বাবা'র সৌন্দর্য হযরত যাইনাব (সা
বাবা'র সৌন্দর্য হযরত যাইনাব (সা.)
আরশে নবী করিমের (সা.) জান ও প্রাণ হযরত মা ফাতেমা (সা.) ও হযরত আলী'র (আ.) বিবাহ বন্ধনের ফল'কে নবী করিম (সা.) ব্যতীত অন্য কেউ তাকে সেই রকম জানে না এবং তিনি (সা.) ছাড়া অন্য কোন উপযুক্ত ব্যক্তিত্ব নাম রাখার জন্য আর কেউ নেই।
আর তাই আল্লাহ'র রাসুল (সা.) নিজের তৃতীয় নাতীকে জন্ম হওয়ার সাথে সাথে তার গন্ধ নেন ও তাকে চুমু খান এবং সুন্দর নাম "যাইনাব" -কে তার জন্য নির্ধারণ করেন।
আমিনে ওহী বা ঐশীবাণী'র আমানতকারী তাকে "যাইনাব" নামে নামকরণ করেছন। "যাইনাব' আসলে আরবী ভাষার দু'টি শব্দের সংযোজন, অর্থাত "যাইন" ও "আব"। "যাইন" অর্থ অলংকার বা সৌন্দর্য আর "আব" অর্থ হচ্ছে পিতা বা বাবা। তাই "যাইনাব" অর্থ হচ্ছে বাবা'র সৌন্দর্য।
পিতার জন্য সৌন্দর্য হওয়াটা অবশ্যই গর্বের বিষয়, কিন্তু আলী'র (আ.) মত একজন বাবা যিনি হচ্ছেন সারা বিশ্বের নেতা, মোমেনিনদের আমিন, মুত্তাকী ও পরহেযগারদের মাওলা, নবী করিমের (সা.) ভাই ও ওয়াসি বা জানশিন এবং খোদার নির্বাচিত বান্দা'র সৌন্দর্য হওয়াটা সীমাহীন গর্বের ও অপরিসীম মর্যাদার বিষয়।
তার পাঁচ বছরের চেয়েও কম বয়সকাল নবী করিমের (সা.) পাশে এবং ফাতেমা যাহরা'র (সা.) ভালবাসায় ভরা কোলে আত্মিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্বপূর্ণ সঞ্চয় তাকে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের জন্য যুদ্ধ ও দৃঢ়তর হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
শিশু যাইনাব (সা.) মাতা'র শাহাদতের পর তাঁর বার্তাবাহক হয়ে যান। আর তিনি নিজের উপস্থিতির মাধ্যমে, তাঁর কান্না'র মাধ্যমে, নিজের বক্তব্য ও আলোচনার মাধ্যমে এবং তাঁর শিক্ষকতার মাধ্যমে ওয়েলায়াতের পয়গাম পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করেন।
নবী করিমের (সা.) শাহাদতের পর এবং মাতা'র শহীদ হওয়ার পর যদিও তাঁর জীবন দুঃখ -কষ্টতে কাটে, কিন্তু কখনোই অত্যাচারীর সাথে আপোস ও বশ্যতাকে মেনে নেননি। যখন তাঁর বাবাকে ঘরে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল তখন কিন্বা যখন তাঁর বাবা পাঁচ বছর কাল হুকুমতে ছিলেন, কখনোই তিনি চুপ করে বসে থাকেননি। উত্তরাধিকারী সূত্রে মায়ের কাছ হতে যা কিছু পেয়েছেন এবং বাবার জ্ঞান, পরিচালনা ও আখলাক যা পেয়েছেন ঘুমন্ত ব্যক্তিদেরকে জাগ্রত করা, অজ্ঞদেরকে শিক্ষা ও হেদায়েত দান করার কাজে ব্যবহার করেছেন।
তাঁর ভাই ইমাম হাসানের (আ.) ইমামতের সময় এবং ইমাম হুসাইন (আ.) এর নেতৃত্বের প্রথম দিকে যখন কারবালার কেয়ামের ভূমিকা তৈরি করতে সময় যাচ্ছিল, তিনি এই আন্দোলনে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
সবশেষে তিনি ঈমান, এরফান, আত্মত্যাগ, সাহসিকতা ও স্বাধীনতা'র বহিঃপ্রকাশ কারবালায় করে দেখিয়েছেন। ভাইয়ের সাথে নিজের দু'সন্তানকে উতসর্গ করার মাধ্যমে নেতার প্রতি প্রেম ও নিষ্পাপ ইমামের (আ.) নির্দেশে মাথা নত করে দেয়ার শিক্ষা দেন।
হযরত যাইনাবের (সা.) জীবনের আবেগময় ও মনে রাখার মত মুহূর্ত ও ঘটনা ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের পর থেকে শুরু হয়। যখন তিনি কারবালার বন্দীদের দলপতি হিসেবে শহীদদের বার্তাবাহকের দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রত্যেকটি গলি ও অঞ্চলে এবং প্রত্যেকটি মজলিশ ও জনসমষ্টিতে সুবিচারের পতাকা উড্ডয়ন করেছেন।
তিনি নবী করিমের (সা.) মত নজীর বিহীন আভিজাত্য ও শান -শওকতের সাথে, হযরত যাহরা (সা.) এর মত সুস্পষ্টতা ও আশ্চর্যজনক প্রতিবাদের সাথে এবং হযরত আলী (আ.) এর মত সাহসিকতা ও শত্রুদের নস্যাৎ করে দেয়ার মত দৃঢ়তার সাথে ইসলাম ও ওয়েলায়াতকে ধ্বংস করে দেয়ার এজিদ বাহিনীর ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিলেন। আর সবশেষে নিজেকে এ পথে উতসর্গ করে দিলেন।
তাঁর পবিত্র মাযার শরিফ দামেস্কের কাছেই রয়েছে এবং ওয়েলায়াত প্রেমিকদের জন্য আশার স্থান হয়ে রইলো। হযরত যাইনাব (সা.) এমন এক সূর্য ছিলেন যে, শুধুমাত্র কারবালার আকাশকে আলোকিত করেছেন বা আমাউয়ানদের সময়ের অত্যাচারিত সন্ধ্যাকে উজ্জ্বলতা দিয়েছেন তাই নয় বরং শিয়া বিশ্বের বীরত্বগাঁথায় পরিপূর্ণ ইতিহাসকে নিজের ঈমান, ওয়েলায়াত, আত্মত্যাগ ও শাহাদতের আকাঙ্ক্ষা দিয়ে আলোকিত করেছেন।
- মরহুম সাইয়েদ নুরুদ্দিন জাযায়েরি'র বই "উয়িজেগিহায়ে হযরত যাইনাব (সা.)" হতে গৃহীত।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন