ইমাম আলি (আ.)এর ফযিলত সংক্রান্ত হাদিস- ৫
ইমাম আলি (আ.)এর ফযিলত সংক্রান্ত হাদিস- ৫
এস, এ, এ
১. বেহেশতী বৃক্ষশাখা হস্তে ধারণ
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
مَنْ أَحَبَّ أََنْ يَسْتَمْسِكَ بِالْقَضِيبِ الاَحْمَرِ الَّذِي غَرَسَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ بِيَمِينِهِ، فَلْيَتَمَسَّكْ بِحُبِّ عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ.
আল্লাহ রাববুল আলামীন চিরন্তন বেহেশতে যে লাল শাখাটি রোপণ করেছেন যে ব্যক্তি সেটি ধরতে পছন্দ করে সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবের বেলায়েতকে গ্রহণ করে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯০,ফাযায়েলুস সাহাবা ২:৬৬৪/১১৩২,নাহজুল বালাগা -ইবনে আবিল হাদীদ ৯০/১৬৮)
২. নবীকুলের সারনির্জাস
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
مَنْ أَرَادَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَي آدَمَ فِي عِلْمِهِ، وَ إِلَي نُوحٍ فِي فَهْمِهِ وَ إِلَي إِبْرَاهِيمَ فِي حِلْمِهِ وَ إِلَي يَحْيَي بْنِ زَكَرِيَّا فِي زُهْدِهِ وَ إِلَي مُوسَي بْنِ عِمْرَانَ فِي بَطْشِهِ فَلْيَنْظُرْ إِلَي عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ.
যে ব্যক্তি আদমকে তাঁর জ্ঞানে,নুহকে তাঁর ধীশক্তিতে,ইবরাহীমকে তাঁর দূরদর্শিতায়,ইয়াহিয়াকে তাঁর সংযমশীলতায় আর মূসা ইবনে ইমরানকে তাঁর সাহসিকতায় দেখতে চায় সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি লক্ষ্য করে। (ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব-ইবনে আসাকির ২:২৮০/৮১১,আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭:৩৬৯)
৩. সর্বপ্রথম নামায আদায়কারী
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
وَ لَقَدْ صَلَّتِ الْمَلَائِكَةُ عَلَيَّ وَ عَلَي عَلِيٍّ ، لِأََنَّا كُنََّا نُصَلِّي وَ لَيْسَ مَعَنَا أَحَدٌ يُصَلِّي غَيْرُنَا.
ফেরেশতারা আমার এবং আলীর ওপর অসংখ্য সালাম পড়তো। কারণ,শুধু আমরাই নামায পড়তাম আর আমাদের সাথে নামায পড়ায় কেউ ছিল না। (উসুদুল গবাহ ৪:১৮,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২১,যাখায়িরুল উকবা :৬৪,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ১:৮০/১১২-১১৩)
৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীর প্রতি ইঙ্গিত করে আয়েশাকে বলেনঃ
يَا عَايِشَةُ، إِنَّ هَذَا أَحَبُّ الرِّجَالُ إِلَيَّ، وَ أَكْرَمُهُمْ عَلَيَّ، فَاعْرِفِي لَهُ، وَ أَكْرِمِي مَثْوَاه.
হে আয়েশা! এ মানুষটি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং মর্যাদাবান ব্যক্তি। কাজেই তার অধিকার সম্পর্কে অবগত হও এবং তার মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো। (আর রিয়াদুন্ নাদরাহ ৩:১১৬,উসুদুল গবাহ ৫:৫৪৮,যাখায়িরুল উকবা :৬২)
৫. সত্য শ্রবণকারী কান
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَا عَلِيُّ، إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي أَنْ اُدْنِيكَ وَ أُعَلِّمُكَ ِلتَعِيَ، وَ أََنْزَلَتْ هَذِهِ الْآيَهُ: «وَ تَعِيَهَا اُذُنٌ وَاِعيَةٌ» فَأََنْتَ اُذُنٌ وَاعِيَةٌ لِعِلْمِي.
হে আলী! আল্লাহ আমাকে বলেছেন,তোমাকে আমার কাছে এনে আমার ইলমকে তোমাকে শিক্ষা দিতে যাতে তুমি সেগুলো পুরোপুরি শিখে নাও। এ মর্মে এই আয়াত নাযিল হয়েছে‘‘ এবং সত্যগ্রাহী কান এটাকে ধারণ করে’’ * কাজেই তুমি আমার জ্ঞানের সত্যগ্রাহী কান!
* সূরা আল হাক্কাহ্ : ১২ (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৭,আদ দুররুল মানসূর ৮:২৬৭)
৬. অবাধ্যদের সাথে যুদ্ধ
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَا عَلِيُّ، سَتُقَاتِلُكَ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ وَ أََنْتَ عَلَي الْحَقِّ فَمَنْ لَمْ يَنُصُرْكَ يَوْمَئِذٍ فَلَيْسَ مِنِّي.
হে আলী! শীঘ্রই অবাধ্যদল তোমার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। অথচ তুমি সত্যের ওপরে অবস্থান করবে। সুতরাং সেদিন যে ব্যক্তি তোমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না সে মুসলমান নয়। (কানযুল উম্মাল ১১:৬১৩/৩২৯৭১)
৭. তোমার জন্য আল্লাহর আশ্রয়প্রার্থী হয়েছি!
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَا عَلِيُّ، مَا سَأَلْتُ اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ مِنَ الْخَيْر ِإِلَّا سَأَلْتُ لَكَ مِثْلَهُ، وَ مَا اسْتَعَذْتُ اللهَ مِنَ الشَّرِّ إِلَّا اسْتَعَذْتُ لَكَ مِثْلَهُ.
হে আলী! আমি নিজের জন্য আল্লাহর কাছে যা কিছু ভালো চেয়েছি তোমার জন্যও তা কামনা করেছি। আর যা কিছু মন্দ তা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করেছি,তোমার জন্যেও অনুরূপ আল্লাহর কাছে আশ্রয়প্রার্থী করেছি। (আর রিয়াদুন নুদ্রাহ ৩:১৮৯,কানযুল উম্মাল ১৩:১৫১/৩৬৪৭৪)
৮. তোমার শত্রুর ধর্মে বিশ্বাস নেই
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَا عَلِيُّ، مَا كُنْتُ اُبَالِي مَنْ مَاتَ مِنْ اُمَّتِي وَ هُوَ يُبْغِضُك، مَاتَ يَهُودِيّاً أَوْ نَصْرَانِيّاً.
হে আলী! এতে আমার কোনো যায় আসে না যে আমার উম্মতের কোনো লোক তোমার প্রতি শত্রুতা রেখে মৃত্যুবরণ করে। অবশ্য তার মৃত্যু হয় ইয়াহুদী বা খৃস্টানের মৃত্যু। (আল ফেরদৌস ৫:৩১৬/৮৩০৩,আল মানাকিব- ইবনুল মাগাযেলী ৫০/৭৪)
৯. মুনাফিকদের বিতাড়নকারী
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَا عَلِيُّ، مَعَك يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَصَاً مِنْ عِصِيِّ الْجَنَّةِ، تَذُودُ بِهَا الْمُنَافِقِينَ عَنِ الْحَوْضِ.
হে আলী! কেয়ামতের দিন একটি বেহেশতী লাঠি তোমার হাতে থাকবে যা দ্বারা তুমি মুনাফিকদেরকে বিতাড়িত করবে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৮৫,যাখায়িরুল উকবা :৯১,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৩৫)
১০. দুনিয়া ও আখেরাতের সর্দার
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَا عَلِيُّ، أَنْتَ سَيِّدٌ فِي الدُُّنْيَا وَ سَيِّدٌ فِي الْآخِرَةِ، حَبِيبُكَ حَبِيبِي وَ حَبِيبِي حَبِيبُ اللهِ، وَ عَدُوُّكَ عَدُوِّي وَ عَدُوِّي عَدُوُّ اللهِ وَ الْوَيْلُ لِمَنْ أَبْغَضَكَ بَعْدِي.
হে আলী! তুমি দুনিয়া ও আখেরাতের সরদার। তোমার বন্ধু আমারও বন্ধু,আর আমার বন্ধু আল্লাহরও বন্ধু। তোমার শত্রু আমারও শত্রু,আর আমার শত্রু আল্লাহরও শত্রু। অভিসম্পাত তার ওপর যে আমার পরে তোমার সাথে শত্রুতা করবে। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৮,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২৪,আল ফেরদৌস ৫:৩২৪/৮৩২৫)
১১. সর্বদা আলীর সাথে থাকো
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَا عَمَّارُ، إِنْ رَأَيْتَ عَلِيّاً قَدْ سَلَكَ وَادِياً وَ سَلَكَ النَّاسُ وَادِياً غَيْرَهُ، فَاسْلُكْ مَعَ عَلِيٍّ و دَعِ النَّاسَ، إِنَّهُ لَنْ يَدُلَّكَ عَلَي رَدَيً، وَ لَنْ يُخْرِجَكَ مِنَ الْهُدَي.
হে আম্মার! যদি দেখতে পাও যে আলী একপথে চলেছে আর লোকেরা অন্যপথে,তাহলে তুমি আলীর সাথে চলবে এবং লোকদেরকে ত্যাগ করবে। কারণ,আলী কখনো তোমাকে বক্রপথে পরিচালিত করবে না এবং তোমাকে হেদায়েতের পথ থেকে বাইরে নিয়ে যাবে না। (কানযুল উম্মাল ১১:৬১৩/৩২৯৭২,তারীখে বাগদাদ ১৩:১৮৭)
১২. আল্লাহ তাকে বেশী ভালোবাসেন
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা হযরত আববাস আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এর প্রতি ইঙ্গিত করে হুজুর (সা.) কে জিজ্ঞেস করেন,হে রাসূলে খোদা! তাকে কি তুমি ভালোবাস? হুজুর উত্তর দিলেনঃ
يَا عَمّ، وَاللهِ اَللهُ اَشَدُّ حُبّاً لَهُ مِنِّي أََنْ جَعَلَ ذُرِّيَةَ كُلُّ نَبِيٍّ فِي صُلْبِهِ، وَجَعَلَ ذُرِّيَتِي فِي صُلْبِ هَذَا.
হে চাচাজান! খোদার কসম,আলীর প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা আমার প্রতি তাঁর ভালোবাসার চেয়েও বেশী। কারণ,তিনি প্রত্যেক নবীর বংশকে স্বয়ং তারই ঔরসে দান করেছেন। আর আমার বংশকে দান করেছেন এর ঔরসে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২৬,ইয়ানাবিউল মোওয়াদ্দাহ :২৬৬,আল ইমাম আলী (আ.)- ইবনে আসাকির ২:১৫৯/৬৪৬)
১৩. যোদ্ধা পুরুষ
রাসূলুল্লাহ (সা.) সাকিফের প্রতিনিধিবৃন্দের উদ্দেশে বলেনঃ
لَتُسْلِمُنَّ أَوُ لَأَبْعَثَنَّ عَلَيْكُمْ رَجُلاً مِنِّي–أو قَالَ: مِثْلَ نَفْسِي–فَلْيَضْرِبَنَّ أَعْنَاقَكُمْ، وَلْيَسْبِيَنَّ ذَرَارِيكُمْ، وَلْيَأْخُذَنَّ أَمْوَالَكُمْ فَالْتَفَتَ إِلَي عَلِيٍّ (ع)، فَأْخَذَ بِيَدِهِ وَ قَالَ: هُوَ هَذَا.
তোমাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে। তা নাহলে এমন একজনকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠাবো যে আমা থেকে (কিংবা বললেন : যে আমার মতো)। সে তোমাদের সকলকে শেষ করে দেবে,তোমাদের সন্তানদেরকে বন্দী করবে আর তোমাদের সহায় সম্বলকে জব্দ করবে। অতঃপর রাসূল (সা.) আলীর দিকে মুখ ফিরালেন। তার হাত ধরলেন এবং বললেন,এই পুরুষটির কথাই বলছি। (সুনানে তিরমিযী ৫: ৬৩৪/৩৭১৫,ফাযায়েলুস সাহাবা ২:৫৭১/৯৬৬,আল ইস্তিয়াব ৩:৪৬,খাসায়েসে নাসায়ী ১০,১৯)
১৪. শক্তির শেষ প্রতীক
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
لَأَعْطِيَنَّ الرَّايَةُ غَداً رَجُلاً يُحِبُّ اللهَ وَ رَسُولَهُ، وَ يُحِبُّهُ اللهُ وَ رَسُولُهُ، كَرَّارٌ غَيْرُ فَرَّارٍ، فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ، قَالَ : أَيْنَ عَلِيٌّ؟ فَدَفَعَ الرَّايَةَ إِِلَيْهِ، فَفَتَحَ اللهُ عَلَيهِ.
আগামীকাল পতাকাকে এমন কারো হাতে তুলে দেব যাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ভালোবাসেন,আর সেও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে। সে অবিচল দৃঢ়পদ,কখনো পলায়ন করে না।
যখন সকাল হলো,বললেন,‘‘ আলী কোথায়?’’ অতঃপর পতাকাকে তাঁর হাতে অর্পণ করলেন এবং আল্লাহ তাঁকে বিজয় দান করলেন। (খাসায়েসে নাসায়ী : ৬,সহীহ বুখারী ৫:৮৭/১৯৭-২৭৯/২৩১,সহীহ মুসলিম ৪:১৮৭১/৩২-৩৪,সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৮/৩৭২৪,মুসনাদে আহমাদ ১:১৮৫ ও ৫: ৩৮৫)
১৫. ফেতনা থেকে নিরাপত্তা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
سَتَكُونُ بَعْدِي فِتْنَةٌ: فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ فَاَلْزَمُوا عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ، فَإِنَّهُ أَوَّلُ مَنْ يَرَانِي، و أَوَّلُ مَنْ يُصَافِحُني يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَ هُوَ الصِّدِّيقُ الْأَكْبَرُ، وَ هُوَ فَارُوقُ هَذِهِ الْأُمَّةِ، يَفْرُقُ بَيْنَ الْحَقِّ وَ الْبَاطِلِ، وَ هُوَ يَعْسُوبُ الدِّينِ.
আমার পরে বিভিন্ন ফিতনার সৃষ্টি হবে। তখন তোমরা আলী ইবনে আবি তালিবের সাথে থাকবে। কেননা,কেয়ামতের দিন সে সর্বপ্রথম ব্যক্তি যে আমাকে দেখবে এবং আমার সাথে যোগ দিবে। সে হলো মুমিনদের মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ়পদ এবং এই উম্মতের পথ নির্দেশক,হক আর বাতিলের মধ্যে সে পৃথক করে দেয়। দীনের বড় নেতা হলো সে। (উসুদুল গাবাহ ৫:২৮৭,আল ইসাবাহ ৪:১৭১,আল ইস্তিআব ৪:১৭০)
১৬. অতুলনীয় গুণের অধিকারী
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَا عَلِيُّ، أَخْصِمُكَ بِالنُّبُوَّةِ وَلَا نُبُوَّةَ بَعْدِي، وَ تَخْصِمُ النَّاسَ بِسَبْعٍ، لاَ يُحَاجَّكَ فِيهَا أَحَدٌ مِنْ قُرَيشٍ: أَنْتَ أَوَّلُ إِيمأَناً بِاللهِ، وَ أَوْفَاهُمْ بِعَهْدِ اللهِ، وَ أَقْوَمُهُمْ بِأَمْرِ اللهِ، وَ أَقْسَمُهُمْ بِالسَّوِيَّةِ، وَ أَعْدَلُهُمْ فِي الرَّعِيَّةِ، وَ أَبْصَرُهُمْ بِالْقَضِيَّةِ وَ أَعْظَمُهُمْ عِنْدَ اللهِ مَزِيَّةٍ.
হে আলী! আমি নবুওতের দিক থেকে তোমার ওপর শ্রেয়। কারণ আমার পরে কোনো নবী নেই। আর তুমিও সাতটি বৈশিষ্ট্যের কারণে সব মানুষের মধ্যে শ্রেয়। একজন কোরাইশেরও ঐ সাতটি গুণের কোনোটিতেই তোমার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য নেই : আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নে তুমি প্রথম,আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার রক্ষায় তুমি সবচেয়ে বিশ্বস্ত,আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে তুমি সবচেয়ে অবিচল,মানুষের মধ্যে ভাগ বণ্টনের ক্ষেত্রে তুমি সবচেয়ে ইনসাফকারী,মানুষের অধিকার মেনে চলার ক্ষেত্রে তুমি সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ,বিচারের কাজে তুমি সবচেয়ে বিচক্ষণ এবং আল্লাহর নিকটে তুমি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৫,শারহে নাহজুল বালাগা– ইবনে আবিল হাদীদ ৯:১৭৩
১৭. এ ছিল আল্লাহর নির্দেশ!
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
سُدُّوا الاَبْوَابَ، إلَّا بَابَ عَلِيٍّ. فَتَكَلَّمَ بِذَلِكَ النَّاسُ، فَقَامَ رَسُولُ اللهِ (ص) فَحَمِدَ اللهَ وَ أَثْنَي عَلَيهِ و ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي أَُمِرْتُ بِسَدِّ هَذِهِ الابْوَابَ إلاَّ بَابَ عَلِيٍّ، وَ قَالَ فِيهِ قَائِلُكُمْ، وَ اللهِ مَا سَدَدْتُهُ وَ لَا فَتَحْتُهُ، وَ لَكِنِّي اُمِرْتُ فَاتَّبَعْتُهُ.
শুধু আলীর দরওয়াযা ব্যতীত সকল দরওয়াযা বন্ধ করে দাও।
লোকজন আপত্তির সুরে নানা কথা বলতে লাগলো।
হুজুর (সা.) উঠে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন পূর্বক ঘোষণা করলেন,আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সকল দ্বার বন্ধ করে দেয়ার জন্যে শুধু আলীর দরওয়াযা ছাড়া। আর এটা তোমাদের মধ্যে নানা আপত্তি ও আলোচনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদার কসম,আমি কোনো দরওয়াযা বন্ধও করিনি আর কোনো দরওয়াযা খুলেও দেই নি। বরং যা আল্লাহর নির্দেশ ছিল তাই পালন করেছি মাত্র। (সুনানে তিরমিযী ৫:৬৪১/২৭৩২,মুসনাদ্ আহমাদ ১:৩৩১,ফাযায়েলূস্ াহাবা ২:৫৮১/৯৮৫,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩;১২৫,খাসায়েসে নাসায়ী :১৩)
১৮. সুন্নাতের রাস্তায় সংগ্রামী পুরুষ
রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে উদ্দেশ করে বলেনঃ
قُمْ فَوَاللهِ لَأََرْضِيَنَّكَ، أََنْتَ أَخِي وَ أَبُو وُلْدِي، تُقَاتِلُ عَلَي سُنَّتِي، مَنْ مَاتَ عَلَي عَهْدِي فَهُوَ فِي كَنْزِ اللهِ، وَ مَنْ مَاتَ عَلَي عَهْدِكَ فَقَدْ قَضَي نَحْبَهُ، وَ مَنْ مَاتَ يُحِبُّكَ بَعْدِ مَوْتِكَ خَتَمَ اللهُ لَهُ بِالْأَمْنِ وَ الْإِيمَانَ مَا طَلَعَتْ شَمْسٌ أََوْ غَرُبَتْ.
ওঠো! আল্লাহর কসম,সার্থক জনম তোমার,তুমি আমার ভাই এবং আমার সন্তানদের পিতা,তুমি আমার সুন্নাতের ওপর দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো। যে ব্যক্তি আমার সাথে প্রতিশ্রুতিশীল অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি তোমার সাথে প্রতিশ্রুতিশীল অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে তার অঙ্গীকারের ওপর মৃত্যুবরণ করলো এবং স্বীয় কর্তব্য পালন করলো। আর যে ব্যক্তি তোমার শাহাদাতের পরে তোমার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসায় মারা যাবে যতদিন সূর্যের উদয় অস্ত চলবে ততদিন যাবত আল্লাহ তার জন্যে নিরাপত্তা ও ঈমান লিপিবদ্ধ করবেন। (ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৫৬/১১১৮,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২৪,যাখায়িরুল উকবা : ৬৬,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১২১)
১৯. আল্লাহর বন্ধু
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
أُوصِي مَنْ آمَنَ بِي وَ صَدَّقَنِي بِوِلَايَةِ عَلِيِّ بْنِ أبِي طَالِبٍ ، فَمَنْ تَوَلَّاهُ فَقَدْ تَوَلَّانِي، وَ مَنْ تَوَلَّانِي فَقَدْ تَوَلَّي اللهَ، وَ مَنْ أَحَبَّهُ فَقَدْ أَحَبَّنِي، وَ مَنْ أَحَبَّنِي فَقَدْ أَحَبَّ اللهَ، وَ مَنْ أبْغَضَهُ فَقَدْ أَبْغَضَنِي، وَ مَنْ أَبْغَضَنِي فَقَدْ أَبْغَضَ اللهَ عَزَّوَجَلَّ.
আমার প্রতি যে ঈমান আনে ও বিশ্বাস স্থাপন করে তার প্রতি আমার উপদেশ হলো তার নিজের জন্য যেন আলী ইবনে আবি তালিবের অভিভাবকত্বকে মেনে নেয়। কারণ,যে ব্যক্তি নিজেকে আলীর বেলায়েতের অধীনে নিয়োজিত করে আমি তার অভিভাবক হই,আর আমি যার অভিভাবক হই আল্লাহ তাকে স্বীয় বেলায়েতের অধীনে গ্রহণ করেন। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালোবাসবে সে আমাকেও ভালোবাসবে,আর যে আমাকে ভালোবাসবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ঘৃণা করবে সে আমাকেও ঘৃণা করবে। আর যে আমাকে ঘৃণা করবে আল্লাহ তাকে ঘৃণা করবেন। (আলমানাকিব-ইবনে মাগাযেলী : ২৩০/২৭৭,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১০৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১০/৩২৯৫৩)
২০. রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সৃষ্টি করা মাটি দ্বারা সৃষ্ট
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَحْيَا حَيَاتِي وَ يَمُوتَ مَمَاتِي وَ يَسْكُنُ جَنَّةُ عَدْنٍ غَرَسَهَا رَبِّي فَلْيُوَالِ عَلِيّاً مِنْ بَعْدِي، وَ يُوَالِ وَلِيَّهُ وَلْيَقْتَدِ بِأََهْلِ بَيْتِي مِنْ بَعْدِي، فَإِنَّهُمْ عِتْرَتِي، خُلِقُوا مِنْ طِينَتِي وَ رُزِقُوا فَهْمِي وَ عِلْمِي.
যে ব্যক্তি আমার মতো জীবন যাপন এবং আমার মতো মৃত্যুবরণ করে খুশী হতে চায় আর আমার আল্লাহ যে চিরকালীন বেহেশত প্রস্ত্তত করেছেন সেখানে শান্তির আবাস লাভ করতে চায় তাকে আমার পরে আলীর বেলায়েতকে গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁর অভিভাবকত্বকে স্বীকার করে নিতে হবে। আর আমার আহলে বাইতকে অনুসরণ করতে হবে। তারা আমার বংশধর,আমার সৃষ্টি করা মাটি দিয়েই তারা সৃষ্ট। আর তাদেরকে আমার জ্ঞান ও ধীশক্তি প্রদান করা হয়েছে। (শারহে নাহজুল বালাগা -ইবনে আবিল হাদীদ ৯/১৭০,হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:১৬,কানযুল উম্মাল ১২:১০৩/২৪১৯৮)
২১. আরশ মুয়াল্লায় বিবাহ
রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে বলেনঃ
هَذَا جَبْرَائِيلُ يُخْبِرُنِي أَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ زَوَّجَكَ فَاطِمَةَ، وَ أَشْهَدَ عَلَي تَزْوِيجِكَ أَرْبَعِينَ أَلْفَ مَلَكٍ ، وَ أَوْحَي إِلَي شَجَرَةِ طُوبَي: أََنِ انْثُرِي عَلَيْهِمُ الدُّرَّ وَ الْيَاقُوتَ، فَنَثَرَتْ عَلَيْهِمُ الدُّرَّ وَالْيَاقُوتَ، فَابْتَدَرَتْ إِلَيْهَ الْحُورُ الْعَيْنَ يَلْتَقِطْنَ مِنْ أَطْبَاقِ الدُّرِّ وَ الْيَاقُوتِ، فَهُمْ يَتَهَادُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلَي يَوْمِ الْقِيَامَةِ.
এই মাত্র জিবরাঈল আমার জন্যে সংবাদ আনলেন যে,মহান আল্লাহ তোমাকে ফাতিমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন। এই বিবাহে চার হাজার ফেরেশতা সাক্ষী দিয়েছে। তুবা বৃক্ষের প্রতি ইশারা করলেন যাতে তাদের ওপর মণিরত্ন এবং ইয়াকুত ছড়ায়। তখন তুবা সেটাই করলো। আর কৃষ্ণ চক্ষুর বেহেশতী হুরগণ সে মণিরত্ন আর ইয়াকুতগুলোকে কুড়িয়ে বড় বড় তশতরিতে রাখলো। কেয়ামতের দিন সেগুলোই তারা একে অপরকে উপহার প্রদান করবে। (আর রিয়াদুন্ নাদরাহ ৩:১৪৬,যাখায়িরুল উকবা :৩২)
২২. সত্যিকার পরহেযগার
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَا عَلِيُّ، إِنَّ اللهَ قَدْ زَيَّنَكَ بِزِينَةٍ لَمْ يُزَيِّنُهُ الْعِبَادَ بِزِينَةٍ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْهَا، هِيَ زِينَةُ الْأَبْرَارِ عِنْدَ اللهِ تَعَالي، الزُّهْدُ فِي الدُُّنْيَا، فَجَعَلَكَ لَا تَرْزَأَ مِنَ الدُُّنْيَا شَيْئًا وَ لَا تَرْزَأ الدُُّنْيَا مِنْكَ شَيْئاً وَ وَهَبَ لَكَ حُبَّ الْمَسَاكيِنَ فَجَعَلَكَ تَرْضَي بِهِمْ أَتْبَاعاً وَ يَرْضَوُنَ بِكَ إِمَاماً.
হে আলী! আল্লাহ তোমাকে এমন গুণে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন যার চেয়ে পছন্দনীয় গুণ মানুষের জন্য আর নেই। আল্লাহর দরবারে সৎকর্মশীলদের সেই গুণবৈশিষ্ট্যের নাম হলো দুনিয়ার জীবনে পরহেযগারী। আল্লাহ এমন করেছেন যে তুমি দুনিয়া থেকে কিছুই গ্রহণ করোনি আর দুনিয়াও তোমার থেকে কিছুই গ্রহণ করেনি। এর বিনিময়ে আল্লাহ অসহায়দের ভালোবাসা তোমাকে দান করেছেন। তুমিও খুশী হয়েছ যে তারা তোমার অনুসারী হয়েছে আর তারাও এই জন্য খুশী যে তুমি তাদের ইমাম! (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৭১,শারহে নাহজুল বালাগা- ইবনে আবিল হাদীদ ৯:১৬৬)
২৩. অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারী
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম আলীকে বলেনঃ
أُوتِيتَ ثَلَاثاً لَمْ يُؤَتَهُنَّ أَحَدٌ وَ لَا أنَا، أُوتِيتَ صِهْراً مِثْلِي وَ لَمْ أُوْتَ أنَا مِثْلُكَ، وَ أُوتِيتَ زَوْجَةً صِدِّيقَةً مِثْلُ ابْنَتِي، وَ لَمْ أؤْتَ مِثْلَهَا زَوْجَةً، وَ أُوتِيتَ الْحَسَنَ وَ الْحُسَيْنَ مِنْ صُلْبِكَ، وَ لَمْ أُؤتَ مِنْ صُلْبِي مِثْلَهُمَا، وَ لَكِنَّكُمْ مِنِّي وَ أنَا مِنْكُمْ.
তোমাকে তিনটি মর্যাদা দেয়া হয়েছে যা কাউকে এমনকি আমাকেও দেয়া হয়নি। আমার মতো ব্যক্তির জামাতার মর্যাদা যা শুধু তোমাকে দেয়া হয়েছে,আমাকে নয়। আমার কন্যার মতো পুণ্যবতী সহধর্মিণী তুমি পেয়েছ,তার মতো সহধর্মিণী আমার নেই। আর হাসান ও হুসাইনের ন্যায় সন্তানদ্বয় তোমাকে দেয়া হয়েছে,তাদের মতো সন্তান আমাকে দেয়া হয়নি। তবে তোমরা সবাই আমা থেকে আর আমি তোমাদের থেকে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৭২,নাযমু দুরারিস সামতাঈন :১১৩)
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন