মহররম

মহররম
কাজী নজরুল ইসলাম
নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া -
আম্মা লাল তেরী খুন কিয়া খুনিয়া,
কাঁদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে?
সে কাদনে আসু আনে সিমারের ও ছোরাতে।
রূদ্ধ মাতাম ওঠে দুনিয়া দামেস্কে -
জয়নালে পরালো এ খুনিয়ারা বেশ কে ?
হায় হায় হোসেনা ওঠে রোল ঝন্ঝায়,
তলোয়ার কেপে ওঠে এজিদের পান্জায়
উন্মদ দুল দুল ছুটে ফেরে মদিনায়
আলী জাদা হোসেনের দেখা হেথা যদি পায়।

মা ফাতিমা আসমানে কাদি খুলি কেশপাশ
বেটাদের লাশ নিয়ে বধুদের শ্বতবাস
রণে যায় কাশিম ঐ দু'ঘড়ির নওশা
মেহেদির রং টুকু মুছে গেল সহসা -
হায় হায় কাদে বায় পূরবী ও দক্ষিনা
কন্কন পৌচী খুলে ফেল সকিনা
কাঁদে কেরে কোলে করে কাশেমের কাটা শীর
খান খান খুন হয়ে ক্ষরে বুক ফাটা নীর
কেঁদে গেছে থামি হেথা মৃত্য ও রুদ্ধ
বিশ্বের ব্যাথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্র

গড়া গড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা
আম্মাগো পানি দেও ফেটে গেল ছাতিমা
নিয়ে তৃষ্ষা সাহারার দুনিয়ার হাহাকার
কারবালা প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহা কার
দুই হাত কাটা তবু শের নর আব্বাস
পানি আনে মুখে হাকে "দুশমন ও সাব্বাস" ।
দ্রিম দ্রিম বাজে ঘন দুন্দভী দামামা
হাকে বীর "শীর দেগা নেহী দেগা আমামা"

কলিজা কাবাব সম ভূনে মরু রোদ্দুর
খাঁ খাঁ করে কারবালা নাই পানি খজ্জুর
মার স্তনে দুধ নাই বাচ্চারা তড়পায়
জিভ চুষে কচি জান থাকে কিরে ধড়টায়
দাও দাও জ্বলে শিরে কারবালা ভাষ্কর
কাঁদে বানু পানি দেও মরে যাদু আসগর
পেলনাতো পানি শিশু পিয়ে গেল কাঁচা খুন
ডাকে মাতা পানি দেব ফিরে আয় বাছা শোন -

পুত্র হীনা আর বিধবার কাঁদনে
ছিড়ে আনে মর্মের বত্রিশ বাধনে
তাম্বুতে সজ্জায় কাদে একা জয়নাল
দাদা তেরী ঘর কিয়া বরবদ পয়মল
হায়দারী হাক হাকে দুল দুল আসওয়ার
শমশের চমকায় দুশমুনে ত্রাসবার
খসে পড়ে হাত হতে শত্রুর তরবার
ভাষে চোখে কেয়ামতে আল্রার দরবার।
নিঃশ্বেষ দুশমুন ওকে রণশ্রান্ত
ফোরাতের নীরে নেমে মুছে আখি প্রান্ত।
কোথা বাবা আসগর শোকে বুক ঝাঝরা
পানি দেখে হোসেনের ফেটে যায় পাজরা
ধুকে মলো আহা তবু পানি এক কাতরা
দেয়নিরে বাছাদের মুখে কম জাতরা
অন্জলী হতে পানি পড়ে গেল ঝর ঝর
লূটে ভূমে মহাবাহু খন্জর জর্জর।
হলকুমে হানে তেগ ওকে বসে ছাতিতে
আফতাব ছেয়ে গেল নীল আধীয়ার রাতিতে
আসমান ভরে গেল গোধুলীতে দুপুরে
লাল নীল খুন ঝরে ফুরাতের উপরে
বেটাদের লহুরাঙ্গা পীরহান হাতে আহা
আশরের পায়া ধরে কাদে মাতা ফাতেমা
এয় খোদা বদলাতে বেটাদের রক্তের
মার্জনা কর গোনা পাপী কম বখতের
কত মহরম এল গেল চলে গেল বহু কাল
ভুলিনি গো আজো সেই শহীদের লহুলাল
মুসলিম তোরা আজ জয়নাল আবেদীন
ওয়া হোসেনা ওয়া হোসেনা কেদে তাই যাবে দিন
ফিরে এল আজ সেই মহরম মাহিনা
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা।
উষ্ষীষ কোরআনের হাতে তেগ আরবীর
দুনিয়াতে নত নয় মুসলিম কারো শীর।
তবে শোন ঐ শোন বাজে কোথা দামামা
শমশের হাতে নাও বাধ বুকে আমামা
বেজেছে নাকাড়া হাকে নাকিবের তুর্য
হুশিয়ার ইসলাম ডুবে তব সুর্য্য
জাগো ওঠো মুসলিম হাকো হায়দারী হাক
শহীদের দিলে সব লালে লাল হয়ে যাক।
নওশার সাজ নাও খুন খচা অস্তিন
ময়দানে লুটাতেরে লাশ এই খাস দিন
হাসানের মত পিব পিয়ালা সে জহরের
হোসেনের মত নিব বুকে ছুরি কহরের
আসগর সম দেব বাচ্চাদের কুরবান
জালিমের দাদ নেব দেব আজ গোর জান
সখিনার শ্বেত বাস দেব মাতা কন্যায়
কাশিমের মত দেব জান রূধি অন্যায়
মহরম কারবালা কাদো হায় হোসেনা
দেখ মরূ সুর্য্য এ খুন যেন শোষেনা ।।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন