সিয়ামের উপকারিতাঃ
সিয়ামের উপকারিতাঃ
সিয়াম ঐ সমস্ত এবাদতের অন্তর্ভূক্ত, যা মুসলিমকে মুত্তাকী হিসেবে তৈরী করে এবং বিশ্বজগতের প্রভুর সান্যিধ্যে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত করে তুলে। আর জান্নাতে সৎ লোক এবং শির্ক ও অন্যান্য পাপকাজ থেকে পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
كَذَلِكَ يَجْزِي اللَّهُ الْمُتَّقِينَ الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
“এমনিভাবে প্রতিদান দেবেন আল্লাহ্ পরহেযগারদেরকে। ফেরেশতা যাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র থাকা অবস'ায়।ফেরেশতারা বলেঃ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যা করতে, তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ কর।” (সূরা নাহলঃ ৩১-৩২)
কোন ব্যক্তির উপর যদি এবাদতের প্রভাব না পড়ে, তাহলে এবাদতের আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। এতে বুঝতে হবে লোকটির মধ্যে ত্রুটি রয়েছে। অথচ এবাদতের মধ্যে ত্রুটি থাকার কারণে নয়।
হে মুসলিমগণ! আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ কতিপয় আমলকে ফরজ করেছেন। তোমরা তা নষ্ট করো না। তিনি কতগুলো সীমা রেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তোমরা তার কাছেও যেয়ো না। তিনি বেশ কিছু জিনিষ হারাম করেছেন। তোমরা তা লঙ্গন করো না। আর স্বীয় অনুগ্রহে কিছু জিনিষ থেকে চুপ থেকেছেন। সুতরাং তোমরা সে ব্যাপারে প্রশ্ন করো না।
সবচেয়ে বড় ওয়াজিব হচ্ছে আল্লাহ তাআলার তাওহীদ তথা তাঁর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা। সুতরাং যে ব্যক্তি তাওহীদ বাস্তবায়ন করবে সে বিনা আযাবে ও বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আপনারা রামাযান মাসে নামায কায়েম করুন। কতক মানুষ আছে, যারা রোজা রাখে, কিন্তু নামাযে ত্রুটি করে। যে ব্যক্তির অবস্থা এরূপ হবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনারা। এই বরকতময় মাসে আপনাদের সম্পদের যাকাত আদায় করুন। আপনাদের প্রভুর ঘরের হজ্জ করুন। আপনাদের রোজাকে পাপ কাজ ও অযথা কথা-বার্তা থেকে হেফাজত করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সিয়াম অবস্থায় মিথ্যা কথা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করতে পারল না, তার পানাহার পরিত্যাগ করাতে আল্লাহর কোন দরকার নেই। (বুখারী) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারাঃ ১৮৩)
আল্লাহ আমাকে ও আপনাদেরকে কুরআনের মাধ্যমে বরকত দান করুন এবং এর নিদর্শন ও প্রজ্ঞাপূর্ণ নসীহতের মাধ্যমে আমার এবং আপনাদের উপকার সাধন করুন। সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের সুন্নাত ও বজবুত বাণীর মাধ্যমে আমাদের কল্যাণ করুন।
আমি উপরোক্ত বক্তব্য পেশ করলাম। আমি মহান আল্লাহর দরবারে আমার নিজের জন্য, আপনাদের জন্য এবং সকল মুসলিমের জন্য প্রতিটি গুনাহ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। আপনারা সকলেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়।
দ্বিতীয় খুৎবাঃ
কুরআন তেলাওয়াত ও দান-সাদকা সম্পর্কে
পরম দয়ালু আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক। তার কোন শরীক নেই। তিনি সুমহান। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নবী ও নেতা মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। যাতে তিনি সতর্ক করেন জীবিতকে এবং যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। (সূরা ইয়াসীনঃ ৭০)
হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার এবং সকল সাহাবীর উপর রহমত, শান্তি ও বরকত নাযিল করুন।
অতঃপর হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করুন এবং ইসলামের মজবুত রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করুন। হে আল্লাহর বান্দাগণ! নিশ্চয়ই এটি হচ্ছে দয়া ও অনুগ্রহের মাস। মুমিন ব্যক্তি তার নিজের প্রতি, নিজ পরবিারের প্রতি এবং আল্লাহর বান্দাদের প্রতি দয়া করবে। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হচ্ছে, যে আল্লাহ তালাকে ভয় করে, তাঁর মহান প্রভুর একত্ববাদ ঘোষণা করে। অতঃপর আল্লাহর এবাদত করে, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে না এবং সে আল্লাহর বান্দাদের উপর অনুগ্রহ করে। আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে বেশী দানশীল। আর রামাযান মাসে তিনি সর্বাধিক দান-খয়রাত করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জিরীলের সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন দ্রুত গতিতে প্রবাহমান বাতাসের চেয়েও অধিক ক্ষিপ্র হতেন।
রাসূল (সাঃ) হচ্ছেন আমাদের আদর্শ। তিনি সকল প্রকার কল্যাণের কথা বর্ণনা করেছেন এবং তার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। আর সকল প্রকার অকল্যাণকর কাজ থেকে বিরত থেকেছেন এবং উম্মাতকে তা থেকে সাবধান করেছেন। সুতরাং তিনি মুমিনদের জন্য একমাত্র আদর্শ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
“যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহ্র মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।” (সূরা আহজাবঃ ২১) বরকতময় রামাযান মাস হচ্ছে কুরআনের মাস। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
“মযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫) সুতরাং এই মাসে আল্লাহ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন হচ্ছে আত্মার খোরাক। এটি কল্যাণের পথে আহবান জানায় এবং হারাম পথ হতে নিষেধ করেছেন। এই মাসে অন্তরের উপর কুরআনের বিশেষ কর্তৃত্ব রয়েছে। রোজার মাধ্যমে নফসের কর্তৃত্ব দুর্বল হয় এবং কুরআনের প্রভাব মজবুত হয়।
হে লোক সকল! আপনারা এই সদা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করুন এবং কুরআন মযীদ নিয়ে গবেষণা তেলাওয়াত করুন। কারণ ইহা মানুষকে আল্লাহ তআলা ও জান্নাতের পথে নিয়ে যায়। বিশেষ করে রামাযান মাসে দিনে ও রাতে বেশী বেশী কুরআন পড়-ন এবং আল্লাহ তাআলার যিকির করুন।
রামাযান মাসে দান-সাদকা করা মানুষের প্রতি অনুগ্রহের অন্তর্ভূক্ত, যার প্রতি আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) উৎসাহ দিয়েছেন। সুতরাং আপনারা এই মাসকে খাঁটি তাওবা ও উত্তম আমলের মাধ্যমে স্বাগত জানান। আল্লাহ্ তাআলা এ ব্যাপারে আদেশ দিয়ে বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
“মুমিনগণ। তোমরা আল্লাহ্র কাছে তওবা কর, আন-রিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।” (সূরা তাহরীমঃ ৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًا
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কারো প্রাপ্য হক বিন্দু বিসর্গও রাখেন না; আর যদি তা সৎকর্ম হয়, তবে তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে বিপুল সওয়াব দান করেন।” (সূরা নিসাঃ ৪০) রামাযান মাস চলে যাওয়ার আগেই আপনাদের ক্ষমাসমূহ যেন ক্ষমা হয় এবং আমলগুলো কবুল ও প্রশংসনীয় হয়, সে জন্য সকলেই আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহ আপনাদেরকে তাঁর নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করার আদেশ দিয়েছেন। তাই আপনারা তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করুন।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন