বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ইরানী পার্ক

বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ইরানী পার্ক


সম্প্রতি প্যারিসে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির পঁয়ত্রিশতম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐ বৈঠকে ইরানের ৯টি বাগান বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিশ্বের চল্লিশটি দেশের প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্য থেকে ৪২টি নিদর্শনকে তালিকাভুক্ত করার জন্যে যাচাই বাছাই করা হয়। যাচাই বাছাই শেষে কয়েকটি নিদর্শন বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয় যার মাঝে ইরানের বাগানগুলিও রয়েছে।
ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে ইরানের বাগিচাগুলো সম্পর্কে এসেছে "এই বাগিচাগুলোর ডিজাইন চারটি আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত। এগুলোর মাঝখানে রয়েছে পানির ব্যবস্থা যা একদিকে দৃশ্য নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে অপরদিকে বাগানের সজ্জাকৌশল ও স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকেও এই পানির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।" ঐ প্রতিবেদনে আরো এসেছে-ইরানের বাগিচাগুলো বেহেশতের বাগানের অনুসরণে তৈরি করা হয়েছে-এই বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে-ইরানের বাগিচা নির্মাণ পদ্ধতি ও সজ্জা কৌশলের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে ভারত এবং স্পেনের মতো দেশগুলোর বাগিচা তৈরির স্টাইলের ওপর ব্যাপকভাবে পড়েছে।"
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ১৯৭৫ সাল থেকে ইউনেস্কো সংস্থার "প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটি"র সদস্য। ইতোপূর্বেও ইরানের স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক বারোটি নিদর্শন বিশ্ব ঐতিহ্য সংরক্ষণ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এ বছর ইরানের যে নয়টি বাগিচা তালিকাভূক্ত হলো সেগুলোর নাম হচ্ছেঃ বাগে পাসারগাড, বাগে এরাম, বাগে চেহেল সুতুন, বাগে ফিন, বাগে আব্বাসাবাদ, বাগে শাযদেহ মহন, বাগে দৌলাতাবাদ, বাগে পাহলাভনপুর এবং বাগে আকবারিয়া। মজার ব্যাপার হলো, এইসব বাগিচা ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচিত্র আবহাওয়াময় পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞগণ স্বীকার করেছেন, অঞ্চলগত বৈচিত্র্য, পরিকল্পনা ও ডিজাইন এবং ইরানের ঐতিহাসিক রীতি ও সাংস্কৃতিক শেকড়গুলো এই মনোনয়নের ক্ষেত্রে যে কাজ করে নি তা নয়। এই বাগিচাগুলো ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে গড়ে উঠেছে। সেই হাখামেনিশীয় যুগ অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দি থেকে দুই শতাব্দি আগের কাজার শাসনামল পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে বাগিচাগুলো তৈরি করা হয়েছে। ইরানীদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের মাঝে বাগিচা সবসময়ই বেহেশতের মতোই একটি পবিত্র স্থান হিসেবে সম্মান ও মর্যাদাময়। এ কারণে সেই ইসলামপূর্ব কাল থেকেই ইরানে বাগিচা নির্মাণের ধারা প্রচলিত হয়ে আসছে। ইরানীদের বদ্ধমূল ধারণা ও বিশ্বাস ছিল যে বাগবাগিচাগুলোর এই প্রাকৃতিক যে গঠন তা মানুষের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে। মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব চিন্তা-কল্পনার আলোকেই তা গড়ে উঠেছে।
এই প্রাকৃতিক পরিবেশটা পানি, মাটি, আলো, গাছগাছালি, প্রযুক্তি ইত্যাদির সমন্বয়ে মানুষের জন্যে জাঁকজমকপূর্ণ করে সাজানো হয়েছে। ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক সূত্রগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখবো ইরানে বিনোদন পার্কের ওপর সেই প্রাচীনকালেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন এই বাগিচার নিদর্শন আমরা লক্ষ্য করবো ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শিরাযের নিকটবর্তী পাসারগাদ নামক প্রাচীন অঙ্গনে। দেয়াল ঘেরা এই বিশাল অঙ্গনে হাখামানেশীয় বাদশা সাইরাস যে প্রাসাদ নির্মাণ করেছেন তার মাঝে চমৎকার সব বাগবাগিচা রয়েছে। এই বাগিচাগুলো জ্যামিতিক স্টাইল অনুসরণ করে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। বহু ভাগে বিভক্ত করে ভেতরে ভেতরে বিভিন্নমুখী রাস্তা রাখা হয়েছে। বাগিচার এ সৌন্দর্য এবং ব্যাকরণগত যথার্থতার কারণে ‌পরবর্তীকালে এই রীতি ইরানে বাগান নির্মাণের মৌলিক আদর্শে পরিণত হয়।
ফার্স এবং শিরায শহর হাখামানেশীয় শাসনামলের পরও বাগিচা নির্মাণের এই ধারা অব্যাহত রেখেছিল। বহু শতাব্দি পর্যন্ত সেখানে এতো বেশি বাগবাগিচা গড়ে তোলা হয়েছিল যে শিরায এবং ফার্স নিত্য সবুজ আর চমৎকার বাগবাগিচার শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। এই শহরের বিখ্যাত একটি বাগানের নাম "বাগে এরাম"। এটি নির্মিত হয়েছে প্রায় দুই শ' বছর আগে। রাস্তা এবং বৃক্ষ সজ্জার কৌশলের দিক থেকে এটি কেবল শিরাযের বাগানগুলোর মধ্যেই নয় বরং সমগ্র ইরানের মধ্যেই বিরল। বাগানের ভেতরে মূল যে ভবনটি রয়েছে তার সামনে বানানো হয়েছে বিশাল একটি জলাধার। ঐ জলাধারের জলের ওপর ভবনটির পুরো চিত্রই প্রতিবিম্বিত হয়। বাগানের ভেতরে যে ঝর্ণাধারা রয়েছে তার জলের প্রবাহের উৎস হলো এই জলাধার। জলাধারের দুই পাশে কেয়ারি করে সাজানো রয়েছে শেমশদ বা বক্স ট্রি'র সারি। বাগানের ভেতরের রাস্তাগুলোর পাশে বিশাল বিশাল গাছ এতো চমৎকার এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে যে শীতল ছায়াময় সেই পরিবেশ যে কাউকেই আকর্ষণ না করে পারে না।
বাগানের ভেতরকার ইমারত গুলোতে সপ্তরঙের টাইলসের যে নয়নাভিরাম কারুকাজ করা হয়েছে তা আজো কাজারি শাসনামলের অনাবিল সুন্দর শিল্পসৌকর্যের নিদর্শন হিসেবে কালের সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিরায শহর থেকে কেরমানের দূরত্ব খুব বেশি নয়। তারপরও কেরমানের বাগান তৈরির স্টাইল সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এখানকার বাগানের সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় নিদর্শন দেখতে পাওয়া যাবে কেরমান প্রদেশের একেবারে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল এবং মহন নামের ছোট্ট শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায়। 'শাহযাদা মহন পার্ক' নামের বাগিচাটির আয়তন সাড়ে পাঁচ হেক্টর। এটি নির্মিত হয়েছে শহরের বাইরে সমতল ভূমি থেকে বেশ উপরে মহাসড়কের পাশে। পার্কের বাইরে থেকে দর্শকরা দেখতে পাবেন অভিজাত একটি প্রাসাদ। প্রাসাদ থেকে আরেকটু উচ্চতায় বাগান তৈরি করার ফলে ভেতরে যে কী আছে তা বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই।
গাছের গোড়ায় পানি পৌঁছানোর সুবিধাসহ ছায়া-সুনিবীড় পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রাকৃতিক যেই সৌন্দর্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ করে এই বাগান নির্মাণে যথার্থ উপযোগী যে স্থানটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। এই পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছিল কাজারি শাসনামলের একজন শাহযাদার বসবাসের জন্যে। এখন এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র অর্থাৎ দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি 'শাহযাদা মহন পার্ক' বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে। পার্কটির ভেতর দিয়ে প্রবহমান পানির নহর বা নালা। এই নহরের পানি বৃক্ষরাজি আর ফুলগাছে যাবার পাশাপাশি বাগানের কেন্দ্রস্থলে একটি ঝর্ণার সৃষ্টি হয়েছে। ঐ ঝর্ণার দুপাশ দিয়ে চলে গেছে জলের দুটি নালা। ঝর্ণার উপরে এবং বাগানের শেষ প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে দ্বিতল বাসভবন। বাগানের ঢোকার জন্যে যে প্রবেশদ্বারটি নির্মাণ করা হয়েছে, ঐ দ্বারের ঝুলবারান্দাটি তৎকালীন নির্মাণ শিল্পীদের নৈপুণ্যের স্বাক্ষর বহন করে।
ইরানের যে ৯টি পার্ক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে,তা থেকেই বোঝা যায় ইরানে পার্কের সংখ্যা কতো বেশি। বিনোদনের জন্যে তো বটেই, আল্লাহর দেওয়া প্রকৃতির অসীম দান থেকে যথাসম্ভব উপকৃত হবার লক্ষ্যেও সমগ্র ইরানের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে শত শত পার্ক। ইরানের পার্কগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো আঞ্চলিক আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তোলা। বাগানের জ্যামিতিক কাঠামো এবং এর ভেতরের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে পানির নহর, ফোয়ারা নির্মাণসহ ছায়া সুনিবীড় অবস্থা তৈরি করা এই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। এসব পার্কে ইরানের বিচিত্র শিল্পের প্রতিফলনও লক্ষ্য করা যায় যেমনঃ চিত্রাঙ্কন, মৃৎশিল্প, বুনন শিল্প, গালিচা তৈরি শিল্প, কাব্য-সাহিত্য এবং মিউজিক ইত্যাদি।
ইরানী পার্ক সম্পর্কে কথা বলা এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্যের সাথে পরিচিত হওয়া ইস্ফাহানের চেহেল সুতুন বাগিচার সাথে পরিচয় ছাড়া একেবারেই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ইস্ফাহান শহরটিতে রয়েছে অসংখ্য বাগবাগিচা, প্রাসাদ, ময়দান, ঐতিহাসিক মসজিদ, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক বিভিন্ন ডিজাইন ইত্যাদি। এইরকম শিল্প ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ শহর ইস্ফাহানের মূলকেন্দ্রে পড়েছে চেহেলসুতুন প্রাসাদময় বাগিচাটি। যয়ান্দে রুদ নদীর মতো জলের উৎস থাকায় ইস্ফাহান শহরে অসংখ্য বাগবাগিচা গড়ে উঠেছে। প্রাসাদ-বাগিচা আর শহর-বাগিচা তৈরির ক্ষেত্রে ইস্ফাহান শহরটি সাফল্যের শীর্ষে রয়েছে। চেহেলসুতুন বাগিচাটিও তার অসংখ্য নিদর্শনের একটি। এই বাগিচাটি একটা রাজকীয় বাগান। সেই সাফাভি শাসনামলের অর্থাৎ চার শতাধিক বছর আগেকার বাগিচা এটি। রাজ দরবারের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে এই বাগিচাটি তৈরি করা হয়েছিল।
যেই সুদর্শন ইমারতটি এখানে নির্মাণ করা হয়েছে তাতে আয়নার সূক্ষ্ম কারুকাজের পাশাপাশি রয়েছে দেয়াল শিল্পের অনন্য নমুনা, রয়েছে কাঠের তৈরি বিশটি শিল্পিত থাম। ঠিক পুকুর বা জলাধারের সামনে ঐ থাম বা পিলারগুলো থাকার কারণে সেগুলোর প্রতিবিম্ব পড়তো জলের ওপর। যার ফলে বিশটি থাম বা পিলার চল্লিশটিতে পরিগণিত হয়। চল্লিশটি পিলারের কারণে এই ইমারতটিকে চেহেল সুতুন বা চল্লিশ পিলার বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। মোটামুটি সমতল ভূমিতেই নির্মিত হয়েছে ইমারত এবং বাগানটি। সে কারণে পানি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে তেমন অসুবিধা হতো না।
ইরানে বাগান তৈরির প্রচলন কেবল শুষ্ক বা অর্ধশুষ্ক অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয়। সবুজের সমারোহপূর্ণ ইরানের উত্তরাঞ্চলেও-যা শুমাল নামে পরিচিত-বেহশাহরের 'বাগে আব্বাসাবাদের' মতো চমৎকার বাগবাগিচা রয়েছে। ইরানের বাগবাগিচার মধ্যে এই বাগিচাটি একেবারেই অনন্য সাধারণ। এই বাগানের উঁচু স্থান থেকে আশপাশের সৌন্দর্য বিশেষ করে কাস্পিয়ান সাগর এবং বেহশাহর প্রান্তরের মতো প্রাকৃতিক দৃশ্য যেমন দেখা যায় তেমনি দেখা যায় আব্বাসাবাদ হ্রদও। আব্বাসাবাদ বাগিচাটি গড়ে তোলা হয়েছে বেহশাহরের পাশে আলবোর্য উপত্যকার জঙ্গলের ভেতরে। দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে বাগানের ক্রমশ ঢালু অবস্থানে রয়েছে ফুলের বাগানও। বাগানের ভেতরে পুকুরের মাঝখানে ছোট্ট একটি ঘরও তৈরি করা হয়েছে। ঐ ঘরে যেতে হয় কাঠের সাঁকো পেরিয়ে। অসংখ্য জলাধার আর বাগানে পানি সরবরাহের অপূর্ব ব্যবস্থা থেকে মনে হয়,সাফাভি শাসনামলে-বাগিচা তৈরির কালে-ইরানের দক্ষ প্রকৌশলীগণ তাদের সমকালের উন্নত প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করতেন।
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ইরানের অপর যে বাগিচাটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা হলো 'ফিন বাগিচা।' এটি অবস্থিত ইরানের কেন্দ্রিয় কাশান শহরের পার্শ্ববর্তী স্থানে। ফিন বাগিচাটি মূলত একটি 'বিনোদন কেন্দ্র'। এই বাগিচার পাশেই রয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছরের পুরোণো ঐতিহাসিক সিয়ালক টিলা এবং সোলায়মান ঝর্ণা। এ থেকে অনুমিত হয় যে বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই এলাকাটিতে মানব বসতি গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে ফিন বাগিচাটি গড়ে উঠেছে। এটি প্রায় বারো শ বছর আগের নিদর্শন। তবে বর্তমানে বাগানের যেই কাঠামোটি লক্ষ্য করা যায়, সেটি সাফাভি শাসনামলের। সে সময় থেকেই রাজ দরবারের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে বাগিচাটিকে কাজে লাগানোর প্রচলন দেখা দেয়। তবে এই বাগিচা আরেকটি কারণে খুব স্মৃতিময়। তাহলো, কাজারি শাসনামলের খুবই জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী 'মির্যা তাকি খান আমির কাবির' এর হত্যাকাণ্ড। বাগে ফিনে তাঁকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল এবং সেখানেই তিনি শহীদ হন।
ইরানের কেন্দ্রিয় শহরগুলোর একটি হলো ইয়াযদ। এই ইয়াযদে রয়েছে বহু প্রাচীন শহর ও বাগবাগিচা। দৌলতাবাদ বাগিচা' তেমনি একটি প্রাচীন বাগান। এটি নির্মিত হয়েছিল হিজরি ১১৬০ সালে যান্দিয়ে শাসনামলে। বাগানজুড়ে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা এবং বাগানের কেন্দ্রস্থিত প্রাসাদ এখানকার ঐতিহাসিক নিদর্শন। যাই হোক, বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় আরো দুটি বাগিচা স্থান পেয়েছে। একটি হলো 'বাগে আকবারিয়া'। ইরানের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় বিরজান্দ অঞ্চলে এটি অবস্থিত। আরেকটি হলো 'বাগে পাহলাভনপুর',ইয়াযদ শহরের কাছেই মেহরিয এলাকায় এটি অবস্থিত।
বাগে আকবারিয়া ইরানের বাগিচার অন্যতম সুন্দর একটি নিদর্শন। এই বাগিচাটি হুকুমাত বা শাসনাকার্য পরিচালনা করা এবং একইসাথে বাসভবন হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। এ কারণে বাগিচাটির ভেতরে বহু ইমারত গড়ে উঠেছে এবং সমগ্র বাগানজুড়ে উন্নত প্রক্রিয়ায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একইভাবে এই বাগিচায় বিচিত্র উদ্ভিদ লাগানো হয়েছিল। বাগিচার ভেতরকার ইমারতগুলো বিভিন্ন যুগে পুনর্নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে এগুলো মিউজিয়াম হিসেবে বিশেষ করে পুরাতাত্ত্বিক যাদুঘর এবং নৃতাত্ত্বিক যাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
'বাগে পাহলাভনপুর'ও আবাসনময় একটি বাগিচা ছিল। এ কারণে এই বাগানে ফলফলাদির বৃক্ষসহ বিভিন্ন গাছ লাগানো হয়েছে খুব সুন্দরভাবে। এই বাগানের ভেতরকার ভবনগুলো পরিবেশ ও আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে। পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও বেশ সুন্দর। সামগ্রিক ইরানের বাগিচাগুলোর শৈল্পিক বিন্যাস দেখে যে কেউই বলবেন ইরানীরা বেশ প্রকৃতিপ্রেমী এবং তাদের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে সৌন্দর্যপ্রিয়। এই সৌন্দর্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার কারণেই বর্তমানে ইরানের পার্কগুলোর ঐতিহ্য দেশের সীমা অতিক্রম করে বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছে।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন