সূরা আম্বিয়া; আয়াত ১১-১৫
সূরা আম্বিয়া; আয়াত ১১-১৫
সূরা আম্বিয়ার ১১ ও ১২ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَكَمْ قَصَمْنَا مِنْ قَرْيَةٍ كَانَتْ ظَالِمَةً وَأَنْشَأْنَا بَعْدَهَا قَوْمًا آَخَرِينَ (11) فَلَمَّا أَحَسُّوا بَأْسَنَا إِذَا هُمْ مِنْهَا يَرْكُضُونَ (12)
“এবং আমরা কত জনপদ বিনাশ করেছি, যার অধিবাসীরা ছিল জালেম বা অবিচারক এবং তাদের পরে অন্য সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।” (২১:১১)
“অতঃপর তারা তথা ওই জালেমরা যখন আমার শাস্তির আভাস অনুভব করল তখনই তারা তা (শাস্তি) থেকে পালিয়ে যেতে লাগল।” (২১:১২)
আগের পর্বে বলা হয়েছে যে, মক্কার মুশরিকরা নানা অজুহাতে ও বিচিত্র পন্থায় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র মিশনের বিরোধিতা করত। তারা অজুহাতকামীতাও ছাড়তে রাজি হতো না। এ আয়াতে তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে মহান আল্লাহ বলছেন, আমার নিদর্শনগুলোকে এবং আমার নবী-রাসূলদের অস্বীকার করা ও তাঁদেরকে কষ্ট দেয়া সবচেয়ে বড় জুলুম। আর যে কোনো সমাজেই জুলুম ও অবিচার চলতে থাকলে সেই সমাজের ওপর আল্লাহর কঠোর শাস্তি বা আযাব নাজেল হওয়া অনিবার্য। আর জালেমদেরকে ধ্বংস করা আল্লাহর চিরাচরিত রীতি বা সুন্নাত। জালেমদের পরিবর্তে আল্লাহ অন্য সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করেন।
অবশ্য জালেমরা এতটাই দাম্ভিক ও গোঁড়া হয়ে থাকে যে তারা আল্লাহর শাস্তি আসার বিষয়ে বিশ্বাসী নয়। তাই যখন খোদায়ী শাস্তির লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখন তারা পালাতে চায়। কিন্তু ততক্ষণে তাদের আর শাস্তি এড়ানোর বা মুক্তির উপায় থাকে না।
এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকার :
১. সমাজে জুলুম ও অবিচারের পরিণতি হল ধ্বংস। এটি চিরাচরিত খোদায়ী বিধান।
২. আল্লাহ জালেমদেরকে এই দুনিয়াতেই শাস্তি দেন যাতে অন্যরা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
সূরা আম্বিয়ার ১৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
لَا تَرْكُضُوا وَارْجِعُوا إِلَى مَا أُتْرِفْتُمْ فِيهِ وَمَسَاكِنِكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْأَلُونَ (13)
“(আমরা বললাম,) তোমরা পালিয়ে যেও না এবং তোমাদের ভোগ-বিলাসের সামগ্রীর কাছে ও তোমাদের (জাঁকজমকপূর্ণ) ঘরবাড়িতে ফিরে আস যাতে তোমাদের কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে।” (২১:১৩)
মহান আল্লাহ এ আয়াতে জালেম ও অবিচারক কাফিরদের তিরস্কার করে বলছেন:
“কোথায় পালাচ্ছ? অন্ততঃ তোমাদের নিজ বাড়ীঘরগুলোতে ফিরে এস যাতে বিলাসিতা ও প্রবৃত্তির লালসা পূরণের কাজ চালিয়ে যেতে পার। এমনও হতে পারে যে কোনো দরিদ্র বা অভাবগ্রস্ত মানুষ তোমাদের কাছে সাহায্য চাইতে পারে। আর এ সময় তোমরা অতীতের অবস্থার বিপরীতে অভাবগ্রস্তদের কিছু সাহায্য দিয়ে পাপের শাস্তি কিছুটা লাঘব করতে বা কমাতে পার?”
এ আয়াতের দুটি শিক্ষণীয় দিক হল:
১. আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তি চূড়ান্ত হয়ে গেলে তা কেউ ঠেকাতে পারে না। তাই আমাদের উচিত নিজেদের আচার-আচরণকে সংশোধন করা।
২. বিলাসিতা ও ভোগে নিমজ্জিত ব্যক্তিরা সমাজের বিত্তহীনদের কথা ভুলে যায়। ফলে ভোগ-বিলাসী এইসব মানুষ নিজেদের জন্য আল্লাহর শাস্তি বা গজব ডেকে আনে।
সূরা আম্বিয়ার ১৪ ও ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
قَالُوا يَاوَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ (14) فَمَا زَالَتْ تِلْكَ دَعْوَاهُمْ حَتَّى جَعَلْنَاهُمْ حَصِيدًا خَامِدِينَ (15)
“তারা বলল,‘হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য! নিশ্চয় আমরা জালেম বা অবিচারক ছিলাম।” (২১:১৪)
“বস্তুত এভাবে তারা আর্তনাদ করতে থাকল যতক্ষণ না তাদেরকে কর্তিত ফসলের মত নির্মূল ও (তাদের আবেগ) নির্বাপিত করে দিলাম।” (২১:১৫)
খোদায়ী শাস্তির লক্ষণ দেখার পর জালেমরা মুখে মুখে সত্যকে স্বীকার করার কথা ঘোষণা করে। ফলে তাদেরকে কম শাস্তি দেয়া হবে বলে তারা আশা করে। কিন্তু এ ধরনের স্বীকৃতির কোনো মূল্য নেই। কারণ, তারা স্বেচ্ছায় সত্যকে স্বীকার করেনি, বরং বিপদ এড়াতে অক্ষম হয়েই সত্যকে স্বীকার করছে।
জালেমরা যদি খোদায়ী শাস্তি দেখার আগেই অচেতনতার ঘুম থেকে জেগে উঠত এবং নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হত ও জুলুমের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করত তাহলে তাদের সেই সুযোগ দেয়া হত। কিন্তু তারা এমন সময় অনুতপ্ত হল যখন আল্লাহর শাস্তি নেমে এসেছে। তাই তাদের এই অনুতাপ গ্রহণযোগ্য নয়।
চরম জালেম ও খোদাদ্রোহী ফেরাউনও ডুবে মরার সময় অনুতপ্ত হয়েছিল, কিন্তু সেই অনুতাপ তার জন্য সামান্যতম সুফলও বয়ে আনেনি। তাই এই আয়াতেও দেখা যায় জালেমরা যখন বলে উঠল, “হায় আমরা তো জালেম ছিলাম ও ভুল করেছিলাম!" এবং তা তারা বার বার বলতে থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর কঠোর শাস্তি তাদের নির্মূল করে দেয় ও তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেননি আল্লাহ।
এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকার :
১. জুলুমের পরিণতি হল অনুতাপ। কিন্তু এই অনুতাপ শাস্তি পাওয়ার মুহূর্তে কোনো কাজে আসে না।
২. জুলুম ধ্বংসাত্মক ও সর্বগ্রাসী বিপদ বয়ে আনে এবং এর ফলে জালেমকে সমূলে নির্মূল হতে হয়।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন