মামিয়াদের আকায়েদ – ২

ইমামিয়াদের আকায়েদ – ২

মহানবি (সা.) এর যে ১২ জন ওয়াসি রয়েছেন তাঁরা সকলেই নিষ্পাপ। এই ১২ জন ওয়াসি হচ্ছেনঃ
১. আমিরুল মোমিনিন আলি ইবনে আবি তালেব (আ.) [জন্মঃ মহানবি (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির ১০ বছর পূর্বে, শাহাদতঃ ৪০ হিজরীতে, মাজারঃ ইরাকের নাজাফ শহরে।]
২. ইমাম হাসান ইবনে আলি (আ.), উপাধিঃ মোজতবা, [জন্মঃ ৩ হিজরীতে, শাহাদতঃ ৫০ হিজরীতে, মাজারঃ মদিনার জান্নাতুল বাকিতে।]
৩. ইমাম হুসাইন ইবনে আলি (আ.), উপাধিঃ সাইয়্যেদুশ শুহাদা, [জন্মঃ ৪ হিজরীতে, শাহাদতঃ ৬১ হিজরীতে, মাজারঃ ইরাকের কারবলাতে।]
৪. ইমাম আলি ইবনে হুসাইন (আ.), উপাধিঃ জয়নুল আবেদিন, [জন্মঃ ৩৮ হিজরীতে, শাহাদতঃ ৯৪ হিজরীতে, মাজারঃ মদিনার জান্নাতুল বাকিতে।]
৫. ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলি (আ.), উপাধিঃ বাকেরুল উলুম, [জন্মঃ ৫৭ হিজরীতে, শাহাদতঃ ১১৪ হিজরীতে, মাজারঃ মদিনার জান্নাতুল বাকিতে।]
৬. ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ (আ.), উপাধিঃ সাদিক, [জন্মঃ ৭৩ হিজরীতে, শাহাদতঃ ১৪৮ হিজরীতে, মাজারঃ মদিনার জান্নাতুল বাকিতে।]
৭. ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.), উপাধিঃ কাজিম, [জন্মঃ ১২৮ হিজরীতে, শাহাদতঃ ১৮৩ হিজরীতে, মাজারঃ ইরাকের কাজেমাইন শহরে।]
৮. ইমাম আলি ইবনে মুসা (আ.), উপাধিঃ রেজা, [জন্মঃ ১৪৮ হিজরীতে, শাহাদতঃ ২০৩ হিজরীতে, মাজারঃ ইরানের মাশহাদ শহরে।]
৯. ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলি (আ.), উপাধিঃ জাওয়াদ, [জন্মঃ ১৯৫ হিজরীতে, শাহাদতঃ ২২০ হিজরীতে, মাজারঃ ইরাকের কাজেমাইন শহরে।]
১০. ইমাম আলি ইবনে মুহাম্মাদ (আ.), উপাধিঃ হাদি, [জন্মঃ ২১২ হিজরীতে, শাহাদতঃ ২৫৪ হিজরীতে, মাজারঃ ইরাকের সামেররা শহরে।]
১১. ইমাম হাসান ইবনে আলি (আ.), উপাধিঃ আসাকারী, [জন্মঃ ২৩২ হিজরীতে, শাহাদতঃ ২৬০ হিজরীতে, মাজারঃ ইরাকের সামেররা শহরে।]
১২. ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান (আ.), উপাধিঃ মাহদি, [জন্মঃ ২৫৫ হিজরীতে।] তিনি বর্তমানে অদৃশ্যে রয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ হলেই তাঁর প্রকাশ ঘটবে।
কোরআন ও হাদিসের নির্দেশ অনুযায়ী পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা ওয়াজিব এবং মোমিনের চিহ্ন। আহলে বাইতের সাথে শত্রুতা করা হচ্ছে অমুসলমানিত্বের কাজ; কেননা তাঁদেরকে অমান্য করার অর্থ হচ্ছে কোরআনের আয়াত ও রাসুলকে অমান্য করা।
আহলে বাইত (আ.) কে মোনাফেকরা অনেক কষ্ট দিয়েছে। তারা প্রত্যেক ইমাম (আ.) কে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করিয়েছে। ইমাম হুসাইন (আ.) কে কারবালায় নির্মমভাবে তৃষ্ণা অবস্থায় শাহাদত বরণ করিয়েছে।
শিয়া ও সুন্নিদের মুতাওয়াতির হাদিস অনুযায়ী মহানবি (সা.) এর বারতম উত্তসুরী, ইমাম মেহদি (আ.) কিয়াম করবেন এবং সমাজকে শান্তি ও ন্যায়পরায়নতায় পরিপূর্ণ করবেন। মহানবি (সা.) ও ইমামগণ তাঁর কিছু বৈশিষ্ট বর্ণনা করেছেন, যা নিম্নরূপঃ
১.    ইমাম মেহদি (আ.) মহানবি (সা.) এর আহলে বাইতের মধ্য হতে হবেন। এ বিষয়ে ৩৮৯ টি হাদিস রয়েছে।
২.    তিনি আমিরুল মোমিনিন আলি (আ.) এর বংশধর। এ বিষয়ে ২১৪ টি হাদিস রয়েছে।
৩.    তিনি ফাতেমা জাহরা (আ.) এর বংশ হতে হবেন। এ বিষয়ে ১৯২ টি হাদিস রয়েছে।
৪.    ইমাম হুসাইন (আ.) এর নবম বংশ হবেন। এ বিষয়ে ১৪৮ টি হাদিস রয়েছে।
৫.    ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) এর বংশ হতে হবেন। এ বিষয়ে ১৮৫ টি হাদিস রয়েছে।
৬.    ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর সন্তানদের মধ্য হতে হবেন। এ বিষয়ে ১৪৬ টি হাদিস রয়েছে।
৭.    তিনি আহলে বাইত (আ.) এর বারতম ইমাম। এ বিষয়ে ১৩৬ টি হাদিস রয়েছে।
৮.    তাঁর জন্ম সম্পর্কে যেসমস্ত হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এ ধরণের হাদিসের সংখ্যা ২১৪ টি।
৯.    তিনি দীর্ঘ হায়াতের অধিকারী হবেন। এ বিষয়ে ৩১৮ টি হাদিস রয়েছে।
১০.     তিনি দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত (অদৃশ্যে) থাকবেন। এ বিষয়ে ৯১ টি হাদিস রয়েছে।
১১.     তাঁর আগমনের পর ইসলাম বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়বে। এ বিষয়ে ২৭ টি হাদিস রয়েছে।
১২.     তিনি পৃথিবীকে ন্যায়পরায়নতায় ভরপুর করবেন। এ বিষয়ে ১৩২ টি হাদিস রয়েছে।

ইমাম মেহদি (আ.) এর মাঝে, অতিতে নবিগণের যেসমস্ত্ম বৈশিষ্ট বিদ্যমান রয়েয়েছঃ
যেসব ক্ষেত্রে হজরত আদম (আ.) এর সাথে ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
১. ইমাম মেহদি (আ.) দীর্ঘ হায়াতের অধিকারী; হজরত আদম (আ.) ও দীর্ঘ হায়াতের অধিকারী ছিলেন।
২. ইমাম মেহদি (আ.) সারা পৃথিবীর খলিফা; হজরত আদম (আ.) ও সারা পৃথিবীর অধিকারী ছিলেন।
৩. পৃথিবী কুফরী ও ফ্যাসাদে পরিপূর্ণ হওয়ার পর, ইমাম মেহদি (আ.) আল্লাহ তায়ালার এবাদতে পরিপূর্ণ করবেন; হজরত আদম (আ.) ও জিনদের কুফরী ও ফ্যাসাদে পৃথিবী পরিপূর্ণ হওয়ার পর, আল্লাহ তায়ালার এবাদতে পরিপূর্ণ করেছিলেন।

যেক্ষেত্রে হজরত শিস (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
ইমাম মেহদি (আ.) কিছু দিন যাবত তাঁর পূর্ণ জ্ঞান প্রকাশ করবেন না; যেভাবে হজরত শিস (আ.)ও কিছু দিন যাবত তাঁর পূর্ণ জ্ঞান প্রকাশের জন্য আল্লাহর তরফ হতে অনুমতি পেয়েছিলেন না।

যেসব ক্ষেত্রে হজরত নুহ (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
১. ইমাম মেহদি (আ.) দীর্ঘ হায়াতের অধিকারী; হজরত নুহ (আ.)ও দীর্ঘ হায়াতের অধিকারী ছিলেন।
২. ইমাম মেহদি (আ.) এর শত্রুরা ধ্বংশ হয়ে যাবে; যেভাবে হজরত নুহ (আ.) এর শত্রুরাও ধবংশ হয়ে গিয়েছিল।
৩. ইমাম মেহদি (আ.) পুরো পৃথিবীতে তৌওহিদের পতাকা উড্ডয়ন করবেন; যেভাবে হজরত নুহ (আ.) পুরো পৃথিবীতে তৌওহিদের আহবানে ভরপুর করেছিলেন।
৪. প্রথমে ইমাম মেহদি (আ.) কে অধিকাংশ মানুষ অস্বীকার করবে; যেভাবে হজরত নুহ (আ.) কে অধিকাংশ মানুষ অস্বীকার করেছিল।

যেসব ক্ষেত্রে হজরত ইবরাহিম (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
১. ইমাম মেহদি (আ.) এর জন্ম গোপনে হয়েছিল; অনুরূপভাবে হজরত ইবরাহিম (আ.) এর জন্মও গোপনে হয়েছিল।
২. ইমাম মেহদি (আ.) অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করবেন; যেভাবে হজরত ইবরাহিম (আ.)ও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করেছিলেন।
৩. ইমাম মেহদি (আ.) সকলের নিকট তৌহিদের দাওয়াত পৌছাবেন; যেভাবে হজরত ইবরাহিম (আ.) সকলের নিকট তৌহিদের দাওয়াত পৌছিয়েছিলেন।
৪. ইমাম মেহদি (আ.) অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্তি পাবেন; যেভাবে হজরত ইবরাহিম (আ.)ও অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
যেক্ষেত্রে হজরত লুত (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
ইমাম মেহদি (আ.) কে সাহায্য করার জন্য ফেরেশতা অবতীর্ণ হবে; যেভাবে হজরত লুত (আ.) কে সাহায্য কারার জন্য ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়েছিল।
যেক্ষেত্রে হজরত ইয়াকুব (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
হজরত ইমাম হুসাইন (আ.) এর ওপর আসা মুসিবতের কারণে ইমাম মেহদি (আ.) সর্বদা ব্যথিত অবস্থায় রয়েছেন; অনুরূপভাবে হজরত ইয়াকুব (আ.)ও হজরত ইফসুফ ওপর যে মুসিবত এসেছিল তার কারণে সর্বদা ব্যথিত ছিলেন।
হজরত দাউদ (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর যে মিল রয়েছেঃ
ইমাম মেহদি (আ.) ন্যায়পরায়নতার নির্দেশ দিবেন; যেভাবে হজরত দাউদ (আ.)ও সর্বদা ন্যায়পরায়নতার নির্দেশ দিতেন।
যেসব ক্ষেত্রে হজরত ইউসুফ (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
১. ইমাম মেহদি (আ.) অত্যন্ত সুন্দর চেহারার অধিকারী; যেভাবে হজরত ইফসুফ (আ.)ও অত্যন্ত সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলেন।
২. ইমাম মেহদি (আ.) কে সকলে দেখেও চিনে না; যেভাবে হজরত ইফসুফ (আ.) কেও তাঁর ভায়েরাসহ সকলে দেখেও চিন্তে পারত না।
৩. ইহুদিরা জানে যে ইমাম মেহদি (আ.) জীবিত রয়েছেন, কিন্তু অস্বীকার করে; অনুরূপভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) এর ভায়েরাও জান্ত যে তিনি জীবিত আছেন, কিন্তু মৃত্যুর খবর প্রচার করত।
৪. লোকেরা ধারণা করে যে ইমাম মেহদি (আ.) আমাদের মাঝে উপস্থিত নেই; অনুরূপভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) এর সমকালীন যুগের লোকরাও মনে করত যে হজরত ইউসুফ (আ.) মৃত্যু বরণ করেছেন।
৫. প্রকৃত মোমিন ব্যক্তিরা জানে যে ইমাম মেহদি (আ.) জীবিত রয়েছেন; অনুরূপভাবে হজরত ইয়াকুব (আ.)ও জানতেন যে হজরত ইউসুফ (আ.) জীবিত রয়েছেন।
৬. গোমরা লোকেরা ইমাম মেহদি (আ.) কে হত্যা করার চেষ্টা করবে; যেভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) এর ভায়েরাও তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল।
৭. ইমাম মেহদি (আ.) এর শত্রুরা তাদের কর্মের কারণে লজ্জিত হবে; যেভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) এর ভায়েরাও তাদের কর্মের কারণে লজ্জিত হয়েছিল।
৮. ইমাম মেহদি (আ.) অদৃশ্যে রয়েছেন; যেভাবে হজরত ইউসুফ (আ.)ও তাঁর জাতি ও পরিবার হতে অনুপস্থিত ছিলেন।
৯. ইমাম মেহদি (আ.) তাঁর সময়ের লোকদেরকে মুক্তি দান করবেন; যেভাবে হজরত ইউসুফ (আ.)ও তাঁর জাতি ও পরিবারকে দুর্ভিক্ষ হতে মুক্তি দিয়ে ছিলেন।
১০. শেষ জামানার লোকরা ইমাম মেহদি (আ.) এর মর্যাকে অনুধাবন করে না; যেভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) এর সময়ের লোকরাও তাঁর মর্যাকে অনুধাবন করত না।
১১. ইমাম মেহদি (আ.) এর মর্যাদা, পবিত্রতা ও জ্ঞান সকলের নিকট স্পষ্ট হবে; যেভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) মর্যা, পবিত্রতা ও জ্ঞান সকলের নিকট স্পষ্ট হয়েছিল।
১২. ইমাম মেহদি (আ.) এর নির্দেশ মান্য করলে মানুষ সফলকাম হবে; যেভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) এর নির্দেশ মান্য করার ফলে ততকালীন সময়ের লোকরা দুর্ভিক্ষ ও নানাবিধ সমস্যা হতে মুক্তি পেয়েছিল।
১৩. ইমাম মেহদি (আ.) এর শাসনে সকলেই রাজি ও খুশি হবে; যেভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) এর শাসনে সকলেই রাজি ও খুশি হয়েছিল।
১৪. ইমাম মেহদি (আ.) কে অহেতুকভাবে অভিযুক্ত করবে; যেভাবে হজরত ইউসুফ (আ.) কেও অহেতুকভাবে অভিযুক্ত করেছিল।
যেসব ক্ষেত্রে হজরত সুলাইমান (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
১. ইমাম মেহদি (আ.) সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত করবেন; যেভাবে হজরত সুলাইমান (আ.)ও সমস্ত পৃথিবীকে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে পরিপূর্ণ করেছিলেন।
২. ইমাম মেহদি (আ.) সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার হুকুমতকে প্রতিষ্ঠিত করবেন; যেভাবে হজরত সুলাইমান (আ.)ও সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার হুকুমত প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
যেক্ষেত্রে হজরত ইলিয়াস (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
     ইমাম মেহদি (আ.) এর দোয়াতে মৃতব্যক্তিরা জীবিত হবে; যেভাবে হজরত ইলিয়াস (আ.) এর দোয়াতেও মৃতব্যক্তিরা জীবিত হত।
যেক্ষেত্রে হজরত আইয়ুব (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
    আল্লাহ তায়ালা ইমাম মেহদি (আ.) এর জন্য সমস্যার পর শান্তির ব্যাবস্থা করবেন; যেভাবে তিনি হজরত আইয়ুব (আ.) এর জন্য সমস্যার পর শান্তির ব্যাবস্থা করেছিলেন।
যেসব ক্ষেত্রে হজরত মুসা (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
    ১. ইমাম মেহদি (আ.) শত্রুদের মাঝে জীবন যাপন করবেন, তারা ইমামকে দেখবে কিন্তু চিনবে না; যেভাবে হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের অনুসারীদের মাঝে জীবন যাপন করতেন। তারা তাঁকে দেখত কিন্তু চিন্তে পারত না।
২. ইমাম মেহদি (আ.) কে শত্রুরা হত্যা করার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি; অনুরূপভাবে হজরত মুসা (আ.) কেও হত্যা করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পেরেছিল না।
৩. অত্যাচারীরা জানে যে ইমাম মেহদি (আ.) শত্রুদের ওপর বিজয় হবেন; যেভাবে হজরত মুসা (আ.) এর শত্রুরাও জানত যে তিনি বিজয় হবেন।
    ৪. ইমাম মেহদি (আ.) এর অনুসারী ও শত্রু সকলেই তাঁর অপেক্ষায় রয়েছে। অনুসারীরা নিজেকে দুরাবন্থা হতে মুক্তি দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আর শত্রুরা তাঁর ক্ষতি করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। অনুরূপভাবে অনুসারী ও শত্রু সকলেই হজরত মুসা (আ.) এর অপেক্ষায় ছিল। অনুসারীরা নিজেদেরকে দুরাবন্থা হতে মুক্তি দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল। আর শত্রুরা তাঁর ক্ষতি করার জন্য অপেক্ষায় ছিল।
    ৫. ইমাম মেহদি (আ.) তাঁর জীবনের হেফাজতের জন্য আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে অদৃশ্যে রয়েছেন; অনুরূপভাবে হজরত মুসা (আ.)ও তাঁর জীবনের হেফাজতের জন্য আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তাঁর জাতি হতে দুরে ছিলেন।
৬. ইমাম মেহদি (আ.) এর আগমনের জন্য দোয়া করলে তাঁর আগমন তাড়াতাড়ি ঘটবে; যেভাবে বনি ইসরাইলরা দোয়া করার কারণে হজরত মুসা (আ.) এর আগমন তাড়াতাড়ি ঘটেছিল।
৭. ইমাম মেহদি (আ.) কারামতের অধিকারী; যেভাবে হজরত মুসা (আ.) মোজেজার অধিকারী ছিলেন।
৮. ইমাম মেহদি (আ.) এর শত্রুরা ধবংশ হয়ে যাবে; যেভাবে হজরত মুসা (আ.) এর শত্রুরাও ধবংশ হয়ে গিয়েছিল।
৯. ইমাম মেহদি (আ.) এর শত্রুরা চেষ্টা করেছিল যে তিনি জন্মগ্রহণের পূর্বেই হত্যা করবে কিন্তু পারেনি। অনুরূপভাবে হজরত মুসা (আ.) এর শত্রুরাও তাঁকে জন্মগ্রহণের পূর্বেই হত্যা করার চেষ্টা করেছিল; কিন্তু পারেনি।
১০. অত্যাচারীরা ইমাম মেহদি (আ.) এর উপস্থিতিকে অস্বীকার করে; কিন্তু মোমিনরা তাঁর প্রতি ইমান রাখে। অনুরূপভাবে অত্যাচারীরা হজরত মুসা (আ.) এর উপস্থিতিকে অস্বীকার করত; কিন্তু বনি ইসরাইলরা তাঁর প্রতি ইমান রাখত।
যেসব ক্ষেত্রে হজরত ইসা (আ.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
১. আল্লাহ তায়ালা ইমাম মেহদি (আ.) কে শৈশব কালেই জ্ঞান, মারেফাত ও ইমামত দান করেছেন; যেভাবে হজরত ইসা (আ.) কেও শৈশব কালেই জ্ঞান, ও নবুওয়াত দান করেছিলেন।
২. ইমাম মেহদি (আ.) এর শত্রুরা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে ও করবে; যেভাবে হজরত ইসা (আ.) এর শত্রুরাও তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল।
৩. ইমাম মেহদি (আ.) এর শত্রুরা মনে করেছিল যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে; অনুরূপভাবে হজরত ইসা (আ.) এর শত্রুরাও মনে করেছিল যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
৪. ইমাম মেহদি (আ.) এর কারামত রয়েছে; যেভাবে হজরত ইসা (আ.) এর মোজেজা ছিল।
৫. ইমাম মেহদি (আ.) অদৃশ্যে রয়েছেন; যেভাবে হজরত ইসা (আ.)ও বর্তমানে অদৃশ্যে রয়েছেন।
৬. ইমাম মেহদি (আ.) দীর্ঘ হায়াতের অধিকারী; যেভাবে হজরত ইসা (আ.)ও দীর্ঘ হায়াতের অধিকারী ছিলেন।
৭. ইমাম মেহদি (আ.) জীবিত রয়েছেন; যেভাবে হজরত ইসা (আ.)ও জীবিত রয়েছেন।
৮. আমরা ইমাম মেহদি (আ.) এর জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত নই; যেভাবে হজরত ইসা (আ.) এর জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কেও পুরোপুরিভাবে অবগত নই।
যেসব ক্ষেত্রে হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথে, ইমাম মেহদি (আ.) এর মিল রয়েছেঃ
    ১. ইমাম মেহদি (আ.) বিভিন্ন জাতির প্রধানদের নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পাঠাবেন; যেভাবে হজরত মুহম্মাদ (সা.) বাদশাদের নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পাঠিয়েছিলেন।
    ২. ইমাম মেহদি (আ.) শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করবেন; যেভাবে হজরত মুহম্মাদ (সা.) ইসলামের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন।
    ৩. ইমাম মেহদি (আ.) এর খাস সাথী হবে ৩১৩ জন; যেভাবে বদরের যুদ্ধে হজরত মুহম্মাদ (সা.) এর সাথী ছিল ৩১৩ জন।
    ৪. ইমাম মেহদি (আ.) জনগণকে অজ্ঞতা হতে জ্ঞানের দিকে দাওয়াত করবেন; যেভাবে হজরত মুহম্মাদ (সা.) জনগণকে অজ্ঞতা হতে জ্ঞানের দিকে দাওয়াত দাওয়াত করেছিলেন।
    ৫. ইমাম মেহদি (আ.) সমস্ত নবিগণ ও ওয়াসিগণের সারাংশ।
    ৬. সমস্ত নবিগণের মোজেজার শক্তি তাকে দান করা হবে।
    ৭. সমস্ত ভাষায় কথা বলবেন।
    ৮. যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
    ৯. ফেরেশতা ও মোমিনগণ তাঁকে সাহায্য করবে।
    ১০. সমস্ত মোমিনগণ তাঁর প্রতি ইমান আনবে এবং তাঁর শাসনে রাজি ও খুশি হবে।
    ১১. আমরা ইমাম মেহদি (আ.) এর আগমনের নির্ধারিত সময় সম্পর্কে জ্ঞান রাখি না; কিন্তু তাঁর আগমন আবশ্যকীয়। যেভাবে আমারা কিয়ামতের নির্ধারিত দিন সম্পর্কে জ্ঞান রাখি না; কিন্তু কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে।

কিয়ামতঃ
    সমস্ত নবিগণই তাদের দাওয়াতে পরজগতের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এটা এমন এক বিশ্বাস যা মানুষকে সীমালংঘন হতে বাধা প্রদান করে থাকে।
    মানুষ অযথা সৃষ্টি হয়নি। আল্লাহ তায়ালার আদল বা ন্যায়পরায়নতা মোমিনদেরকে চিরকালের জন্য স্বর্গবাসী করবে। আর কাফের ও মোনাফেকদেরকে জাহান্নামের অধিবাসী করবে।
    মানুষ চিরন্তন জীব। মৃত্যুর মাধ্যমে শুধু স্থান পরিবর্তন হবে। এই জগত হতে অন্য জগতে স্থানান্তর হবে। তার আত্মা বারজাখের জগতে প্রবেশ করবে এবং দেহ জমিনের সাথে একত্রিত হতে হয়ে যাবে।
    কাফেররা মৃত্যুর সময় বাস্তবতাকে অনুধাবন করবে এবং আফসোস করবে যে সুযোগ হাত ছাড়া হয়েগেছে। হায়, যদি পৃথিবীতে আবার ফিরে যেতাম এবং নবিগণ ও আল্লাহর ওলিগণের পথ গ্রহণ করতাম। পক্ষান্তরে মোমিনরা মৃত্যুর সময় খুশি হবে। তারা সীমাবদ্ধ পৃতিবী হতে অসীম জগতে প্রবেশ করবে। সেখানে কোন কষ্ট নেই।
     মোমিদের জন্য মৃত্যু অর্থাৎ স্বাধীনতা লাভ করা; আর কাফেরদের জন্য মৃত্যু অর্থাৎ স্বাধীনতা হারানো।
    প্রত্যেক ব্যক্তির বারজাখ তার বিশ্বাস ও কর্ম অনুযায়ী হবে। যদি সঠিক বিশ্বাস ও সৎকর্মের অধিকারী হয় তাহলে বেহেশতে প্রবেশ করবে। আর যদি ভুল বিশ্বাস ও অসৎ কর্মের অধিকারী হয় তাহলে দোযখে প্রবেশ করবে।
    কিয়ামতের দিন মানুষকে তার কর্মের প্রতিদান দেওয়া হবে। সে দিন সকলেই তাদের কর্ম স্বচক্ষে দেখবে। সে দিন পর্দা সরে যাবে। সব রহস্য ব্যক্ত হয়ে যাবে। সে দিন মানুষ পোকা মাকড়ের ন্যায় দিশা হারা হয়ে ঘুরতে থাকবে। মানুষ তার পিতা মাতা ও ভাই বোনদের থেকে দূরে সরে যাবে। সে দিন অত্যন্ত কষ্ট দায়ক দিন হবে।
    কিয়ামতের দিন কাফেরদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হবে। সে দিন মানুষকে কবর হতে দ্রুত গতিতে উঠানো হবে। সে দিন সকলে বুঝতে পারবে যে কোন কিছু তার পার্শ্বে নেই। সে কোন কিছুর মালিক নয়।
    কিয়ামতের দিন নবিগণ, ইমামগণ ও মোমিনদেরকে আল্লাহ হায়ালা অসম্মানিত করবেন না। মোমিনরা কাফেরদের নিকট হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে। সে দিন সমস্ত মানুষ একত্রিত হবে। ইমানদার পুরুষ ও মহিলারা তাদের কর্মের প্রতিদান গ্রহণ করবে।
    কিয়ামতের দিনকে আফসোসের দিনও বলা হয়। সে দিন হাত পাসহ সমস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গ সাক্ষী দিবে। সে দিন মোমিনদের চেহারা নুরানি হবে। আর কাফেরদের চেহারা কালো হবে।
    আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম হচ্ছে তাওয়াব বা তওবা গ্রহণকারী। যে কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তেও তওবা করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার তওবা গ্রহণ করবে। তবে যারা ভ্রান্ত আকিদায় রয়েছে এবং অসৎ কর্ম আঞ্জাম দেয় তারা সহজে তওবা করতে পারে না।
    আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরায়ন। কাউরো প্রতি বিন্দু পরিমাণ জুলুম করবেন না। প্রত্যেকের আমলের যথাযথ প্রতিদান দিবেন। সে দিন আল্লাহ তায়ালা মোমিনদেরকে সৎ আমলের বিনিময়ে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন এবং কাফের ও মোনাফেকদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
     সে দিন যাদের আকিদা সঠিক কিন্তু গোনাহও করেছে তাদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। পক্ষান্তরে যাদের আকিদা ভ্রান্ত তাদের মুক্তি পাওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, পোষাক ময়লা হলে পরিষ্কার হতে পারে; কিন্তু রং করলে কখনোই পরিষ্কার করা সম্ভব নয়।
    জাহান্নামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থানে মোনাফেকদের স্থান হবে। সুতরাং শুধু প্রকাশ্যভাবে ইমান আনা যথেষ্ট নয়; বরং অন্তরের মাধ্যমে ইমান আনতে হবে ও তদানুযায়ী আমল করতে হবে।
     বেদআত করা, আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি মিথ্যা কিছুকে সম্পর্কিত করা, দ্বিনে বিদ্যমান নেই এমন কিছু দ্বিনে প্রবেশ করানো, দ্বিন হতে কোন কিছু বিলুপ্ত করা ও দ্বিনে হস্তক্ষেপ করা এমন গোনাহ যা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
    প্রত্যেকটি ব্যক্তির কর্তব্য হচ্ছে তার জীবননের হেফাজত করা। সুতরাং কোরআন, হাদিস ও বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলের মাধ্যমে বোঝা যায় যে যখন প্রাণ নাসের ভয় থাকে তখন আত্যারীর হাত থেকে প্রাণ রক্ষা করার জন্য ইমানকে গোপন রাখা বৈধ।
    পূর্বেও উল্লেখ করেছি যে মৃত্যুর অর্থ নিঃশেষ হওয়া নয়; বরং একজগত হতে অন্য জগতে স্থানান্তর হওয়া। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার ওলিগণের পবিত্র আত্মা হতে সহযোগিতা কামনা করা যেতে পারে।
    নবিগণ ও যে সমস্ত ওলিগণ আল্লাহ তায়ার নিকট প্রিয়ভাজন তাঁদের নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য দরখাস্ত করা যেতে পারে। কেননা তাঁরা আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করলে তা কবুল হয়। যেমন: হজরত ইয়াকুব (আ.) এর সন্তানরা তাঁর নিকট হতে ক্ষমা প্রর্থনার আবেদন করেছিল। আর তাছাড়া মৃত্যুর অর্থ নিঃশেষ হওয়া নয় যে আল্লাহর ওলিগণ মৃত্যুবরণ করার পর আর কোন ক্ষমতা রাখে না।
    সব মুসলমানরা নামাজের শেষে মহা নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) কে সালাম প্রদান করে থাকে। এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে নবি করিম (সা.) আমাদের সালাম শ্রবণ করেন এবং আমাদের আমলকে দেখেন। পবিত্র কোরআন শরিফও এই বিষয়টির প্রতি সাক্ষ্য দিয়েছে।
    সহিহ বোখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে মহা নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বদরের শহিদদের সাথে কথা বলেছেন। এটা প্রমাণ করে যে মৃতব্যক্তিরা শ্রবণ করে।
    সহিহ মুসলিমে এসেছে যে মহা নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করতে গিয়েছেন। এটা হতে বুঝা যায় যে কবর জিয়ারত করার প্রতি শরিয়ত গুরত্ব দান করেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহর ওলিগণের সাথে কথা বলা সম্ভব।
    পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে যে তোমরা শহিদদেরকে মৃত বল না; বরং তারা জীবিত।
    মানুষের কর্ম তার ভাগ্য নির্ধারনের উপর প্রভাব রাখে। ভ্রান্ত বিশ্বাস ও গোনাহ মানুষের জীবনে দুর্ভাগ্য বয়ে আনে।
    আল্লাহ তায়ালার সর্বশেষ হুজ্জাত, ইমাম মেহদি (আ.) এর আগমন ঘটবে। সে সময় রাজআতের মাধ্যমে এই প্রথিবীতে কিছু মানুষকে জীবিত করা হবে। এই বিষয়টিকে পবিত্র কোরআনও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে।
    বনি ইসরাইলের গরু জবেহ করার ঘটনা, হজরত উজাইর নবির ঘটনা, বনি ইসরাইলের কিছু সংখ্যক ব্যক্তি জীবিত হওয়ার ঘটনা ও হজরত ইবরাহিম (আ.) এর হাতে কিছু সংখ্যক পাখি জীবিত হওয়ার ঘটনা রাজআতের বিষয়টিকে খুব ভালভাবে প্রমাণ করে।
    প্রত্যেক ব্যক্তি তার কর্ম অনুযায়ী ফল পাবে। সারা জীবন সৎ কাজ করার পরও যদি মৃত্যুর পূর্বে ইমান হারা হয় তাহলে পূর্বের ঐ সব আমল কোন কজে আসবে না।
     কোন মাজহাব অথবা ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা অধিক হলেই তা সত্য হওয়ার কারণ হবে না। যে মাজহাব অথবা ধর্ম বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলের উপর প্রতিষ্ঠিত তা সত্য। কোন মাজহাবকে চিন্তে হলে কোন পক্ষপাত ছাড়াই ঐ মাজহাবের কথা পুরোপুরীভাবে শুনতে হবে অতপর বিবেক দ্বারা ফয়সলা করতে হবে।
    কিছু কিছু দিবস রয়েছে যেগুলো উদযাপন করলে ইমান শক্তিশালী হয়। যেমন: শয়তানি শক্তির উপর মুসলমানদের বিজয়ের দিনগুলো, আল্লাহ তায়ালার ওলিগণ যে দিবসগুলোতে ব্যাথিত হতেন সে দিনগুলোতে দুঃখিত হওয়া এবং তাঁরা যে দিবসগুলোতে খুশি হতেন সে দিনগুলোতে খুশি হওয়া। আল্লাহ তায়ালার ওলিগণকে আমাদের জীবনের আদর্শ বানাতে হবে।
    নবিগণ ও ওলিগণের চিহ্ন বজায় রাখলে এবং তাঁদের কবর জিয়ারত করলে ইমান শক্তিশালী হয়। তাঁদেরকে মহব্বত করলে আত্মার উপর দ্বিনি প্রভাব পড়ে।
    কবর জিয়ারতের অনেক প্রভাব রয়েছে। কবর জিয়ারত আখেরাতের কথা স্বরণ করিয়ে দেয় এবং পরজগতে সফর করার জন্য প্রস্তুত করে।
    অতিরঞ্জন মানুষকে ইসলাম হতে দূরে ঠেলে দেয়। অতিরঞ্জন (গুলু) অর্থাৎ নবি ও ওলিগণের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা। যেমন: ইহুদিরা হজরত উজায়ের (আ.) এর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছে। খৃষ্টানরা হজরত ইসা (আ.) এর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছে। মুসলমানদের মাঝেও একদল হজরত (আ.) কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে।
    শিয়া মজহাবের অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে হজরত মুহাম্মাদ (সা.) সর্বশেষ নবি। তাঁর পর আর কোন নবি আসবে না। তিনি নবিগণের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ নবি এবং আলি (আ.) হচ্ছেন তাঁর পক্ষ হতে নির্ধারিত ইমাম।
    শিয়াদের বিরোধি লোকরা লোকরা এই অতিরঞ্জনকে বাহানা করে শিয়াদের প্রতি বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে থাকে; অথচ এর সাথে শিয়া মাজহাবের কোন সম্পর্ক নেই। বার ইমামি শিয়ারা বিশুদ্ধ তৌহিদে বিশ্বাসী। মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) কে সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হিসেবে বিশ্বাস করে এবং আলি (আ.) কে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পর তাঁর পক্ষ হতে নির্ধরিত ইমাম হিসেবে বিশ্বাস করে।
    আহলে বাইত (আ.) আল্লাহ তায়ালা ও নবি করিম (সা.) হতে জ্ঞান অর্জন করেছেন। সুতরং তাঁদের বাণী আমাদের জন্য শরয়ি দলিল। তাঁদের প্রতি আত্মিক এলহাম হত। বোখারী বর্ণননা করেছেন যে এমন কিছু ব্যক্তি ছিল যাদের সাথে ফেরেশতারা কথা বলত অথচ তাঁরা নবি ছিল না।
    হজরত ইবরাহিম (আ.) এর স্ত্রী ও হজরত মরিয়ম (আ.) ফেরেশতাকে দেখেছেন ও তাদের কথা শুনেছেন। এ ব্যাপারে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে যে, ইবরাহিমের স্ত্রী ফেরেশতার কথা শুনেছেন। তাঁকে সন্তান সম্পর্কিত সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। অতপর হেঁসে বলেনঃ আমার এই বৃদ্ধা বয়সে সন্তান হবে! আমার স্বামী বৃদ্ধ হয়েগেছে। এটা অত্যন্ত অশ্চর্যের বিষয়।
    উসুলে দ্বিন বা ধর্মের মূভিত্তির ক্ষেত্রে অন্ধানুসরণ জায়েজ নেই; বরং এ ক্ষেত্রে প্রতেক ব্যক্তিকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
    ফুরুয়েদিন বা শরয়ি আহকামের ক্ষেত্রেও নিজে জ্ঞান অর্জন করা উত্তম; কিন্তু কেউ যদি জ্ঞান অর্জন করতে না পারে তাহলে মুজতাহিদ বা ধর্ম বিশেষজ্ঞের নিকট হতে জেনে নিয়ে আমল করতে পারে।
    ইসলাম ধর্মে বিভিন্ন মাজহাব রয়েছে; তবে উল্লেখযোগ্য মাজাহাবের সংখ্যা ৫ টি।

১. শিয়া
    শিয়া শব্দের অর্থ অনুসারী। পবিত্র কোরআনে কয়েক বার এ শব্দটি এসেছে। যেমন: "انّ من شیعته لابراهیم"
    শিয়ারা মহনবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর পর ইমামতে বিশ্বাসী। প্রথম ইমাম হচ্ছেন হজরত আলি (আ.)। অতপর তাঁর সন্তানগণের মধ্য হতে ১১ জন নিষ্পাপ ইমাম রয়েছেন। আলি (আ.) নবি করিম (সা.) এর বাড়িতে লালন পালন হয়েছেন এবং তাঁর নিকট হতে জ্ঞান অর্জন করেছেন।

২. হানাফি
    ইসলামের একটি মাজহাবের নাম হানাফি। আবু হানিফার অনুসারীদেরকে হানাফি বলা হয়। আবু হানিফা ৮০ হিজরীতে ইরানে জন্মগ্রহণ করেছেন ও ১৫০ হিজরীতে ইন্তিকাল করেছেন। তাঁর নামে হানাফি মাজহাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই মাজহাবে সাহাবার উক্তি ও কিয়াসকে শরয়ি দলিল হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে সাহাবাগণের কথা কিভাবে শরয়ি দলিল হতে পারে? সাবারা একে অন্যের সাথে যুদ্ধ করেছেন ও হত্যা করেছেন। কিয়াস কিভাবে শরয়ি হতে পারে? ইবলিস কিয়াসের ভিত্তিতে আমল করার কারণে শয়তানে পরিণত হয়েছে।

এখানে আমরা মৌলিকভাবে আবু হানিফার অনুসারীদের নিকট কয়েকটি প্রশ্ন করতে পারিঃ
১.    আবু হানিফাকে কি রাসুলুল্লাহ (সা.) ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করেছেন?
২.    হজরত আবু বকর, উমর ও উসমান কি হানাফি ছিলেন?
৩.    আবু হানিফা জন্মগ্রহণের পূর্বে মুসলমানরা কার অনুসারী ছিল এবং কাকে ইমাম সিসেবে মানত?

৩. মালেকি
    মালেকি ইসলামের একটি মাজহাবের নাম। তিনি ৯০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ১৭৯ হিজরীতে ইন্তিকাল করেছেন। মলেকি মাজহাবেও সাহাবাদের উক্তি ও কিয়াসকে শরয়ি দলিল হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
ইমাম মালেকের অনুসারীদের নিকট আমাদের প্রশ্নঃ
১.     কেন ইমাম আবু হানিফাকে বাদ দিয়ে ইমাম মালেকের অনুসারী হয়েছে?
২.     কেন ইমাম মালেক, ইমামে আজম আবু হানিফাকে বাদ দিয়ে নিজেকে ইমাম হিসেবে উপস্থাপন করেছেন?
৩.     হজরত আবু বকর, উমর ও উসমান কি হানাফি ছিলেন না মালেকি?
৪.     মালেককে কি নবি করিম (সা.) ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করেছে?

৪. শাফেয়ি
    ইসলামের একটি মাজহাবের নাম হচ্ছে শাফেয়ি। মুহাম্মাদ ইবনে ইদরিস শাফেয়ি ১৪৬ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ২০৪ হিজরীতে ইন্তিকাল করেছেন। তিনি সাহাবাগণের উক্তিকে শরয়ি দলিল মনেকরতেন।
ইমাম শাফেয়ির অনুসারীদের নিকট আমাদের কিছু প্রশ্নঃ
১.     কিছু সখ্যক সাহাবা কি হজরত উসমানকে হত্যা করেনি?
২.     অনেক সাহাবা কি তাদের সমসাময়িক খলিফা আলি (আ.) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি?
৩.     অনেক সাহাবা কি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশ অমান্য করেনি এবং হজরত উসামার বাহিনীতে যোগদান করতে অস্বীকার করেনি?

শাফেয়ি মাজহাবের নিকট আমাদের কয়েকটি প্রশ্নঃ
১.     কেন মুহাম্মাদ ইবনে ইদরিস ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানিফাকে অনুসরণ করেননি?
২.     নবি করিম (সা.) কি মুহাম্মাদ ইবনে ইদরিসকে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করেছেন?
৩.     মুহাম্মাদ ইবনে ইদরিসের পূর্বে মুসলমানরা কার অনুসরণ করত?
৪.     কোন মাজাহাবের লোকরা সঠিক পথে রয়েছেন?

৫. হাম্বালি
    ইসলামের একটি ফেরকার নাম হচ্ছে হাম্বালি। আহমাদ ইবনে হাম্বাল ১৬৪ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ২৪১ হিজরীতে ইন্তিকাল করেছেন। তিনিও সাহাবাগণের উক্তিকে শরয়ি দলিল হিসেবে গ্রহণ করতেন।
    হাম্বালি মাজহাবের অনুসারীদের নিকট আমাদের কিছু প্রশ্নঃ
১.     কেন আহমাদ ইবনে হাম্বাল, আবু হানিফাকে অথবা মালেককে অথবা শাফেয়িকে অনুসরণ করেননি?
২.     কেন হাম্বালি মাজহাবের অনুসারীরা আবু হানিফাকে অথবা মালেককে অথবা শাফেয়িকে অনুসরণ করেননি?
৩.     রাসুল (সা.) কি আহমাদ ইবনে হাম্বালকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন?
৪.     যদি রাসুল (সা.) আহমাদ ইবনে হাম্বালকে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত না করেন তাহলে এটা বিদআত নয়?

চার মাজহাবের নিকট কিছু প্রশ্নঃ
১.     এই ইমামগণের মধ্য হতে কে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নিকটবর্তী ছিলেন আলি ইবনে আবি তালেব না আবু হানিফা, মালেক, শাফেয়ি ও আহমাদ ইবনে হাম্বাল?
২.     মুয়াবিয়া হজরত আলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, আলি ইবনে আবি তালেব সত্য পথে ছিলেন না মুয়াবিয়া?
৩.     যদি আপনারা সিফফিনের যুদ্ধের সময় থাকতেন এবং হজরত আলি মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিতেন তাহলে কি করতেন?
৪.     যদি মুয়বিয়ার সময় থাকতেন এবং মুয়াবিয়া নির্দেশ দিত যে হজরত আলির প্রতি অভিসম্পাত কর তাহলে কি করতেন?
৫.    যদি মুয়বিয়ার সময় থাকতেন এবং মুয়াবিয়া নির্দেশ দিত যে তার সন্তান এজিদের হাতে বাইআত কর, তাহলে কি করতেন?
৬.     যদি রাসুলের ওফাতের পূর্বে তাঁর পর্শ্বে থাকতেন এবং রাসুল (সা.) নির্দেশ দিতেন যে কলম ও কাগজ আন, তাহলে কি করতেন? হজরত উমর ঐ সময় বলেছিলেন এই ব্যক্তি প্রলাপ বকছে!
৭.     যদি উটের যুদ্ধের সময় থাকতেন তাহলে হজরত আলির পক্ষ নিতেন না তালহা, জুবায়ের ও হজরত আয়েশার পক্ষ?
৮.     তিরমিজির ফাতওয়া অনুযায়ী, বৈধ পন্থায় হোক অথবা অবৈধ পন্থায় হোক কেউ যদি ইসলামি দেশের ক্ষমাতা লাভ করে, অতপর তার ওপর কেউ যদি হামলা করে তাহলে সে মুরতাদ। প্রশ্ন হচ্ছে যারা হজরত আলির ওপর হামলা করেছিল তারা কি তিরমিজির ফাতওয়া অনুয়ী মুরতাদ?
৯.     চার মাজহাবের তাফসির অনুযায়ী শাসকের নির্দেশ মান্য করা ওয়াজিব। প্রশ্ন হলো এজিদের মত শাসকের নির্দেশ মান্য করা কি ওয়াজিব?
১০.    শিয়া ও সুন্নিদের হাদিস অনুযায়ী যে ব্যক্তি তার জামানার ইমামকে না চিনে ইন্তিকাল করবে সে জাহেল বা অজ্ঞ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে। প্রশ্ন হচ্ছেঃ
ক) হজরত উসমানকে হত্যা করার পর মুয়াবিয়ার জামানার ইমাম কে ছিল?
খ) বর্তমান যুগের ইমাম কে?
গ) হজরত ফাতেমা জাহরা (আ.) এর জামানার ইমাম কে ছিল? ফাতেমা (আ.) বেহেশতের নারীদের সরদার। হজরত আবু বকরের প্রতি অসন্তুষ্ট অবস্থায় শাহাদত বরণ করেছেন।
    ঘ) মহানবি (সা.) মদিনায় হিজরতের সময় গুহার সাথী কে ছিলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে বাকর ইবনে ইরকিত না প্রথম খলিফা?
     বোখারী ও অন্যান্যদের বর্ণনা অনুযয়ী হজরত আবু বকর মোহাজেরদের সর্ব প্রথম গ্রুপের সাথে নবি (সা.) পূর্বে মদিনায় হিজরত করেছিলেন এবং মোহাজেরদের সাথে সর্ব প্রথম নামাজের জামাতে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
ঙ্    আপনাদের দৃষ্টিতে আম্মার ইবনে ইয়াসেরকে কে হত্যা করেছে?
ঙ্    তাঁর হত্যাকারী কি হজরত আলি না মুয়াবিয়া?
মুসলেম হজরত আবু সাইদ হতে বর্ণনা করেন যে, আম্মার ইয়াসের খন্দকের যুদ্ধে খাল খনন করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার মাথার উপর হাত রেখে বলছিলেন, বেচারা সুমাইয়ার সন্তান, তোমাকে এক অত্যাচারী গ্রুপ হত্যা করবে।
বোখারীও আবু সাইদ হতে বর্ণনা করেন যে আম্মার আমাদের চেয়ে দুই বরাবর মাটি কাটছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখে বলেনঃ বেচারা আম্মার! তুমি তাদেরকে বেহেশতের দিকে আহবান করবে আর তারা তোমাকে দোজখের দিকে আহবান করবে।
আবু বাকর বোরকানী ও আবু বাকর ইসমাইলীর দৃষ্টিতে হাদিসটি এ ধরণের ছিল, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ বেচারা আম্মার, এক অত্যাচারী গ্রুপ তাকে হত্যা করবে। সে তাদেরকে বেহেশতের দিকে আহবান করবে আর তারা তাকে দোজখের দিকে আহবান করবে।
যারা সমস্ত সাহাবার আদালতে বিশ্বাসী তাদের নিকট কিছু প্রশ্নঃ
১.     যে অত্যাচারী গ্রুপটি আম্মারকে হত্যা করেছে, তারা কারা ছিল?
২.     মুয়াবিয়া, আমর ইবনে আস ও নুমান ইবনে বাশিরসহ অন্যান্য সাহাবা কি ঐ গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ছিল না?
৩.     যদি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর স্ত্রীগণও আয়াতে তাতহিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে কেন হজরত আয়েশা হজরত আলি (আ.) এর সাথে যুদ্ধ করেছেন?
৪.     দুইজন নিষ্পাপ ব্যক্তি কি একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতে পারে, তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি আল্লাহ তায়ার রেজায়াত নয়?

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন