স্বাদের তিক্ত উপাদান ব্যবহৃত হবে হাঁপানির চিকিৎসায়!

স্বাদের তিক্ত উপাদান ব্যবহৃত হবে হাঁপানির চিকিৎসায়!
তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করার জন্য আমাদের জিভে এক ধরণের স্বাদ গ্রন্থি আছে এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মানুষের ফুসফুসেও তিক্ত স্বাদ গ্রহণের এক ধরণের গ্রন্থি আছে সে কথা বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি জানতে পেরেছেন। এগুলো রয়েছে ফুসফুসের মসৃণ পেশীগুলোতে। এ সব পেশী ফুসফুসের বায়ুপথগুলোকে খোলার ও বন্ধ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে কোনো স্বাদ পাওয়ার সাথে সাথে তা মস্তিস্ককে জানিয়ে দেয় জিভের স্বাদ-গ্রস্থিগুলো। এ কাজটি করে না, ফুসফুসের তিক্ত স্বাদ গ্রস্থিগুলো। কিন্তু ফুসফুসে কোনো তিক্ত স্বাদ পাঠানো হলে তার ফলে ফুসফুসের বায়ুপথের মুখ খুলে দিতে সাহায্য করে এ সব গ্রস্থি। আর এটি দেখা গেছে ইঁদুর নিয়ে গবেষণার সময়। সাধারণ বুদ্ধিতে অনেকেই একে বিস্ময়কর বলে মনে করবেন। কারণ তিক্তস্বাদের কোনো কিছুকে দেহ যদি ক্ষতিকর মনে করে তা যেন ঢুকতে না পারে সে জন্য বায়ুপথগুলো সংকুচিত করে দেবে। সাধারণ বুদ্ধি এ কথাই বলে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। কেশে যেন সহজে এসব উপাদান বের করে দেয়া যায় সে জন্য এ ভাবে বায়ুপথগুলোর মুখ খুলে যাচ্ছে বলে গবেষকরা মনে করেন। এ গবেষণা হয়েছে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্টিফেন লেইগেটের নেতৃত্ব একদল গবেষক এ গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণা ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, নেচার নামের বিখ্যাত গবেষণা সাময়িকীতে। এই গবেষণার ফলাফল দেখে বিজ্ঞানীরা বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠেছেন। তারা আশা করছেন এই গবেষণার ভিত্তিতে হাঁপানির চিকিৎসায় নতুন ও কার্যকর ওষুধ পাওয়া যাবে। তারা কেনো এ আশা করছেন এবার তা খতিয়ে দেখা যাক।

হাঁপানি বা ফুসফুসের অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে বায়ুপথগুলোতে যে সব মসৃণ পেশী আছে তা সংকুচিত হয়। এ কারণে বায়ুপথগুলো ছোট হয়ে যায়। রোগীর শ্বাস কষ্ট হয়।

হাঁপানি - চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হয় যে সব ওষুধ তার একটা সলবুটামল। এটি নাকে টেনে নেয়া যায় বা খাওয়া যায়। তবে আজকালের দিনে সলবুটামল আর রোগীকে সেবন করতে দেয়া হয় না। বরং ইনহেলারের মাধ্যমে এ ওষুধ দেয়া হয়। এ ওষুধ বা এ জাতীয় ওষুধ ফুসফুসের বায়ুপথের পেশীগুলোকে শিথিল করে দেয়। ফলে প্রসারিত হয় বায়ুপথ। রোগী সহজে শ্বাস টানতে পারেন। রোগীর শ্বাস কষ্ট হ্রাস পায় বা বিদায় নেয়। স্বাভাবিক হয়ে আসে শ্বাসঃপ্রশ্বাস। হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় প্রচলিত যে সব ওষুধ ব্যবহার হয় তার যে কোনোটার চেয়ে সহজে ফুসফুসের বায়ুপথগুলো নতুন পদ্ধতিতে অনেক কার্যকর ভাবে খোলা যায়। কুইনাইন প্রচণ্ড ভাবে তিতা। সে কথা সবাই জানেন। এই কুইনাইনকে নিয়ে প্রবাদও গড়ে উঠেছে, কুইনাইন খেলে ম্যালেরিয়া ভাল হবে কিন্তু কুইনাইন ভালো হবে কিসে? তা যাক। গবেষক স্টিফেন লেইগেট আশা করছেন, কুইনাইন জাতীয় ওষুধ দিয়ে এ পদ্ধতিতে হাঁপানি বা এ জাতীয় অসুখের চিকিৎসা হবে। সবচেয়ে মজার কথা হলো, গবেষকরা বলেছেন, এমন কি এ ধরণের চিকিৎসার কাজে স্যাকারিনও ব্যবহার হতে পারে। চিনির চেয়ে কয়েকগুণ মিস্টি স্যাকারিন। স্বাদে তিক্ত নয়। তা হলে স্যাকারিন কেনো ব্যবহার হবে?

স্যাকারিন খাওয়ার পর মুখে একটি তিতা তিতা ভাব তৈরি হয়- যারা স্যাকারিন খেয়েছেন তারাই জানেন। একে 'আফটার বিটার টেস্ট' বা 'খাওয়ার পর তিক্ত স্বাদ'বলা হয়। স্যাকারিনের এই গুণকে কাজে লাগানো যেতে পারে ফুসফুসের বায়ুপথগুলো খোলার জন্য। বর্তমানে সলবুটামলের মতো যে সব ওষুধ একাজে ব্যবহার হচ্ছে অনায়াসে তার বদলে নতুন এ সব ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। তবে এ চিকিৎসা দ্রুত পাওয়া যাবে এমনটা যদি কেউ মনে করেন ভুল করবেন। বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণা হতে হবে। মাত্র ইঁদুরের দেহে এর পরীক্ষা হয়েছে। এখনো মানব দেহে এ ধরণের চিকিৎসার কার্যকারিতা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। সে সব গবেষণায় অনেক সময় লাগবে।

এ বার হয়ত অনেকেই ভাবছেন, তাহলে, ততদিন দেরি করব কেনো? অধিক হারে করলা বা চিরতার মতো তিক্ত জিনিস খাওয়া শুরু করি হয়ত উপকার পাবো। তাতে হয়ত কমবে হাঁপানির কষ্ট। তবে এমন প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, না এভাবে তিতা খেলে সুফল পাওয়া যাবে না। কারণ সুফল পেতে চাইলে তিক্ত পর্দাথকে যেতে হবে ফুসফুসে। খাদ্যনালী দিয়ে যা যায় তা ফুসফুসে পৌঁছায় না।

যাই হোক, আগামী দিনে হাঁপানিসহ ফুসফুসের রোগের নতুন ও কার্যকর চিকিৎসা পাওয়া যাবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছেন গবেষকরা। তাদের সে বিশ্বাস দ্রুত কাজ পরিণত হোক, বাজারে আসুক নতুন ওষুধ। কষ্ট লাঘব হোক হাঁপানিসহ শ্বাসকষ্টের রোগীদের - এ কামনা আমাদের সবার।
সূত্রঃ ইন্টারনেট

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন