ইসরাঈল গঠনের রহস্য
ইসরাঈল গঠনের রহস্য
লেবাননকে ছিন্নভিন্ন করা -দেশটিকে কয়েকটি জাতি ও ধর্মে ভাগ করা ও উলেখযোগ্য অংশের নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের গ্রহণ এবং ইরাক বিভক্তির পরিকল্পনা ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের অনেক আগে সম্পন্ন করা হয়। এ বিষয় সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধ ১৯৮২ সালে একটি ইসরাইলি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। তাতে ফিলিস্তিন দখলের পূর্বে রচিত ইয়াহুদীদের কৌশলের বিস্-ারিত দিক তুলে ধরা হয়। ইসরাইল কর্তৃক পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ অর্জনের নীল নকশার কথা ১৯০৫ সালে প্রথম জানা যায়। নীল নকশাটির শিরোনাম হলো ‘প্রোটোকলস অব দি এ্যালডারস অব জায়ন’। এ নীল নকশার সূত্র ধরে যে প্রবন্ধটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয় তাতে মিশর, সুদান, সিরিয়া, লিবিয়া প্রভৃতি দেশকেও টুকরো টুকরো করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনার বাস্-বায়ন কিভাবে করা হবে তাও প্রবন্ধ থেকে জানা যায়। প্রবন্ধটি লিখেছেন অডেড ইনন। প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে জের"জালেমস্থ বিশ্ব ইয়াহুদীবাদী সংস্থার পর্যালোচনামূলক সাময়িকী কিভনিম-এ। কিভনিম শব্দের অর্থ নির্দেশনা। ১৯৮২ সালে ফ্রেরুয়ারী মাসে ১৪টি বলিউমে প্রকাশিত এই প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল, ‘ষ্ট্র্যাট্রেজি ফর ইসরাইল ইন দি নাইনটিন এইটিজ’ বা ইসরাইলের জন্যে আশির দশকের কৌশল। এতে এমন কৌশলের বর্ণনা দেয়া হয় যার প্রয়োগের মাধ্যমে ইসরাইল পরিকল্পিত ভাবে এবং অতীতের সব আগ্রাসনের তুলনায় সফল ভাবে পাশ্ববর্তী আরব দেশগুলোর কাঠামো। তছনছ করে দিতে পারবে।
দীর্ঘ প্রবন্ধটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পাঠকের জন্যে নিম্নে উপস্থাপন করা হলো। এটি পড়ে ‘বৃহত্তর ইসরাইল’ গঠনের শতাব্দীর পুরনো স্বপ্নের কথা জানতে পারবেন এবং এই সাথে বর্তমান পরিস্থিতির গভীরেও যেতে পারবেন। ইসরাইল এখনো স্বপ্ন পূরণের আশা ছেড়ে দেয়নি। তাইতো শতাব্দীর পুরনো স্বপ্নের সুত্র ধরে কাজ করে যাচ্ছে ইসরাইলের বর্তমান প্রশাসন। কিভনিম-এ প্রকাশিত প্রবন্ধটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো এরূপ :
‘সিনাই উপত্যকা পুনরায় আমাদের অধিকারে নিয়ে আসতে হবে। কারণ এটি সম্পদ সমৃদ্ধ এবং এর রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ক্যাম্পডেভিড ও শান্-ি চুক্তির ফলে আমাদের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছিল. . . তেল ব্যতীত এবং এর আয় ব্যতীত এবং আমাদের বর্তমান বিশাল ব্যয়ের চিত্র বিবেচনায় আমাদেরকে মার্চ ১৯৭৯ সালে সাদাতের সাথে সম্পাদিত চুক্তির পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে . . .।
‘মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থা , এ অঞ্চলের প্রকৃতি এবং আবর বিশ্বের নীতি এমন পরিস্থিতি জন্ম দিবে যে... ইসরাইল সিনাই উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বাবে কাজ করবে। ...আভ্যন্তরীণ সংঘাত ও সমস্যার কারণে মিশর ইসরাইলের জন্যে সামরিক হুমকি হয়ে দেখা দিবে না এবং এটি সত্য যে এক থেকে দু‘দিনের মধ্যে মিশরকে জুন ১৯৬৭ এর যুদ্ধের পরের অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করা সম্ভব। প্রচলিত ধারণা হলো মিশর আরব বিশ্বের সব থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র. . . নিশ্চিত ভাবে ১৯৬৭ এর যুদ্ধে এরা পরাস্- হয়েছিল . . মিশরের সামরিক শক্তি ইসরাইলের একার তুলনায় যেমন অর্ধেক তেমনী ভাবে অন্য আরব দেশগুলোর সম্মিলিত শক্তির অর্ধেক । ১৯৬৭ সাল হতে এই অবস্থা চলছে . . অল্পদিন পরেই সিনাই ফিরে মিশর আমাদের কিছু জায়গায় প্রবেশ করল। কিন্তু .. . এটি মিশরের শক্তিতে কোন গুণগত তারতম্য ঘটাল না।
‘মিশরের আভ্যন্-রীন রাজনৈতিক চিত্র থেকে এ কথা পরিস্কার। এটি ইতিমধ্যে মৃতদেহে পরিণত, এ ক্ষেত্রে মুসলমান ও খৃষ্টানদের মধ্যে মবর্ধমান সংঘাতকে বিবেচনা করলে অবস্থা আরো খারাপ প্রতীয়মান হয়। ইসরাইলের আশির দশকের রাজনৈতিক লক্ষ্য মিশরকে ভৌগোলিক ভাবে আঞ্চলিকতায় বিভক্ত করা -এর পশ্চিম অংশে . . .
‘মিশরের পতন হলে; লিবিয়া, সুদান বা আরো দূরবর্তী দেশগুলো তাদের বর্তমান অবস্থা বহাল রাখতে সক্ষম হবে না।, কিন্তু মিশরের পতন এবং বিলুপ্তিতে অংশ নিবে। মিশরীয় খৃষ্টানরা একটি আলাদা রাজ্য বানাবে, এর পাশাপাশি স্থানীয় শক্তির অনেক গুলো দূর্বল রাষ্ট্রের জন্ম ঘটবে। বর্তমানের মত কোন কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে না এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্-ি চুক্তি গড়ে উঠার সম্ভাবনা থাকবে না।
‘যদিও মনে হতে পারে দেশের পশ্চিম সীমান্তের সমস্যা মোকাবেলা কঠিন হয়ে উঠবে কিন্তু বাস্-বে পূর্ব সীমান্তের তুলনায় এটি মোকাবেলা সহজ হবে . . . লেবাননকে পাঁচটি প্রদেশে বিভক্তিকরণ পরে আরব বিশ্বের জন্য নজীর হয়ে থাকবে। . . .জাতিগত ও ধর্মীয় ভাবে সম- প্রকৃতির সিরিয়া এবং ইরাকের বিভক্তি ঘটানো সম্ভব হবে . . . এটি ইসরাইলের প্রাথমিক ভাবে দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ , স্বল্পকালীন পরিকল্পনা হলো রাষ্ট্র গুলোর সামরিক শক্তিকে ধবংস করা। সিরিয়ার পতন ঘটবে এবং এটি জাতিগত ও ধর্মীয় অবয়বে কয়েকটা রাজ্যে বিভক্ত হবে . . .এর উপক্থলে শীয়াদের রাজ্যে হবে আলাউ, সুন্নীদের রাজ্য আলেপ্পো, অন্য সুন্নী রাজ্যটি হবে দামেস্ককে কেন্দ্র করে। দেশটির উত্তরের উত্তেজনা নতুন রাজ্য গঠনে সহায়ক হবে এবং দ্রুজরা সম্ভবতঃ আমাদের গোলান হাইটে রাজ্য গঠন করবে, তবে তারা নিশ্চিত ভাবে হাওরান এবং জর্দানের উত্তরাংশে আস্তানা গড়ে তুলবে। এই রাজ্যটি এলাকায় দীর্ঘ পরিকল্পনার আওতায় শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং আমাদের এই লক্ষ্য পূরণের সার্বিক ব্যবস্থা আমাদের নাগালের মধ্যে।
‘ইরাক একদিনে তেলসমৃদ্ধ দেশ হলেও অন্যদিকে আভ্যন্-রীণ সংঘাতে বিধবস্-, ইরাকের আভ্যন্-রীণ সংঘাত ইসরাইলের পক্ষে পালা ভারী করেছে। এই দেশটির ভাঙ্গন আমাদের জন্যে সিরিয়ার পতনের চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক শক্তিতে ইরাক সিরিয়ার সিরিয়ার তুলনায় অনেক বেশী শক্তিশালী। ইসরাইলের জন্যে ইরাকের সামরিক শক্তি সর্বার্ধিক হুমকি স্বরুপ। ইরাক এবং সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাঁধলে ইরাকের সামরিক শক্তি খর্ব হবে এবং এর ফলে আমাদের বিরূদ্ধে সংগঠিত শক্তি গড়ে তুলতে ইরাক সক্ষম হবে না। আরবদের যে কোন ধরনের আত্ম কলহ আমাদের স্বল্পমেয়াদী পরিকল্বপনা বাস্-বায়নে সাহায্য করবে। এটি ইরাক বিভক্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। . . . ফলে তিন বা তারও অধিক রাজ্যে ইরাকের বিভক্তি ঘটবে। প্রধান তিনটি ভাগ হবে বসরা, বাগদাদ এবং মুসেল। এ সময়ে শীয়া অধ্যুষিত দক্ষিণ ইরাক সুন্নী ও কুর্দী অধ্যুষিত উত্তর ইরাক হতে পৃথক হয়ে যাবে। এটি ইরান -ইরাকের মধ্যে বিরাজমান বর্তমান সংঘাতকে আরো মজবুত করে তুলতে পারে।
‘আরব বিশ্ব এমনিতেই ঐক্যবদ্ধ নয়। এ অবস্থায় ভিতর ও বাইরের নানামুখী চাপএর ভাঙ্গনকে ত্বরান্বিত করবে। এটি বিশেষ করে সউদী আরবের বেলায় ঘটবেই। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো আভ্যন্তরীণ সংঘাতের সৃষ্টি করবে এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশটি বিভক্ত হবেই। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতি তেলের উপর নির্ভরশীল হউক বা না হউক তাতে ঘটনার কোন হেরফের হবে না।’
‘অদূর ভবিষ্যতে জর্দান কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে কিন্তু দীর্ঘয়োদী লক্ষ্যে পরিণত হবে না।বাদশাহ হোসেনের দীর্ঘ শাসনের অবসানের পর জর্দানের শাসন ফিলিস্-িনীরা পেলে জর্দান আমাদের জন্য আর হুমকী থাকবে না , . . . ইসরাইলের নীতি হলো শান্-ি এবং যুদ্ধকে এমন ভাবে পরিচালিত করা যাতে বর্তমান অবস্থায় পরিবর্তন আসে এবং ক্ষমতায় ফিলিস্-ি নীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব হয়। জর্দান নদীর পূর্ব তীরের পরিবর্তন দেশটির আভ্যন্-রীণ সমস্যা নিরসনে ভূমিকা পালন করবে। জর্দানের আরব অধ্যুষিত এলাকা হতে আরবদের যুদ্ধের মাধ্যমে বা শান্-ির শর্তের মাধ্যমে দেমের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়ে জর্দান নদীর দু’তীরে জনবসতির ভারসম্য ফিরিয়ে আনতে অদূর ভবিষ্যতেই কাজটি সম্পন্ন করে ফেলতে হবে। জর্দানের আরবদের থেকে পশ্চিম তীরের ইয়াহুদীদের আলাদা না করা পর্যন্- স্বায়ত্তশাসনের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হবে। সত্যিকারের সহ-অবস্থান এবং শান্তি এই ভূমিতে তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন আরবরা বুঝতে পারবে ইয়াহুদীদের শাসন ছাড়া তাদের অস্তিত্ব বা নিরাপত্তা কোনটিই সম্ভব নয়। . .
‘অচিরেই আমরা পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করব। ঘনবসতিপূর্ণ সমুদ্র উপকুলে তিন- চতুর্থাংশ ইয়াদীর বসবাস অসম্ভব।
এ অবস্থায় আমাদের প্রধান লক্ষ্য বা কৌশল নির্ধারণ করতে হবে ইয়াহুদীদের ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে। আমরা যদি সংখ্যাগত, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক ভাবে দেশকে দখলে ও পরিচালনায় ব্যর্থ হই তবে আমাদের অস্-িত্বের জন্যে সেটা হুমকী হয়ে দেখা দিবে। তাই আমাদের লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে আমাদের ভবিষ্যত। যুদিয়া, সামারিয়া, গ্যালিলি আমাদের দখলে রাখতে হবে তেমননি ভাবে এগুলো হতে উৎসারিত জলধারাতেও আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেখানে এখনো ইয়াহুদী বাস গড়ে উঠেনি সেখানে যেতে হবে ।’
ইয়াহুদীবাদের ঔপনিবেশিক ও ধর্মবিদ্বেষী পরিকল্পনা রচনা শেষে ফিলিস্তিনীদের উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ সহ ইসরাইলের ধারাবাহিক আগ্রাসনের শিকার হয় আরবরা। পুরো আরব বিশ্বকে ধবংসের হুমকি পর্যন্- দেয় ইসরাইল। এভাবে মুসলিম বিশ্বের প্রতি ইসরাইল মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। যে কোন প্রকারে একে মোকাবেলা করতে হবে।
ইরান হতে শাহের উত্খাতের পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানে প্রবেশের কোন সুযোগ পায়নি, এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের পুলিশী আচারণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে আগের চেয়েও অপরিহার্য হয়ে প্রতিভাত হচ্ছে। ইসরাইল একা শুধুমাত্র সুয়েজের প্রতি নজর রেখে ক্ষান্- হচ্ছে না। পাশাপাশি এ অঞ্চলের তেল উত্পাদনকারীদের প্রতিও নজর রাখছে এবং বাড়তি দায়িত্ব পালনের মত পূর্ব- ভূমধ্যসাগরে নিরাপদ ঘাঁটি গড়ে তুলছে।
এই কাজ আমেরিকানদের পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। আমেরিকানরা অতীতে ভিয়েতনাম ও লেবাননে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।পূর্বে তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে তারা এবার সরাসরি নিজেরা না জড়িয়ে তাদের প্রতিনিধি ইসরাইলকে শর্তবিহীন অনির্ধারিত অংকের সাহায্যে বরাদ্দের মাধ্যমে কাজে লাগা"েছ। এটি করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে অনেক সহজ হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র মৌখিক ভাবে ইসরাইলকে কখনো কখনো নিন্দা করলেও জাতিসংঘে ঠিকই ভেটো প্রয়োগের মাধ্যমে ইসরাইল তথা নিজদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে।যুক্তরাষ্ট্র অর্থ এবং অস্ত্র সাহায্যের মাধ্যমে ইসরাইলের উপর অর্পিত গুরু দায়িত্ব পালনে সাহায্য দিয়ে থাকে । এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হয়েছে একক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়া ।
অদৃষ্টের পরিহাস হলো আরবরা প্রায়শঃই আরবদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয় ফলে জাতিগত ভাবে নিয়ন্ত্রিত ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম হয়। এ অঞ্চলের ভাঙ্গনের পথও এবাবে রচিত হয়। ইরাকের ধবংসে এবং ইয়াহুদীদের রচিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ইরাককে তিনটি ভাগে ভাগ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স সহ অন্যান্য ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি যখন একত্রিত হয়েছিল তখন তাদের সাথে লেবানন, সউদী আরব, মিশর, সিরিয়া এবং অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোও যোগ দিয়েছিল । শুধু তাই নয় অর্থ দিয়ে সাহায্যও করেছিল।
সাম্প্রতিকালের মধ্যপ্রাচ্য ‘শান্তি আলোচনা’য় সুযোগরাখা হয়েছে সিরিয়া গোলান হাইট ফিরে পাবে। কিন্তু শর্ত দেয়া আছে সেখানে দ্রুজরা বাস করবে। ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিন দখলের পর থেকে দ্র"জরা ইসরাইলীদের মিত্রের ভূমিকা পালন করেছে। গোলান হাইটের এই পরিণতি সিরিয়াকে নিয়ে ইয়াহুদীদের বাবনার বাস্তব রূপায়ণে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে ।
পরবর্তী লক্ষ্য হলো মিশর ও সুদান। ইতিমধ্যে পশ্চিমারা মিশর ও সুদানকে খৃষ্টান এবং মুসলিম এই দু’অংশে বিভক্তির প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আমেরিকান এবং ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টরা মিশরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার মাধ্যমে খৃষ্টানদের ক্ষতিগ্রস্- করছে, দোষ চাপাচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের উপর। পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম গুলো মুসলমানদের উন্মাদগ্রস্থ ও খৃষ্টান বিরোধী আখ্যায়িত করে প্রচার করছে মুসলমানদের কারণে মিশরের সংখ্যালঘু খৃষ্টানদের জীবন বিপন্ন। অতএব পশ্চিমাদের আবেদন এই অবস্থায় তাদেরকে মিশরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হউক । সেখানে যেয়ে তারা খৃষ্টানদের রক্ষা করবে যেমনটা তারা করতে চেয়েছে ইরাকের বেলায় কুর্দী এবং শীয়াদের রক্ষার নামে।
ইসরাইল এক সময়ে মোবারককে উত্খাত করবে অথচ একটা সময় পর্যন্ত তাদের সেবা করেছে। মিশর এখন সংকটের মুখোমুখি। সউদী আরব মিশরের ইসলামী মৌলবাদীদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে আমেরিকানদের আমন্ত্রণ জানায়। আমেরিকা মিশরে অভিজান পরিচালনা করবে জাতিসংঘের ছত্র-ছায়ায় এক প্রকল্পের আওতায় এবং ইসলামী আন্দোলন নস্যাৎ করে মিশরকে বিভক্ত করবে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে হয় মিশরীয় অর্থডক্স খৃষ্টান বুট্রোস ঘালিকে এমনি জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল করা হয়নি । তিনি সম্ভবতঃ ভবিষ্যত মিশরীয় খৃষ্টানদের দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন।
আরবের সরকার প্রধানরা ইয়াহুদীদের কার্যকলাপকে নিজেদের কর্মকাণ্ড দ্বারা সহযোগীতা করছে। আরব জাতীয়তাবাদ ইসলামকে সরিয়ে দিয়ে মুসলিম উম্মাহ্র মাঝে এক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইয়াহুদীরা আরবদের মাঝে জাতিগত অনৈক্য তৈরীর চেষ্টা করছে। ইয়াহুদীদের পরিকল্পনা মোতাবেক পশ্চিমারা যেমন কাজ করছে তেমনি ভারত এবং রাশিয়াও কাজ করছে। মুসলমানদের বির"দ্ধে তারাও যুদ্ধ করছে। কাশ্মির, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, বসনিয়া, আজারবাইজান, ফিলিপাইন, চীন প্রভৃতি দেশে মুসলমানদের সংঘাতময় জীবন যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে তারা এক নেতার নেতৃত্বে একক মুসলিম উম্মাহ্ গড়ে তুলতে পাছে না। মুসলিম বিশ্বের সমস্যা সমূহকে চিহ্ণিত করে সে গুলোকে এখন কাজে লাগানো হচ্ছে । আমেরিকা এবং ইউরোপ শুধুমাত্র এই কাজে অস্ত্রশস্ত্রের মান উন্নয়ন করছে।
মাত্র কয়েক ঘন্টার নোটিশে আধুনিক মরণাস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনী সংঘর্ষের স্থানে প্রেরণ করছে আমেরিকা ও তাদের দোসর ইউরোপ সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ছিল তাও এতখানি মারাত্মক ছিল না। বৃহত্তর যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা ফুটিয়েছে। এক যুগেরও আগে সিদ্ধান্- গ্রহণের মাধ্যমে বৃহত্তর যুদ্ধের জন্যে প্রয়োজনীয় অস্ত্র নির্মাণ বন্ধ করা হয়েছে। যা আগে তৈরী হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পশ্চিমাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত ষ্টাট-১ ও ষ্টাট-২ চুক্তির মাধ্যমে তাও ধবংস করে ফেলা হয়েছে।
ইরানের ইসলামী বিপব ইয়াহুদীবাদের লক্ষ্যকে বেকায়দায় ফেলে দেয় । ইরান শুধু আরব বিশ্বের জন্যে নয় বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের মিলনের ক্ষেত্র হতে পারে। যার নেতৃত্বে ও মুসলমানদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইয়াহুদীবাদকে পরাস্ত করা সম্ভব। আরব জাতীয়বাদী সরকার গুলোর উত্খাত করে বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে ইয়াহুদীদের এবং তাদের ইন্ধন যোগানদানকারী আমেরিকানদের পরাস্- করা সম্ভব ।
সূত্র : ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন