হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর মাজারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) হচ্ছেন ইমাম মূসা (আ.)’এর কন্যা এবং তাঁর মাতার নাম হচ্ছে নাজমা খাতুন। তিনি ১৭৩ হিজরি ১লা জিলকদে মদিনাতে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০ হিজরিতে খলিফা মামুনের জোর তাকিদের কারণে ইমাম রেযা (আ.) মার্ভ’এর উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার এক বছর পরে অর্থাৎ

হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর মাজারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

ফাতেমা মাসুমা, ইমাম কাযেম, ইমাম রেযা, ইমাম, কুম, fatema masuma, qom, imam reza, imam musa kazim, মাজার, বিবি মাসুমা, মাজার শরিফ,

এস, এ, এ

হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) হচ্ছেন ইমাম মূসা (আ.)’এর কন্যা এবং তাঁর মাতার নাম হচ্ছে নাজমা খাতুন। তিনি ১৭৩ হিজরি ১লা জিলকদে মদিনাতে জন্মগ্রহণ করেন।

২০০ হিজরিতে খলিফা মামুনের জোর তাকিদের কারণে ইমাম রেযা (আ.) মার্ভ’এর উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার এক বছর পরে অর্থাৎ ২০১ হিজরিতে হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) তাঁর ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য তাঁর কয়েকজন ভাইকে সাথে নিয়ে মদিনা থেকে খোরাসানের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি যখন কোন শহর বা মহল্লাতে প্রবেশ করতেন তখন সেখানের জনগণ তাঁকে আন্তরিক সংবর্ধনা জানায়। কিন্তু আহলে বাইতের বিরোধিরা হুকুমতের পৃষ্ঠপোষকতায় হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর কাফেলা উপরে হামলা করে। শত্রুরা উক্ত কাফেলার সকল পুরুষদেরকে হত্যা করে এমনকি বিভিন্ন রেওয়ায়েতে হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)কেও বিষ প্রয়োগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত হত্যাকান্ড এবং বিশেষত বিষের প্রভাবের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন আর এ কারণে তিনি কুমের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং ২০১ হিজরি ২৩ রবিউল আওয়াল তারিখে তিনি কুম শহরে পৌছান।

বর্তমানে মির স্কয়ার যেখানে পূর্বে মূসা বিন খাযরাজের ঘর ছিল সেখানে তিনি অবস্থান করেন। কুম শহরে তিনি মাত্র ৩০ দিন জিবন যাপন করেন এবং বাইতুন নূর নামক স্থানে তিনি আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে নিজেকে নিমগ্ন রাখেন।

অবশেষে ১০ রবিউস সানি অন্য মতে ১২ রবিউস সানি ২০১ হিজরিতে তাঁর ভাই ইমাম রেযা (আ.)’এর যিয়ারতের আশা মনে নিয়ে ইহলোকে পাড়ি জমান। তার শাহাদতের পরে কুমবাসিরা তাঁর লাশ মোবারককে নিয়ে বাগে বাবিলন’এ তাঁকে দাফন করে দেয়। বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে তাঁর কাফন দাফনের কাজ দুই ইমাম (আ.) দ্বারা সম্পাদিত হয়।

তাঁর দাফনের পরে মূসা বিন খাযরাজ তার কবরের উপরে মাদুর বিশিষ্ট চাঁদোয়া দ্বারা কবরটিকে ঢেকে দেয়। ২৫৬ হিজরিতে ইমাম জাওয়াদ (আ. ‘এর কন্যা জয়নাব তাঁর পবিত্র কবরের উপরে একটি গম্বুজ বানিয়ে দেন। কিন্তু বিভিন্ন যুগে আহলে বাইত (আ.)’এর অনুসারিগণ তাঁর মাজারকে তৈরি এবং বৃদ্ধি করেছে।

হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর মাজারের বর্ণনা:

৬০৫ হিজরিতে “আমির মোজাফফর আহমাদ বিন ইসমাইল” এর নিদের্শে আলে মোজাফফরের লোকেরা সে যুগের টাইলস নির্মাতা “মোহাম্মাদ বিন আবি তাহের কাশি কুম্মি” হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর মাজারে টাইলস’এর কাজ শুরু করে। সুদির্ঘ আট বছর ধরে টাইলস’এর কাজ চলতে থাকে এবং অবশেষে ৬১৩ হিজরিতে উক্ত কাজটি সমাপ্ত হয়। বিগত ১৩৭৭ সালে আবার নতুন করে টাইলস এবং পাথর দ্বারা এবং মাজারের ভিতরের বিভিন্ন অংশে সবুজ মার্বেল পাথর দ্বারা সুসজ্জিত করা হয়।

যারি (কবরের চারিপাশে জালের ন্যায় প্রাচির):

৯৬৫ সালে শাহ তাহমাসব সাফভি মূল কবরের চারিপাশে সাত রঙের টাইলস দিয়ে সজ্জিত ইটের মাজার বিচিত্র শিলালিপি দ্বারা নির্মান করে দেয় এবং তাতে অনেকগুলো ছিদ্র রেখে দেয় যেন কবর মোবারককে লোকজন দেখতে পারে এবং নজরানা দান করতে পারে।

১২৩০ হিজরি সনে ফাতহ আলি শাহ উক্ত যারিটিকে রুপা দ্বারা আচ্ছাদিত করে দেয়। পরে ১২৮০ সালে মাজারের কোষাগারের অর্থ দ্বারা পূর্বের যারির রুপার সাথে আরো রুপা মিলিয়ে আবার নতুন যারি তৈরি করে কবরের চারিধারে লাগানো হয়।

উক্ত যারিটি তারপরে আরো কয়েকবার তৈরি করা হয়। তন্মধ্যে ১৩৬৮ সালে ট্রাষ্টের নির্দেশানুসারে আবার নতুন নকশা দ্বারা নতুন আকারের যারি তৈরি করা হয়। অবশেষে ১৩৮০ সালে ফার্সি ইস্ফান্দ মাসে আবার নতুন যারি লাগানো হয়।

মাজারের বারান্দা সমূহ:

হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর মাজারের বিভিন্ন দিকে মোট ৪টি বারান্দা রয়েছে।

১- কবরের মাথার অংশ এবং মসজিদের মাঝামাঝি স্থানে একটি বান্দা যা কাঁচ এবং আয়না দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।

২- যারি এবং স্বর্ণের ছাদ বিশিষ্ট দরজার মাঝামাঝি দারুল হোফফায নামক আরেকটি বারান্দা বিদ্যমান রয়েছে।

৩- শহিদ বেহেস্তি নামক বারান্দা যা হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর কবরের পায়ের দিকে মহিলাদের অংশে অবস্থিত রয়েছে।

৪- শীর্ষস্থানীয় বারান্দা যা মসজিদে তাবাতাবায়ি এবং যারির মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত।

মাজারের বারান্দা সমূহ:

উক্ত মাজারের তিনটি বারান্দা রয়েছে:

১- নতুন বড় বারান্দা: উক্ত বারান্দাটির ৪টি ছাদ বিশিষ্ট দরজা যা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে বিদ্যমান রয়েছে।

২- আতিক নামক বারান্দা: মাজার তৈরির পরে উত্তর দিকের উক্ত বারান্দাটি সর্বপ্রথমে তৈরি করা হয়। উক্ত বারান্দাতেও ৪টি ছাদ বিশিষ্ট দরজা রয়েছে। উক্ত বারান্দাটি শাহ ইসমাইল সাফাভি’এর  স্ত্রী শাহ বিগি’র যুগে ৯২৫ হিজরিতে তৈরি করা হয়। বিগত ১৩৭৭ সাল থেকে উক্ত মাজার এবং বারান্দা সমূহের কাজ শুরু হয়েছে এবং আজও তা অব্যাহত রয়েছে। 

৪- ইমামে যামান (আ.) নামক বারান্দা: উক্ত বারান্দাটির কাজ ১৩৮১ সালে শুরু হয় এবং ১৩৮৪ সালে তা উদ্বোধন করা হয়। উক্ত বারান্দার চারিপাশ কুরআনিক শিলালিপি এবং কুফি লিখনি দ্বারা সুশোভিত করা হয়েছে।

মাজারের মিনার সমূহ:

১- স্বর্ণ ছাদ বিশিষ্ট দরজার উপরে অবস্থিত মিনার:

আতিক নামক বারান্দার দুই দিকের ছাদ বিশিষ্ট দরজার পাশে উক্ত মিনার রয়েছে। সর্পিল আকারে টাইলস দ্বারা উক্ত মিনার সমূহকে সুসজ্জিত করা হয়েছে। দরজার ছাদ থেকে যার উচ্চতা হচ্ছে ১৭/৪০ মিটার এবং প্রস্থ ১/৫০ মিটার। আর উক্ত মিনারের সর্পিল আকারে মাঝে আল্লাহ, মোহাম্মাদ, আলি এবং উপরে ইন্নাল্লাহা মালায়েকাতু ইউসাল্লুনা আলান নাবি.....লিখা রয়েছে। ১৩৮৫ সালে উক্ত মিনারে উপরে স্বর্ণের কারুকাজ করা হয়।

২- আয়না লাগানো ছাদ বিশিষ্ট দরজার উপরে অবস্থিত মিনার:

উক্ত মিনারগুলো হচ্ছে মাজারের সবচেয়ে বড় মিনার। ছাদ থেকে তার উচ্চতা হচ্ছে ২৮ মিটার এবং প্রস্থতা হচ্ছে ৩/৩০ মিটার। একটি মিনারে লিখা আছে (لا حول ولا قوه الا بالله العلى العظیم) এবং অপর মিনারটি লিখা আছে (سبحان الله و الحمدلله و لا اله الا الله و الله اکبر) এছাড়া উক্ত দুইটি মিনারের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আল্লাহর বিভিন্ন নাম লিখা রয়েছে। আর এ মিনার দুইটি তৈরির জন্য আর্থিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেন আমিন সুলতান এবং এর নির্মাণকারি হচ্ছেন উস্তাদ হাসান মেয়মার কুম্মি। আর এ মিনার দুটি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পরে তৈরি করা হয়।

৩- বড় বারান্দার মিনার সমূহ:

মাজারের আয়না লাগানো ছাদ বিশিষ্ট দরজার বিপরীত দিকে আরো দুটি মিনার রয়েছে। উক্ত মিনার দুটিতে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আট কোণ বিশিষ্ট টাইলস’এর চার কোণাতে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মোট ৪ বার আল্লাহ, মোহাম্মাদ, আলি, হাসান এবং হুসাইন লিখা রয়েছে।

হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)এবং তাঁর মাজার শরিফ সম্পর্কে আরো বেশি জানার জন্য ( http://www.masoumeh.com) উক্ত ইন্টারনেটের ঠিকানায় দেখতে পারেন।  

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন