রেনেসাঁর কবি ইকবাল -৬

রেনেসাঁর কবি ইকবাল -৬


পাঠক ! কবি ইকবালের জীবন ও কর্ম ভিত্তিক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান রেনেসাঁর কবি ইকবালের আজকের পর্বে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। গত আসরে আমরা ইকবালের কবিতার ওপর ইরানের বিখ্যাত কবিদের প্রভাব এবং তাদের কবিতার সাথে ইকবালের কবিতার মিল সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। আজকের আসরে আমরা ইকবালের কবিতায় ইমাম আলী ( আ ) এর বক্তব্যের প্রতিফলন নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।
ইকবাল সবসময় কবিতা এবং দর্শন নিয়ে বিশেষ করে কোরআনের ওপর ব্যাপক পড়ালেখা করেছেন। তিনি তাঁর জীবীতাবস্থায় কখনোই কোরআন চর্চা থেকে বিরত হন নি। তিনি সমাজ ও মানব উন্নয়নের মহান দায়িত্বভার নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তাই তিনি কোরআন নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা প্রদান সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ইকবাল হযরত মুহাম্মাদ ( সা ) , হযরত ফাতেমাতুয যাহরা ( সা ), ইমাম আলী ( আ ) এবং ইমাম হোসাইন ( আ ) এর অনুসরণে নিজের জীবনকে সাজানোর এবং তাঁদের আদর্শগুলোকে নিজের জীবন ও কবিতায় বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছেন। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে যে ইকবালের কবিতা হলো তাঁর আন্তরিক ও অকুণ্ঠ বিশ্বাসেরই প্রতিফলন।
ইকবালের কবিতা প্রমাণ করছে যে, তাঁর অন্তর ছিল সম্পূর্ণ কালিমা মুক্ত। তিনি যেসব বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন সেগুলো একজন খাঁটি ঈমানদার ও মুমিনেরই বক্তব্য। হযরত আলী ( আ ) শাহাদাতকে মর্যাদা ও সততার প্রতীক বলে মনে করতেন। কবি ইকবালও বিখ্যাত বুযুর্গানে দ্বীন হযরত আলী ( আ ) এর মতো মৃত্যু সম্পর্কে অনুরূপ চিন্তাই পোষণ করেন।
তোমাকে বলবো আমি মুমিন ব্যক্তির লক্ষণ
মৃত্যু আসে যখন হাসিমুখে করে সে বরণ
কবি ইকবালও মৃত্যুকে তাঁর প্রশান্তির কারণ বলে মনে করতেন। কেননা তিনি শিখেছেন যে রুহ হলো অবিনশ্বর,অমর। মৃত্যু হলো কেবল মাটির দেহ থেকে তার বিচ্ছিন্ন হওয়া। এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে কবি ইকবাল তাঁর মৃত্যুর কদিন আগে তাঁর ভাইকে বলেছিলেন "আমি মুসলমান,তাই আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না।"
ইসলামের প্রতি ইকবালের ব্যাপক জ্ঞান থাকার কারণে এবং কোরআন হাদীসের সাথে তাঁর ব্যাপক পরিচিতির কারণে তাঁর জ্ঞানের পরিধি ছিল ব্যাপক বি¯তৃত। যার ফলে ইসলামী চিন্তা-চেতনাসমৃদ্ধ তাঁর বক্তৃতাগুলো শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়াতে পেরেছিল সহজেই। কবিত্ব এবং শিল্পের ব্যাপারে যখন যথাযথ ইকবালের বোধ ও উপলব্ধি হলো, তখন তিনি ধর্মীয় বাস্তবতা এবং নবী-রাসূলগণের রেসালাতের তাৎপর্যও উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আর এসব কিছুকেই তিনি মনে করতেন বিশ্বমানবতার কল্যাণের আধার। তাঁর মতে শিল্পকলার লক্ষ্যই হলো মানবজীবনের সমৃদ্ধি ও সৌন্দর্য বিধান করা। " জীবনসত্যকে উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে মানুষের যেসব চেষ্টা-প্রচেষ্টা রয়েছে,সেগুলোরই প্রতিনিধিত্ব করে শিল্প।"
ইসলাম এবং ইসলামের নবীকে ভালোবাসা ইকবালের মন ও মননে ইংরেজি ভাষায় রাসূল সম্পর্কে একটি গ্রন্থ রচনার আগ্রহ জন্মিয়েছে। কিন্তু তাঁর এই চিন্তা বাস্তবায়িত হয় নি। কেননা ইকবাল কবিতার ভূবনে এতো বেশি বুঁদ হয়ে গিয়েছিলেন যে গবেষণাকর্ম বা গদ্য রচনায় তিনি তেমন একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলেন না। ইকবাল মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্তও কবিতা রচনা থেকে বিরত ছিলেন না। মৃত্যুর আধা ঘণ্টা আগেও তিনি ধর্মানুরাগ এবং রাসূলপ্রীতি সম্পর্কে কবিতা লিখে গেছেন।

হারানো সঙ্গীত ফিরে আসবে আবার
আসে নি যা কখনো আর
হেজাজের মৃদুমন্দ আসবে আবার
আসে নি যা কখনো আর
জ্ঞানের দারিদ্র্যপূর্ণ এই পৃথিবীতে
রহস্যের সেই পূণ্য জ্ঞান
ফিরে আসবে আবার
আসে নি যা কখনো আর
ইসলামী জ্ঞানের সমৃদ্ধির কারণে ইকবাল তাঁর আদর্শ সমাজকে তৌহিদ, কোরআন, নবুয়্যত, কাবার মানদণ্ড এবং সামাজিক খুদির উন্নয়ন ও অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রমের ভিত্তির ওপর কল্পনা করতে পেরেছিলেন।
স্রষ্টা বানালেন এই দেহকাঠামো সুন্দর করে
রেসালাত তাতে ফুঁকিয়েছে বায়ু প্রাণের তরে
বিশ্বব্যাপী আমাদের অস্তিত্ব রেসালাতের পথ ধরে
ধর্ম আমাদের জীবন বিধান রেসালাতের পথ ধরে
................ ............... .............
লক্ষ মানুষ একমনা এই রেসালাতের পথ ধরেই
দেহের প্রতি অঙ্গ যেমন অবিচ্ছেদ্য এক দেহেরই
ইকবাল কোরআন , ইসলামী জ্ঞান এবং বুযুর্গানে দ্বীনের জীবনাভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের প্রয়োজনে কবিতা লিখেছেন। ইসলামের সহমর্মিতা,বিশ্বাস ও ঐক্যকে ফুটিয়ে তোলার জন্যে তিনি কবিতাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সেজন্যেই তিনি মুসলিম ঐক্যের আহ্বায়কের শিরোপা লাভ করেছেন। হযরত আলী (আ) এর ওপরও ছিল তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। তবে তিনি এও মনে করতেন যে শক্তিবলে ইমাম আলী ( আ ) খায়বার বিজয় করেছিলেন,সেই শক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া এক বিশেষ অনুগ্রহমাত্র।
সূত্রঃ ইরান বাংলা রেডিও

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন