'গর্ভবতী নারীদের জন্য বমি ভাব বা বমি হওয়া ভাল'
'গর্ভবতী নারীদের জন্য বমি ভাব বা বমি হওয়া ভাল'
সন্তান গর্ভে আসার পর মাকে দীর্ঘ দিন ধরে শুধু তাকে বহনই করতে হয় না বরং দেহের ভেতর তাকে লালনও করতে হয়। সন্তান পেটে আসার প্রথম তিন মাস অনেক মা-ই প্রায় কিছু খেতে পারেন না। বমি বমি ভাব বা বমির কারণে তাদেরকে এক দুঃসহ কষ্টের মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়। তবে, গর্ভধারণের প্রথম দিকে এই বমি বমি ভাব ও বমিকে স্বাগত জানিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, এ ধরণের উপসর্গ যাদের দেখা দেয় তাদের অকাল গর্ভপাতের আশংকা কম থাকে। এ গবেষণা দলের সাথে জড়িত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের চ্যাপেল হিলের নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. রোননা এল চ্যান। তিনি বলেছেন, গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যে সব মা বমি বমি ভাব বা বমির উপসর্গে ভোগেন তাদের আতংকিত হওয়ার কোনই কারণ নেই।তিনি আরো বলেন, সফলভাবে যারা মা হতে পেরেছেন, তাদের সবাই গর্ভকালের প্রথম দিকে এমন সব উপসর্গের শিকার হননি। এ ছাড়া, গর্ভকালে মায়েরা যে সব উপসর্গে ভোগেন তা সবারই এক রকম হয় না। এক এক মা এক এক উপসর্গের শিকার হন বলে তিনি জানান। ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ মায়ের এ ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। আগে এ সংক্রান্ত যে সব সমীক্ষা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, বমি বা বমি বমি ভাব যে সব মায়ের হয় তাদের সাধারণভাবে গর্ভপাত হয় না। 'হিউম্যান রিপ্রডাকশন' নামের জার্নালে এ সব কথা লিখেছেন ডা. চ্যান ও তার গবেষক দলটি।এবার সফলভাবে মা হওয়ার সাথে এ সব উপসর্গের সম্পর্ক খতিয়ে দেখার গবেষণা করেন ডা. চ্যান ও তার গবেষক দল। গর্ভকালে মায়েদের মধ্যে এ ধরণের উপসর্গ দেখা দেয় , কি দেখা দেয় না তারা কেবল তাই খতিয়ে দেখেননি ; বরং এ সব উপসর্গ কতোদিন ছিল অর্থাৎ মায়েরা এ সব উপসর্গ কতোদিন ভুগেছেন তাও তারা খতিয়ে দেখেছেন। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি শহরে বসবাসকারী দু'হাজার চারশ'র বেশি মায়ের ওপর তারা গবেষণা চালিয়েছেন।আগে এ বিষয়ে যে সব গবেষণা চালানো হয়েছিল তার সাথে নতুন সমীক্ষার বেশ কিছু অমিল ছিল। ডা. চ্যানের সমীক্ষার জন্য যে সব মাকে বেছে নেয়া হয়েছে তারা হয় গর্ভকালীন সময়ের একবারে গোড়ার দিকে ছিলেন আর না হয়, তারা গর্ভবতী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। ফলে, তা গবেষকদের বেশ সুবিধাজনক হয়ে উঠেছিল বলে জানান ডা. চ্যান। কারণ গবেষক দল সব মাকে দীর্ঘ দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন এবং বমি বা বমি বমি ভাবের উপসর্ভ গর্ভ ধারণের কোন সময় থেকে দেখা দিয়েছে সে সম্পর্কে তারা তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন। গবেষক দলটি দেখতে পেয়েছেন, ৮৯ শতাংশ মায়ের বমি বা বমি বমি ভাবের উপসর্গ সামান্য মাত্রায় হয়েছে। অন্যদিকে, ৫৩ শতাংশ মায়ের বমি ও বমি বমি ভাব হয়েছে। আর গর্ভ ধারণের ২০ সপ্তাহের আগেই ১১ শতাংশের গর্ভপাত হয়ে গেছে।গবেষক দলটি দেখতে পেয়েছেন, ২৫ বছরের অনুর্ধ্ব যে সব মায়ের গর্ভের প্রথম তিন মাস এ ধরণের উপসর্গ অর্থাৎ বমি ও বমি বমি ভাব হয়েছে তাদের তুলনায় যাদের হয়নি তাদের গর্ভপাতের আশংকা ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, ৩৫ বছরের বেশি য সব মায়ের এ ধরণের উপসর্গ হয়নি তাদের গর্ভপাতের আশংকা প্রায় ১২ গুণ। গবেষক দলটি আরো দেখতে পেয়েছেন, এ দুই উপসর্গ যে সব মায়ের বেশি সময় ধরে ছিল তাদের গর্ভপাতের আশংকা কমে গেছে। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মায়েদের ক্ষেত্রে এ উপসর্গের সাথে গর্ভপাতের জোরালো সম্পর্ক আছে বলে তারা দেখতে পেয়েছেন। ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী যে সব মায়ের গর্ভকালীন অর্ধেকের বেশি সময়ব্যাপী এ দুই উপসর্গ থেকেছে তাদের গর্ভপাতের আশংকা তুলনামূলকভাবে ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে, যে সব মায়ের এ ধরণের উপসর্গ দেখা যায়নি তাদের সাথে তুলনা করা হয়েছে।মায়েদের এ ধরণের উপসর্গের সাথে মাতৃত্বে উপনীত হওয়ার একটি সম্পর্ক রয়েছে গবেষকরা তা দেখতে পেয়েছেন। তবে, কেন এমনটি হয় সে বিষয়ে তারা স্পষ্টভাবে আলোকপাত করতে পারেননি। তাই এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত স্বাভাবিকভাবেই থাকবে। ডা.চ্যান বলেন, গর্ভকালে বমি হলে গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক উপাদান বমির মাধ্যমে মায়ের দেহ থেকে হয়ত বের হয়ে যায়। ফলে গর্ভের সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না। এমনটা অনেকেই মনে করেন। তবে এ ধরণের কথার পেছনে যুক্তি রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, গর্ভ বজায় রাখার জন্য যে সব হরমোনের প্রয়োজন সেগুলো প্রথম তিন মাসেই মায়ের দেহে বেশিহারে বৃদ্ধি পায়। বমি ও বমি বমি উপগর্স দেখা দেয়ার মাধ্যমে এই হরমোনের প্রতি মায়ের স্পর্শকাতরতার বিষয়টি ফুটে ওঠে।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন