ওহাবি মতবাদঃ ২০ তম পর্ব
ওহাবি মতবাদঃ ২০ তম পর্ব
তাওয়াসসুল একটি বহুল পরিচিত শব্দ। তাওয়াসসুল একটি দোয়ার উপায়। তাওয়াসসুল আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হবার একটি দরজা। পারিভাষিক অর্থে বান্দার হাজত পূর্ণ করার জন্যে আল্লাহর কাছে কোনো বস্তু কিংবা ব্যক্তিত্বকে মাধ্যম হিসেবে দাঁড় করানোই হচ্ছে তাওয়াসসুল। ইসলামে এসেছে মানুষ তিনটি উপায়ে আল্লাহর কাছে তাওয়াসসুল অন্বেষণ করতে পারে।
এক, নিজের ব্যক্তিগত নেক আমলের সাহায্যে। অর্থাৎ বান্দা তার নেক আমলগুলোকেই আল্লাহ এবং তার মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টিকারী মাধ্যম হিসেবে দাঁড় করাতে পারে এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারে ঐ আমলগুলোর ওসিলায় যেন আল্লাহ তার হাজত পূর্ণ করে দেন।
তাওয়াসসুলের দ্বিতীয় উপায়টি হলো আল্লাহর মনোনীত এবং প্রিয় বান্দাদের দোয়াকে তাওয়াসসুল বা মাধ্যম হিসেবে দাঁড় করানো। তার মানে হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দাদের কাছে তার জন্যে দোয়া চাওয়ার আবেদন করা। যেমনটি পবিত্র কোরআনে হযরত ইউসুফ (আ) এর গল্পে আমরা লক্ষ্য করবোঃ
ইউসুফ (আ) এর ভাইয়েরা যখন তাদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত হলো তখন তারা গেল তাদের পিতা হযরত ইয়াকুব (আ) এর কাছে। পবিত্র কোরআনে সূরা ইউসুফে এই ঘটনার বিবরণ রয়েছে। ইউসুফের ভাইয়েরা তাদের পিতাকে বললোঃ "হে পিতা! মহান আল্লাহর কাছে আমাদের পাপের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করো। বলো যে আমরা ভুল করে ফেলেছি।" ইয়াকুব (আ) জবাবে বললেনঃ "আমি শীঘ্রই আমার পরোয়ারদেগারের দরবারে তোমাদের জন্যে ক্ষমার আবেদন জানাবো। আল্লাহ অনেক ক্ষমাশীল এবং মেহেরবান।" এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায় হযরত ইয়াকুব (আ) এর সন্তানেরা দোয়া এবং এস্তেগফারের জন্যে তাদের পিতার শরণাপন্ন হয় এবং তাকেঁ তাদের ক্ষমার ওসিলা হিসেবে সাব্যস্ত করে।
তাওয়াসসুলের তৃতীয় উপায়টি হলো আল্লাহর কাছে যাদের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে সেইসব ব্যক্তিত্বদের শরণাপন্ন হওয়া বা তাদেরকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা। নবীজীর সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও এ ধরনের তাওয়াসসুলের উদাহরণ লক্ষ্য করা যায়।
কোনো মুসলমানই নেক আমলের সাহায্যে আল্লাহ তায়ালার সাথে তাওয়াসসুলের বৈধতার ব্যাপারে সন্দেহ করে না। অথচ ওহাবিদের বিশ্বাস তাওয়াসসুল প্রার্থীর উচিত নয় কোনো ব্যক্তির শরণাপন্ন হওয়া এবং এরকম বলাঃ 'হে খোদা! আমি তোমার পয়গাম্বরের ওসিলায় তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি।' ওহাবি মতবাদের দৃষ্টিতে এ ধরনের তাওয়াসসুল করা ভুল এবং এ ধরনের আমল যারা করে তাদেরকে তারা মুশরিক বলে মনে করে। অথচ আহলে সুন্নাতের অনেক বড়ো বড়ো আলেমের বক্তব্য এবং লেখালেখিতেও রাসুলে খোদা (সা) এর প্রতি তাওয়াসসুল করার ব্যাপারে বহু বর্ণনা রয়েছে। তাদেঁর লেখায় কখনোই এ ধরনের তাওয়াসসুলকে শিরক বলে উল্লেখ করা হয়নি।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন