মা সম্পর্কিত কতিপয় হাদীস

মা সম্পর্কিত কতিপয় হাদীস

১) রাসূলে খোদা (সা) বলেছেনঃ বেহেশ্‌ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৫৪৩৯, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )
২) ইমাম সাদেক (আ) বলেছেনঃ এক লোক রাসূলের খেদমাতে এসে আরজ করলো-হে রাসুল! খেদমত করবো কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর? রাসূল বললেন-তোমার মায়ের। লোকটি আবারো জিজ্ঞেস করলো তারপর কার? নবীজী বললেন-তোমার বাবার। ( আল-কাফিঃ ৯/১৫৯/২,মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )
৩) রাসূলে কারিম (সা) বলেছেনঃ নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার স্বামীর,আর পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৪৭৭১, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ২৫৪ )
ফাতেমা (সা) এর ব্যক্তিত্ব এবং নারীর মর্যাদা বিষয়ক হাদিস
১) বেহেশ্‌ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে।
২) প্রত্যেকেরই দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যের গোড়াপত্তন ঘটে মায়ের গর্ভে।
৩) মা-ই হলেন তার সন্তানের ইহকালীন এবং পরকালীন সৌভাগ্য নিশ্চিত করার প্রশিক্ষক।
৪) যখনি বেহেশতের ঘ্রাণ নেওয়ার ইচ্ছে জাগে তখনি ফাতেমাকে শুঁকি।
৫) আমার মেয়ের নাম রাখা হয়েছে ফাতেমা, কেননা আল্লাহ তাকে এবং তার
ভক্তদেরকে দোযখের আগুন থেকে দূরে রেখেছেন।
৬) আমি হলাম বৃক্ষ, ফাতেমা সেই বৃক্ষের শাখা, আলী সেই বৃক্ষের সার, হাসান এবং হোসাইন সেই বৃক্ষের ফল এবং আহলে বাইতের অনুরাগীরা হলেন বেহেশ্‌তি সেই বৃক্ষের পাতা।
৭) যে ফাতেমাকে তার উপযুক্ত মর্যাদাসহ চিনতে পেরেছে, সে শবে-কদরকে উপলব্ধি করতে পেরেছে। আর তাঁর ফাতেমা নামকরণের কারণ হলো কোনো সৃষ্টিই তাঁর অন্তর্দৃষ্টির পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না।
৮) যে-ই তাকে বিরক্ত করবে,সে যেন আমাকেই বিরক্ত করলো,আর যে আমাকে জ্বালাতন করলো সে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হলো।
৯) ফাতেমা আমার দেহের অঙ্গ,আমার চোখের মণি এবং আমার হৃদয়ের ফল।
১০) ফাতেমা (সা)'র অন্তর থেকে শুরু করে সকল অস্থি-মাংস এককথায় শরীরের
সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহ ঈমান ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন,যেভাবে
পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে তিনি আল্লাহর আনুগত্যে নিমজ্জিত থাকেন।
১১) উত্তম নারীর জেহাদ হচ্ছে স্বামী সেবা।
১২) নফল নামায পড়া অবস্থায় যদি পিতা তোমাকে ডাকে তাহলে নামায ছাড়া যাবে না, কিন্তু যদি তোমার মা তোমাকে ডাকে তাহলে নামায ছেড়ে দাও।
১৩) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের প্রতি অধিকতর দয়াশীল।
১৪) কিয়ামতের দিন সে-ই আমার বেশি নিকটবর্তী হবে যে তার স্বামী বা স্ত্রীর সাথে
সবোর্ত্তম মানবিক আচরণ করবে।
১৫) মুমিন ব্যক্তি তার স্ত্রীর পছন্দের খাবার খায় আর মোনাফেকের স্ত্রী তার স্বামীর
পছন্দের খাবার খায়।
ইমাম সাদেক (আ)ঃ
১) ফাতেমার নাম যাহরা রাখা হয়েছে কেননা যখন সে ইবাদাতের মেহরাবে দাঁড়ায় আকাশবাসীদের ওপর তার নূরের ছটা পড়ে।
২) স্ত্রীদেরকে বেশি ভালোবাসলে ঈমান বেড়ে যায়।
৩) আমাদের প্রতি যতোবেশি ভালোবাসা থাকবে ততোবেশি স্ত্রীদেরকেও ভালোবাসবে।
৪) ফাতেমা (সা) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা) এর অন্তরের ফল এবং চোখের জ্যোতি।
৫) হযরত আলী (আ)ঃ আল্লাহর শপথ! তোমার ঘর ছিল প্রশান্তির নীড়,আমি যখনি ঘরের দরোজায় আসতাম,তোমার চোখের ছোট্ট চাহনিতে আমার সকল চিন্তা-রাগ অন্তর থেকে দূর হয়ে যেত।
ফাতেমা (সা) এর বিভিন্ন দোয়াঃ
১) হে খোদা! রাগ-ক্রোধ কিংবা আনন্দের সময় ভয় এবং এখলাস, অভাবহীনতা বা অভাবের সময় মিতব্যয়ী বা ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ার তৌফিক দান করো।
২) আমার নফ্‌স্‌কে দুর্বল করে দাও আর নফসের ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধের শক্তি বৃদ্ধি করে দাও!
৩) যে তার একনিষ্ঠ ইবাদাতগুলোকে আল্লাহর প্রতি প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ সবোর্ত্তম কল্যাণগুলোকে তার প্রতি অনুগ্রহ করেন।
৪) মুমিনের জন্যে প্রফুল্লতার পুরস্কার হলো বেহেশ্‌ত।
৫) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম উম্মাহর সামাজিক শৃঙ্খলা বিধানের জন্যে আহলে বাইতের অনুসৃতি আর ঐক্য এবং বিচ্ছিন্নতা থেকে নিরাপদ থাকার জন্যে রাহবারি এবং ইমামতের বিধান দিয়েছেন।
৬) গাদিরে খোমের পর আল্লাহ আর কারো জন্যেই কোনোরকম বাহানা বা ওজর- আপত্তির সুযোগ রাখেন নি।
৭) আলী হলেন একজন রাব্বানী ও ঐশী ইমাম,নূরানী অবয়বের অধিকারী, সকল খোদাপ্রেমিক আরেফের দৃষ্টি ও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু, পবিত্র খান্দানের সন্তান, সত এবং যথার্থ বক্তা, ইমামতের মানদণ্ড, নবীজীর হাতের দুই গুচ্ছ ফুল আর বেহেশতবাসী যুবকদের নেতা হাসান ও হোসাইনের পিতা।
৮) পরিপূর্ণ এবং প্রকৃত সৌভাগ্যবান সে-ই যে ইমাম আলী (আ) কে তাঁর
জীবৎকালে এবং তাঁর মৃত্যুর পর ভালবাসবে।
৯) রাসূলে খোদা (সা) এর আহলে বাইত, ইমামত এবং রাহবারি হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা
থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তার নেপথ্য শক্তি। আর আল্লাহর পথে জেহাদ হলো
ইসলামের অমরত্ব আর সম্মান ও মর্যাদার উৎস।
১০) হে পরোয়ারদেগার! হে মহান! যেসব নবী-পয়গাম্বরকে তুমি মনোনীত করেছো তাদের সম্মানে এবং আমার বিরহে হাসান ও হোসাইনের কান্নার ওসিলায় তোমার নিকট আবেদন করছি-তুমি আমার অনুসারীদের এবং আমার সন্তানদের অনুসারীদের গুনাহগুলোকে মাফ করে দাও।
১১) পার্থিব জগতপূজারীদের পৃথিবীকে আমি ভালোবাসি না।
১২) তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে অন্যদের সাথে সদয় এবং নম্র ব্যবহার করে।
১৩) সে ব্যক্তিই সবোর্ত্তম মূল্যবোধের অধিকারী যে তার স্বামী বা স্ত্রীর ব্যাপারে সদয় এবং ক্ষমাশীল।
১৪) যে স্ত্রী নিজের ঘরে থাকে এবং সন্তান-সন্ততির লালন-পালন,তাদের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে নিজের জীবন কাটায়,সে আল্লাহর খুব নিকটবর্তী।
১৫) কিয়ামতের দিন ইসলামের নবী (সা) এর গুনাহগার উম্মাতের জন্যে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবো।
১৬) সূরা হাদিদ,সূরা ওয়াকিয়া এবং সূরা আর-রাহমান তেলাওয়াতকারীদেরকে যমীনে এবং আসমানে বেহেশতের অধিবাসী বলা হয়।
১৭) তোমার পৃথিবীর তিনটি জিনিস আমার কাছে প্রিয়ঃ
• কোরআন তেলাওয়াত।
• রাসূলে খোদা (সা) এর চহারা দেখা এবং
• আল্লাহর পথে দান-খয়রাত করা।
১৮) বাহনের মালিক নিজের বাহনের একজন আরোহীর চেয়ে অনেক বেশি উপযুক্ত।
১৯) শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং মুসলমানদের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতাকে ঐক্যে পরিবর্তন
করার জন্যেই ইমামত।
তথ্যসূত্রঃ
• নাহজুল হায়া ( ফাতেমা (সা) এর বক্তব্যের অভিধান) : মুহাম্মাদ দাশতি,কোম,আমিরুল মোমেনিন (আ) গবেষণা সংস্থার প্রকাশনা,ফার্সি ১৩৮৫
• সহিফায়ে আয্‌যাহরা (সা),জাওয়াদ কাইয়ুমি ইস্ফাহানী,কোম,ইসলামী প্রকাশনা সংস্থা, ফার্সি ১৩৭৫
• নারী দর্পন ( ইরানের সবোর্চ্চ নেতার বক্তব্যের বিষয়ভিত্তিক সংকলন): আমির হোসাইন বাঙ্কি পুরফার্দ্‌,তেহরান,নারী গবেষণা কেন্দ্র,ফার্সি ১৩৮১
• ইমাম খোমেনী (রহ) এর বিবেচনায় নারী অধিকার,তিবীয়ন অষ্টম খণ্ড, সপ্তম সংস্করণ, শরৎ-ফার্সি ১৩৭৮
• নারী মর্যাদায় রম্য এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ বিষয়ক দশটি প্রবন্ধ : মুহাম্মাদ আলি আখগারি,সিম্বলে প্রকাশনা,খোরাসান,ফার্সি ১৩৮১

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন