যোগ ব্যায়ামে সুফল পেতে পারেন স্তন ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা রোগী
যোগ ব্যায়ামে সুফল পেতে পারেন স্তন ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা রোগী
স্তন ক্যান্সার ভাল হয়ে যাওয়ার পর সাধারণত নতুন একটি উপসর্গে আক্রান্ত হন রোগীরা। তারা আক্রান্ত হন সীমাহীন ক্লান্তিতে। এ সব রোগী এতোটাই ক্লান্তি অনুভব করেন যে তাদের পক্ষে সুন্দর ভাবে জীবন-যাপন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
স্তন ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার পর এক তৃতীয়াংশ রোগীই এ ধরনের ক্লান্তিতে আক্রান্ত হ'ন বলে দেখা গেছে। তবে এ সব রোগীর জন্য এবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ছোট একটি জরিপের ভিত্তিতে সে কথাই বলছেন চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, যোগ ব্যায়াম করে এ ধরনের রোগীরা তাদের হারানো প্রাণশক্তি ও উদ্যমের অনেকটাই ফিরে পেতে পারেন।
সপ্তাহে দুইবার করে যোগ ব্যায়াম তিন মাস ধরে চালিয়ে গেছেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গ রাজ্যের স্তন ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা একদল রোগী। এরপর তারা দেখতে পান যে, ক্লান্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে এবং বেড়েছে প্রাণশক্তি ও উদ্যম। একই সঙ্গে সেরে ওঠা রোগীদের আরেকটি দল যোগ ব্যায়াম করেননি, তবে তারা স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ ক্লাসে যোগ দিয়েছেন। জরিপে দেখা গেছে, দ্বিতীয় দলের ক্লান্তি কাটেনি বা হতাশাও যায়নি। লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুলিয়ান বাওয়ার ও তার সহযোগীরা এ জরিপ চালিয়েছেন।
মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলার স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক ড. মারিয়া ক্যাম্পোস বলেছেন, এর আগেও ক্যান্সার রোগীদের ওপর যোগ ব্যায়ামের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বেশ কয়েকটি জরিপ হয়েছে। এ সব জরিপের ফলাফলের সঙ্গে নতুন জরিপের ফলাফলের মিল রয়েছে বলে জানান ড. মারিয়া।
প্রায়ই দেখা যায় ক্যান্সারের চিকিৎসার পর বহু বছর ধরে রোগী সীমাহীন ক্লান্তিতে ভোগেন। কেনো এমন ক্লান্তি দেখা দেয় তার সদুত্তর জানা নেই কারো, এ ধরনের ক্লান্তি দূর করার মতো ভালো কোনো চিকিৎসাও নেই।
কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে মনোপীড়ন হ্রাস করার পদ্ধতি বা ব্যায়ামের ক্লাসে যোগ দিলে ক্যান্সারের রোগী বা ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ক্লান্তি হ্রাস পায়।
তবে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসার মধ্য দিয়ে ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার রোগীর শ্রান্তি দূর হয় কিনা তা নিয়ে এর আগে কোনো গবেষণা চালানো হয়নি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক জুলিয়ান বাওয়ার ও তার সহযোগীরা।
স্তন ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা ৩১জন রোগীকে বেছে নেন এ গবেষক দলটি। তাদেরকে নিয়ে আসা হয় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে। এরপর দৈব চয়নের ভিত্তিতে তাদেরকে পাঠানো হয় সপ্তাহে দু'দিনের যোগ ব্যায়ামের ক্লাসে বা সপ্তাহে একদিনের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ ক্লাসে। তবে তাদের ক্লান্তির মাত্রা কতোটা এর আগে তা নির্ণয় করা হয়। এ জন্য প্রত্যেককে কিছু প্রশ্ন করা হয়। আর এর ভিত্তিতে দেখা যায় তারা প্রত্যেকেই সম পরিমাণ ক্লান্তি অনুভব করছেন।
যে দলটি প্রশিক্ষণ ক্লাসে অংশ নিয়েছেন তারা পুরো জরিপের সময় ধরে একই ধরনের ক্লান্তি অনুভব করেছেন। এ ছাড়া, তাদের শক্তি বা উদ্যমও এ সময় একই রকম ছিল।
কিন্তু বারো সপ্তাহ যোগ ব্যায়াম করার পর ভিন্ন কথা বললো অন্য দলটি। এ দলের সদস্যরা জানালেন, তাদের ক্লান্তি হ্রাস পেয়েছে ২৬ শতাংশ। দেহে প্রাণশক্তি ও উদ্যম ফিরে এসেছে ৫৫ শতাংশ। শুধু তাই না, যোগ ব্যায়াম বন্ধ করে দেয়ার তিনমাস পরও এ দলের সদস্যরা বলছেন, তাদের শ্রান্তি হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
ক্যান্সার নামের সাময়িকীতে এ জরিপের ফল প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য এককভাবে যোগ ব্যায়ামের মধ্য দিয়েই যে ক্লান্তি হ্রাস পেয়েছে সেটা প্রমাণিত হয়নি এ জরিপে। জরিপে অংশ গ্রহণকারী উভয় দলেরই প্রত্যাশা ছিল তাদের যে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে তাতে তাদের দৈহিক অবস্থার উন্নতি হবে। কাজেই 'প্লাসিবো' প্রতিক্রিয়া বলেও চালানো যাচ্ছে না এ জরিপের ফলকে। রোগীকে যে ওষুধ বা চিকিৎসা দেয়া হয় তার কোনো ভেষজগুণ থাকে না কিন্তু কেবলমাত্র রোগীর বিশ্বাস ও আস্থার কারণে রোগ ভাল হয়ে যাওয়ার অনেক ঘটনা চিকিৎসা জগতে ঘটে। এ জাতীয় প্রতিক্রিয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা 'প্লাসিবো' প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন।
যোগ ব্যায়াম করলে ক্যান্সার জনিত শ্রান্তি হ্রাস পায় - তা এর আগে দেখতে পেয়েছিলেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব নার্সিং এর সহযোগী অধ্যাপক জ্যাকুলিন বানাসিক। তার জরিপের ফল প্রকাশ হয়েছিল ২০১০ সালে ‘অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অব নার্সিং প্র্যাকটিশনার্স' নামের সাময়িকীতে।
বাওয়ারের গবেষণা নিয়ে ইমেইলে পাঠানো মন্তব্যে তিনি বলেছেন, আমার ও অন্যান্যদের গবেষণায় যে সুফল পাওয়া গেছে তা পাওয়ার জন্য কেবলমাত্র যোগ ব্যায়াম করতে হবে তা আমি মনে করছি না। মুদ্রা ও অঙ্গভঙ্গিমার ওপর গুরুত্বারোপ করে এমন ব্যালে নাচের ক্লাসেও অংশ গ্রহণ করলে একই ধরনের সুফল পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি জানান। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী বা সাবেক রোগী তার দেহকে ইচ্ছা অনুযায়ী চালনা করতে পারছেন; দেহকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন এ ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ সুফল বয়ে আনছে বলে জানান তিনি।
বাওয়ার ও বানাসিক উভয়েই তাদের জরিপে লিনগার যোগ নামে পরিচিত এক ধরনের আত্মযোগ ব্যায়াম ব্যবহার করেছেন। এ ধরনের যোগ ব্যায়ামে ধীরে ও সঠিক ভাবে অঙ্গ সঞ্চালনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ড. মারিয়া ক্যাম্পোস বলেছেন, ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা রোগীদের শ্রান্তি যদি মাঝারি মাত্রার হয় তবে সাধারণত তাদের কোনো ওষুধ দেয়া হয়না; বরং অ্যাকুপাংচার, ব্যায়াম এবং ফিজিক্যাল থেরাপি দেয়া হয়।
অবশ্য শুধুমাত্র বাওয়ারে জরিপের ভিত্তিতে তিনি এমন রোগীদের যোগ ব্যায়াম করার উপদেশ দিবেন না। তা ছাড়া বাওয়ারের জরিপে একদল রোগীকে যোগ ব্যায়াম করতে দেয়া হয়েছে আরেক দলকে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ক্লাস করতে। এটি ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন তিনি, এর বদলে দু'দলকে দু'ধরনের ব্যায়াম করতে দেয়া হলে ঠিক হতো।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন