোক, সবই আল্লাহর শেখানো, কোন মনুষ্য কীর্তি নয়। الذي علم بالقلم – علم الانسان ما لم يعلم :‘ যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। (তিনি) মানুষকে শিখেয়েছেন যা সে জানত না।’৮
এই সর্বব্যাপী নূরের বর্ষণ ছিল বে’সাতের প্রারম্ভিক প্রভাব। যাতে সকল জ্ঞানী-বিজ্ঞানী সর্বাগ্রে অনুধাবন করে যে, এমন এক পরিসরে সে শ্বাস গ্রহণ করছে ও এমন এক নির্মোহ পরিমণ্ডলে সে অবস্থান করছে যেখানে জ্ঞানকে সে কখনো পার্থিব গণ্য করবে না। বরং জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত এবং দ্বীনকেন্দ্রিক। অর্থাৎ জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সেক্যুলারিটি তথা পার্থিবতার লেবেল লাগিয়ে চালাবার কোন অবকাশ নেই। এখানে বিজ্ঞান এর অর্থ হচ্ছে সৃষ্টিকে জানার মাধ্যমে স্রষ্টাকে অনুধাবন করা। কোন স্রষ্টাহীন জড়ময় প্রকৃতিকে জানার মাধ্যমে নাস্তিক বা জড়বাদী হওয়া নয়। একজন বিজ্ঞানী (মানুষ) জগতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে তাঁরই সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করার প্রয়াস পায় স্রষ্টার পরিচয় লাভের আশায়, যাতে তাঁর জন্য একজন উত্তম বান্দা হতে পারে, পৌঁছতে সক্ষম হয় তাঁর নৈকট্যে। আর এরূপ মারেফাত শুধুই ইসলাম তথা আত্মসমর্পণ। এর অন্য কোন নাম হয় না। কাজেই জগৎ ও জীবনের সম্পর্ককে সেক্যুলার তথা পার্থিবকরণের কোন সুযোগ বে’সাতের শিক্ষায় নেই। সবকিছুই অপার্থিব ও অজাগতিক। যার তাজাল্লি তথা বহিঃপ্রকাশ মাত্র এ জগৎ ও জীবন।
৩. সর্ব প্রকারের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা
বে’সাতের অন্যতম প্রভাব হচ্ছে দাসত্বের কলুষতা থেকে মুক্তকরণ। যা কিছু দূষিত থাকে তা ঐ বস্তুর সাথে মিশে থাকে। আর যা কিছু অন্য কিছুর মিশ্রণে মিশে থাকে তা যেহেতু স্বাধীন নয় একারণে স্বাধীনতা প্রদান করার ক্ষমতাও রাখে না। একইভাবে একজন জ্ঞানী মানুষ আল্লাহর বান্দা হয় এবং তার এ দাসত্ব তাকে অন্য কোন কিছুর সাথে যুক্ত হওয়া থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করে রাখে। এ মুক্তি তথা স্বাধীনতা বে’সাতের ফসল। তাই আমীরুল মুমিনীন (আ.) বলেন : فبعث اللَّه محمداً صلى الله عليه وآله بالحق ليخرج عباده من عبادة الأوثان إلى عبادته، ومن طاعة الشيطان إلى طاعته، بقرآن قد بينه وأحكمه.. : ‘সুতরাং আল্লাহ মুহাম্মাদ (সা.)-কে প্রেরণ করেছেন সত্য সহকারে, যাতে তাঁর বান্দাদেরকে দেব-দেবীর অর্চনা হতে (স্বয়ং) তাঁরই বন্দেগির দিকে বের করে আনেন এবং শয়তানের আনুগত্য হতে তাঁরই আনুগত্যের দিকে বের করে আনেন, কুরআনের মাধ্যমে, যা তিনি স্পষ্ট বিবৃত করেছেন ও দৃঢ় করেছেন।’৯
‘কুরআনকে সুস্পষ্ট বিবৃত করেছেন ও দৃঢ় করেছেন’- এ কথা দ্বারা এটাও প্রতিপন্ন হয় যে, বে’সাতের কল্যাণে খোদ ইল্ম তথা জ্ঞানও দাসত্ব থেকে মুক্তি পায়। কেননা, জ্ঞানী ব্যক্তি যখন দাসত্ব হতে মুক্তি অর্জন করে অর্থাৎ অনিষ্টকর কামনা-বাসনা ও লালসার শৃঙ্খল হতে বেরিয়ে আসে তখন জ্ঞান মানবীয় হওয়ার শৃঙ্খল হতে মুক্তি পায় এবং অশুভ হাতে বন্দি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে।
কেননা, কোন জ্ঞানী ব্যক্তি যদি জ্ঞানকে নিজের কীর্তি বলে মনে করে এবং নিজের নামেই উক্ত জ্ঞানের স্বত্ব নিবন্ধন করে, কুরআনের ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘কারূণী’ জালিয়াতি। সে যতই ইসলামী কথা বলুক না কেন, তার চিন্তাভাবনা হবে কারূণী চিন্তাভাবনা। জ্ঞান আল্লাহরই দান (علم الانسان ما لم يعلم : (তিনি) মানুষকে শিখেয়েছেন যা সে জানত না।(১০। কিন্তু এ জ্ঞানকে যখন মানুষের নামে অধিগ্রহণ করা হয় তখন কারূণের ন্যায় দাবি করে বসে : انما اوتيئه علي علم عندي : ‘(আমার যা কিছু সহায় সম্পদ) এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞান বলে প্রাপ্ত হয়েছি।’১১ যখন আল্লাহর দেয়া জ্ঞানকে স্বাধীনভাবে নিজের বলে দাবি করা হয়। তখনই জ্ঞান দীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। জন্ম নেয় ধর্ম ও বিজ্ঞানের পরস্পর বিরোধ।
৪. বে’সাত ধর্ম ও বিজ্ঞানকে পরস্পর সমজ্ঞস ও সহায়ক হিসাবে তুলে ধরে
জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ঐশী দান বলে স্বীকার না করা, বরং তা মানুষের কীর্তি ও পার্থিব বিষয় বলে মনে করা হলো দীনকে বিজ্ঞানহীনতার নামান্তর মনে করা, আসলে বিজ্ঞান ও ধর্মকে একে অপর থেকে পৃথক করে ফেলার শামিল। এ দুটি প্রদীপ শিখাকে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা কিংবা একটিকে অপরটির সাংঘর্ষিক বলে প্রতিপন্ন করাকে ‘মডার্ন জাহেলিয়াত’ ছাড়া আর কোন নামে আখ্যায়িত করা যায় না।
বে’সাত কেবল আদিম জাহেলিয়াতই দূর করেনি, এ ধরনের মডার্ন জাহেলিয়াতেরও অবসান ঘটিয়েছে। وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ ۚ : ‘এবং যিনি তাদের ভার ও বন্ধন যা তাদের ওপর ছিল (তা হতে) তাদের মুক্ত করেন।’১২ অর্থাৎ বে’সাত যেরূপে আল্লাহ ভিন্ন অন্যের দাসত্বের বোঝা বান্দাদের স্কন্ধ থেকে অপসারিত করেছে তদ্রূপ সৃষ্টিচরাচরের ওপর হতে ‘প্রকৃতি’র অপবাদকে অপসারিত করেছে। অর্থাৎ জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মানবীয় তথা পার্থিব দাবি করার সুযোগ রাখেনি। অন্যকথায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর হতে সেক্যুলারের অপবাদ দূর করে দিয়েছে।
মডার্ন জাহেলিয়াত হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দ্বীনকে পরস্পর পৃথক করে ফেলা। নবুওয়াত এর অবসান ঘটিয়ে এ দুয়ের মধ্যে শুধু সামঞ্জস্য বিধানই নয় বরং এদুয়ের মাঝে অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ককে তুলে ধরেছে। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান হয়ে উঠেছে দ্বীনের পরিপূরক। ইসলামে জ্ঞান ও জ্ঞানীর মর্যাদা এত বেশি হওয়ার কারণ এটাই। এটা পার্থিব নয়, অপার্থিব। এ জ্ঞান, জ্ঞানীকে খোদাবিমুখ করে না, বরং খোদামুখি করে। তাই কুরআন বিজ্ঞান ও ধর্মকে একই ব্যক্তির দু’নয়নের ন্যায় গণ্য করে থাকে।
৫. মানবসভ্যতা ও সমাজে বে’সাতের একটি প্রকাশ্য প্রভাব হচ্ছে জ্ঞানের বিস্তার ও বিকাশ সাধন
মহামহিম আল্লাহ স্বীয় নবী (সা.)-কে পরিচয় দিয়েছেন একজন শিক্ষক হিসাবে। و يعلمهم الكتاب و الحكم : ‘যিনি তাদের কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দান করেন।’১৩ স্বয়ং নবী (সা.)ও জ্ঞানার্জনকে অপরিহার্য গণ্য করেছেন এবং তিনি বিভিন্ন বিদ্যার জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করেছেন। যথা : আকায়িদ, আখলাক, ফেকাহ, আইনসহ মানব জীবনে প্রয়োজনীয় ও উপকারী সকল কৌশলি ও কারিগরি জ্ঞান-বিজ্ঞান। কেননা, তিনি নিজে ছিলেন সকল জ্ঞানের নগরী। أنا مدينة العلم وعلي بابها : ‘আমি জ্ঞানের নগরী ও আলী তার দরজা।’১৪ আজ বিজ্ঞানের যুগে এসে যতই বলা হোক যে, অধুনা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতি এ যুগের মানুষেরই অবদান, বে’সাতের দৃষ্টিতে এ দাবি নিতান্তনই প্রহসন। ঐশী জ্ঞানকে সেক্যুলার তথা পার্থিবকরণের এ এক নিষ্ঠুর মিথ্যাচার, কারূণী চিন্তাধারা।
জ্ঞান সে তো আল্লাহ শিখিয়েছেন। স্বীয় নবীকে বে’সাতের সময় নির্দেশ দিয়েছেন : ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়। নবীর শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ। আর মানুষের শিক্ষক এ নবী। তাঁর শিক্ষা পার্থিব তথা সেক্যুলার নয়। তাঁর মে’রাজ ভ্রমণ অন্য যে উদ্দেশ্যে হোক না কেন, একটি শিক্ষাভ্রমণ ছিল সর্বাগ্রে। এভাবে স্বীয় প্রতিপালকের শেখানো তাঁর জ্ঞান ব্যবহারিক শিক্ষায় পরিণত হয় মে’রাজ ভ্রমণে। তিনি যদি মানুষকে আল্লাহর অস্তিত্ব তথা তাওহীদের শিক্ষা দেন, সেটা টলেমীয় মতবাদের মতো নয় যা পরক্ষণেই ভুল প্রমাণিত হবে। বরং তিনি সেই আল্লাহর দিদার করে এসেছেন। তিনি যদি বেহেশত, দোযখ, ফেরেশতা, মালাকুতের কথা বলেন, তা তিনি স্বচক্ষে অবলোকন করে এসেছেন।
৬. আধ্যাত্মিকতা ও বন্দেগিভিত্তিক মানবসভ্যতা প্রতিষ্ঠা
মানবসভ্যতার ওপর বে’সাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হচ্ছে জনপদের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা ও একত্ববাদের প্রাণস্পন্দন সঞ্চারণের মাধ্যমে মানবসভ্যতাকে উজ্জীবিত করা এবং অন্তরের ও বাইরের সকল বাতিল কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা ও ভ্রান্ত নীতিপন্থা রূপী মূতিসমূহ বর্জন করা। ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা তথা মুক্তি আর নিরাপত্তা হচ্ছে মানুষের প্রধানতম অধিকার। অথচ যুগে যুগে লালসাকারীদের হাতে নগ্নভাবে লুটতরাজের শিকার হয়েছে এসব অধিকার। কিন্তু যেখানেই তাওহীদের ঐশী বার্তা প্রতিধ্বনিত, সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা বলবৎ থেকেছে। আর যে জনপদ নবুওয়াতের উজ্জ্বল দ্যুতি থেকে বঞ্চিত থেকেছে সেখানেই যুদ্ধবিগ্রহ ও অশান্তি বিরাজ করেছে।
কারণ, বে’সাতের দর্শনে মানুষমাত্রকেই তার ব্যক্তি কিংবা সমাজ অথবা শিক্ষা কিংবা কর্ম, সর্বপরিসরেই নিজেকে জবাবদিহি করতে হবে। তার সমস্ত কর্ম সংরক্ষিত ও লিপিবদ্ধ থাকে এবং তার হিসাব দিতে হবে। এই দায়বদ্ধতা মানুষকে আধ্যাত্মিকতা ও বন্দেগিমুখি করে তোলে। স্রষ্টার ইবাদত আর সৃষ্টির সেবাই হয়ে ওঠে মহান ব্রত ।
তাকওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়
বে’সাতের চূড়ান্ত প্রভাব হচ্ছে মানুষের জীবনকে অমরতা দান। কারণ, শুধু যে জিনিসটার কাছে মানুষকে অসহায়ভাবে হার মানতে হয় তা হচ্ছে মৃত্যু। কিন্তু দ্বীনি শিক্ষায় সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মানুষ মৃত্যুর সাথে লড়াইয়ে বিজয়ী। কারণ, সে মৃত্যুকে মেরে ফেলে। মৃত্যুকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে নিজে অনন্তকাল বেঁচে থাকে। কারণ, কুরআনের সূক্ষ্ম ইশারা হচ্ছে : كل نفس ذائقة الموت : ‘প্রত্যেক ব্যক্তিকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’১৫
এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, মৃত্যু প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাদ গ্রহণ করবে। যেহেতু প্রত্যেক স্বাদগ্রহণকারী আস্বাদিত বস্তুকে হজম ও নিশ্চিহ্ন করে ফেলে, সুতরাং মানুষ মৃত্যুকে মেরে ফেলে ধ্বংসকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে তার জীবন হয় অবিনশ্বর, চিরন্তন। আর মৃত্যু যখন নব জীবনের অর্থ লাভ করে তখন বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই সে দীর্ঘ জীবনের পাথেয় সংগ্রহে প্রবৃত্ত হয়। তার মনোযোগ নশ্বর দেহ থেকে নিবদ্ধ হয় অবিনশ্বর আত্মায়।
ইরশাদ হচ্ছে : تزودوا فان خير الزاد التقوي : ‘পাথেয় সংগ্রহ কর, নিশ্চয় উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া’১৬।
তথ্যসূত্র
১ সূরা নূর : ৩৫
২ নাহজুল বালাগা : খোতবা নং ১০৭
৩ নাহজুল বালাগা : খোতবা ১৪৭
৪ সূরা মায়িদা : ১৫
৫ সূরা তাগাবুন : ৮
৬ সূরা ইবরাহীম : ১
৭ সূরা আলাক : ১
৮ সূরা আলাক : ৪-৫
৯ নাহজুল বালাগা : খোতবা ১৪৭
১০ সূরা আলাক : ৫
১ ১ কাসাস : ৭৮
১২ সূরা আ’রাফ : ১৫৭
১৩ সূরা জুমুআ : ২
১৪ আল মুস্তাদরাক আলাস-সাহিহাইন – হাকেম নিশাবুরি
১৫ সূরা আলে ইমরান : ১৮৫
১৬ সূরা বাকারা : ১৯৭
সূত্রঃ ইন্টারনেট

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন