পুনরুত্থান বা রাজআত

পুনরুত্থান বা রাজআত
মানুষের দীর্ঘকালীন আশারমধ্যে একটি হচ্ছে সারা বিশ্বে ন্যায়পরায়নতার বিস্তৃত হওয়া তার সত্যিকার অর্থে ও এইপ্রত্যাশা এক প্রকার আক্বীদা ও বিশ্বাস হিসেবে আল্লাহর দ্বীনে বহিঃপ্রকাশহয়েছে।
ইতিহাসে অনেকেই এইলক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে ভাবনা ও পরিকল্পনা করেছে, কিন্তু ক্লান্ত মানুষের এই আশাকেসফলতাই পৌছাতে পারেনি।
হ্যাঁ ইমাম মাহ্‌দী(আ.)-এর আবির্ভাবের চিন্তাধারা একমাত্র প্রদীপ যার মাধ্যমে ক্লান্তি ও আঁধারগুলিমানুষের কাছ থেকে দুর করে দেয় ।
যেদিন সে আসবে ও সমস্তপৃথিবিতে একটিমাত্রহুকুমত গঠন হবে, তখন অন্যায়, অবিচার,বিচ্যুতি, স্বার্থপরতা,কপটতা ও মুনাফেকী সব ধংস করবে,যাতে করে আহলে বাইত (আ.) গণের হুকুমতেরছায়াতে মানুষ জিবনের সৌন্দর্যগুলিকে যথার্থভাবে উপভোগ করতে পারে।
এই নূরানি আবির্ভাবেরআস্তানায় বিস্ময়কর কিছু ঘটনা ঘটবে তার মধ্যে একটি হচ্ছে কিছু সংখক প্রকৃত মু’মিনদেরএই দুনিয়াতে ফিরে আসা, তারা ফিরেআসবেপৃথিবিতে ইসলামেরমহত্ত্বকে তামাশা করারজন্যো।
অবশ্য কিছু সংখক কাফেরও(কলুষিত আত্না) আখেরাতের পুর্বেই এই দুনিয়াতে ফিরে আসবে, যাতে করে তাদের পাপি ওলজ্জাজনক কাজের কিছুটা শাস্তি লাভ করে । কিছু সংখক মু’মিনদের ও কাফেরদের কিয়ামতেরআগে এই দুনিয়াতে ফিরে আসা কে পুনরুত্থান বা রাজআত বলা হয়।
পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাসশিয়া মাযহাবের আক্বীদাগুলির মধ্যে অন্যতম, যা অন্যান্য ইসলামি মাযহাবগুলি বিশ্বাসকরেনা। এ কারনে পুনরুত্থান এমন একটি বিষয় যা নিয়ে শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের মধ্যেমতবিরোধ হয়ে থাকে।
ইসলামি বিশেষজ্ঞগন বিভিন্নগ্রন্থ ও প্রবন্ধ এ সম্পর্কে লিখেছেন যার কিছু সংখক শুধুমাত্র রেওয়াতের ধাচেঁ আবারকিছু সংখক বিরোধী ও ভিন্নমত পোষনকারীদেও প্রশ্নের উত্তরে লেখা হয়েছে ...।
আভিধানিক অর্থে রাজআত:
ইসলামেরগুরুত্বপূর্ণ এই আকিদার বর্ননা দেবার জন্যে অনেক প্রকার শব্দ কোরআন শরিফে ও হাদীসসমুহে ব্যাবহার হয়েছে যেমন: প্রত্যাবর্তন, প্রত্যর্নিত, পুনরুত্থান, হাশর ... যাসবগুলিই একই অর্থে ব্যাবহার হয়ে থাকে আর তা হচ্ছে ‘ফিরে আসা’ তবে এই সমস্তঅর্থগুলির মধ্যে পুনরুত্থান শব্দটি এই ক্ষেত্রে বেশি প্রজোয্য। পুনরুত্থানের আরবিহচ্ছে ‘রাজআত’ ও তা (মুল শব্দ) রুজু থেকে নেওয়া হয়েছে, যারঅর্থ দাড়ায় একবার ফিরেআসা। (একই অর্থ ‘লিসানুল আরাব’ নামক গ্রন্থেও এসেছে) ।
‘আকরাবুল মাওয়ারিদ’ এই গ্রন্থে রাজআত শব্দের বর্ননাতে বলা হয়েছে:
رجع الرجل رجوعا و مرجعا و معه انصرف.. هو يومن بالرجعةاى بالرجوع الى الدنيا بعدالموت.
‘রুজু’ শব্দের অর্থফিরে আসা, ‘আর সে রাজআতের (পুনরুত্থানের) উপর বিশ্বাস রাখে’ বলতে বুঝায় যে সেমৃত্যুর পর পুনরায় এই দুনিয়াই ফিরে আসা এই আকিদার প্রতি বিশ্বাস রাখে। অতএব, রাজআতবা পুনরুত্থান শুধুমাত্র একবার ফিরে আসা অর্থে প্রকাশ পায়।
পারিভাষিক অর্থে:
রাজআত বা পুনরুত্থানঅন্যান্য অনেক শব্দের মতন আভিধানিক অর্থর্ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থেব্যাবহার হয়েছে। অতএব রাজআতের সঠিক অর্থ বুঝতে হলে সেই সমস্ত অর্থগুলির প্রতিলক্ষ্য করতে হবে।
‘দেহ্ খোদা’ এই লেখকেরঅভিধানে রাজআত (পুনরুত্থান) সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থ লিপিবদ্ধ হয়েছে, যাসংক্ষিপ্তাকারে বর্ননা করা হল:
১- ফিকাহ শাস্ত্রেওপরিভাষায়: পুরুষের প্রত্যাবর্তন করা তার থেকে তালাক নেওয়া স্ত্রীর কাছে ( অবশ্যশরিয়তের কানুন অনুযায়ী যে সময় নির্ধরণ করা হয়েছে তার মধ্যে )।
২- জ্যোতিষবিদদেরদৃষ্টিতে: একটি চলমান গতিকে যা বিস্মিত নক্ষত্রের চলমান গতির অনুরুপ নয় এবং সাভাবিকনিয়মবহীরভিত উত্থানকে রাজআত বলা হয়।
৩- আধ্যাত্মিকতারদৃষ্টিতে: রাজআত হচ্ছে মনের অসন্তুষ্ট অবস্থা খারাপ কাজ আঞ্জাম দেওয়াতে ও ভাল কাজআঞ্জাম দেওয়ার উদ্দ্যেশে এই পৃথিবীতে ফিরে আসা।
৪- সমাজ পরিচিতির ভাষায়:কিছু কিছু সমাজ পরিচিতি বিদগণ সমাজবাসিদের আইনের ছত্রছায়ায় থাকা ও ইতিহাস সম্পর্কৃতআলোচনায় তারা বিশ্বাসী যে ইতিহাসের ক্রমবিকাশ নিয়ম প্রতিটি ক্ষেত্রেই বা স্থানেইএকই রকম এবং ইতিহাস তিনটি পর্যায় যথা খোদা পন্থী, বীরত্বই ও মানবিকত্বয়ই অতিক্রমকরে। এবং সব সময় এই পালার পূনর্বৃত্তি ঘটে। আর তারা ইতিহাসের এই পূনরাবৃত্তিকেরাজআত বলে থাকে।
৫- কালাম শাস্ত্রবিদদেরভাষায়:শেখ হোররে আমেলিরাজআত বর্ণনাতে বলেন: কালাম শাস্ত্রের মতে, জীবিত হওয়া বাজীবন যাপন করা মৃত্যুর পর ও কিয়ামত দিবসের আগে। এ অর্থটিই রাজআত শব্দের জন্যপ্রজোয্য এবং সমস্ত অর্থগুলির আগে এই অর্থটিই স্মরণ আসে। এছাড়া আলেমগণও এই অর্থে একমত এবং হাদীসসমূহে থেকেও একই অর্থ বোঝা যায়।
সূত্রঃ ইন্টারনেট

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন