ইমাম হোসাইন (আঃ)

ইমাম হোসাইন (আঃ)

হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) ও শরিয়ত আল্লামা জ্বিশান হায়দার জাওয়াদী
    hussain, mohammad, imam mahdi, সিফফিন, জামালের যুদ্ধ, নারওয়ানের যুদ্ধ, খলিফা, খেলাফত, ইমামত, আলী, সিদ্দীক, ফারুক, মোর্তযা, বদর, ওহদ, খন্দক, খায়বার, বণী Shia, Sunni, Islam, Quran, Karbala, najaf, kufa, mashad, samera, madina, makka, jannatul baqi, kazmain, ali, Fatima, hasan, সাকিফা, বণী সায়াদা, সাহাবী, হিজবুল্লাহ, ইসরাইল, ড্রোন, বিমান, হাসান নাসরুল্লাহ , লেবানন, ইরান,  চীন, মালয়েশিয়া,  স্যাটেলাইট, কুয়ালালামপুর, বেইজিং, ভিয়েতনাম, মার্কিন, গোয়েন্দা, ইরাক, সিরিয়া, মিশর, আল কায়েদা, তাকফিরী, ইখওয়ানুল মুসলেমিন, বাংলাদেশ, ভারত, জিহাদ, ফিলিস্তিন, ইহুদি, গাজা, শহীদ, জিহাদ, ক্ষেপণাস্ত্র, দূতাবাস, সৌদি আরব , কুয়েত, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, আমেরিকা, ভিয়েনা, পরমাণু, বাহারাইন, আফগানিস্থান, থাইল্যান্ড, হজরত ফাতিমা, মার্জিয়া, সিদ্দিকা, মোহাদ্দেসা, বাতুল, উম্মে আবিহা, যাহরা, মুবারেকা, যাকিয়া, তাহেরা, রাযিয়া, জিহাদুন নিকাহ, পোপ, পাদ্রি, বাইতুল মোকাদ্দাস, ওহাবী, সালাফি, মুফতি, ড্রোন, পাকিস্থান, এজিদ, মাবিয়া, আবু সুফিয়ান
মাযহাবের মূলনীতি অনুযায়ী প্রত্যেক ইমাম শরীয়তের রক্ষক। সুতরাং রেসালাতের সাথে ইমামদের প্রয়োজনীয়তা এ কারণেই যে, রেসালাত যখন শরীয়তের প্রচার কাজ সম্পন্ন করে এবং অহীর আগমন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তখন এমন একজন ব্যক্তির বর্তমান থাকা অত্যাবশ্যক যিনি ঐ শরীয়তের রক্ষক হবেন, যাতে ইসলামের নীতিমালা ও আইনকানুন অপরিবর্তনীয় ও মৌলিক অবস'ায় থাকে। বাহ্যিকরূপে শরীয়ত উম্মতের আলেম সমাজের মাধ্যমেও অবশিষ্ট থাকতে পারে। কিন' আহকামের যথার্থতা ও প্রকৃতি রক্ষায় ইমামতের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। কেননা, উম্মতের আলেম সমাজ আহকামের যথার্থতা ও বাস্তবতা সম্পর্কে অবহিত নন। তাঁদের অধ্যয়ন লাও হে মাহফুজ” সম্পর্কিত হয় না, তারা সুন্নতের বই পুস্তক অধ্যয়ন করেন এবং যথার্থ বুদ্ধি বিবেচনার দ্বারা শরীয়তের আহকামসমূহ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা নিস্পত্তি করেন, এবং এ কারণেই  তাদের ফতোয়ায় পার্থক্য দেখা যায় ও তাদের মাসায়েলও আলাদা হয়। কিন' ইমাম আহকামের যথার্থতার প্রচারক হয়ে থাকেন। তিনি মাতৃকোল থেকে “লাওহে মাহফুজের” জ্ঞান অর্জন করেন। তার আহকামে পৌনঃপুনিকতা কিংবা বিরোধ বা বিতর্কের প্রশ্নই আসে না।

সকল পবিত্র ইমামগণ শরীয়তের রক্ষক ছিলেন এবং সকলই তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করেছেন। তথাপি রক্ষক দুই প্রকার ঃ (১) মুহাফিজে দাখিলি ও (২) মুহাফিজে খারিজী।

মুহাফিজে দাখিলি ঃ যথার্থ আহকামকে মনে গেঁথে রেখে মাঝে মাঝে এর প্রচার করা হয়। যেখানে উম্মতের মাঝে আহকামের বিষয় সম্পর্কে বিতর্ক বা বিরোধের সৃষ্টি হয় এবং যথার্থ আহকাম সম্পর্কে অবিশ্বস্ততার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় ইমাম (আঃ) তখন যথার্থ আহকামের বর্ণনার মাধ্যমে ঐশী শরীয়তকে রক্ষা করেন।

মুহাফিজে খারিজী ঃ যেখানে যথার্থ আহকাম পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছে যাবার পর বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়ে এবং এর মধ্যে পরিবর্তনের আশংকা সৃষ্টি হয় এমন মুহূর্তেও ইমামের দায়িত্ব হচ্ছে সকল প্রকার কষ্ট ও বিপদের মোকাবিলা করে যথার্থ আদেশের রক্ষা করা এবং সকল প্রকার পরিবর্তন থেকে হেফাজত করা।

এক্ষেত্রে ইমাম হোসাইন (আঃ) যে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন এর তুলনা ইমাম (আঃ)গণের ইতিহাসেও পাওয়া যায় না। ইমাম (আঃ)গণের মধ্যে পারস্পরিক চরমোৎকর্ষতার তারতাম্য ছিল এবং কোন ইমাম (আঃ)-ই ইমাম হোসাইন (আঃ) এর সমমর্যাদায় আসীন ছিলেন না এমন ভাববার কোন কারণ নেই বরং কারণটি ছিল এই, ইমাম হোসাইন (আঃ) এর যুগে যে অবস'া বিরাজমান ছিল এবং যে বিপদের সৃষ্টি হয়েছিল তেমন পরিসি'তি অন্য কোন যুগে সৃষ্টি হয়নি এবং শরীয়ত রক্ষার যে সুযোগ ইমাম হোসাইন (আঃ) পেয়েছিলেন কোন ইমাম (আঃ) তা পাননি।

হুকুম আহকাম জ্ঞান চর্চা ও এর প্রচার প্রসারের উপমা ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) এর জীবনে পাওয়া যায়। কেননা, এ কর্মকান্ড চালাতে যে দীর্ঘ সময় তিনি পেয়েছিলেন অন্য কোন ইমাম (আঃ) তা পাননি এবং এ কারণেই আহলে বাইত (আঃ) এর ফিকাহ-এ-জাফরীয়া নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। তাঁর বর্ণনাকৃত আহকাম সকল মাসুমীন (আঃ) এর বর্ণনাকৃত আহকামের চাইতে বেশী এবং শরীয়তের উপর তার বর্ণনা বিবৃতির সীলমোহর অঙ্কিত রয়েছে।

বিপদসংকুল অবস'ানে ইমাম হোসাইন (আঃ) এর অবস'াও একই ছিল। তিনি ঐশী দ্বীনকে যেমন বিপদসংকুল অবস'া থেকে উদ্ধার করেছেন তার তুলনা অন্য কোন মাসুমের যুগে পাওয়া যায় না। তাই চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ সত্যিকার ইসলামের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন যে, সুচনার দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম হলো মুহাম্মাদী, কেননা মহানবী (সাঃ) এর উপর এর শিক্ষা, হুকুম আহকাম অহীর মাধ্যমে অবতীর্ণ হয় কিন' অমরত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম হলো হোসাইনী কারণ এর যাবতীয় নিয়ম নীতি, আইন কানুন, সকল কুফর ও নাস্তিকতা, প্রতারণা ও ধূর্তামী এবং ইয়াজিদি শক্তির ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে ইমাম হোসাইন (আঃ) রক্ষা করেছিলেন।

ইমাম হোসাইন (আঃ) যে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে শরীয়তের রক্ষাকারী; এই জন্য শরীয়তের ধারক ও আনয়নকারীর দর্শনতাত্ত্বিক দায়িত্ব ছিল হোসাইনীয়াতের স'ায়ীত্ব ও অমরত্বের ব্যবস'া করা যা শরীয়তের স'ায়ীত্বেরও আলামত ও জামানত। ইসলামী শরীয়ত হোসাইনীয়াতকে তাই জীবিত ও স'ায়ীত্ব দান করেছে। ইমাম হোসাইন (আঃ) এর প্রতি ভালবাসাকে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তার আলোচনাকে ইবাদত জ্ঞান করেছে। তাঁর শোকে অশ্রু বিসর্জন, তাঁর স্মরণে মগ্ন থাকা, তাঁর দুঃখ কষ্টের স্মরণে শোক মজলিস অনুষ্ঠান-এ সকল যাবতীয় আমলসমূহকে আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্বের মর্যাদা দিয়েছে। এমনকি অশ্রু বিসর্জন করার সাথে সাথে অশ্রু বিসর্জনের দাওয়াত ও তা প্রদর্শন করাকেও নাজাতের উসিলা হিসেবে নির্দ্ধারণ করেছে। শরীয়তের রক্ষাকারী সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, ইমাম হোসাইন (আঃ) এর উপর কাঁদা, কাঁদতে উদ্বুদ্ধ করা এবং ক্রন্দনের ভাব করা এ সবকিছু বেহেশতে প্রবেশের উসিলা এবং আল্লাহর ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত, যদিও কিছুসংখ্যক নির্বোধ ব্যক্তি এ ধরনের ভাব করা ভন্ডামি এবং ইসলামে ভন্ডামি বা কপটতা হারাম যার  অনুশীলন কখনও ইবাদত হতে পারে না মনে করে। অথচ বেচারারা জানেনা যে, “তাবাকা” শব্দের অর্থ কি। আরবী “তাবাকা” শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রচন্ড অনুভূতি যা মুখমন্ডলের রেখা ও অবয়বের অবস'ার পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় যদিও কোন কারণে অশ্রু নির্গত না-ও হয়। সুতরাং মাসুম (আঃ) এই বিষয়ের প্রতিই ইশারা করেছেন যে, মূল বিষয়টি হচ্ছে কাঁদা এবং কাঁদতে আহ্বান করা কিন' শোকের বিষয়টি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এবং অশ্রু নিজেই উল্লেখযোগ্য কোন বিষয় নয়। অশ্রু হলো, হৃদয়ানুভূতি প্রকাশের একটি রীতি যা সকল ঈমানদার ব্যক্তির হৃদয়ে বিদ্যমান। এরপর যদি অশ্রু নির্গত না হয় তথাপি যে কোন উপায়ে ভালবাসার প্রকাশ হওয়া উচিত যাতে বোঝা যায় হৃদয়ে ভালবাসা অনুভূতির কমতি নেই এবং এই শোকাতুর আলোচনায় সে স্পর্শকাতর, অভিভূত।

রেওয়াতে এর স্বপক্ষে অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। কানজুল উম্মাল গ্রনে' (খঃ ১, পৃঃ ১৪৭) পয়গম্বর (সাঃ) থেকে একটি রেওয়াত বর্ণিত হয়েছে। তিনি সুরা ‘যুমার’ এর শেষ আয়াত তেলাওয়াত করলেন যেখানে জাহান্নামের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ আয়াতটি শুনে উপসি'ত সকল আনসারগণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন কেবল এক যুবক যার চোখ থেকে অশ্রু বের হলো না। সে পেরেশান হয়ে হুজুর পাক (সাঃ) এর নিকট আরজ করলো, প্রভূ! আমার চোখ থেকে অশ্রু নির্গত হয় না। আমি কেবল ‘তাবাক’র উপর সন'ষ্ট আছি। হুজুর (সাঃ) এরশাদ করলেন “মান তাবাক কালাহুল জান্নাহ” অর্থাৎ যে কান্নার মত মুখ করতে পারে তার জন্যও জান্নাত। এ কথার তাৎপর্য হলো মানুষের হৃদয় ঐ আযাবের কথায় বিচলিত। নতুবা বিধর্মীদের মত আখেরাতের আযাবকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করতো, আযাবের আলোচনায় মুচকি হাসতো, কাঁদার মতো পরিসি'তি সৃষ্টি হতো না। সুতরাং কান্নার মত চেহারা করা প্রভাবিত মনেরই বহিঃপ্রকাশ যা একটি উত্তম ইবাদত।

দ্বিতীয় রেওয়াত কানজুল উম্মাল সূত্রেই পাওয়া যায়। বলা হয়েছে মহানবী (সাঃ) সুরা তাকাসির এর তেলাওয়াত করার সময় এরশাদ করলেন যে, এই সুরাটি শ্রবণ করে যে বিলাপ করবে তার জন্যও বেহেশত এবং যে তাবাকা করবে তার জন্যও বেহেশত।

এ রেওয়াতে সুস্পষ্টভাবে “তাবাকা”র আহ্বান করা হয়েছে এবং এর অন্তর্নিহিত অর্থও জ্ঞাত করা হয়েছে সুতরাং মানুষ যেমন তাবাকার রেওয়াত অস্বীকার করতে পারে না তেমনি একে কপটতা বলে আখ্যায়িত করতে পারে না।

তাফসিরুল মিনার (খঃ ৮, পৃঃ ৩০১) গ্রনে' শেখ মোহাম্মাদ আবদুহুর বর্ণনা নকল করা হয়েছে যে, তাবাকা হলো হৃদয়ানুভূতি প্রকাশের একটি রীতি, কপটতা বা বাগাড়ম্বর নয়।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন