রমজান মাস বরকতের উৎস ওরহমত অবতীর্ণ হওয়ার মাস
রমজান মাস বরকতের উৎস ওরহমত অবতীর্ণ হওয়ার মাস
পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে মহান আল্লাহর নিকটবর্তী হওযার মাস। এ মাসে মানুষ নিজের গুনাহ হতে ক্ষমা প্রর্থনার সুযোগ পায় এবং আল্লাহর প্রকৃত বান্দা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পূর্বেকার সকল পাপ ও পঙ্কিলতা হতে মুক্ত হয়ে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার দিকে ধাবিত হয়।
রমজান; আত্মশুদ্ধির মাস
পবিত্র রমজান মাস বছরের অপর মাস অপেক্ষা এমন কিছু গুণাবলীর অধিকারী যে কারণে অন্যান্য মাস অপেক্ষা এ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অধিক। মহান আল্লাহ্ এ মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। আর এ মাসের একটি রজনীকে তিনি বছরের শ্রেষ্ঠ রজনী (শবে কদর) হিসেবে স্থান দিয়েছেন। যা হাজার রাত্র অপেক্ষা উত্তম বলে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ মাসে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বান্দাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিশেষ ছাড় দিয়েছেন। যেটার সদ্ব্যাবহার করে মানুষ তার পূর্বেকার গুনাহ সমূহকে ক্ষমা করিয়ে নিতে সক্ষম। এ মাসে অধিক কোরআন তেলাওয়াত, অধিক ইবাদত ও আল্লাহর অধিক যিকির করার মাধ্যমে একজন বান্দা তার প্রভুর নিকটবর্তী হতে পারে। আর যেহেতু এ মাসে মহান আল্লাহ্ তাঁর পথে চলাচলকারী প্রকৃত বান্দাদেরকে শয়তানের পাতা প্ররোচনার ফাঁদ ও তার মায়াজাল হতে দূরে সরে যেতে সাহায্য করে তাই এ মাসটাই হচ্ছে মানুষের আত্মশুদ্ধি সর্বোত্তম সুযোগ। আর প্রত্যেকটি বিবেকবান ব্যক্তির উচিত এ সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায় ধাবিত হওয়া। যাতে সে সারা বছর শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পায়।
হযরত মহানবী (স.) হতে অধিক রেওয়ায়েত পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বর্ণিত হয়েছে যার মধ্য হতে শুধুমাত্র দু’টি রেওয়ায়েত এখানে উল্লেখ করা হল:
(ক) মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন: তোমরা রোজা রাখো, যাতে সুস্থ থাকতে পারো।
(খ) আল্লাহর রাসূল (স.) বলেছেন: প্রত্যেকটি জিনিসেরই জাকাত আছে, শরীরের জাকাত হল রোজা রাখা।
আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) হতেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী পবিত্র রমজান মাস সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে তন্মধ্যে দু’টির ভাবার্থ নিম্নে উল্লেখ করা হল:
(ক) তিনি তাঁর হতে বর্ণিত খোতবার একাংশে বলেন: যে সকল দিনে রোজা রাখা ওয়াজিব সে সকল দিনে কষ্ট সহ্য করে রোজা রাখলে শরীরের অঙ্গ প্রত্যাঙ্গ প্রশান্তি লাভ করে।
(খ) আমিরুল মু’মিনীন (আ.) বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন: রোজার মাধ্যমে জনগণের একনিষ্ঠতা পরীক্ষা করা হয়।
হযরত ইমাম রেজা (আ.) ও রোজা
ইমাম রেজা (আ.) হতেও দু’টি হাদীসের ভাবার্থ এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হল:
(ক) হযরত ইমাম রেজা (আ.) কে রোজার দর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: মানুষের উপর রোজা এ জন্য ফরজ করা হয়েছে যাতে ক্ষুধা ও পিপাসার তীব্রতা সে অনুভব করতে পারে। আর এমতাবস্থায় সে গরীব ও অভাবীদের ক্ষুধা ও পিপাসা এবং পরকালের ক্ষুধা ও পিপাসাকেও স্মরণ ও অনুভব করবে। কেননা আল্লাহর নবী (স.) পবিত্র শা’বান মাসের খোতবায় বলেছেন: ‘রোজার ক্ষুধা ও পিপাসার মাধ্যমে কেয়ামতের ক্ষুধা ও পিপাসাকে স্মরণ কর। এ স্মরণ করা মানুষকে কেয়ামতের পাথেয় প্রস্তুতের প্রতি তাগিদ দেয়। যাতে সে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অধিক চেষ্টা করে।
(খ) ইমাম আলী ইবনে মুসা আর-রেজা (আ.) রোজার দর্শন সম্পর্কে এভাবে বলেছেন: বান্দার ক্ষুধা ও পিপাসাকে অনুভব করার জন্য রোজা (ওয়াজিব হয়েছে)। যাতে বান্দা বিনম্র, অবনত ও ধৈর্য্যশীল হয়। এছাড়া রোজার মাধ্যমে প্রবৃত্তির কামনা ও বাসনা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়।
রোজাদারের স্থান
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) রোজাদারের ধৈর্য্য সম্পর্কে বলেন: রোজাদার ব্যক্তি যখন পানাহারে মগ্ন ব্যক্তিদের সম্মুখে উপস্থিত হয় তখন তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মহান প্রতিপালকের তসবীহ পাঠ করে এবং ফেরশতারা তার উপর দরুদ, সালাম ও রহমত প্রেরণ করেন। আর এ ক্ষেত্রে ফেরেশতাদের দরুদ প্রেরণের অর্থ হচ্ছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
রোজা রমজান মাসে মানুষকে কষ্টের সাথে পরিচিত করায়। রোজাদার এ সময় তীব্রভাবে অভাবীদের দুঃখ কষ্টকে অনুধাবন করে। আর যখন সে অভাবী ও অসহায়দের ব্যাথ্যা বুঝতে সক্ষম হয় তখন তাদেরকে সাহার্যের জন্য হাত বাড়াতে পূর্বের ন্যায় কুণ্ঠাবোধ করে না।
অন্য সকল সময় অপেক্ষা মানুষ পবিত্র রমজান মাসে মহান আল্লাহর যিকিরে অধিক মগ্ন থাকে। আর এ কারণেই এ মাসে সে তার আধ্যাত্মিক শূন্যতাকে পূর্ণ করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারে। নিঃসন্দেহে এ ধরনের সুযোগ –যা প্রতি বছরই মানুষের ভাগ্যে জোটে- হতে উপকৃত হয়ে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হওয়া উচিত।
রোজার ও এর রহস্য
ইসলামের নির্দেশাবলী এক দৃষ্টিকোণ হতে দুই ভাগে বিভক্ত: (ক) ব্যক্তিগত, (খ) সামাজিক। কিছু কিছু ইবাদত ব্যক্তিগত যেমন: মুস্তাহাব নামায সমূহ। অপরদিকে জামায়াতের নামায ও জুমআর নামায ইত্যাদি সামাজিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু রোজা এমন একটি ওয়াজিব কর্ম যা উভয়ের সাথেই সম্পৃক্ত।
যখন সকল মুসলমান একটি নির্দিষ্ট দিনে ও নির্দিষ্ট মাসে একত্রে রোজা রাখে তখন এর মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, রোজার মাঝে একটি সামাজিক শৃংখলা লুকায়িত আছে। আর তাছাড়া সকল মুসলমান ও মু’মিনরা পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখার সময় নিজেদেরকে পরীক্ষা করে নেয় এবং গুনাহ সম্পাদন হতে নিজেকে বিরত রাখে। এ কারণে রোজা একটি প্রশিক্ষণমূলক আমল যা মুসলমানদের কর্ম ও আচরণের উপর প্রভাব ফেলে।
ঐ রোজাটি মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের নিকট হতে চান যা সকল প্রকার গুনাহ হতে পবিত্র। রোজা শুধুমাত্র পানাহার হতে বিরত থাকার নাম নয়। বরং ঐ রোজা হচ্ছে গ্রহণযোগ্য যা ঐ সকল জিনিস হতে মানুষকে বিরত রাখে যা তাকে গুনাহের প্রতি নির্দেশনা দেয়।
ইসলামী নৈতিকতার দৃষ্টিতে রোজা শুধুমাত্র পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম নয়। বরং শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যাঙ্গের গুনাহ হতে বিরত থাকার নাম। প্রকৃত অর্থে রোজা এমন একটি আমল যার মধ্যে অসংখ্য গঠনমূলক রহস্য লুকায়িত আছে।
এ পবিত্র মাসে রোজাদার রোজার মাধ্যমে নিজের অন্তরকে সকল প্রকার পাপ পঙ্কিলতা ও আল্লাহ ব্যতীত যা কিছু তার অন্তরে স্থান করে নিয়েছে তা হতে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন