ইমাম মেহদি (আ.) অনুপস্থিত থাকার কারণ

ইমাম মেহদি (আ.) অনুপস্থিত থাকার কারণ

ইমাম মেহদি (আ.) অনুপস্থিত থাকার কারণ

ইমাম মাহদী, মাসুম, রাসূল, বিহারুল আনওয়ার, ইমাম আলী, ফাতিমাতুয্ যাহরা, ইমাম হাসান আসকারী, ইমাম, মুসা, ঈসা, আল্লাহ, ইমাম হুসাইন, ইমাম সাজ্জাদ, ইমাম বাকের, ইমাম জাফর সাদিক, ইমাম কাযিম, ইমাম মুসা রেযা, ইমাম তাকি আল জাওয়াদ, ইমাম হাদী, হাসান আসকারী, ইমাম মেহদি, জাবের

ইমাম মেহদি (আ.) অনুপস্থিত রয়েছেন। এটা এমন এক বিষয় যে শুধুমাত্র মানুষের বিবেক তার রহস্য পরোপুরিভাবে উদ্ঘাটন করতে অপারোগ। কিন্তু এমন কিছু হাদিস আছে যা তার কারণ ও যুক্তি সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করে থাকে। যদিও এর পুরোপুরি কারণ ইমাম মেহদি (আ.) আগনের পর স্পষ্ট হবে। কেননা আল্লাহ ও মাসুম ইমামগণ ব্যতিত এর কারণ ও হেকমত কেউ পুরোপুরিভাবে জানে না।
নবি করিম (সা.) বলেন:

یا جابر! انّ هذا الأمر امرٌ من أمر الله و سرّ من سرّ الله، مطوّی عن عباده فایّاک والشّک فی أمر الله فهو کفر

হে জাবের (ইমাম মেহদি) আল্লাহ তায়ালার গোপন রহস্যগুলোর মধ্য হতে একটি গোপন রহস্য, যা মানুষের নিকট অস্পষ্ট। তোমরা আল্লাহর নির্দেশের প্রতি কেউ যেন সন্দেহ কর না। কেননা আল্লাহর নির্দেশের প্রতি সন্দেহ করা হচ্ছে কুফর। বিহারুল আনওয়ার; খঃ ৭৩, পৃ১৮।

    ইমাম সাদিক (আ.) কে প্রশ্ন করা হয়, কেন ইমাম মেহদি (আ.) অদৃশ্যে রয়েছেন? উত্তরে তিনি বলেনঃ তাঁর পূর্বে যে কারণে, আল্লাহর ওলিগণ অদৃশ্যে ছিলেন, সে কারণেই তিনি অদৃশ্যে রয়েছেন। তিনি আগনের পর তাঁর অদৃশ্যে থাকার কারণ পুরোপুরিভাবে স্পষ্ট হবে। কেননা হজরত খিজির (আ.) এর মাধ্যমে; নৌকা ছিদ্র করা, শিশুকে হত্যা কারা ও দেয়াল ভেংগে দেয়ার কারণ তখন হজরত মুসা (আ.) কে জানানো হয়, যখন তারা একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যায়। (কামালুদ দ্বিন ওয়া তামামুন নিয়ামাহ; খঃ ২, পৃঃ ৪৮২।)

    সুতরাং ইমাম মেহদি (আ.) এর অনুপস্থিতির সমস্ত কারণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে তাঁর অদৃশ্যে থাকার কিছু কারণ উলেস্নখ করা হলোঃ

১. জনগণকে পরীক্ষা করা
    ইমামে জামান হজরত মেহদি (আ.) কে অদৃশ্যে রেখে তাঁর অনুসারীদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোরআনের আয়াত ও হাদিস হতে বুঝা যায় যে, পরীক্ষা এমন একটি বিষয় যে আল্লাহ তায়ালা সর্ব কালে তাঁর বান্দাদেরকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ

الذی خلق الموت و الحیوة لیبلوکم ایکم احسن عملا

যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন যে, তোমাদের মধ্যে কর্মে কে উত্তম। (সুরা মুলক; আয়াত নং ২।)
    পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষের প্রতিভা প্রস্ফুটিত হয় ও যোগ্যতা প্রমাণিত হয়। এর মাধ্যমে ইমানদারদের ইমান, ধৈর্য এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুগত্যের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা হচ্ছে ইমাম মেহদি (আ.) এর অনুপস্থিতিতে তাঁর অনুসারী হিসেবে বিদ্যমান থাকা।

    প্রথমতঃ যারা মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ও অন্যান্য ইমামগণের সমকালিন সময়ে জীবন যাপন করেছেন, তারা ইমাম মেহদি (আ.) এর অনুপস্থিতিতে যেসমস্ত মোমিন বান্দারা জীবন যাপন করবে তাদের চেয়ে উত্তম। কেননা ইমাম মেহদি (আ.) এর অদৃশ্যে কার সময় দীর্ঘ হবে। আর এটা হচ্ছে অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষাগুলো মাঝে একটি। যারা প্রকৃত ইমানদার তারা এমত অবস্থাতেও এখলাস সহকারে তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখবে।

    আলি (আ.) মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ হে আলি! যেনে রাখ যারা আখেরী জামানায় জীবন যাপন করবে তাদের ইমান, মহত্ব ও সম্মান অত্যন্ত উর্ধে। কেননা তারা রাসুল (সা.) ও ইমামগণকে দেখেনি, অথচ তারা শুধুমাত্র লিপিবদ্ধকৃত বর্ণনাসমূহ দেখার মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন।

    অন্য একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস, মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) হতে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেনঃ আলি ইবনে আবি তালেব হচ্ছেন আমার উম্মতের জন্য আমার পক্ষহতে ওয়াসি। তাঁর সন্তানদের মধ্য হতে শেষ জামানার ইমাম আগমন করবেন এবং পৃথিবীকে ন্যায়পরায়নতায় ভরপুর করে দিবেন। সে আল্লাহর কসম যিনি আমাকে নবি হিসেবে প্রেরণ করেছেন, শেষ জামানায় যারা ঐ ইমামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে তারা লাল ইয়াকুত ও স্বর্ণের চেয়ে উত্তম। জাবের ইবনে আব্দুলস্নাহ আনসারী দাঁড়িয়ে বলেনঃ শেষ জামানার ইমাম কি অদৃশ্যে থাকবে? মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেনঃ হ্যাঁ, এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন। (কামালুদ দ্বিন; পৃঃ ২৭৮ ও ২৮৮।)

দ্বিতীয়তঃ শেষ জামানায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যে ইমান রক্ষা করা অনুরূপ কঠিন হবে যেরূপ হাতের ওপর জলন্ত আগুন রাখা কষ্টকর। এ জামানায় মানুষকে ধোকা দেয়া হবে। গুনাহের মাধ্যমগুলো অতিতের চেয়ে বেশি হাতের নাগালে থাকবে। নারী পুররুষরা অবহিত কাজ বেশি করবে। হাদিসেও এ বিষয়টির প্রতি গুররুত্বারোপ করা হয়েছে যে, ইমাম মেহদি (আ.) কে অদৃশ্যে রাখার মাধ্যমে মোমিনদেরকে পরীক্ষা করা হবে।

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেনঃ

ذاک الّذی یغیب عن شیعته و اوْلیائه غیْبةً، لا یثْبت فیها علی القوْل بِامامتِه اِلّا من امْتحَن اللهُ قلْبَه للاْیمان

তিনি (ইমাম মেহদি আ.) তাঁর অনুসারীদের নিকট হতে অনুপস্থিত থাকবেন, এমত অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা যাদের অন্তরকে ইমানের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছেন তারা ব্যতিত কেউ তাঁর ইমামতে বিশ্বাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। (বিহাররুল আনওয়ার; খঃ ৩৬, পৃঃ ২৫০।)

    ইমাম হাসান (আ.) বলেনঃ

له غیبة یرتدّ فیها اقوام و یثبت علی الدّین فیها آخرون... أما انّ الصابر فی غیبته علی الأذی والتکذیب بمنزلة المجاهد بالسیف بین یدی رسول الله(صلی الله علیه وآله)

ইমাম মেহদি (আ.) অদৃশ্যে থাকবেন। এমত অবস্থায় কেউ কেউ দ্বিন হতে দুরে সরে যাবে এবং কেউ কেউ দ্বিনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যে ব্যক্তি ইমাম মেহদি (আ.) অদৃশ্যে থাকা অস্থায় ধৈর্য ধারণ করবে এবং শত্ররুদের মোকাবিলায় দৃঢ়ভাবে হকের ওপর টিকে থাকবে; আল্লাহ তায়ালর নিকট তার প্রতিদান এত মহত হবে যে, সে যেন মহানবি (সা.) এর সাথে অস্ত্র ধারণ করে শত্ররুদের সাথে যুদ্ধ করেছে। (বিহাররুল আনওয়ার; খঃ ৫১, পৃঃ ১৩৩।)

    ইমাম সাদিক (আ.) বলেনঃ

ان الله عزّوجلّ یحبّ أنْ یمتحن الشیعة

আল্লাহ তায়ালা (ইমাম মেহদি (আ.) কে অদৃশ্যে রাখার মাধ্যমে) শিয়াদেরকে পরীক্ষা করতে পছন্দ করেন। (আল কাফি; খঃ ১, পৃঃ ৩৩৭।)

২. ইমাম মেহদি (আ.) কারো হাতে বাইআত না করা
    হাদিসে এসেছে যে ইমাম মেহদি (আ.) কাউরো হাতে বাইআত করবেন না। এবং তিনি যখন আগমন করবেন তখন তাকিয়া থাকবে না।
    ইমাম হাসান (আ.) বলেনঃ

ما منّا احد الّا و یقع فی عنقه بیعة لطاغیة زمانه الّا القائم الّذی یصلّی روح الله عیسی بن مریم خلفه فانّ الله عزّوجلّ یخفی ولادته و یغیب شخصه لئلّا یکون لاحد فی عنقه بیعة...

আমাদের মধ্য হতে (আহলে বাইতের ইমামগণ) প্রত্যেকেই তার যুগের অত্যাচারী শাসকের সাথে তাকিয়ার অবস্থায় বাইআত করেছি, শুধুমাত্র ইমাম মেহদি (আ.) ব্যতিত, যার পিছনে হজরত ইসা (আ.) নামাজ পড়বেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর জন্মকে প্রকাশ করেননি এবং তাঁকে তত দিন পর্যন্ত অদৃশ্যে রাখবেন যত দিন তিনি কিয়াম (বিপস্নব) করনে না। তিনি কোন শাসকের হাতে বাইআত করবেন না। (বিহাররুল আনওয়ার; খঃ ৫১, পৃঃ ১৩২।)

৩. ইমামের প্রাণের হেফাজত
    ইমাম মেহদি (আ.) কে অদৃশ্যে রাখার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর জানের হেফাজত করেছেন। যদি আল্লাহ তায়ালা তাকে অদৃশ্যে না রাখতেন তাহলে আব্বাসী খলিফা মুতামেদ তাকে শহিদ করত। অন্যান্য ইমামগণকে যেভাবে শহিদ করা হয়েছে সেভাবে ইমাম মেহদি (আ.) কেউ শহিদ করা হত। আর এর মাধ্যমে জমিন আল্লাহর হুজ্জাত শূণ্য হয়ে যেত।
ইমাম বাকের (আ.) বলেনঃ

انّ للقائم غیبة قبل أن یقوم، قال: قلت: و لم؟ قال: یخاف

ইমাম মেহদি (আ.) কিয়ামের (আগমনের) পূর্বে অদৃশ্যে থাকবে। বর্ণনাকারী প্রশ্ন করেন কেন? হজরত বলেনঃ কেননা তিনি হত্যা হওয়ার ভয় রয়েছে।

৪. মানুষ সীমালংঘণকারী হওয়া
    হজরত আলি (আ.) বলেনঃ জমিন আল্লাহর হুজ্জাত শূন্য হবে না। কিন্তু যদি মানুষ সীমালংঘকারী ও অত্যাচারী হওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা তার হুজ্জাত হতে (বাহ্যিকভাবে) বঞ্চিত করবেন।

৫. অদৃশ্যে রাখা, আল্লাহর নিয়ম
    আল্লাহর হুজ্জাত অদৃশ্যে থাকা ইমাম মেহদি (আ.) এর ক্ষেত্রেই প্রথম নয়; বরং অতিতের উম্মতের মাঝেও এ নিয়ম প্রচলিত ছিল।
    ইমাম সাদিক (আ.) বলেনঃ ইমাম মেহদি (আ.) দীর্ঘ দিন যাবত অদৃশ্যে থাকবেন। বর্ণনাকারী প্রশ্ন করেন কেন? হজরত বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা চান যে অতিতের নিয়ম ইমাম মেহদি (আ.) এর ক্ষেত্রেও বাস্তবায়ন হোক। (কামালুদ দ্বিন; খঃ ২, পৃঃ ৪৮০।)

    অন্য স্থানে ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা হজরত খিজির (আ.) কে দীর্ঘ হায়াত দান করেছেন যাতে করে ইমাম মেহদি (আ.) এর দীর্ঘ হায়াত দর্শনকে প্রমাণ করতে সহজ হয়। (কামালুদ দ্বিন; খঃ ২, পৃঃ ৩৫২।)

৬. জনগণ প্রস্তুত না থাকা
    পৃথিবী ব্যাপী ইসলামকে বিস্ত্মৃত করার জন্য জনগণের যে যোগ্যতা প্রয়োজন তা সৃষ্টি হয়নি। জনগণ বাতিল শক্তির মুখামুখি হওয়ার মাধ্যমে সত্যের গুররুত্ব বুঝতে পারবে। ইমাম মেহদি (আ.) আগমনের পর পৃথিবী ন্যায়পরায়নতায় ভরপুর হয়ে যাবে। এ ধরণের শাসন ব্যাবস্থা মেনে নেয়ার জন্য পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং জনগণের প্রস্তুতি একান্ত প্রয়োজন।

৭. যথেষ্ট পরিমাণ সহযোগী বিদ্যমান না থাকা
    ইমাম মেহদি (আ.) অদৃশ্যে থাকার একটি উলেস্নখযোগ্য কারণ হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণ সহযোগী বিদ্যমান না থাকা। হদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মেহদি (আ.) এর বিশের সহযোগীর সংখ্যা হবে ৩১৩ জন। তবে সাধারণ সহযোগীর সংখ্যা নির্ধারিত নয়।

৮. অত্যাচারী শাসকদের পক্ষ হতে নিরাপত্তা না থাকা
    ইমাম সাদিক (আ.) বলেনঃ

يقوم القائم و ليس لاحد في عنقه عهد ولا عقد ولا بيعه

আমাদের কায়েম (ইমাম মেহদি) এমন অস্থায় আগমন করবেন যে তিনি কোন শাসকের হাতে বায়আত করবেন না এবং কাউরো সাথে কোন সন্ধি করবেন না।
    ইমাম মেহদি (আ.) এর দাওয়াতের পদ্ধতির সাথে অন্যান্য ইমমাগণের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য ইমামগণ দাওয়াতের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধ ছিলেন। তারা কোন কোন সময় বাতিল শক্তির সাথে সন্ধি করেছেন। কিন্তু ইমাম মেহদি (আ.) কোন অত্যাচারী ব্যক্তির সাথে সন্ধি করবেন না। তিনি অত্যাবারীদের বিররুদ্ধে জিহাদ করার মাধ্যমে অন্যায়কে পৃথিবী হতে দূর করবেন।

     কোন কোন ইমামকে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, কেন অত্যাচারীদের বিররুদ্ধে কিয়াম করছেন না। উত্তরে তাঁরা বলেছেনঃ কিয়াম (বিপস্নব) করার দায়িত্ব হচ্ছে ইমাম মেহদি (আ.) এর।

    পৃথিবীতে অত্যাচারীদের যে প্রভাব ঘটেছে তাতে ইমাম মেহদি (আ.) এর কিয়াম (বিপস্নব) অনিবার্য। আমরা তাঁর আবির্ভাবের অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা নিজেদেরকে তাঁর আগমনের জন্য যত তাড়াতাড়ি প্রস্তুত করব, তত তাড়াতাড়ি তিনি আগমন করবেন।  সূত্রঃ ইন্টারনেট
    
 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন