রেনেসাঁর কবি ইকবাল-১২

রেনেসাঁর কবি ইকবাল-১২


পাঠক! ইকবাল বিশেষজ্ঞ সাইয়্যেদ হাদি খসরুশাহী বলেছেন, 'ঔপনিবেশিকতার যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে পড়া মুসলিম দেশগুলোতে মারাত্মক অচলাবস্থা সত্ত্বেও ইসলাম কীভাবে তার কালজয়ী আদর্শ দিয়ে, মেধা দিয়ে, প্রতিভা দিয়ে বৃহৎ অন্তরগুলোতে শক্তি জোগাতে হয় ইকবাল লাহোরী তা দেখিয়েছেন। ইসলামী সংস্কৃতি খুব ভালোভাবেই পারে মুসলমানদের সন্তানদেরকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বেড়াজাল থেকে নিজের দিকে ফিরিয়ে আনতে। যেমন ইসলামী সংস্কৃতি মুসলিম জাতিকে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ভারতের এক যুবককে অর্থাৎ ইকবালকে উপহার দিতে পেরেছে।'
ইকবাল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পন্ন প্রতিশ্রুতিশীল কবি ছিলেন। তিনি মানবতার ব্যাপারে দায়িত্ব অনুভব করতেন। তিনি একদিকে যেমন আত্মগঠনের চিন্তা করতেন অপরদিকে মানুষকে পথ দেখানো এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বার চেষ্টা করতেন। তিনি উচ্চ মানের কবিতা ছাড়াও দার্শনিক চিন্তা এবং আধুনিক চিন্তা-চেতনার ধারক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনকে তিনি ভালোভাবে আয়ত্ত করেছিলেন। তারপরও তাঁর ব্যক্তিগত লেখাজোখায় যে দর্শন গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে,তা হলো ইসলামী দর্শন। আর এই ইসলামী দর্শনের সাথে পাশ্চাত্য দর্শনের ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে।
ইসলাম কবি ইকবালের চিন্তা-চেতনায়,লেখাজোখায়,মন ও মননে এক কথায় তাঁর জীবনের সকল পর্যায়ে গভীরভাবে শেঁকড় বিস্তার করেছে। তাঁর কাছে সমগ্র মানব জাতির জন্যে ইসলামই একমাত্র উপযুক্ত জীবনাদর্শ। ইসলাম কোনো বিশেষ জাতি-দেশ বা গোষ্ঠির জন্যে নয় বরং সমগ্র বিশ্বের সকল মানবগোষ্ঠির জন্যে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইকবালের চিন্তা-দর্শন এবং তাঁর সাহিত্যের সাথে সম্যক পরিচিত। ইকবালের এইসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি মনে করেন-ইকবালের বিষয়টা কেবল ভারতেরই নয় বরং সমগ্র প্রাচ্য এবং মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পৃক্ত।
'প্রাচ্যবাসীর তাহলে কী করণীয়?' নামক গ্রন্থে দেখা গেছে' জুলুম অত্যাচার পীড়িত জনগোষ্ঠী কীভাবে জীবন যাপন করছে সেসব ব্যাপারে তিনি ওয়াকিফহাল এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ব্যাপারে তিনি সচেতন। ইকবাল কেবল ভারতেরই নন কেননা তাঁকে যদি একজন সমাজ সংস্কারকও বলা হয় তাহলেও তাঁর সকল বৈশিষ্ট্যের কথা না বলাই থেকে যায়।
ইকবালের দৃষ্টিতে মানব মুক্তির একমাত্র পথ হলো ধর্মকে ভালোভাবে আঁকড়ে ধরা। আর তা সম্ভব হবে কেবল নিজেকে জানার মাধ্যমে। ইকবালের মতে এই নিজেকে চেনার মাধ্যমে আল্লাহকে চেনার পথ এবং আধ্যাত্মিকতার সত্য-সঠিক পথের সন্ধান মেলে। নিজেকে চেনার বিষয়টি ইকবাল লাহোরীর চিন্তার মূল কেন্দ্রবিন্দু। এই নামে তিনি একটি বইও লিখেছেন। বইটির নাম হলো 'আসরারে খুদি ও রমুযে বেখুদি'। ইকবাল তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্যে প্রাচ্যের মুসলিম জাতির বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক শক্তিকে পুনরায় জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন এবং তাদেরকে পাশ্চাত্য রাজনীতি,অর্থনীতি এবং চিন্তার দৈন্যতা থেকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
তিনি মনে করতেন মুসলমানদের উচিত সবকিছুর আগে নিজেকে চেনা এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়া। আর নিজেকে চেনার জন্যে কোরআন এবং সুন্নাতের অনুসরণ করতে হবে। সেইসাথে নিজের আত্মাকে সকল প্রকার পংকিলতা,মন্দকাজ এবং শারীরিক ও মানসিক দূষণ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। তাঁর মতে মুসলমানের সকল কাজ কর্মের ল্য হওয়া উচিত আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত রাখা,আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এবং মুসলমানদের মাঝে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।
ইকবালের যেই খুদি দর্শন তার উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং যারা পাশ্চাত্য দর্শনে বুঁদ হয়ে আছে তাদের চিন্তায় পরিবর্তন আনা। তিনি ইসলামের প্রাচীন গৌরব ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং শান্তিপূর্ণ ইসলামী শাসনের উল্লেখ করাটাকেও মুসলমানদের মুক্তির উপায় বলে মনে করতেন। ইসলামী শাসনকেই তিনি মুসলমানদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবার উপায় বলে মনে করতেন।
সূত্রঃ ইরান বাংলা রেডিও

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন