কোরআনের দৃষ্টিতে পূর্ববর্তি উম্মতে মধ্যে “রাজআত ”
কোরআনের দৃষ্টিতে পূর্ববর্তি উম্মতে মধ্যে “রাজআত ”
রাজআত শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রত্যাবর্তন করা। আমার যদি পবিত্র কোরআন এবং রেওয়ায়েত সমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব যে, পূর্ববর্তি নবিগণের উম্মতের মধ্যেও রাজআতের বিষয়টি বিদ্যমান ছিল।
শেইখ সাদুক্ব (রহ.) এ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, আমাদের (শিয়া) দৃষ্টিতে রাজআত হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশে এ দুনিয়াতে ফিরে আসা এবং কোরআনও এ সম্পর্কে বলেছে যে,
أَ لَمْ تَرَ إِلىَ الَّذِينَ خَرَجُواْ مِن دِيَارِهِمْ وَ هُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللَّهُ مُوتُواْ ثُمَّ أَحْيَاهُم
অর্থ: তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন মরে যাও। তারপর তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৪৩)
কোরআনের দৃষ্টিতে হজরত উযাইর (আ.)’এর রাজআত:
অর্থ: তুমি কি সে লোককে দেখনি যে এমন এক জনপদ দিয়ে যাচ্ছিল যার বাড়ীঘরগুলো ভেঙ্গে ছাদের উপর পড়ে ছিল? বলল, কেমন করে আল্লাহ মরনের পর একে জীবিত করবেন? অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত অবস্থায় রাখলেন একশ বছর। তারপর তাকে উঠালেন। বললেন, কত কাল এভাবে ছিলে? বলল আমি ছিলাম, একদিন কংবা একদিনের কিছু কম সময়। বললেন, তা নয়; বরং তুমি তো একশ বছর ছিলে। এবার চেয়ে দেখ নিজের খাবার ও পানীয়ের দিকে-সেগুলো পচে যায় নি এবং দেখ নিজের গাধাটির দিকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চেয়েছি। আর হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখ যে, আমি এগুলোকে কেমন করে জুড়ে দেই এবং সেগুলোর উপর মাংসের আবরণ পরিয়ে দেই। অতঃপর যখন তার উপর এ অবস্থা প্রকাশিত হল, তখন বলে উঠল-আমি জানি, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।(সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৫৯)
শেইখ সাদুক্ব (রহ.) উক্ত ব্যাক্তি সম্পর্কে বলেন যে, তিনি রাজআত বা আল্লাহর নির্দেশে দুনিয়াতে ফিরে আসার পরে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু বরণ করেন আর তিনি হচ্ছে হজরত উযাইরি (আ.)।
হজরত মূসা (আ.)’এর উম্মতের মধ্যে রাজআত:
وَ إِذْ قُلْتُمْ يَامُوسىَ لَن نُّؤْمِنَ لَكَ حَتىَ نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْكُمُ الصَّاعِقَةُ وَ أَنتُمْ تَنظُرُون
ثمُ بَعَثْنَاكُم مِّن بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُون
অর্থ: আর যখন তোমরা বললে, হে মূসা, কস্মিনকালেও আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে (প্রকাশ্যে) দেখতে পাব। বস্তুতঃ তোমাদিগকে পাকড়াও করল বিদ্যুৎ। অথচ তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে।
তারপর, মরে যাবার পর তোমাদিগকে আমি তুলে দাঁড় করিয়েছি, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ৫৫, ৫৬)
যেহেতু ৭০জন ব্যাক্তি হজরত মূসা (আ.)’এর সাথে তূর পর্বতে গেছিল তারা হজরত মূসা (আ.)কে বলে আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবো না যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে দেখতে পাব। অতঃপর কৃত গুনাহের কারণে তাদের উপরে বজ্রপাত হয় এবং তারা মারা যায়। তখন হজরত মূসা (আ.) বলেন: হে আল্লাহ! আমি বণি ইসরাইলদের কাছে ফিরে যেয়ে তাদের কে কি জবাব দিব?! অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আবার জিবীত করে দেন এবং পরে তারা ভাগ্যে অনুযায়ি মৃত্যু বরণ করে।(এতেকাদাতে শেইখ সাদুক্ব (রহ.) বাবে রাজআত)
হজরত ঈসা (আ.)’এর উম্মতের মধ্যে রাজআত:
পবিত্র কোরআনে বর্নিত হয়েছে যে মহান আল্লাহ তায়ালা হজরত ঈসা (আ.)কে বলেন:
وَ إِذْ تخُرِجُ الْمَوْتىَ بِإِذْنى
অর্থ: তুমি আমার নির্দেশে মৃতকে জিবীত করতে। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং ১১০)
আসহাবে কাহফ’এর মধ্যে রাজআত:
وَ لَبِثُواْ فىِ كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِاْئَةٍ سِنِينَ وَ ازْدَادُواْ تِسْعًا
অর্থ: তাদের উপর তাদের গুহায় তিনশ বছর, অতিরিক্ত আরও নয় বছর অতিবাহিত হয়েছে। (সূরা কাহফ, আয়াত নং ২৫)
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জিবীত করেন এবং দুনিয়ার বুকে ফিরিয়ে দেন। উক্ত ঘটনাটি হচ্ছে খুবই প্রসিদ্ধ। (এতেকাদাতে শেইখ সাদুক্ব (রহ.) ১৮ নং অধ্যায়)
ইমাম মাহদি (আ.)’এর আবির্ভাবের পরে রাজআত:
শিয়াদের দৃষ্টিতে ইমাম মাহদি (আ.)’এর আবির্বাবের পরে ইমাম (আ.)গণ , একদল মুমিন এবং একদল কাফের রাজআত করবে।
রাজআত সম্পর্কিত কোরআনের দুটি আয়াতের তাফসির:
وَ يَوْمَ نحَشُرُ مِن كُلّ أُمَّةٍ فَوْجًا
অর্থ: যেদিন আমি একত্রিত করব একেকটি দলকে সেসব সম্প্রদায় থেকে। (সূরা নমল, আয়াত নং ৮৩)
রেওয়ায়েত বর্ণনাকারী বলেন যে ইমাম সাদিক্ব (আ.) আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, জনগণ উক্ত আয়াত সম্পর্কে কিরূপ চিন্তা করে? আমি বলি তারা মনে করে যে উক্ত আয়াতটি কেয়ামত সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। ইমাম বলেন এমনটি না বরং উক্ত আয়াতটি হচ্ছে রাজআত সম্পর্কিত কেননা আল্লাহ কি কেয়ামতের দিন কিছু মানুষকে পুণঃউত্থান করবেন এবং অন্যান্যদেরকে ছেড়ে দিবেন? বরং কেয়ামত সংক্রান্ত আয়াত হচ্ছে:
وَ حَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنهْمْ أَحَدًا
অর্থ: এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না। (সূরা কাহফ, আয়াত নং ৪৭)
وَ أَقْسَمُواْ بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَا يَبْعَثُ اللَّهُ مَن يَمُوتُ بَلىَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَ لَاكِنَّ أَكْثرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُون
অর্থ: তারা আল্লাহর নামে কঠোর শপথ করে যে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। অবশ্যই এর পাকাপোক্ত ওয়াদা হয়ে গেছে। কিন্তু, অধিকাংশ লোক জানে না। (সূরা নাহল, আয়াত নং ৩৮)
ইমাম সাদিক্ব (আ.) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেন যে, যখন ইমাম মাহদি (আ.) কিয়াম করবেন তখন কিছু লোক যারা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রাজআত করবেন তাদের কাছে একটি করে তরবারি থাকবে এবং তারা আমাদের জিবীত শিয়াদেরকে দান করবে এবং তাদেরকে বলবে যে আল্লাহ অমুক অমুককে রাজআত করেছেন এবং তারা সকলেই ইমাম মাহদি (আ.)’এর সাথে রয়েছেন। উক্ত খবরটি আমাদের শত্রুদের কাছেও পৌছাবে তারা আামদের অনুসারিদেরকে বলবে যে তোমরা মিথ্যা বলনি। (তাফসিরে নূরুস সাকালাইন, খন্ড ৩)
হাদিসের দৃষ্টিতে রাজআত:
ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: যারা রাজআত সম্পর্কে ঈমান রাখে না সে আমদের অনুসারি না। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫৩, পৃষ্ঠা ৯২)
খলিফা মামুন ইমাম রেযা (আ.)কে জিজ্ঞাসা করে রাজআত সম্পর্কে আপনার মতামত কি? ইমাম (আ.) বলেন: রাজআত সংঘটিত হবে কেননা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, পূর্বের বিভিন্ন উম্মতের মাঝেও রাজআত সংঘটিত হয়েছিল এবং রাসুল (সা.)’এর উম্মতের মধ্যেও রাজআত সংঘটিত হবে। কেননা পূর্বে যে সকল ঘটনা সমূহ বিভিন্ন উম্মতের মাঝে ঘটেছিল আমার উম্মতের মধ্যেও ঘটবে। (উয়ুনে আখবারে ইমাম রেযা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৫)
গবেষক জাযায়েরি তার গ্রন্থ শারহে তাহযিব গ্রন্থে লিখেছেন যে, রাসুল (সা.) এবং আয়েম্মা (আ.) দের থেকে প্রায় ৬ শতাধিকের চেয়ও বেশি রেওয়ায়েত এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। শেইখ হুররে আমেলি তার ওসায়েলুশ শিয়া সহ অন্যান্য গ্রন্থে ৬০০ রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন।
বিভিন্ন যিয়ারত সমূহে রাজআত:
১- যিয়ারতে জামে কবিরা:
مُؤْمِنٌ بِإِيَابِكُمْ، مُصَدِّقٌ بِرَجْعَتِكُمْ
২- যিয়ারতে আলে ইয়াসিন
و ان رجعتکم حق لا ریب فیها
৩- যিয়ারতে রাজাবিয়েহ
حتی العود إلی حضرتکم و الفوز فی رجعتکم
৪- তৃতীয় শাবানের যিয়ারত
الممدود بالنصرة یوم الکرة
৫- আয়েম্মা (আ.)’দের বিদায় যিয়ারত
و مکننی فی دولتکم و أحیانی فی رجعتکم
৬- আরবাঈন’এর যিয়ারত
و أشهد أنّی بکم مؤمن و بإیابکم موقن
৭- ক্বয়েমিয়াহ’এর যিয়ারত
فإن توفّتنی اللّهم قبل ذلک فاجعلنی یا ربّ ممّن یکرّ فی رجعته
৮- রাসুল (সা.)’এর যিয়ারত
إنی لمن القائلین بفضلکم مقرّ برجعتکم
৯- যিয়ারতে রাবেআতু আমিরিল মুমিনিন
إنی من المؤمنین برجعتکم
১০- হজরত আব্বাস (আ.)’এর যিয়ারত
إنی بکم و بایابکم من المؤمنین
বিভিন্ন দোয়া সমূহে রাজআত:
দোয়ায়ে আহাদ:
اللهمّ ان حال بینی و بینه الموت الّذی جعلته علی عبادک حتما مقضیاّ فاخرجنی من قبری
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন