কারবালা হোক প্রেরণার উৎস

কারবালা হোক প্রেরণার উৎস

ইতিহাসে ১০ মহররম একটি ট্র্যাজেডির দিন। যা পবিত্র আশুরা নামে পরিচিত। যে ট্র্যাজেডি একই সঙ্গে অনুপ্রেরণার উত্সস্থল, একটি আলোর মশালের নাম। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট টেনে বলা যায়, ইসলামের দুর্দিনে কারবালার দুঃসহ স্মৃতি পরবর্তী সময়ে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিল। এজিদের শাসনামলের গাঢ় অন্ধকার ও গহিন তমসার মধ্যে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) জ্বালিয়েছিলেন সেই আশার প্রদীপ। কারবালার শোকের ঘটনা শুধু মুসলমানদের চেতনাকেই নয়, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেও সমৃদ্ধ করেছে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও প্রবন্ধে কারবালার মর্সিয়া সাহিত্যের সৃষ্টির চেতনাকে করেছে জাগ্রত। আশুরায় বিলাপ শুনি ‘হায় হোসেন! হায় হোসেন!’ ধ্বনিতে। সেই ধ্বনি মুসলিম বিশ্বের নীল আকাশে সঙ্গীতের মূর্ছনা প্রতিধ্বনিত করেছে। ইতিহাসে দেখা যায়, ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর বা ৬০ হিজরীর ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে মহানবীর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদাত আশুরাকে তাত্পর্যমণ্ডিত করেছে। মূলত মদিনার পরিবর্তে দামেস্কে রাজধানী স্থানান্তর, উমাইয়াদের অনৈসলামিক কার্যকলাপ, কুফাবাসীদের বিশ্বাসঘাতকতা সর্বোপরি ইহুদি আবদুল্লাহ ইবন সাবার ষড়যন্ত্র কারবালা হত্যাকাণ্ডের জন্ম দেয়। এসব অন্যায়কে মেনে নিতে পারেননি হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। তাই কুফাবাসীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে তিনি স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজনসহ ২০০ অনুচর নিয়ে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালায় পৌঁছলে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবন জিয়াদ তাঁকে বাধা প্রদান করেন। রক্তপাত বন্ধের উদ্দেশ্যে ইমাম হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব করেন। কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে আনুগত্যের শপথ নিতে বলেন। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণাভরে তার এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন।

তারপর ইয়াজিদের বাহিনী ফোরাতের পানি ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে এবং বিভিন্ন চাপের মুখে খেলাফতের স্বীকৃতি নেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো অবস্থায় চাপের মুখে হজরত হোসাইন নতি স্বীকার করলেন না এবং তার সঙ্গী-সাথীরা নিরাপদ জীবনের চেয়ে আদর্শের জন্য মৃত্যুকেই বেছে নিলেন। তারপর ট্র্যাজেডির যাত্রা, ১০ মহররম ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হোসাইন ও তার সঙ্গী-সাথীদের হত্যায় মেতে ওঠে। ইমাম হোসাইন (রা.) মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান। অবশেষে ইয়াজিদ বাহিনীর কাছে শাহাদাত বরণ করেন। ইতিহাস সাক্ষী দেয় ইমাম হোসাইনকে (রা.) কারবালা প্রান্তরে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল মাত্র ৫০ বছরে তাদের প্রত্যেকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে করুণ পন্থায়। কারবালার যুদ্ধে জয়লাভ ইয়াজিদ তথা উমাইয়া বংশের জন্য ছিল পরাজয়ের নামান্তর। কারবালার এ বিয়োগান্তক ঘটনা মুসলমানদের আদর্শে পরিণত হয়। কারণ ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায় ও অসাধুতার সঙ্গে আপোষ করেননি। তাঁর এ আপোষহীনতা সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য আজও অনুপ্রেরণার উত্সস্থল হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন