পুষ্টিবিদদের অভিমত রংবাহারী খাবার খাও সুস্থ থাকো
পুষ্টিবিদদের অভিমত রংবাহারী খাবার খাও সুস্থ থাকো
রংধনু খাবার আবার কী জিনিস- এ প্রশ্ন মনে জাগা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা সবাই জানি, সাতটি রঙের সমন্বয়ে রংধনু সৃষ্টি হয়। একইভাবে আমাদের প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে নানা রঙের খাবার রাখার প্রতি ইঙ্গিত করে রংধনু খাবারের কথা বলছেন পুষ্টিবিদরা। অবশ্যই কৃত্রিম রঙসমৃদ্ধ কোনো খাবারের কথা বোঝাতে চাননি পুষ্টবিদরা। তারা ফল-মূল ও শাক-সবজির কথাই বুঝিয়েছেন। অর্থাত নানা রকম ফল-মুল ও শাক-সবজিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
আমরা সবাই জানি, শাক-সবজি, ফল-মুল বেশি করে খেলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। আর এর কারণ হলো, এসব খাবারে রোগ প্রতিরোধ করার মতো বিশেষ উপাদান আছে। এমনকি কোনো কোনো রোগের আক্রমণ বিলম্বিতও করতে পারে এসব খাবার। ফল-মুল, শাক-সবজিতে যেসব ভিটামিন থাকে সেগলো হলো- ভিটামিন সি, ক্যারোটেনয়েডস নামের কিছু উপাদান (এসব উপাদানের কোনো কোনোটি দেহে ভিটামিন এ'তে রূপান্তরিত হয়) ভিটামিন কে, রিবোফ্লোবিন এবং ফলিক এসিড।
এ ছাড়া, শাক-সবজি, ফল-মুলে আঁশ ও পানি বেশি থাকে। কিন্তু ক্যালোরি থাকে কম পরিমাণে। শাক-সবজিতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামও থাকে। অন্যদিকে চর্বি ও সোডিয়াম থাকে কম; ফলে এসব খাবার হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
সম্প্রতি জানা গেছে, শাক-সবজি, ফল-মুলে ফাইটোকেমিক্যালস নামের কিছু উপাদান আছে। এসব উপাদানের একাধারে বিজারন ক্ষমতার পাশাপাশি প্রদাহ ও ব্যাকরেটিয়া প্রতিরোধক ক্ষমতা আছে। এ ছাড়া, ফাইটোকেমিক্যালস নামের উপাদানগুলো দেহের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সব মিলিয়ে এসব উপাদানের কল্যাণে সুস্থ ও আরামদায়ক জীবন-যাপন করা সম্ভব। শাক-সবজি ও ফল-মুলে হাজারো রকমের ফাইটোকেমিক্যালস থাকে।
একইভাবে লেবু, কমলালেবু, আপেল, সবুজপাতাসমৃদ্ধ শাক-সবজি, হলুদ ক্যাপসিক্যাম, পেঁয়াজ ও ব্রুকলিতে পাওয়া যায় ফ্লাভোনোলস। নারিনজেনিন পাওয়া যায় সব লেবু জাতীয় ফল ও লাল আঙ্গুরে। এ উপাদান রক্তে কোলেস্টেরল এবং গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। আমের মতো হলুদ ফল, সবুজ পাতাসমৃদ্ধ সবজি এবং গাজরে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। এটি দেহে প্রবেশের পর ভিটামিন এ'তে রূপান্তরিত হয় এবং ক্যান্সার প্রতিহত করতে সহায়তা করে।
এ ছাড়া, ফল-মূল ও শাক-সবজির অন্যান্য সুফলের মধ্যে রয়েছে এগুলো টাইপ-টু ডায়াবেটিস বিলম্বিত করে এবং খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিহত করে। এগুলো মুখগহ্বর ও ফুসফুসের ক্যান্সারও প্রতিহত করতে সহায়তা করে বলে মনে হয়। কাঁচা ফল-মূলসমৃদ্ধ খাবার মস্তিস্কে অ্যামাইলয়েড প্ল্যাক হতে দেয় না। এ ধরনের প্ল্যাক থেকে অ্যালজাইমার রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া, চোখের ছানিও প্রতিহত করে ফল-মূল ও শাক-সবজি।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার প্রাকৃতিক পদ্ধতি হলো সবুজ শাক-সবজিসহ আঁশজাতীয় সবজি খাওয়া।
যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তারা ফল-মূল ও শাক-সবজি বেশি করে খেলে উপকার পাবেন। ডায়েটারি অ্যাপ্রোচেস টু স্টপ হাইপারটেশন বা ডিএএসএইচ পরিকল্পনার আওতায় যখন রক্তচাপ কমানোর চেষ্টা করা হয় তখন উদারভাবে ফল-মূল ও শাক-সবজি খাওয়ার কথা বলা হয়।
এবার প্রশ্ন উঠতে পারে, সুফল পেতে হলে একজন মানুষের দৈনিক কী পরিমাণ শাক-সবজি ও ফল-মূল খাওয়া উচিত? ভারতের ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল বা এনএইচএমআরসি'র সুপারিশ অনুযায়ী, একজন পূর্ণ বয়সী মানুষের দৈনিক পাঁচ রকমের শাক-সবজি এবং দুই রকমের ফল খাওয়া উচিত। তবে আলুকে এ হিসেবের মধ্যে ধরা হয়নি।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন