সূরা নূর -২

সূরা নূর -২
اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَ الْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَوةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فىِ زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنهََّا كَوْكَبٌ دُرِّىٌّ يُوقَدُ مِن شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُونَة لَّا شَرْقِيَّةٍ وَ لَا غَرْبِيَّةٍ يَكاَدُ زَيْتهَُا يُضىِ‏ءُ وَ لَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ  نُّورٌ عَلىَ‏ نُورٍ  يهَْدِى اللَّهُ لِنُورِهِ مَن يَشَاءُ وَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ وَ اللَّهُ بِكلُ‏ِّ شىَ‏ْءٍ عَلِي
অনুবাদঃ আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উদাহরণ যেন একটি কুলঙ্গি, যাতে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচপাত্রে স্থাপিত, কাঁচপাত্রটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ্য। তাতে পুতঃপবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তৈল প্রজ্বলিত হয়, যা পূর্বমুখী নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়। অগ্নি স্পর্শ না করলেও তার তৈল যেন আলোকিত হওয়ার নিকটবর্তী। জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান তাঁর জ্যোতির দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।সূরা নূর ৩৫ নং আয়াত
نور: শব্দটি কোরআনে ১৯৪ বার বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে নূর শব্দটি  বিভিন্ন অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে যেমনঃ
১- খোদাঃ পৃথিবী তার পালনকর্তার নূরে উদ্ভাসিত হবে।(যুমার- ৬৯)
আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি।(নূর – ৩৫)
১- কোরআন মজিদঃ  তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ।(মায়েদা - ১৫)
২- ঈমানঃ : যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে।(বাকারা - ২৫৭)
৩- খোদায়ি হেদায়াতঃ আর যে মৃত ছিল অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তাকে এমন একটি আলো দিয়েছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে। সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে, যে অন্ধকারে রয়েছে।(আনআম - ১২২)
৪- ইসলামী আইনঃ  কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে।(তওবা- ৩২)
৫- স্বয়ং রাসুল (সা.)ঃ আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর(রাসুল সা.)দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।(সূরা আহযাব- ৪৬)
৬- ইলমঃ  ইলম হচ্ছে এমন এক নূর খোদা যাকে চান তার অন্তরে দান করেন।
সারাংশঃ
কোরআন নূর কারণ কেননা তাতে খোদার কালাম রযেছে।
ইসলাম নূর কেননা তাতে খোদায়ি আইন রয়েছে।
রাসুল (সা.) নূর কেননা তিনি খোদার প্রেরিত ব্যাক্তি।
ইমাম (আ.) হচ্ছেন নূর কেননা তারা রাসুল (সা.) এর পরে ইসলামের হেফাযতকারী।
ঈমান হচ্ছে নূর কেননা খোদার সাথে মানুষ সম্পর্কিত হয়ে যায়।
ইলম হচ্ছে নূর কেননা তার মাধ্যমে খোদার সাথে পরিচিত হওয়া যায়।
এইজন্য যে খোদা হচ্ছেন খোদা আসমান ও জমিনের হেদায়াতকারী।
৩৫ নং আয়াতের সার সংক্ষেপঃ
১- পৃথিবী হচ্ছে খোদার নূরের মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে।
২-খোদার নূর হচ্ছে বেশী  এবং স্থায়ী।
৩- খোদার নূর হচ্ছে স্বয়ং তার স্বত্তা থেকে না তার বাহ্যিক কিছু।
৪- যয়তুনের বৃক্ষ হচ্ছে মোবারক একটি বৃক্ষ।
৫- খোদা তাদেরকে হেদায়াত করেন যারা তার নূরের দিকে ধাবিত হয়।
فىِ بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَن تُرْفَعَ وَ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَ الاَْصَال
অনুবাদঃ আল্লাহ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। (সূরা নূর আয়াত নং ৩৬)
৩৬ নং আয়াতের সার সংক্ষেপঃ
১- খোদার নূরের সংস্পর্ষ সব স্থানে পাওয়া যায়না বরং বিশেষ স্থান রয়েছে। (فىِ بُيُوتٍ أَذِنَ الله)
২- মসজিদের দেয়াল উচু এবং ইবাদতের কানুন সমূহ ٍ (أَذِنَ اللَّهُ أَن تُرْفَع)
৩- সব ঘর সমূহ এক না বরং কোন কোন ঘরের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। فىِ بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَن تُرْفَع
৪- মসজিদ অবশ্যই অন্যান্যদের ঘরের তুলনায় উত্তম হতে হবে। (أَن تُرْفَع)
৫- খোদার মহত্ব হচ্ছে যে তিনিই নির্দেশ দান করবেন। أَذِنَ اللَّهُ
৬- মসজিদ দ্বারা এখানে খোদার যিকর কে বুঝানো হয়েছে না অন্য কিছু। َ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُه
৭- মসজিদের দরজা সমূহ যেন নামাজের সময় খোলা থাকে।
 يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَ الاَْصَال
رِ‌جَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَ‌ةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ‌ اللَّـهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ ۙ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ‌
অনুবাদঃ এমন লোকেরা, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে।(সূরা নূর আয়াত নং ৩৭)
৩৭ নং আয়াতের সার সংক্ষেপঃ
১- কিছু লোক এমনও রয়েছেন যাদেরকে বেচাকেনা ও ব্যাবসা, খোদার স্মরণ থেকে বিরত রাখে না। رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تجَِرَةٌ وَ لَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ الله
২- ব্যাবসায় অবশ্যই আত্মসংযমতা বজায় রাখতে হবে।
৩- যদি ঈমান এবং ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় থাকে তাহলে দুনিয়ার কোন কিছুই তার উপরে প্রভাব ফেলতে পারবে না। ٌ لَّا تُلْهِيهِم
৪- যদি নামাজের সময় বাজার বন্ধ রাখা হয় তাহলে খুব ভাল হতো । ٌ لَّا تُلْهِيهِم
৫- ইসলামের দৃষ্টিতে ভাল কাজ এমনকি হালাল কাজও যেন খোদার স্মরণ থেকে মানুষকে বিরত না রাখে।
৬- ব্যাবসাকে ত্যাগ করাতে কোন মূল্য নেই বরং তার মূল্য বৃদ্ধি পাবে খোদার যিকর, নামাজ ও যাকাতের মাধ্যমে।
৭- আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখলে মানুষের কাছে দুনিয়া মূল্যহীন হয়ে যাবে।
لِيَجْزِيهَُمُ اللَّهُ أَحْسَنَ مَا عَمِلُواْ وَ يَزِيدَهُم مِّن فَضْلِهِ  وَ اللَّهُ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيرِْ حِسَاب
অনুবাদঃ তারা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে) যাতে আল্লাহ তাদের উৎকৃষ্টতর কাজের প্রতিদান দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও অধিক দেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রুযী দান করেন।(সূরা নূর আয়াত নং ৩৮)
৩৮ নং আয়াতের সার সংক্ষেপঃ
১- যারা ভাল কাজ করে খোদা তাদেরকে তার প্রতিদান দান করেন।
২- খোদা মানুষের ভাল কাজের প্রতিদান বেশী দান করে থাকেন।
৩- সৎ ব্যাবসার লাভের মাধ্যমে যদি কেউ নিজের জীবন পরিচালনা করে তাহলে খোদা তাকে অফুরন্ত লাভ দান করবেন।
وَالَّذِينَ كَفَرُ‌وا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَ‌ابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وَوَجَدَ اللَّـهَ عِندَهُ فَوَفَّاهُ حِسَابَهُ ۗ وَاللَّـهُ سَرِ‌يعُ الْحِسَابِ
অনুবাদঃ যারা কাফের, তাদের কর্ম মরুভুমির মরীচিকা সদৃশ, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। এমনকি, সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অতঃপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।(সূরা নূর আয়াত নং ৩৯)
৩৯ নং আয়াতের সার সংক্ষেপঃ
১- খোদার নিকটে আমল কবুল এবং তার সৌভাগ্য অর্জনের শর্ত হচ্ছে ঈমান।
২- উদ্দেশ্যে ও নির্ণায়ক হচ্ছে মানুষের আমলে গুরত্বপূর্ন বিষয়।
৩- তালিম ও তারবিয়াত  উদাহরণ দানের একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে।
৪- কেয়ামতের সত্যতা রয়েছে।
৫- সৌভাগ্য অর্জন এবং পরিপূর্ণতায় পৌছানোর ইচ্ছা সবার স্বত্তায় রয়েছে।
৬- কাফেরদের জন্য কেয়ামতে কোন পাথেয় নেই।
৭- সকল মানুষ একদিন না একদিন খোদার প্রতি বিশ্বাসী হবে।
৮- কেয়ামতের দিন হচ্ছে সঠিক হিসাব কিতাবের দিন।
أَوْ كَظُلُمَاتٍ فِي بَحْرٍ‌ لُّجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ سَحَابٌ ۚ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَ‌جَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَ‌اهَا ۗ وَمَن لَّمْ يَجْعَلِ اللَّـهُ لَهُ نُورً‌ا فَمَا لَهُ مِن نُّورٍ‌
অনুবাদঃ অথবা (তাদের কর্ম) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতিই নেই।(সূরা নূর আয়াত নং ৪০)
৪০ নং আয়াতের সার সংক্ষেপঃ
১- কাউকে নমুনা হিসেবে  নির্বাচনের পূর্বে  অবশ্যই ভাল এবং খারাপ দিক সমূহ এবং ভাল প্রতিদান এবং শাস্তির কথাকে বর্ণনা করা।
২-মোমিনের সব কাজ হচ্ছে নূর এবং কাফেরের  সব কাজে রয়েছে অন্ধকার।
৩- কাফেরের ভাল আমল সমূহকে সারাব এবং খারাপ কাজগুলোকে জুলুমাত বলা হচ্ছে।
৪- ইলম এবং আকল থাকার পরেও মানুষ আল্লাহর ওহীর বা নূরের মুখাপেক্ষি।    যদি খোদার নূর না থাকে তাহলে কোন নূর মানুষকে নাজাত দিতে পারবে না।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন