শিয়া ও সুন্নীর দৃষ্টিতে খুমসের হুকুম কি?
শিয়া ও সুন্নীর দৃষ্টিতে খুমসের হুকুম কি?
ইসলামী বিরোধী তৎপরতা প্রত্যেক যুগেই পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই নবী করিম (সাঃ) যখনই ইসলামের আহকামসমূহ যার উৎস ও ভিত্তি ছিল আল্লাহর ওহী ও কোরআনের আয়াতসমূহ জনগণের সামনে উপস্থাপন করতেন, দেখা যেত উম্মতে মুহাম্মদীর (সাঃ) মধ্যে কোন কোন দূর্বল ঈমানধারী ব্যক্তি আপত্তি উত্থাপন করতেন চাই সেই পবিত্র আয়াতটি মদ সম্পর্কিত হোক অথবা খুমসের আদায় অথবা জিহাদ ও যাকাত প্রসঙ্গে।
আর এই ধারা অব্যাহত থাকে এবং ইসলামের চিহ্নিত এই শত্রুদের দৃষ্টিতে ইসলাম ধর্ম বিশেষ করে মাযহাবে তাশাইয়ু কাঁটা হয়ে বিরাজ করতে থাকে। তথাপি ঐশী ধর্ম ইসলাম তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে এগিয়ে যায় এবং সমপ্রসারিত হতে থাকে। অবশেষে আখেরী নবীর (সাঃ) ইন্তেকালের পর থেকে ইসলামী হুকুম আহকাম ও আইনসমূহ দু’ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। (১) ফিকহে আহলে বাইত (আঃ) ও (২) ফিকহে রায় বা আহলে সুন্নাত।
ফিকহে আহলে বাইত (আঃ) এর ভিত্তি সুন্নাতে রাসুল (সাঃ) ও পবিত্র কোরআন অপরদিকে ফিকহে রায় এর ভিত্তি কেয়াস ও রায় হিসেবে স্থায়িত্ব লাভ করে। অতএব,খতীবে বোগদাদী ঐতিহাসিক গ্রন্থে ইমাম আবু হানিফার উক্তি উল্লেখ করেছেন যে ঃ
ইমাম আবু হানিফা বলতেন যে,‘দ্বীন রায় বা বিচার-বুদ্ধি ব্যতীত কিছু নয়’। যার ফল দাঁড়ালো যে,ইসলাম দর্ম নানাবিধ জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় এবং রায়ের কারণে কোন কোন মাসয়েল বা ধর্ম বিষয়ক প্রশ্ন এমনভাবে দেখা দিল যা ইসলামের অমার্যাদার জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণিত হয়। চাই ভারতে সংঘটিত নুরবানুর মামলা হোক অথবা বর্তমানকালের উমরানার ঘটনা যা ইসলাম বিরোধী চিন্তাশক্তিকে বিষ উদ্গীরণ করার সুযোগ করে দেয়। তথাপি এ সকল প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেও মাযহাবে তাশাইয়ু ¯^xqমহীমায় এগিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। তাই শত্রু সব যুগেই এ চিন্তায় বিভোর থেকেছে যে,কিতাবে এ মাযহাবকে দুর্বল করা যায়। সুতরাং mgwš^Z চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে,যতক্ষণ পর্যন্ত এ জাতির মধ্যে মারজাইয়্যাত (তাকলীদের বিষয়),আযাদারী, গায়বাতের আক্বীদা এবং খুমস এ বিষয়গুলো বিরাজমান থাকবে ততদিন পর্যন্ত নির্মূল করা তো দূরে থাক দূর্বল করাও কঠিন বরং অসম্ভব একটি কাজ।
তাই মারজাইয়্যাতের উপর আক্রমন চালানো হয়। আযাদারীকে দুর্বল করার জন্য নিত্য নতুন পন্থা উদ্ভাবন করা হয় এবং দুশমন আযাদারীর চেহারা ও প্রকৃত চিত্র পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা আযাদারী সম্পর্কে নতুন নতুন সন্দেহের সৃষ্টি করে চলেছে এবং তাদের এই কর্মকান্ডে আহলে বাইত (আঃ) এর তথাকথিত ভক্ত ও অনুসারীদের ব্যবহার করছে।
সুতরাং,এ ব্যক্তিরাই এখন মারজাইয়্যাতের উপর অশালীন আক্রমন চালাচ্ছে। কখনো আযাদারীকে অপ্রয়োজনীয় ও সময় নষ্টের সাথ তুলনা করছে। আবার কখনো ব্যক্তি তথা পার্থিব লাভের উদ্দেশ্যে দায়িত্বহীন বক্তা ও প্রচারক শত্রুর ষড়যন্ত্রে ইন্ধন যোগাচ্ছেন। আবার কখনো যুগের ইমাম (আঃফাঃ) এর আবির্ভাবের উদ্দেশ্যে গোনাহকে উৎসাহিত করে বলছেন,‘যত দ্রুত পৃথিবী অত্যাচার অনাচারে পরিপূর্ণ হবে ইমাম (আঃ) এর আগমন ততদ্রুত সম্ভব হবে।’নতুন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে খুমস এর হকীকত ও উপযুক্ততা এবং এর ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে আপত্তি উত্থাপন করা হচ্ছে। ইদানিং প্রশ্ন করা হচ্ছে রাসুল (সাঃ) এর যুগে খুমস ছিল কি ছিল না?যদি থেকে থাকে তাহলে তার রূপ কেমন ছিল,আ-ইম্মা-এ মাসুমীন (আঃ) খুমস বের করতেন কি না?ইত্যাদি,ইত্যাদি। তাই খুমস সম্পর্কিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদীস এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে যাতে খুমসের হকীকত স্পষ্ট হয়। পবিত্র কোরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে খুমস এর হুকুম বর্তমান।
‘আর এ কথাও জেনে রাখ যে,কোন বস্তু-সামগ্রীর মধ্যে যা কিছু তোমরা গনীমত হিসেব পাবে,তার এক-পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য,রাসুলের জন্য,তাঁর wbKUvZ¥xq-¯^R‡bi জন্য এবং এতীম অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য”। (৮ ঃ ৪১)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খুমস এর উপযুক্ততা সম্পর্কে বদর যুদ্ধে বিজয়ের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন,যাতে মুসলমানেরা সম্পদের অপ্রতুলতার জন্য wPšÍvwš^Z ও হতবিহ্বল না হয়।যেমন বদর যুদ্ধে সাহাবীরা সংখ্যাল্পতার কারণে wPšÍvwš^Z ছিলেন না এবং উক্ত আয়াতে ‘কুনতুম আমানতুম’অর্থাৎ,তোমার ঈমান যদি আল্লাহর প্রতি হয়-এ বাক্য দ্বারা এটাই বোঝানো হচ্ছে যে,আল্লাহর পথে সম্পদের ব্যয় এতটাই কঠিন যে,আয়াতে বলা হচ্ছে যদি তুমি সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তি হয়ে থাক তাহলে আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।
এখন ঐ ব্যক্তিরা যারা খুমস সম্পর্কে আপত্তিকর প্রশ্ন করে থাকেন তাদের ¯^xq ঈমানের প্রতি একটু দৃষ্টি দেয়া উচিত। খুমসের সম্পর্ক শুধু পারিভাষিক গনীমতের মালের সাথে নয় বরং সবধরনের লাভজনক ক্ষেত্রে খুমস ওয়াজিব যার বর্ণনা অহলে বাইত (আঃ)গণের রেওয়ায়েতে মজুদ,যারা ¯^qs ওয়ারিসে কোরআন এবং শরীকে কোরআন এবং কোরআনের উক্ত আয়াতে ‘গানায়েম’শব্দটি সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
‘হে ঈমানদারগণ তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর;তখন যাচাই করে নিও এবং যে তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে,তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদঅন্বেষণণ কর,বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক (লাভজনক) সম্পদ রয়েছে।’(৪ ঃ ৯৪)
অত্র আয়াতে ‘মাগানিম’শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা ‘মুনাফা’বা ‘লাভের’অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এরশাদ হচ্ছে,‘এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদ যা তারা লাভ করবে আল্লাহ পরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়।’(৪৮ ঃ ১৯)
এ আয়াতটিতেও ‘মাগানিম’শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যা মুনাফাবোধক। কোরআনের তাফসীরকারী চাই তিনি শীয়া হোন অথবা সুন্নী ‘গণীমত’শব্দকে সাধারণ অর্থেই ব্যবহার করেছেন।
আহলেবাইত (আঃ)গণের ব্যাখ্যা ঃ প্রত্যেক ঐ বস্তু বা জিনিসকে ‘গনীমত’বলা হয় যা একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিজের প্রচেষ্টায় অর্জন করে। (তাফসীর-এ-কারতবী,খঃ ৪,পৃঃ ২৮৪০)
‘গনীমত’ঐ জিনিসকে বলা হয় যা মানুষ অর্জন করে। (তাফসীর-এ-ফখরুদ্দীন রাযী,খঃ ১৫,পৃঃ ১৬৪)
‘গনীমত’প্রকৃত অর্থে সকল ধরনের লাভ বা মুনাফাকে বলা হয়। (তাফসীর রূহুল মাআনী,পৃঃ ২)
শিয়া ওলামার ব্যাখ্যা ঃ মরহুম তাবরাসী লেখেন যে,শিয়া আলেমগণ এ বিষয়ে একমত এবং বিশ্বাস করেন যে,খুমস সকল প্রকার মুনাফার ক্ষেত্রে ওয়াজিব চাই সে মুনাফা ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে অথবা কাজের মাধ্যমে অথবা যুদ্ধের মাধ্যমে। (তাফসীর আল মিযান,খঃ ৯,পৃঃ ৯৮)
জনাব মহসিন কারাতী বলেন ঃ ‘গনীমত’বলতে সকল ধরনের খনি তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে মুনাফা এমনকি ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফাকে বুঝায়। (তাফসীরে নূর,খঃ ৪,পৃঃ ৩৩৮)
জনাব মহসিন কারাতী বলেন ঃ ‘গনীমত’বলতে সকল ধরনের খনি তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে মুনাফা এমনকি ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফাকে বুঝায়। (তাফসীরে নুর,খঃ ৪,পৃঃ ৩৩৮)
পাঠকদের জন্য নাহজুল বালাগা থেকে খুমস সম্পর্কিত কিছু তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হল ঃ
‘যে দ্বীনের রাস্তা Aej¤^b করবে সে তার ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে এবং লাভবান হবে।’(নাহজুল বালাগা,খুৎবা নং-১২০)
ইমাম আলী (আঃ) তাঁর সেনাপতি মালিক আশতারকে লিখিত উপদেশ দিয়ে বলেন,‘জনগণের সাথে হিংস্র জন্তুর মত আচরণ করবে না যাতে ভক্ষণ করাকেই গণীমত ভাবতে পার’(পত্র নং-৫৩)
‘আর না ঐ মাল ও পণ্য সামগ্রী দ্বারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোল।’(পত্র নং-৪৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আনুগত্যকে বিবেকবান ব্যক্তিদের জন্য গণীমত ও লাভজনক আখ্যায়িত করেছেন। (ভাষণ ঃ ৩৩১)
‘গণীমতের’অর্থ সম্পর্কে আমরা যখন অভিধান বিশেষজ্ঞের প্রতি দৃষ্টি দিই তখন দেখতে পাই যে,তারা ঐ সকল মাল ও সম্পদকে গণীমত বলে উল্লেখ করেছেন যা অর্জন করা হয়েছে।
প্রত্যেক ঐ সম্পদ বা মালকে গণীমত বলাহয়যা কষ্ট ছাড়া অর্জিত হয়। (লিসানুল আরব,খঃ ১২)
একই অর্থ ‘তাজ-উল-উরুস ও কামুস’উল্লেখ করেছে।
পবিত্র কোরআনের যে সকল আয়াতসমূহ খুমসের করণীয় হওয়া সম্পর্কে বর্ণনা করেছে যদিও ঐ আয়াতসমূহের শানে নযুলে যুদ্ধলব্ধ গণীমতের মাল উল্লেখ হলেও কোন আয়াতের শানে নযুলউক্ত আয়াতের ব্যাপকতার উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে না। যেমন,পবিত্র কোরআনে এমন আয়াত যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বর্ণিত হয়েছে অথচ তার হুকুম সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য হয়ে থাকে। তার কারণ পবিত্র কোরআন সর্বশেষ ঐশী জীবনবিধান।
যেমন,সুরা হামযা’র শা’নে নযুল হচ্ছে ওয়ালিদ বিন মুগীরা। যেখানে ওয়ালিদ বিন মুগীরাকে গীবত এবং অন্যের ঠাট্টা মস্করা করতে নিষেধ করা হয়েছে (ওয়ালিদ বিন মুগীরা রাসুল (সাঃ) এর গীবত করত)। এ সুরায় গীবত তথা অন্যের ঠাট্টা মস্করা কেবল ওয়ালিদ বিন মুগীরার জন্য প্রযোজ্য নয় বরং সকলকে এ কু-অভ্যাস থেকে নিবৃত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং গীবতকারীদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।
তারপরও যদি এটা মেনে নেয়া হয় যে,‘গণীমত’বা ‘গানায়েম’বলতে কেবল যুদ্ধলব্ধ সম্পদকে বোঝানো হয়েছে,সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য আহলেবাইত (আঃ) এর দরজা উন্মুক্ত আছে সেখানে আমরা প্রশ্ন করি কোন কোন জিনিসের উপর খুমস ওয়াজিব। সুতরাং খুমস সম্পর্কিত পবিত্র আহলেবাইত (আঃ)গণের বর্ণনা এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে। এখানে এ কথা বলা সঙ্গতঃ হবে না যে আমরা কেন রেওয়াত বা বর্ণনার উপর নির্ভর করছি,পবিত্র কোরআনে কী এ বিষয়ে বলা হয়নি?
এর উত্তরে বলর যায় যে,আহলেবাইত (আঃ)গণ হলেন মুফাসসিরে কোরআন এবং কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যাকারী তাঁরাই। হাদীসে সাকলাইনে নাজাতের জামিন পবিত্র কোরআন ও আহলেবাইত (আঃ) উভয়কে বলা হয়েছে (“রাসুল তোমাদেরকে যা দেন,তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর”(সূরা হাশর ঃ ৭))।
মাসুম (আঃ)গণের শুধু উক্তিই নয় কোন বিষয়ে তাঁদের আমল ও নীরবতাও আমাদের জন্য হুজ্জাত ও দিক নির্দেশক। পবিত্র কোরআনে যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কোন উল্লেখ নেই তেমনি নামাযে তাওয়াফ সম্পর্কিত কোন কথা নেই। আবার নামাযে আয়াত সম্পর্কিত কোন কথা কোরআনে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ নামাযে আয়াত পাঞ্জেগানা নামায ও নামাযে তাওয়াফের মতই প্রমাণিত। এমন অনেক আহকাম আছে যার সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট কোন উল্লেখ দেখা যায় না।
খনিজাত বস্তুসম্পর্কে ইমামকে (আঃ) জিজ্ঞাসা করা হলে ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আঃ) এরশাদ করেন,‘খনিজাত সকল বস্তুর খুমস আদায় করতে হবে।’ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) এরশাদ করেন,পাঁচটি জিনিসের উপর খুমস আছে- কোষাগারে রক্ষিত অর্থ,খনিজ বস্তু,ডুব দিয়ে পাওয়া মাল এবং গণীমতের মাল। বর্ণনাকারী পঞ্চম জিনিসটি সম্পর্কে কোন উল্লেখ করেননি। বর্ণনাকারী কোষাগারে রক্ষিত অর্থের উপর খুমস কখন ওয়াজিব হবে জানতে চাইলে ইমাম (আঃ) এরশাদ করলেন যে,কোষাগারে রক্ষিত অর্থের পরিমাণ এত হবে না যাতে যাকাত ওয়াজিব হয় তাহলে খুমস আদায় করতে হবে।
বর্ণনাকারী বলেন আমি ইমাম জাফর সাদেক (আঃ)কে বলতে শুনেছি যে,ইমাম এরশাদ করেন,কোন জিনিস খনিজ বস্তুর অবস্থায় মাটি অথবা উপত্যকা থেকে বের হয় অথবা নদী থেকে বের করা হয় এবং গণীমতের মাল এবং ঐ সকল হালাল মাল বা সম্পদ যা হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়েছে এবং কোন মাল বা সম্পদের বৈধ মালিক জানা নেই এবং গচ্ছিত ধনে খুমস ওয়াজিব।
বর্ণনাকারী ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আঃ) থেকে শুনেছেন যে,ইমাম (আঃ) এরশাদ করেন,জিম্মি কাফের যদি মুসলমানের জমি ক্রয় করে তার উপর খুমস ওয়াজিব এখানে জিম্মি বলতে ইসলামী রাষ্ট্রে বিধর্মী প্রজা বুঝানো হয়েছে। বর্ণনাকারী ইমাম (আঃ)কে খুমস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ইমাম (আঃ) এরশাদ করেন,মুনাফার পরিমাণ কম হোক অথবা বেশী মানুষ যতটুকু মুনাফা অর্জন করবে তার উপর খুমস হবে।
বর্ণনাকারী বলেন,আমি ইমাম জাফর সাদেক (আঃ)কে বলতে শুনেছি যে,ইমাম এরশাদ করেন,কোন জিনিস খনিজ বস্তুর অবস্থায় মাটি অথবা উপত্যকা থেকে বের হয় অথবা নদী থেকে বের করা হয় এবং গণীমতের মাল এবং ঐ সকল হালাল মাল বা সম্পদ যা হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়েছে এবং কোন মাল বা সম্পদের বৈধ মালিক জানা নেই এবং গচ্ছিত ধনে খুমস ওয়াজিব।
বর্ণনাকারী ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আঃ) থেকে শুনেছেন যে,ইমাম (আঃ) এরশাদ করেন,জিম্মি কাফের যদি মুসলমানের জমি ক্রয় করে তার উপর খুমস ওয়াজিব এখানে জিম্মি বলতে ইসলামী রাষ্ট্রে বিধর্মী প্রজা বুঝানো হয়েছে।
বর্ণনাকারী ইমাম (আঃ)কে খুমস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ইমাম (আঃ) এরশাদ করেন,মুনাফার পরিমাণ কম হোক অথবা বেশী মানুষ যতটুকু মুনাফা অর্জন করবে তার উপর খুমস হবে।
খুমস সংক্রান্ত বেশ কিছু আপত্তির ক্ষেত্রে মাসুম (আঃ)গণের পবিত্র জীবনীকে উদ্ধৃত করা হয়। বলা হয়,রাসুল (সাঃ) ও আহলে বাইত (আঃ)গণ কী খুমস দিতেন?
ইতিহাস গ্রন্থে এর উল্লেখ যদি নাও থাকে তাহলেও কী এ ধরনের আকীদা প্রতিষ্ঠিত করা সঠিক যেহেতু তাঁরা আল্লাহর হুকুমের উপর আমল করেননি?যদি আমল করতেন তাহলে ইতিহাসে উল্লেখ থাকত আর তখনই বিষয়টি সঠিক হত?
প্রকৃতপক্ষে তা কখনই সম্ভব নয় যে,হাদীস শরীফে খুমস আদায় করার নির্দেশ আছে অথচ আহলেবাইতগণ সে নির্দেশ পালন করেননি। এর পূর্বের কিস্তিতে আমরা আহলে বাইত (আঃ)গণের হাদীস উল্লেখ করেছি। বক্তব্যের সমর্থনে আমরা রাসুল (সাঃ) এর জীবনের একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা এখানে উল্লেখ করতে চাই।
জনৈকা মহিলা হুকুর পাক (সাঃ) এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করল,হে রাসুলুল্লাহ আমার সন্তান খুব বেশী মিষ্টি খায় আপনি তাকে নসিহত করুন। রাসুল (সাঃ) মহিলাকে ঐ দিন কিছু না বলে আগামীকাল আসতে বললেন। পরদিন মহিলা এলে রাসুল (সাঃ) তার পুত্রকে নসিহত করলেন। মহিলাটি জিজ্ঞাসা করল,‘আপনি গতকাল একাজটি কেন করেন নি।’জবাবে হুজুর পাক (সাঃ) বললেন,‘আমি ¯^qs গতকাল মিষ্টি খেয়ে এসেছিলাম তাই এ প্রসঙ্গে কিছু বলা সঙ্গতঃ মনে করিনি।’
আচরণগত এই ঘটনায় অনুমান করা যায় যে,মুবাহ আমলের ক্ষেত্রে মাসুম (আঃ)গণ যখন এত বেশী সচেতন তাহলে কী করে সম্ভব যে কোন ওয়াজিব আমলের নির্দেশ তাঁরা দিয়েছেন অথচ নিজেরাই তার উপর আমল করেননি?
এখন একটি প্রশ্ন অবশিষ্ট থাকে,উজুয়ে শারীয়া খরচ করার ক্ষেত্রে মুজতাহীদের অনুমতি কী জরুরী?এ সম্পর্কে কিছু কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রথমতঃ আমরা কী জিজ্ঞাসা করেছি যে,শারয়ী মাসআলার ক্ষেত্রে আমরা কেন তাঁদের তাকলীদ করব?অর্থাৎ,আমাদের পারলৌকিক কল্যাণের জন্য যখন তাঁদের পরিশ্রমের ফসল আমরা ভোগ করি তখন কিন্তু বলি না যে,তাঁদের পরিশ্রমের কারণে আমরা লাভবান হচ্ছি। তাঁরা দ্বীনে আহলেবাইত (আঃ) আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। অথচ আল্লাহ ও রাসুলের হক আদায় করার কথা বলা হয় তখন প্রশ্ন আসে তাঁকে কেন দেব কিংবা তাঁর কাছ থেকে অনুমতি কেন নেব ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত ঃ একই আপত্তি আপনি আহলেবাইত (আঃ) এর যুগেও করবেন কেননা তাঁরা বাইতুল মাল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আর আপনাদের আপত্তির দৃষ্টিতে বাইতুল মাল প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজনীয়তাই বা কী ছিল?যে কোন সাহাবী চাইলে তার মর্জি ও ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যয় করতেন আর এ কথা দিনের আলোর মত পরিষ্কার যে,আহলে বাইতের (আঃ) সঙ্গী-সাথীগণের ঈমান-আকীদা আমাদের তুলনায় উত্তম ছিল এবং তাঁরা আমাদের তুলনায় উত্তমরূপে ও উত্তম জায়গায় ব্যয় করতেন। কিন্তু বাইতুল মালের প্রতিষ্ঠা এটাই প্রমাণ করে যে,প্রত্যেক জিনিসের একটি নিয়ম পদ্ধতি থাকে।
তৃতীয়ত ঃ যে কোন প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কিছু নিয়মকানুন থাকে। তা না হলে প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ ইচ্ছানুয়ায়ী কাজ করতে থাকে তাহলে অসুবিধার সৃষ্টি হবে এবং কোন কাজই সঠিকবাবে সম্পন্ন হবে না। সরকার শহর সংক্রান্ত বিষয়ে দেখাশোনার জন্য পৌরসভা স্থাপন করেছেন এবং গ্রাম পর্যায়ে গ্রাম সরকার,ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। শহর,ইউনিয়ন কিংবা গ্রামের যাবতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড জনগণের করের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেমন,রাস্তা নির্মাণ,পানির ব্যবস্থা,বিদ্যুৎ,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। এখন আপনি যদি বলেন যে,আমাদের কোন প্রতিনিধি কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। আমরা নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করে এ সকল উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করব। তাহলে এর উত্তরে বলা যায় যে,আপনার এ দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে আইনী কাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাহলে পার্থিব নিয়ম-কানুন অক্ষুন্ন রাখার জন্য একটি পদ্ধতি বা সিষ্টেম যদি থাকতে পারে তাহলে পারলৌকিক কল্যাণের জন্য ধর্ম যদি কোন বিধান তৈরি করে দেয় তাতে আপত্তি কেন?
সুতরাং,এ ধরনের আপত্তির কারণ ও উদ্দেশ্য হল দ্বীনি কাজে বাধা সৃষ্টি করা যাতে ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ হয়ে যায় এবং মাযহাব ও দ্বীনকে দুর্বল করে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নাপাক উদ্দেশ্য হাসিল করতে সক্ষম হয়।
আমরা আমাদের কর্মের মাধ্যমে তাদের নাপাক উদ্দেশ্য হাসিল করতে দেব না এটাই হল দ্বীনের খেদমত এবং ইমাম (আঃ ফাঃ) এর গায়বাতে আমাদের দায়িত্ব। আমরা সুরক্ষিত,আমাদের দ্বীন সুরক্ষিত কারণ আমাদের সত্যিকার সাহায্যকারী। সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন