ইমাম মাহদী (আ.)-এর দীর্ঘায়ূ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর দীর্ঘায়ূ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর জীবনীসংক্রান্ত অপর একটি আলোচনা হচেছ তাঁর দীর্ঘায়ূ নিয়ে৷ কারো কারো নিকট এ প্রশ্নউত্থাপিত হয়েছে কিভাবে সম্ভব যে, একজন মানুষ এত দীর্ঘ আয়ূর অধিকারী হতে পারে? (বর্তমানে আমরা ১৪২৮ হিজরীতে বসবাস করছি আর ইমাম মাহদী (আ.)-এর জন্ম হয়েছে ২৫৫হিজরীতে৷ সুতরাং এখন তাঁর বয়স ১১৬৩ বছর)৷
এই প্রশ্নের উৎপত্তি এবংতা উপস্থাপনের কারণ হল যে, বর্তমান বিশ্বে মানুষের গড় আয়ূ ৭০ থেকে ১০০ বছর (যদিওবর্তমানেও কিছু কিছু মানুষ দেখতে পাওয়া যায় যারা ১০০ বছরেরও বেশী বেঁচে থাকেন)৷অনেকে এ ধরণের গড় আয়ূ দেখার পর কোন মতেই বিশ্বাস করতে পারেন না যে. একজন মানুষশতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বেঁচে থাকতে পারেন৷ কেননা, বুদ্ধিবৃত্তি ও বর্তমানজ্ঞান-বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দীর্ঘায়ূ খুবই সাধারণ ব্যাপার৷ বিজ্ঞানীরা মানুষেরশরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ পরীক্ষা করার পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মানুষের পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জীবিত থাকা অসম্ভব নয়৷ এমনকি মানুষ বৃদ্ধ ও ক্ষীনকায়ওহবে না৷
এ ব্যাপারে বার্নার্ড শাওবলেছেন:
জীববিদ্যার সকলবৈজ্ঞানীকদের মতে মানুষের আয়ূ এমন একটি জিনিস যার কোন সীমা নির্নয় করা সম্ভব নয়৷এমনকি দীর্ঘকাল জীবন-যাপনেরও কোন সীমানা নেই (ইমাম জামানা (আ.)-এর দীর্ঘায়ূর রহস্য,আলী আকবার মাহদী পুর পৃ.-১৩)৷
এ ব্যাপারে প্রফেসরআতিনগার বলেছেন:
আমার দৃষ্টিতে প্রযুক্তিউন্নয়নে আমরা যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচিছ তাতে একবিংশ শতাব্দীর মানুষ সহস্র বছরবেঁচে থাকতে সক্ষম হবে (মাজাল্লেহ দানেশমানদ৷ ষষ্ট বছর ষষ্ট সংখ্যা পৃ.-১৪৭)৷
বৈজ্ঞানীকদের বৃদ্ধ নাহওয়া এবং দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার জন্য যে প্রচেষ্টা তা প্রমাণ করে যে বিষয়টি সম্ভবপরএবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে৷ বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানেঅনেকেই উপযুক্ত আবহাওয়া, উপযুক্ত খাদ্য, নিয়মিত শরীর চর্চা ও সুচিন্তা এবং আরওবিভিন্ন কারণে ১৫০ বছর কখনো আবার আরও বেশী দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন৷ মজার ব্যপার হলপৃথিবীর ইতিহাসে পূর্বেও মানুষ দীর্ঘকাল বেচে থেকেছে এবং ঐশী গ্রন্থ এবং ইতিহাসগ্রন্থেও অনেক মানুষের নাম, ঠিকানা ও জীবন বিত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে, যাদের আয়ূবর্তমান কালের মানুষের চেয়ে আনেক বেশী ছিল৷
এসম্পর্কে বহু গ্রন্থ এবংগবেষণাও রয়েছে নিম্নে তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হল:
১. পবিত্র কোরআনে এমন আয়াতরয়েছে যাতে শুধুমাত্র দীর্ঘায়ূ নয় বরং অনন্ত জীবনের সংবাদ দেওয়া হচেছ৷ আয়াতটি হযরতইউনুস সম্পর্কে, তাতে বলা হয়েছে:
যদি সে (ইউনুস) মাছের উদরেতসবীহ না পড়ত (আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করত) তা হলে তাকে কিয়ামত পর্যন্তমাছের উদরে থাকতে হত (সূরা সাফ্ফাত আয়াত ১৪৪)৷
সুতরাং আয়াতে অতী দীর্ঘআয়ূ (হযরত ইউনুসের সময় থেকে কিয়ামত পর্যন্ত) প্রাণীবিদরা যাকে অনন্ত আয়ূ বলে থাকেনকোরআনের দৃষ্টিতে মাছ ও মানুষের জন্য তা সম্ভবপর বিবেচিত হয়েছে (সৌভাগ্যের ব্যাপারহল মাদাগাসকারের সৈকতে ৪০০ মিলিয়ন বছরের মাছ পাওয়া যাওয়াতে মাছের জন্য এত দীর্ঘ আয়ূসম্ভপর করেছে৷ কাইহান সংখ্যা ৬৪১৩, তাং ২২-৮-১৩৪৩ ফার্সী শতাব্দী)৷
২. পবিত্র কোরআন পাকে হযরতনূহ (আ.) সম্পর্কে বলা হচেছ:
আমি তো নূহকে তারসম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম৷ সে তাদের মাঝে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম হাজারবছর৷ অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে; কারণ তারা ছিল সীমালপঘনকারী (সূরা আনকাবুতআয়াত ১৪)৷
পবিত্র কোরআনের আয়াতে হযরতনূহের নবুয়্যতের বয়সকে ৯৫০ বছর বোঝানো হয়েছে (তার গড় আয়ু সম্পর্কে বলা হয়নি)৷হাদীসের আলোকে তিনি ২৪৫০ বছর বেঁচে ছিলেন (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ২, বাব ৪৬,হাদীস৩, পৃষ্ঠা ৩০৯)৷
বিশেষ ব্যাপার হল ইমামসাজ্জাদ (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম মাহদী (আ.)-এর মধ্যে হযরত নূহের একটিবৈশিষ্ট্য (সুন্নত) আছে আর তা হল দীর্ঘায়ূ (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১, বাব ২১, হাদীস৪, পৃষ্ঠা ৫৯১)৷
৩. হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কেপবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে:
তাদের এই উক্তির জন্য যে, "আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম তনয় ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি" (আল্লাহর রহমত থেকেবঞ্চিত হল)৷ অথচ তারা তাঁকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি; কিন্তু তাদের এরূপবিভ্রম হয়েছিল৷ যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা নিশ্চয় এই সম্বন্ধে সংশয়যুক্তছিল৷ এসম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না৷ এটা নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করে নি৷ বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (সূরা নিসা আয়াত ১৫৭, ১৫৮)৷
পবিত্র কোরআন ও হাদীসেরদৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যেক মুসলমানই বিশ্বাস করেন যে, হযরত ঈসা (আ.) জীবিত রয়েছেন এবংহযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের পরমূহুর্তে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং তাঁকেসহযোগিতা করবেন৷
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন