কোরআনের দৃষ্টিতে রাজআত
কোরআনের দৃষ্টিতে রাজআত
ইসলামে আকিদাগত বিষয়গুলোর মধ্য হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাজআত, যা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়টির প্রতি শুধু মুসলমানরাই বিশ্বাস রাখে না বরং খৃষ্টান ও ইহুদিসহ প্রায় সব ধর্মের অনুসারীরাই এতে বিশ্বাস করে। উল্লেখ্য যে রাজআত অতীতের উম্মতের মাঝে সংঘটিত হয়েছে, এই উম্মতের মাঝেও সংঘটিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সংঘটিত হবে।
রাজআত অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি কিয়ামতের পূর্বে জীবিত হওয়ার পর আবার এই পৃথিবীতে জীবন যাপন করবে। যেমন: হজরত ইসা (আ.) কোন মৃত ব্যক্তিকে লক্ষ করে বলতেনঃ (কুম বি ইজনিল্লাহ) আল্লাহর নির্দেশে দাড়াও। সঙ্গে সঙ্গে ঐ মৃত ব্যক্তি দাড়িয়ে যেত এবং তাঁর সাথে কথা বলত। আর এ কারণেই তাঁকে খোদা বলা হত। কেননা মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা আল্লাহর কাজ বলে মনে করত।
প্রশ্ন হতে পারে যে, কেন আমরা রাজআতকে বিশ্বাস করব? আথবা আজআতে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কি? এর উত্তর অত্যন্ত স্পষ্ট; আমরা জানি যে, হজরত ইসা আ আসমানে আছেন। শেষ জামানায় ইমাম মাহদি (আ.) এর আগমনের পর হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর উম্মত হিসেবে আবার আসবেন। কিন্তু মানুষ তাঁকে কিভানে চিনবে যে তিনি হজরত ইসা আ। তাঁর চিহ্ন কি হবে? যে ব্যক্তি বলবে যে আমি ইসা; তাকেই কি গ্রহণ করবে? যেহেতু ইসা (আ.) এর মুজিজা ছিল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে বলা হবে যে আপনি যদি ইসা মাসিহ হয়ে থাকেন, তাহলে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে দেখান। সুতরাং অবশ্যই রাজআতকে বিশ্বাস করতে হবে। কেননা এটাই তো রাজআত।
পৃথিবীতে এত অমুসলিম আছে, ইমাম মাহদি (আ.) আগমনের পর সকলকে কি হত্যা করবে? এর উত্তর অবশ্যই না। খৃষ্টানরা হজরত ইসা (আ.) এর মাধ্যমেই ইসলাম গ্রহণ করবে। হজরত ইসা (আ.) আগমনের পর যখন নিজের পরিচয় দিবে, তখন খৃষ্টানরা তাঁকে বলবে আপনি যদি ইসা মসিহ হন; তাহলে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে দেখান। তিনি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে দেখানোর পর খৃষ্টনরা তাঁকে তাদের নবি হিসেবে গ্রহণ করবে। অতপর হজরত ইসা (আ.) হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নবুওয়তের প্রতি সাক্ষ্য দান করবেন এবং নিজেকে তাঁর উম্মত হিসেবে ঘোষণা করবেন। তার পর খৃষ্টানরাও ইসলামের ধর্মের প্রতি ইমান আনবে।
উল্লেখ্য যে হজরত ইসা (আ.) পৃথিবীতে আগমনের পর, ইমাম মাহদি (আ.) এর পিছনে মুকতাদি হয়ে নামাজ পড়বেন। আমরা জানি যে হজরত ইসা (আ.) এর মুজিজা ছিল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা, অনারোগ্য ব্যক্তিকে রোগমুক্তি দান করা ও ভবিষ্যত বাণী সম্পর্কে খবর দেয়া ইত্যাদি। তাহলে অবশ্যই ইমাম মাহদিও (আ.) এ ধরণের কাজ আনজাম দিতে পারবেন। কেননা ইমামের জ্ঞান মুকতাদি হতে অবশই বেশী হবে। ইসলাম আসার পর সব দ্বিন রহিত হয়েগিয়েছে। সুতরাং হজরত ইসা (আ.) নবি হলেও হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর উম্মত হয়েই আগমন করবেন এবং ইমাম মাহদি (আ.) কে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করবেন; বিধায় তাঁর মুজিজা যতই থাক না কেন ইমাম মাহদি (আ.) এর কারামত তাঁর চেয়ে বেশী হওয়াই স্বাভাবিক।
রাজআত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে প্রচুর আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলোঃ
وَ إِذا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنا لَهُمْ دَابَّةً مِنَ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كانُوا بِآياتِنا لا يُوقِنُون
যখন তাদের প্রতি কথা (প্রতিশ্রম্নতি) পূর্ণ হবে তখন আমরা ভূমি হতে এক বিচরণকারী নির্গত করব যে তাদের সঙ্গে (এ বিষয়ে) কথা বলবে যে, মানুষ আমাদের নিদর্শনাবলিতে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল না? (সুরা নামল, আয়াত নং ৮২।)
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে উক্ত জীব কথা বলবে। যদি মানুষ না হয় তাহলে কিভাবে কথা বলবে? এছাড়াও যদি ততকালীন সময়ের লোকরা রাজআতকে বিশ্বাস না করে তাহলে বিষয়টিকে কিভাবে গ্রহণ করবে?
وَ يَوْمَ نَحْشُرُ مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ فَوْجاً مِمَّنْ يُكَذِّبُ بِآياتِنا فَهُمْ يُوزَعُونَ
(সেদিনকে স্মরণ কর,) যেদিন আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এমন এক একটি দলকে সমবেত করব যারা আমার নিদর্শনাবলিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত। অতঃপর তাদের পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত করা (ও বিচ্ছিন্নতা ও বিশৃঙ্খলা হতে ফিরিয়ে রাখা) হবে। (সুরা নামল, আয়াত নং ৮৩।)
এই আয়াতে একটি দলকে উঠানোর কথা বলা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে কিয়ামতের দিন নয়, যদি কিয়ামতের দিন হত তাহলে একটি দলের কথা বলা হত না বরং সকলের কথা বলা হত। কেননা কিয়ামতের দিন সকলকে উঠানো হবে, একটি দলকে নয়। সুরা কাহাফে এরশাদ হচ্ছে;
وَ يَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبالَ وَ تَرَى الْأَرْضَ بارِزَةً وَ حَشَرْناهُمْ فَلَمْ نُغادِرْ مِنْهُمْ أَحَداً
যে দিন পাহাড়গুলোকে চলমান করব, দেখবে যে জমিনের মাঝে যা কিছু আছে বাইরে বের করে দিয়েছে এবং সকলকে হিসাবের জন্য একত্রিত করা হবে; এবং তাদের মধ্য হতে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। (সুরা কাহাফ, আয়াত নং ৪৭।)
এ আয়াত হতে আমারা বুঝতে পারি যে কিয়ামতের দিন সকলকে একত্রিত করা হবে। সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে দলটির রাজআতের কথা বলা হয়েছে।
قالُوا رَبَّنا أَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَ أَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ فَاعْتَرَفْنا بِذُنُوبِنا فَهَلْ إِلى خُرُوجٍ مِنْ سَبيلٍ
তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের দু'বার মৃত্যু ঘটিয়েছ এবং দু'বার জীবন দান করেছ, এখন আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি, তবে কি এ থেকে নির্গমনের কোন পথ আছে?
(সুরা গাফের, আয়াত নং ১১।)
আমরা যদি রাজআতকে বিশ্বাস না করি তাহলে এ আয়াতকে কিভাবে ব্যাখ্যাা করব। এ আয়াত হতেও রাজআতের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। এ আয়াত দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যে প্রথমে একবার মৃত্যুবরণ করেছে, অতপর রাজআতের মাধ্যমে জীবিত হয়েছে, তারপর আবার মৃত্যুবরণ করেছে এবং কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত হয়েছে।
وَ حَرامٌ عَلى قَرْيَةٍ أَهْلَكْناها أَنَّهُمْ لا يَرْجِعُونَ
এবং যে জনপদকে আমরা ধ্বংস করেছি তার জন্য (পৃথিবীতে) প্রত্যাবর্তন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং ৯৫।)
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেনঃ যে জনপদকে আমি ধবংস করেছি তারা আর ফিরে আসবে না। এর অর্থ কি? তাহলে তারা কি কিয়ামতের দিনও ফিরে আসবে না? এর আর্থ অবশ্যই এটা নয়। কিয়ামতের দিন তো সকলকেই ফিরে আসতে হবে। সুতরাং এখানে বলা হচ্ছে তাদের রাজআত হবে ন।
অতীতের উম্মতের মাঝে রাজআত
১. হজরত ইসা (আ.) এর মুজিজা ছিল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা। তিনি যেকোন ব্যক্তির কবরে গিয়ে বলতেন (قم باذن الله) অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশে দাড়াও। সঙ্গে সঙ্গে ঐ ব্যক্তি জীবিত হয়ে তাঁর সাথে কথা বলতেন। আর এটাইতো রাজআত।
২. সুরা বাকারাঃ আমরা জানি যে কোরআন শরিফের মাঝে সবচেয়ে বড় সুরা হচ্ছে সুরা বাকারা। কিন্তু কেন এ সুরাকে বাকারা নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ সুরাটিকে বাকারা নামে নামকরণ করার কারণ হচ্ছে এই যে, বনি ইসরাইলের এবজন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু হত্যাকারীকে সনাক্ত করা না গেলে লোকজন হজরত মুসা (আ.) এর নিকট যায় এবং হত্যাকারীকে সনাক্ত করার জন্য আবেদন জানায়। হজরত মুসা (আ.) তাদেরকে বলেনঃ তোমরা একটি গাভী জবেহ কর।
وَ إِذْ قالَ مُوسى لِقَوْمِهِ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَذْبَحُوا بَقَرَةً
(স্মরণ কর) যখন মুসা নিজ সম্প্রদায়কে বলেছিল, নিশ্চয় আলস্নাহ তোমাদের একটি গাভী যবেহ করার আদেশ দিয়েছেন। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ৬৭।)
উক্ত গাভীর মাংসের টুকরা দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে আঘাত কর। অতপর ঐ ব্যক্তি জীবিত হয়ে বলবে যে কে তাকে হত্যা করেছে।
فَقُلْنا اضْرِبُوهُ بِبَعْضِها كَذلِكَ يُحْيِ اللَّهُ الْمَوْتى وَ يُريكُمْ آياتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
এবং যখন তোমরা একজনকে হত্যা করেছিলে এবং তার (ঘাতকের) ব্যাপারে তোমরা মতভেদ করছিলে, অথচ তোমরা যা গোপন করছিলে আলস্নাহ তার প্রকাশকারী ছিলেন। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ৭৩।)
সুতরাং এটাই তো রাজআত এবং এ ঘটনাটি সুরা বাকারায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণেই সুরাটিকে বাকারা নামে নামকরণ করা হয়েছে।
৩. বনি ইসরালের কিছু সংখ্যক লোকরা হজরত মুসা (আ.) কে বলেঃ আমরা আল্লাহকে দেখতে চায়। আল্লাহকে স্বচক্ষে না দেখে আমারা তোমার প্রতি ইমান আনব না। কিন্তু আল্লাহকে কি চোখে দেখা যায়! আল্লাহ কি সীমা বদ্ধ? আমরা আল্লাহর সৃষ্টি সূর্যের দিকেই তাকাতে পারি না। তাদের পীড়াপীড়ির কারণে আল্লাহকে দেখানোর জন্য হজরত মুসা (আ.) তাদেরকে তুর পর্বতে নিয়ে যান। এ সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছেঃ
وَ إِذْ قُلْتُمْ يا مُوسى لَنْ نُؤْمِنَ لَكَ حَتَّى نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْكُمُ الصَّاعِقَةُ وَ أَنْتُمْ تَنْظُرُونَ * ثُمَّ بَعَثْناكُمْ مِنْ بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
(স্মরণ কর) তোমরা যখন মূসাকে বলেছিলে, হে মুসা! তোমাকে আমরা কখনই বিশ্বাস করব না যতক্ষণ না আলস্নাহকে প্রত্যÿ করব। ফলে তোমাদের ওপর বজ্রপাত হল এ অবস্থায় যে, তোমরা তাকিয়ে দেখছিলে। অতঃপর তোমাদের মৃত্যুর পর পুনরায় তোমাদের উত্থিত করলাম যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ৫৫-৫৬।)
উল্লেখ্য যে এ আয়াতে মুত্যুর পর জীবিত করার কথ বলা হয়েছে। আর এটাই হচ্ছে রাজআত।
৪. হজরত ইবরাহিম (আ.) এর ঘটনাঃ এ সম্পর্কে সুরা বাকারায় এশাদ হচ্ছে;
وَ إِذْ قالَ إِبْراهيمُ رَبِّ أَرِني كَيْفَ تُحْيِ الْمَوْتى قالَ أَ وَ لَمْ تُؤْمِنْ قالَ بَلى وَ لكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبي قالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلى كُلِّ جَبَلٍ مِنْهُنَّ جُزْءاً ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتينَكَ سَعْياً وَ اعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَزيزٌ حَكيمٌ
এবং (হে রাসূল! সে সময়কেও স্মরণ কর) যখন ইবরাহিম বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি মৃতদের কীরূপে জীবিত কর তা আমাকে দেখিয়ে দাও। তিনি বললেন, তোমার কি (এ ব্যাপারে) বিশ্বাস নেই। সে বলল, 'অবশ্যই, তবে এজন্য যে, যাতে আমার হৃদয় প্রশান্ত্মি লাভ করে। তিনি বললেন, তবে চারটি পাখি নাও (ও তাদের পোষ মানাও); এরপর নিজেই ওদের খণ্ড-বিখণ্ড (ও মিশ্রিত) কর, অতঃপর প্রত্যেক পাহাড়ের ওপর ওদের এক এক অংশ রেখে দাও। অতঃপর ওদের ডাক দাও; (দেখবে) ওরা সব তোমার কাছে দ্রুত ছুটে আসবে। এবং জেনে রাখ যে, আলস্নাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ২৬০।)
ঐ পাখিগুলো পুনরায় জীবিত হয়ে জিবন যাপন করেছে। সুতরাং এটাই রাজআত।
৫. হজরত উজাইর (আ.) এর ঘটনাঃ হজরত উজাইর (আ.) পথ চলার সময় একটি শহরে পৌছেন। সেখানে মৃতব্যক্তির হাড় দেখে বলেনঃ হে আল্লাহ! একে কিভাবে জীবিত করবেন? অতপর আল্লাহ তাঁকে মৃতবরণ করান এবং ১০০ বছর পর আবার জীবিত করেন।
أَوْ كَالَّذي مَرَّ عَلى قَرْيَةٍ وَ هِيَ خاوِيَةٌ عَلى عُرُوشِها قالَ أَنَّى يُحْيي هذِهِ اللَّهُ بَعْدَ مَوْتِها فَأَماتَهُ اللَّهُ مِائَةَ عامٍ ثُمَّ بَعَثَهُ قالَ كَمْ لَبِثْتَ قالَ لَبِثْتُ يَوْماً أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ قالَ بَلْ لَبِثْتَ مِائَةَ عامٍ فَانْظُرْ إِلى طَعامِكَ وَ شَرابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْ وَ انْظُرْ إِلى حِمارِكَ وَ لِنَجْعَلَكَ آيَةً لِلنَّاسِ وَ انْظُرْ إِلَى الْعِظامِ كَيْفَ نُنْشِزُها ثُمَّ نَكْسُوها لَحْماً فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ قالَ أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدير
অথবা এমন ব্যক্তির (প্রতি লক্ষ্য করনি,) যে এক জনপদ দিয়ে অতিক্রম করেছিল যা এমনই বিধ্বস্ত্ম হয়েছিল যে, এর ছাদসমূহের ওপর ভেঙ্গে পড়েছিল। (তা দেখে) সে বলল, আলস্নাহ এর (এদের) মৃত্যুর পর একে (এদেরকে) কীরূপে জীবিত করবেন? অতঃপর আলস্নাহ তাকে (মৃত্যুদান করলেন এবং) শত বছর পর্যন্ত্ম মৃত রাখলেন; পরে তাকে পুনরম্নত্থিত করে বললেন, তুমি কত কাল অবস্থান করেছ? সে বলল, একদিন বা একদিনের কিয়দংশ। তিনি বললেন, বরং তুমি শত বছর অবস্থান করেছ। তুমি তোমার খাদ্য ও তোমার পানীয়ের প্রতি লক্ষ্য কর যাতে কোনরূপ পরিবর্তন হয়নি। এবার তোমার গাধার প্রতি দৃষ্টি দাও (যার হাড়গুলো পড়ে আছে); আর (এসব এজন্য করেছি) যেন আমরা তোমাকে মানবজাতির জন্য এক নিদর্শন (আমার ক্ষমতার নমুনা) করতে পারি। এবং তোমার গাধার প্রতি লক্ষ্য কর (যে, তা পচে গলে অস্থিতে পরিণত হয়েছে; এটা এজন্য যাতে তুমি দৃঢ় বিশ্বাসী হও) এবং এজন্য যে, তোমাকে মানুষের জন্য (পুনরম্নত্থানের) নিদর্শন করি, এখন তুমি অস্থিগুলোর প্রতি লক্ষ্য কর, আমরা কীভাবে সেগুলো সংযুক্ত করি, অতঃপর তার ওপর মাংসের আবরণ পরিধান করাই। অতঃপর তার সম্মুখে যখন (এসব) স্পষ্ট হয়ে গেল তখন (স্বতঃস্ফূর্তভাবে) বলল, আমি জানি যে, আলস্নাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ২৫৯।)
এখানে উল্লেখ্য যে হজরত উজাইর (আ.) মৃত্যুর ১০০ বছর পর পুনরায় জীবিত হয়ে জীবন যাপন করেছেন। এটাই হচ্ছে রজআত। রাজআতের জন্য এর চেয়ে স্পষ্ট দলিল আর কি হতে পারে? তাঁর সাথে যে খাবার ছিল তা নষ্ট হয়েছিল না। ১০০ বছর যাবত অনুরূপভাবেই ছিল। বলা হয়েছে যে তাঁর নিকট পানীয় হিসেবে দুধ ছিল। দুধ অতি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় আথচ ১০০ বছর যাবত নষ্ট হয়নি। হজরত উজাইর (আ.) বাড়িতে ফিরে দেখেন তাঁর ভাই বৃদ্ধ হয়ে গেছে কিন্তু তিনি যুবক রয়েছেন। এই সব কিছুই আল্লাহর কুদরত। সুতরাং তিনি যাকে ইচ্ছা জীবিত করবেন, যাকে ইচ্ছা মৃতবরণ করাবেন।
৬. কোন একজন আল্লাহ নবি দেখেন যে প্রচুর পরিমাণ হাড় পড়ে আছে। তিনি বুঝতে পারেন যে এরা আজাবের শিকার হয়েছিল।
أَ لَمْ تَرَ إِلَى الَّذينَ خَرَجُوا مِنْ دِيارِهِمْ وَ هُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقالَ لَهُمُ اللَّهُ مُوتُوا ثُمَّ أَحْياهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَ لكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لا يَشْكُرُونَ
(হে রাসূল!) তুমি কি সেই লোকদের (অবস্থার) প্রতি দৃষ্টিপাত করনি যারা সংখ্যায় সহস্রাধিক ছিল- মৃত্যুভয়ে নিজেদের গৃহসমূহ থেকে বের হয়েছিল। তখন আলস্নাহ তাদের বললেন, তোমরা মৃত্যুবরণ কর। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তাদের জীবিত করলেন। নিশ্চয় আলস্নাহ মানুষের প্রতি অতিশয় দয়ালু; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ২৪৩।)
এই আয়াতেও আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। সতরাং এখানেও সরাসরি রাজআতের প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে। ইটা এমন একটি বিষয় যে অতীতের সব উম্মতেরাই এতে বিশ্বাস করত।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন