হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনি

হযরত ফাতেমা মাসুমা বাবা ছিলেন শিয়াদের সপ্তম ইমাম হযরত ইমাম মুসা বিন জাফর (আ.)। তাঁর সম্মানিত মাতার নাম হযরত নাজমা খাতুন (সা আ.)। হযরত নাজমা খাতুন (সা. আ.) অষ্টম ইমাম হযরত মুসা বিন রেজা (আ.) এরও মা ছিলেন। সুতরাং হযরত মাসুমা (সা. আ.) ও হযরত ইমাম রেজা (আ.) আ

হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনি

হযরত ফাতেমা মাসুমা বাবা ছিলেন শিয়াদের সপ্তম ইমাম হযরত ইমাম মুসা বিন জাফর (আ.)। তাঁর সম্মানিত মাতার নাম হযরত নাজমা খাতুন (সা আ.)। হযরত নাজমা খাতুন (সা. আ.) অষ্টম ইমাম হযরত মুসা বিন রেজা (আ.) এরও মা ছিলেন। সুতরাং হযরত মাসুমা (সা. আ.) ও হযরত ইমাম রেজা (আ.) আপন ভাই-বোন ছিলেন।
তিনি ১৭৩ হিজরীতে মদিনা মুনাওয়ারাহ’তে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি প্রাণপ্রিয় পিতাকে হারান। তাঁর পিতা ইমাম মুসা বিন জাফর -মুসা কাযিম- (আ.) অত্যাচারী খলিফা হারুনুর রশিদের কারাগারে বন্দী অবস্থাতেই শাহাদত বরণ করেন। পিতার বিয়োগান্তে তার লালন-পালনের দায়িত্ব বড় ভাই হযরত আলী ইবনে মুসা আর-রেজা (আ.) এর উপর পড়ে।
২০০ হিজরীতে আব্বাসীয় খলিফা মা’মুন কর্তৃক ইমাম রেজা (আ.) কে ‘মারভ’ (খোরাসান) সফরে বাধ্য করা হয়। আর তাই তিনি তার আত্মীয়-স্বজন বা পরিবারের কোন সদস্য ছাড়াই খোরাসানের পথে রওনা হন।
প্রাণপ্রিয় ভাইয়ের চলে যাওয়ার ১ বছর পর হযরত মাসুমা (সা. আ.) স্বীয় ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত ও বেলায়েতের বাণী পৌঁছ দেয়ার উদ্দেশ্যে নিজের কয়েকজন ভাই ও ভাতিজার সাথে খোরাসানের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে প্রতিটি শহর ও গ্রামবাসী তাকে স্বাগত জানায়। আর এ সকল স্থানে তিনি তার ফুফু হযরত যায়নাব (সা. আ.) এর ন্যায় তার ভাইয়ের উপর বয়ে যাওয়া নির্যাতনের কথা মু’মিন-মুসলমানদের নিকট পৌঁছান এবং প্রতারক ক্ষমতাসীন বনি আব্বাস সরকারের বিরুদ্ধে তাদের বিরোধিতার বিষয়ের প্রকাশ ঘটান।
কোন রকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই এভাবেই মহিয়সী এ রমনী’র কাফেলা ‘সাভে’ নামক স্থানে পৌঁছায়। এ সময় অত্যাচারী আব্বাসীয় শাসকদের পৃষ্ঠপোকতায় আহলে বাইত (আ.) এর একদল শত্রু হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর কাফেলার পথরোধ করে এবং কাফেলার সাথে থাকা পুরুষদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। শত্রুরা কাফেলার সকল পুরুষ ব্যক্তিকেই হত্যা করে। কোন কোন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) কেও তারা বিষ প্রয়োগ করে।
নিজের ভাই ও সাথীদের শাহাদত বা তাকে প্রদত্ত বিষের প্রভাবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর যেহেতু খোরাসানে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না, তাই তিনি কোম শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন : এ শহর (সাভে) হতে কোম (শহরের) দূরত্ব কত ফারসাখ? তার প্রশ্নের উত্তর দেয়া হলে তিনি বললেন : আমাকে কোম শহরে নিয়ে চল। কেননা আমি আমার বাবার নিকট হতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন : কোম শহর আমাদের শিয়াদের (অনুসারীদের) কেন্দ্র। কোমের গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বরা যখন এ মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে অবগত হলেন, তখন তারা হযরত মাসুমা (সা. আ.) কে স্বাগত জানাতে এগিয়ে আসে।
ইতিহাসের বর্ণনামতে শহরের বাইরে এসে কোমের জনগণ তাঁকে অভ্যর্থনা জানায়। তাঁর কোম শহরের প্রবেশের ঘটনা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আশআরী গোত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মুসা বিন খাযরাজ হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) এর উটের লাগাম ধরে ছিলেন এবং বিশাল জনসমূদ্র পায়ে হেটে বা সওয়ারীতে চড়ে তার চারপাশে থেকে কোম শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
হযরত মাসুমা (সা. আ.) ২০১ হিজরী’র ২৩শে রবিয়াল আওয়াল (তারিখের বিষয়ে অন্য রেওয়ায়েতও রয়েছে) পবিত্র কোম নগরীতে প্রবেশ করেন। অতঃপর মুসা বিন খাযরাজের বাড়ীর সম্মুখে তার উট এসে বসে পড়ে এবং হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর আতিথেয়তার সৌভাগ্য সেই লাভ করে। মুসা ইবনে খাযরাজের বাড়ীটি ঐ সময় বর্তমানের মীর স্কয়ারে অবস্থিত ছিল।
তিনি ১৭ দিন যাবত এ শহরে অবস্থান করেছিলেন। এ সময়ে তিনি ইবাদত ও মহান আল্লাহর প্রতি মোনাজাত ও দোয়ায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
তিনি যে স্থানটিতে ইবাদত করতেন বর্তমানে ঐ স্থানটি বাইতুন নূর নামে পরিচিত। বর্তমানে আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তরা তাঁর ইবাদতের স্থানটি যেয়ারতের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ছুটে আসে।
অবশেষে তিনি ২০১ হিজরীর রবিউস সানী –কোন কোন বর্ণনামতে ১২ রবিউস সানী- ভাইয়ের সাক্ষাত লাভের পূর্বেই পৃথিবী হতে বিদায় নেন। কোমের আহলে বাইত (আ.) প্রেমী জনতার উপস্থিতিতে তত্কালীন যুগে ‘বাগে বাবোলান’ -বর্তমানে তাঁর মাজারের স্থান-এ যথাযথ মর্যাদায় তাঁর পবিত্র দেহ দাফন করা হয়।
তাকে দাফনের সময় আলৌকিক এক ঘটনা ঘটেছিল যা ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে। তাকে কবরে শোয়ানোর পূর্বে এ সমস্যা দেখা দিল যে, তার দেহ মোবারক কে কবরের ভিতরে রাখবে। এ অবস্থায় পশ্চিম দিকে নেকাবধারী দু’জন ঘোড়সওয়ারকে দেখা যায়, তারা দ্রুততার সাথে উক্ত স্থানে পৌঁছে যান। অতঃপর জানাযার নামায আদায়ের পর তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি কবর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন এবং অপরজন তাঁর দেহ মোবারক হাতে উঠিয়ে কবর অভ্যন্তরে থাকা ব্যক্তির হাতে দিলেন, আর তিনি তাকে কবরের মাঝে রাখলেন।
দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর নেকাবধারী ঐ দুই ব্যক্তি কারো সাথে কোন কথা না বলেই ঘোড়ায় চলে উক্ত স্থান ত্যাগ করেন।
কিছু কিছু ওলামার মতে ঐ দুই ব্যক্তি ছিলেন হযরত ইমাম জাওয়াদ (আ.) এবং হযরত ইমাম রেজা (আ.)। কেননা স্বভাবতঃ ধর্মীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জানাযা আল্লাহর আওলিয়াদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর দাফনের পর মুসা ইবনে খাযরাজ তাঁর কবরের উপর একটি ছায়ার ব্যবস্থা করে দেন। ২৫৬ হিজরীতে ইমাম জাওয়াদ (আ.) এর কন্যা হযরত যায়নাব ঐ মাজারের উপর একট গম্বুজ তৈরী করে দেন। আর এটাই হল প্রথম গুম্বজ। আর এভাবেই হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) এর মাজার আহলে বাইত (আ.), বেলায়েত এবং ইমামতের ভক্তদের একটি যেয়ারতের পবিত্র স্থানে পরিণত হয়।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন