গলার স্বর যখন ভেংগে যায় !
গলার স্বর যখন ভেংগে যায় !
একবারও গলা ভাংগেনি বা স্বর বসেনি এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু মুশকিল হলো, গলা ভাংগাকে অনেকেই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেন না। অন্যদিকে, এ কথা অনেকেই জানেন না যে গলা ভাঙ্গা অনেক সময় মারাত্মক অসুখের উপসর্গ হয়ে আসে। আজ গলা ভাঙ্গা ও তার প্রতিকার নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলেছেন , বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের নাক-কান ও গলা বা ইএনটি বিভাগের অধ্যাপক ডা.এসএম খুরশীদ মজুমদার।
সব বয়সী মানুষেরই গলার স্বর ভাঙ্গে বা বসে যায়। তবে তুলনামূলক ভাবে মহিলাদের গলার স্বর বসে বেশি। সাধারণ ভাবে গলার স্বর বসা বা ভাঙ্গার প্রাথমিক কারণ হলো শ্বাসনালীতে ইনফেকশান বা সংক্রমণ। পেশাগত কারণে যাদের গলা ব্যবহার করতে হয়, অর্থাৎ আইনজীবী, সংগীত শিল্পী, রেডিও টেলিভিশনের পাঠক, উপস্থাপক, শিক্ষক বা বিপণণের সাথে যারা জড়িত, তাদের গলা বসে যাওয়ার প্রবণতা বেশী থাকে। গলায় কোনো ইনফেকশন বা সংক্রমণের পরও যদি গলার ব্যবহার অর্থাৎ কথা বলা আগের মতই অব্যাহত রাখা হয়, তবে গলার স্বর বসার আশংকা বেশি থাকে। কিংবা গলার স্বর আরো বেশি করে বসে যায় ও কথাই বের হতে চায় না। এ ছাড়া গলার ব্যবহার যদি ঠিকভাবে না হয়। কিংবা যদি চেঁচিয়ে কথা বলা হয় তা হলেও গলা বসে যেতে পারে।
একই ভাবে কোনো গায়ক বা বক্তা যদি তার গলার ক্ষমতার বাইরেও উঁচু স্বরে কথা বলেন বা চিৎকার করেন বা গান করেন তবে গলা ভেঙ্গে যেতে পারে। ছোট বাচ্চারা অনেক সময়ই গলা ছেড়ে কান্না করে বা আবদার জুড়ে দেয় আর এ কারণে তাদের গলা ভেঙ্গে যায়। অন্যদিকে সন্তানের মায়েদেরকে নানা কারণে চিৎকার করতে হয়। যা তাদের গলার ওপর চাপ ফেলে ও গলা ভেঙ্গে যায়। ইনফেকশান বা অন্য কোনো কারণে যদি গলার স্বর ভাঙ্গে তবে তা বিশ্রাম ও সামান্য ওষুধ ব্যবহার করলে ভাল হয়ে যায়। গলার স্বরের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রথমেই কথা বলা কমিয়ে দিতে হবে। সম্ভব হলে কথা বলা বন্ধ করে দিতে হবে। ঠাণ্ডার কারণে যদি গলা বসে যায় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
গলার সাধারণ ব্যথা বা গলা ভাঙ্গার জন্য ভাল একটি ওষুধ হলো গরম বাষ্প। ফুটন্ত পানির বাষ্প যদি মুখ ও গলা দিয়ে টানা হয় তবে গলার উপকার হয়। দৈনিক অন্তত দশ মিনিট এ ভাবে গরম ভাপ নিতে হবে। এটি সত্যিই কাজের ওষুধ। এক দিকে পানি গরম করতে তেমন বেশি খরচ হয় না। অন্যদিকে এ ওষুধের পার্শ্ব কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এ ছাড়া গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা হলে তাতেও উপকার পাওয়া যায়। তবে এমন সব চিকিৎসাও অনেক সময় কাজে দেয় না। দিনের পর দিন ধরে গলার স্বর বসে থাকে। গলা দিয়ে কথা বের হতে চায় না। স্বর বদলে যায়। ফ্যাস ফ্যাসে আওয়াজ হয়। এ ধরণের পরিস্থিতিকে সব সময় বিপদের লক্ষণ হিসেবে ধরতে হবে। গলা একবার বসে যাওয়ার পর চার সপ্তাহ বড় জোর ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি করা যায়। চিকিৎসকরা মনে করেন কারো গলা ভাঙ্গা যদি ছয় সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় তবে তাকে দেরি না করে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এ ধরণের স্বর বসে যাওয়া অনেক সময়ই মারাত্মক রোগের লক্ষণ হয়ে আসে।
সাধারণ ভাবে ৫০ বছরের উপরের যে কোনো রোগীর গলা যদি কোনো কারণ ছাড়া বসে যায় তবে তা বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া চিকিৎসকরা আরো দেখতে পেয়েছেন, এ ধরণের রোগীদের মধ্যে শতকরা অন্তত দশ ভাগ রোগীর এ ভাবে গলা ভাঙ্গা, বিপদজনক রোগের উপসর্গ হয়ে দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে রোগীর গলার ভেতর পরীক্ষা করে দেখবেন। বিশেষ ধরণের এ পরীক্ষার জন্য রোগীকে অজ্ঞান করে নেয়া হতে পারে। গলাবাজি কথাটি বলা যত সহজ, করা তত সহজ নয়। অবিরাম কথা বলতে সত্যিই বেশ শক্তি ব্যয় হয়। চাপ পড়ে গলায়। তাই যাদের পেশার সাথে কথা বলা জড়িত বা বেশি কথা বলতে হয়, তাদেরকে গলার প্রতি যত্নবান হতে হবে। কারণ গলার যত্ন নিতে অবহেলা করলে শেষে গলা দিয়ে কথাই বের না হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। যা মোটেও কাম্য নয়।
গলার যত্ন নেয়ার কথা আসলে প্রথমেই চিৎকার চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকতে হবে। ঠাণ্ডা লেগে যদি গলা বসে যায় তবে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। যদি কথা বলা বন্ধ করা না যায় তবে কথা বলা কমিয়ে দিতে হবে। ধূমপান গলার যে কোনো সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দেয় বা জটিল করে তোলে। তাই ধূমপান থেকে সাধ্যমত দূরে থাকতে হবে। গলা ভাঙ্গা ও তার প্রতিকার নিয়ে এতোক্ষণ কথা হচ্ছিল। এই আলোচনার মাধ্যমে সবাই গলার যত্ন নেয়ার ও গলা ভাঙ্গার বিষয়ে সর্তক হতে হবে তা বুঝতে পেরেছেন।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন