আশুরা বিপ্লব-দুই

আশুরা বিপ্লব-দুই

আশুরা বিপ্লব-দুই
ইমাম হোসাইন (আ) হজ্জের রীতি অনেকটা অসমাপ্ত রেখেই আল্লাহর বিধান পালনের উদ্দেশ্যে নিজেকে প্রস্তুত করলেন ৷ যেন এক ভিন্নরূপী সকাল, তুফানের আগে ভয়াল নিস্তব্ধতা ৷ কুফার পথে ইমাম স্থানে স্থানে মানুষকে উদ্দেশ্য করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিতে থাকেন ৷ তার এসব বক্তব্যের মর্মকথা হলো , হে লোক সকল; নবী করিম (দ:) বলেছেন, যে অত্যাচারী শাসক হারামকে হালাল মনে করে , রাসুলের সুন্নাতের পরিপন্থী কাজ করে এবং নিরপরাধ মানুষকে উত্যক্ত করে , তাকে চিনবার পরও যদি মুসলমানরা প্রতিবাদী না হয় এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয় তাহলে জেনে রাখো অত্যন্ত কঠোর পরিণতি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ৷
জোহাইর বিন কিস্ ইমামকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলেন, হে নবীজির বংশধর , আপনার সহযাত্রীরা তাদের নিজের জীবনের চেয়ে আপনার সান্নিধ্যকে প্রাধান্য দেয় ৷ এ সময় দূর থেকে অশ্বারোহী একটি দলকে আসতে দেখা যায় ৷
অশ্বারোহী দলটি ইমামের কাছে এসে সালাম নিবেদন করলো ৷ ইমাম কুফার অবস্থা জানতে চাইলেন ৷ আগন্তক কাফেলা ইমামকে জনালেন, কুফার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অর্থ - সম্পদের বিনিময়ে এজিদের পক্ষে চলে গেছে ৷ তারা এখন আপনার বিরুদ্ধে তত্পের হয়েছে ৷ আগন্তকদের আরেকজন বলে উঠলো, সাধারন মানুষ মন থেকে আপনাকে ভালোবাসলেও আগামীকাল তারাই আপনার বিরুদ্ধে তরবারী চালনা করবে ৷
ইমাম হোসাইন তখন তার প্রতিনিধি কেইসের সম্পর্কে জানতে চান ৷ আগন্তক কাফেলা ইমামকে জানাল, কুফার শাসনকর্তা ইবনে যিয়াদের লোকেরা কেইসকে গ্রেফতার করে ,এরপর ইবনে যিয়াদ কেইসকে আপনার ও আমিরুল মুমেনীন হযরত আলীর প্রতি অভিসম্পাত করার জন্য চাপ দেয় ৷ কিন্তু ঈমানের আলোয় দীপ্তমান কেইস আহলে বাইতের প্রশংসা করতে শুরু করে ৷ এই অপরাধে নরাধম ইবনে যিয়াদের নির্দেশে কেইসকে প্রাসাদের ছাদ থেকে নিক্ষেপ করা হয় ৷ ফলে তিনি শাহাদাত বরণ করেন ৷
পথিমধ্যে কুফার মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা এবং সেখানকার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানবার পর ইমাম হোসাইন (আ:) এর সঙ্গীদের অনেকেই আর অগ্রসর না হয়ে , ইমামকে ফিরে যাবার জন্য পরামর্শ দেন ৷ তারা ইমামকে বলেন, এটা এখন নিশ্চিত যে কুফার মানুষ আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে না ৷ কিন্তু আগন্তক কাফেলার কাছ থেকে সবকিছু জানার পর ইমাম যেন আরো প্রত্যয়ী হয়ে উঠলেন ৷ তিনি তার প্রতিনিধি এবং দূতদের অবস্থান সুস্পষ্ট করার জন্য সুরায়ে আহযাবের ২৩ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করলেন ৷ "ঈমানদার বিশ্বাসীদের মধ্যে অনেকে আল্লাহর সাথে তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে ৷ ওদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং অনেকে প্রতীক্ষায় রয়েছে ৷ তারা তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করেনি ৷"
ইমাম তার সঙ্গীদেরকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিলেন, ইসলামের এই ক্রান্তিকালে মহা আদর্শ স্থাপন করা ইমাম ছাড়া আর কার পক্ষে সম্ভব ছিল ? তাই ইমাম সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্যে , বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতির বেড়াজাল থেকে মুহাম্মাদী ইসলাম রক্ষার উদ্দেশ্যে নিজ করণীয় সাব্যস্ত করে ফেললেন ৷ ইমামের নির্দেশ পেয়ে তার সহযাত্রী দল , ঘোড়া গুলোকে পানি পান করালেন এবং কারবালা প্রান্তরের উদ্দেশ্যে যাত্রার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন ৷
ইমাম হোসাইন (আ:) ও তার সঙ্গীদের কাফেলা উষর মরু প্রান্তর দিয়ে এগিয়ে চলেছে ৷ কোথাও কোন শব্দ নেই; হটাত্‍ , কাফেলার মধ্র থেকে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে সকলের মনোযোগ আকৃষ্ট হলো ৷ একজন বলে উঠলেন, হে ইমাম,দূরে খেঁজুরের বাগান দেখা যাচ্ছে ৷ এখানে এর আগে কখনো তো খেঁজুরের বাগান ছিল না !
কাফেলার অন্যরাও তখন মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করার চেষ্টা করলো ৷ না, কোন খেঁজুরের বাগান নয়, দেখে মনে হচ্ছে বর্ম সজ্জিত একদল ঘোড়সাওয়ার বাহিনী আমাদের দিকে ছুটে আসছে ৷ আস্তে আস্তে অশ্বারোহী সেনাদলটি ইমামের কাফেলার সামনে এসে উপস্থিত হলো ৷ দলপতি নিজেদের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানি প্রার্থনা করলে ইমাম তাদেরকে পর্যাপ্ত পানি দেয়ার জন্য তার সঙ্গীদেরকে নির্দেশ দিলেন ৷ এরপর ইমামের এক সঙ্গী আগন্তক দলপতিকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে , তিনি নিজেকে হুর ইবনে ইয়াজিদ রিয়াহী বলে পরিচয় দেন ৷
ইমাম হুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি আমাদের পক্ষে না বিপক্ষে? জবাবে হুর বললেন, আমি আপনার যাত্রায় বাধা দেয়ার জন্য আদিষ্ট হয়ে এখানে এসেছি ৷ ইমাম হুরের বাহিনীর প্রতি ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝতে পারলেন এরা কুফার অধিবাসী ৷ তাই তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, তোমরাই না আমাকে হাজার হাজার চিঠি দিয়ে আমাকে কুফায় আসার জন্য আমন্ত্রন জানিয়েছিলে ?
এরই মধ্যে ইমামের একজন সঙ্গী নামাজের জন্য আযান দেন ৷ দুপক্ষই ইমামের ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন ৷ নামাজ শেষ হওয়ার পর ইমাম পুনরায় হুরকে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন ৷ হুর পুনরায় একই উত্তর প্রদান করে ৷ ইমাম হোসাইন (আ:) পুনরায় হুর এবং তার বাহিনীকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরাই না আমাকে সাহায্যের জন্য বার বার অনুরোধ করেছিলে, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছি আর তোমরা উল্টো এখন আল্লাহর নবীর বংশধরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছ ?
আমরা অপমান ও অমর্যাদাকে কখনই মেনে নেব না ৷ আল্লাহ ও তার রাসুলের এটাই শিক্ষা ৷ মুমেন মুসলমানরা সব সময় সম্মান রক্ষার জন্য মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করবে ৷
হুরের বাহিনী ইমামের কাফেলার পাশাপাশি অগ্রসর হতে থাকে ৷ এক পর্যায়ে ইমামের বিভিন্ন ভাষণ হুরের অন্তরে ঝড়ের সৃষ্টি করে ৷ দলপতি হুরের অন্তরে আমূল পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট হতে শুরু করে ৷  সূত্রঃ ইন্টারনেট
 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন